অবশ্যই আছে । অসংখ্য প্রমান পেশ করা যেতে পারে । যেমন-
১) ইবনে হিব্বান, হাকেম ও তাবরানী সহীহ সনদের মাধ্যমে একটি হাদিস বর্ননা করেছেন । হযরত আলী (কঃ) এর মা হযরত ফাতেমা বিনতে আছাদ (রাঃ) যখন ইন্তিকাল করেন (৩য় হিজরী) তখন নবী করিম (দঃ) তাঁর জন্য এভাবে দোয়া করেছেনঃ
হে আল্লাহ! তুমি আমার মা (চাচী) ফাতেমা বিনতে আছাদ (রাঃ) কে মাফ করে দাও, তাঁর জন্য তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দাও । তোমার প্রিয় নবী (আমি) ও আমার পূর্ববর্তী সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের উছিলায় আমার চাচীর মাগফিরাত করো ।
— ইবনে হিব্বান, হাকেম ও তাবরানী
২) ওহাবী সম্প্রদায়ের নেতা ইবনে কাইয়েম তা যাদুল মাআদ গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর একখানা হাদীস উল্লেখে করেছেনঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ননা করেন- নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হবার সময় এই দোয়া পাঠ করবেঃ
“হে আল্লাহ! প্রার্থনাকারীগণের যে মর্যাদা তুমি দিয়েছো- তাদের সে মর্যাদার উছিলা ধরে আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি । আরও উছিলা ধরছি- তোমার পথে আমার এই চলাকে । কেননা- আমিতো অহঙ্কার করার জন্য বা খারাপ উদ্দেশ্যে লোক দেখানো বা সুনাম অর্জনের জন্য বের হইনি । আমি বের হয়েছি তোমার অসন্তোষ থেকে বাঁচবার জন্য এবং তোমার রেজামন্দি তলব করার জন্য । আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি- তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো এবং আমার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করো । তুমি ব্যতিত আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারেন না । "
নবী করিম (সঃ) এরশাদ করেনঃ এভাবে দোয়া চাইলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্য সত্তর হাজার ফেরেস্তা নিয়োজিত করে দেন । ঐ ফেরেস্তারা তাঁর জন্য মাগফিরাত কামনা করেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর দিকে (রহমতের দৃষ্টি দিয়ে) তাকিয়ে থাকেন- যতক্ষন না সে নামাজ শেষ করে ।
— যাদুল মাআদ- ইবনে কাইয়েম ওহাবী ও ইবনে মাজা
এখানে প্রার্থনাকারী বলতে জীবিত ও মৃত সকলকেই বুঝানো হয়েছে । কাজেই ইন্তিকালের পর কাউকে উছিলা ধরা জায়েজ প্রমানিত হলো ।
৩) বৃষ্টির জন্য নবী করিম (সঃ) এর উছিলায় দোয়া করা
নবী করিম (সঃ) এর ইন্তিকালের পর হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফত যুগে জনৈক সাহাবী বেলাল ইবনে হারেছ রাসুলুল্লাহ (দঃ) এর রওজা মোবারকে গিয়ে বৃষ্টির জন্য হুজুর (দঃ) এর খেদমতে প্রার্থনা করেছিলেন । ইমাম বায়হাকী, ইবনে আবি শায়বা প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ সহীহ সনদের মাধ্যমে এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফখানা বর্ননা করেছেন-
মদীনাবাসীগণ একবার হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতকালে অনাবৃষ্টির কারণে দূর্ভিক্ষে পতিত হন । হযরত বেলাল ইবনে হারেছ (রাঃ) নামক জনৈক সাহাবী নবী করিম (দঃ) এর রওযা মোবরকে গিয়ে আরজ করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ)! আপনার উম্মতেরা ধবংসের সম্মুখীন হয়েছে । আপনি তাদের জন্য বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন । অতঃপর রাত্রে স্বপনে এসে নবী করিম (দঃ) বেলাল (রাঃ) কে বললেনঃ তুমি ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) নিকট গিয়ে আমার সালাম জানিয়ে বলো- তারা বৃষ্টি পাবে । স্বপ্ন দেখে বেলাল ইবনে হারেছ (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ) কে এ শুভ সংবাদ দিলেন । হযরত ওমর (রাঃ) এ সংবাদ শুনে কেঁদে ফেললেন । মদিনাবাসীগণ রহমতের বৃষ্টি লাভ করলেন ।
— বায়হাকী ও ইবনে আবি শায়বা
ফায়দাঃ বর্নিত হাদীসে কয়েকটি বিষয়ে প্রাণিধানযোগ্য । যথাঃ
ক) ইন্তিকালের পর নবী করিম (দঃ) কে ইয়া রাসুলুল্লাহ বলে সম্বোধন করা জায়েজ । যেমন- সম্বোধন করেছিলেন হযরত বেলাল ইবনে হারেছ (রাঃ) ।
খ) বৃষ্টির জন্য দোয়া প্রার্থনা করা সুন্নাত ।
গ) ইন্তিকালের পর নবী করিম (দঃ) কে উছিলা করে বৃষ্টির প্রার্থনা করা উত্তম ।
ঘ) হযরত বেলাল (মোয়াজ্জিন বেলাল নহেন) একজন সাহাবী । তাঁর উক্ত কাজে হযরত ওমর (রাঃ) অথবা অন্য কোন সাহাবী কর্তৃক আপত্তি না করাই বৈধতার প্রমাণ ।
৪) ইমাম বায়হাকী, ইবনে সুন্নী, হাফেজ আবু নোয়াইম প্রমুখ মোহাদ্দেস ও ইমামগণ নবী করিম (দঃ) এর নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময়ের দোয়া এভাবে উল্লেখ করেছেনঃ
হে আল্লাহ! তোমার কাছে প্রার্থনাকারীদের যে মর্যাদা রয়েছে, সে মর্যাদার উছিলা দিয়ে আমি প্রার্থনা করছি ।
— বায়হাকী, ইবনে সুন্নী, আবু নোয়াইম
পর্যালোচনাঃ
ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ ওলামাগণ উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, জীবিত অথবা ইন্তিকাল প্রাপ্ত যে কোন মোমেন বান্দার উছিলা ধরা পরিস্কারভাবে জায়েজ । নবী করিম (দঃ) সাহাবায়ে কেরামকে উক্ত দোয়া পাঠ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন । অতীত যুগের সকল বুযুর্গানে দবীন নামাজে যাওয়ার সময় উক্ত দোয়া এস্তেমাল করতেন । কাজেই ইন্তিকাল প্রাপ্ত আম্বিয়া ও আউলিয়া - এমনকি জীবিত মুমিন বান্দাদের উছিলা ধরাও শরীয়ত মতে জায়েজ এবং সুন্নাত ।
চুড়ান্ত ফতোয়াঃ
ইন্তিকালের পর কোন নবী অথবা অলীগনকে উছিলা করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা- শুধু জায়েজই নয়, বরং সাহাবীগনের সুন্নাতও বটে ।