মুসলমান মাত্রই যে কয়টা আয়াত সবাই জানেন তাঁর একটা হলো-
وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِين )الأنفال ৪৬
-আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনফাল, ৪৬)
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিশেষত সকল মুমিনের মধ্যে ধৈর্যের গুণ থাকা উচিত। আল্লাহ তাআ’লা ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের কোন দুঃখ-কষ্ট নেই। তাই তাদের ধৈর্য ধরারও প্রশ্ন নেই। আবার মানুষ ব্যতিত অন্যান্য প্রাণীর জন্যও ধৈর্য নয়। কারণ তারা বিবেকবান প্রাণী নয়। আল্লাহর অন্য সকল সৃষ্টির সাথে মানুষের একটি মৌলিক পার্থক্য হলো মানুষের আছে বিবেক আছে, যা অন্য সকল জীবের মধ্যে অনুপস্থিত। হযরত ওমর (রাঃ)কোরআন শরীফ থেকে দলীল দিয়ে বলছেন- মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে মানুষকে সর্বশ্রেষ্ট দান হচ্ছে বিবেক। কুরআন কারীমএসেছে-
وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ) سورة الملك (١٠﴾
-তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না। (সূরা মুলক, ১০)
জাহান্নামবাসীদেরকে তাদের বিবেকের এই আক্ষেপ করতে হবে কারণ তারা তাদের বিবেককে দুুনিয়ায় ঠিকমতো কজে লাগায়নি। বিবেকই মানুষকে মানবতার উচ্চতর সোপানে পৌছাতে সহায়তা করে। আর বিবেকই মানুষকে ধৈর্য ধরতে শেখায়।কুরআন শরীফে বহু জায়গায় সবর বা ধৈর্যের কথা এসেছে, এছাড়াও বহু হাদীসে ধৈর্যের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। আল-কুরআনে নানা ভাবে ধৈর্যের কথা এসেছে।
১. আল্লাহ তাঁর হাবীবকে ধৈর্যধারনের জন্য হুকুম দিয়েছেন- {وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلاَّ بِاللَّهِ} [النحل ১২৭]
২. আরো জানিয়েছেন সকল সম্মানিত নবীও ধৈর্যধারণ করেছেন
وقال تعالى : {فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُوا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ} [الأحقاف ৩৫].
৩. আল্লাহ মুিমনদেরকে ধৈর্যধারনের নির্দেশ দিয়েছেন- : {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا} [آل عمران ২০০].
৪. আল্লাহ ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেন- وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ} [البقرة ১৭৭].
৫. আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন- {وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ} [آل عمران ১৪৬]،
৬. ধৈর্যধারণ ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম বলে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন- {وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ} [النحل ১২৬].
৭. ধৈর্যশীলদেরকে আল্লাহ তাআলা উত্তম ও সুন্দর প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন- {وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ}
অন্যদিকে আল্লাহ তাআলা ধৈর্যকে ইসলামের মৌলিক বহু বিষয়াবলীর সাথে যুক্ত করে কুরআনে উল্লেখ করেছেন। যেমন :
১. ইয়াকীনের সাথে- {وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآياتِنَا يُوقِنُونَ} [السجدة ২৪]،
২. তাওয়াক্কুলের সাথে- {َنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ} [العنكبوت ৫৮، ৫৯]،
৩. নামাযের সাথে - {وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاة} [البقرة ১৫৩]
৪. তাকওয়ার সাথে- {وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئاً} [آل عمران ১২০]
৫. আমলে সালেহের সাথে- {إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ} [هود ১১]
৬. জিহাদের সাথে- {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِين} [محمد ৩১]،
৭. ইস্তিগফারের সাথে- فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالأِبْكَارِ
৮. তাসবীহের সাথে উল্লেখ করেছেন- وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ حِينَ تَقُومُ} [الطور ৪৮
৯. সত্যের সাথে উল্লেখ করেছেনÑ{ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ} [العصر ১-৩] ،
১০. রহমতের সাথে উল্লেখ করেছেনÑ {ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ} [البلد ১৭]،
১১. শোকর/কৃতজ্ঞতার মানে উল্লেখ করেছেনÑ{إِنَّ فِي ذَلِكَ لآياتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ} [إبراهيم ৫].
সবরের প্রতিদান
সবরকারীর প্রতিদান সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿١٥٥﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴿ ١٥٦﴾ أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ﴿ سورة البقرة ١٥٧﴾
আর সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। (সূরা বাকারা, ১৫৫-১৫৭)
আয়াতে কারিমা থেকে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তাআ’লা ধৈর্যধারনকারীদের তিনটি সুসংবাদ দান করছেন-
১. আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত বা অফুরন্ত অনুগ্রহ লাভ।
২. আল্লাহর রহমত লাভ।
৩. হেদায়েত প্রাপ্তি।
এছাড়াও আল্লাহর ভালোবাসা লাভের মাধ্যম, আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَٱللَّـهُ يُحِبُّ ٱلصَّـٰبِرِينَ ﴿ سورة آل عمران ١٤٦ ﴾
- নিশ্চিয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা, ১৫৩)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন-
إِنَّ ٱللَّـهَ مَعَ ٱلصَّـٰبِرِينَ ﴿ سورة البقرة ١٥٣ ﴾
- আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আল ইমরান, ১৪৬)
সুতরাং আল্লাহ যার সাথে আছেন, তিনি যাকে ভালোবাসার ঘোষণা দেন তার তো আর কিছুরই দরকার হয়না।
সবরের মাধ্যমে নেতৃত্ব লাভ হয়
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا
-তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.) বলেন, যখন তারা সর্বোত্তম বিষয় অবলম্বন করলো তখন তারা নেতা হয়ে গেলো। এজন্য কোনো কোনো আলেম বলেন- بالصبر واليقين تنال الإمامة في الدين. ধৈর্য এবং দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে দ্বীনি নেতৃত্ব লাভ হয়।
সবরের ব্যাপারে পূর্বসূরীগণের বাণীÑ
হযরত উমর (রা.) বলেন- وجدنا خير عيشنا بالصبر আমরা কল্যাণময় জীবন লাভ করেছি ধৈর্যের দ্বারা।
হযরত আলী (রা.) বলতেন- ألا إنه لا إيمان لمن لا صبر له - জেনে রাখ! যার ধৈর্য নেই তার ঈমান নেই।
ধৈর্য্যরে গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি আরো বলেন-
الصبر من الإيمان بمنزلة الرأس من الجسد
- ঈমানদারের জন্য সবর তেমন মানবদেহের জন্য মাথা যেমন।
একজন মানুষের যদি মাথা কেটে ফেলা হয় তাঁর যেমন অস্তিত্ব থাকে না, তেমনি মুমিনের মধ্যে যদি ধৈর্য না থাকে তবে তাঁর মধ্যে ঈমানের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখিন হয়।
হযরত ওহাব ইবন মুনাব্বিহ বলেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে পূণ্যবান। ১. অন্তরের প্রশস্থতা ২. দুঃখ-কষ্ঠে ধৈর্য ধারণ ৩. সুন্দর কথা বলা।
দুঃখ-কষ্ঠকে মানুষের কাছে প্রকাশ না করাও এক ধরণের ধৈর্য। এজন্য আব্দুল আযীয ইবন আবূ দাউদ বলেন- তিনটি বিষয় জান্নাতের খনি। দুঃখ-কষ্ঠ গোপন রাখা, অসুস্থতা গোপন রাখা আর দান-সদকা গোপন রাখা।
হযরত হাসান বসরী (রা.) বলেন, ধৈর্য হচ্ছে কল্যাণের খাজানা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় বান্দা ছাড়া এটা কাউকে দেন না।
হযরত এয়াকুব (আ.)-সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন যে وهوكظيم । হাসান বসরী (র.) বলেন, (كظيم) কাযিম শব্দের অথ: সবুর (صبور) অধিক ধৈর্যশীল।
সকল মুমিনকেই ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিতে হয়Ñ
মুমিন মাত্রই আল্লাহ প্রদত্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ﴿١٥٥﴾
- এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। (সূরা বাকারা, ১৫৫)
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে আমরা তো আল্লাহর ইবাদত করছি তাহলে আবার পরীক্ষা কেন? আর আল্লাহ তো আমাদের মনের খবর জানেন তাহলে পরীক্ষার দরকার কি? এর উত্তরে বলা যায়- দুনিয়ায় আপনি যদি দশজনের মধ্য থেকে একজন বাছাই করতে চান, কে সর্বোত্তম দেখতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই তাদের পরীক্ষা নিতে হবে।
আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّىٰ نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ ﴿ سورة محمد ٣١﴾
- আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি। (সূরা মোহাম্মদ, ৩১)
আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে কারীমাতে বলেন-
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ﴿سورة الملك٢﴾
-তিনি মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সূরা মুলক- ২)
পরীক্ষার স্বরূপ
প্রশ্ন হলো এই পরীক্ষাটা কিভাবে হয়? আল্লাহ কর্তৃক তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। যার মর্যাদা যতো উচ্চ তাঁর পরীক্ষা ততো কঠিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন আল্লাহর নবীগণ, এরপর আল্লাহর ওলীগণ অতঃপর অন্যান্য মুমীনগণ।
নবীদেরকে আল্লাহর পরীক্ষার বিষয়ে হযরত ইউনুস (আঃ) এর মাছের পেটে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা যায়। মাছের পেটে যাওয়ার পর তিনি বলেন নি যে, হে আল্লাহ! আমি তো আপনার নবী, আমাকে কেন মাছের পেটে আসতে হল? বরং তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন এবং দুআ করেছেন যা পবিত্র কুরআনে এসেছে-
لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿ سورة الأنبياء ٨٧﴾
- তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার। (সূরা আম্বিয়া, ৮৭)
আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর ধৈর্যধারণ আর দু’আর বাক্যে খুশি হয়ে তাকে মুক্তি দেন আর এই বাক্যকে সমগ্র মুসলমানের জন্য বিপদে মুক্তি প্রাপ্তির দুআ হিসেবে নির্ধারণ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَٱسْتَجَبْنَا لَهُۥ وَنَجَّيْنَـٰهُ مِنَ ٱلْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُـۨجِى ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴿ سورة الأنبياء ٨٨﴾
-অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আর আমি এমনিভাবে মুমিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। (সূরা আম্বিয়া, ৮৮)
সকল নবীগণের মধ্যে আমাদের নবীর পরীক্ষা ছিল বেশ কঠিন। তারপর হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর। নবীগণের পরে সবচেয়ে ধৈর্যশীল ছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ , তাবেয়ীন, আমাদের ঈমামগণ সহ সালফে সালেহীন, আউলিয়ায়ে কেরাম নানাভাবে ধৈর্যধারণ করেছেন। কম খেয়ে, কম ঘুমিয়ে তারা আল্লাহর পথে শ্রম দিয়ে গেছেন বলেই তারা সফলকাম হয়েছেন।
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّـٰبِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿ سورة الزمر ١٠ ﴾
-যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত। (সূরা যুমার, ১০)
আমাদের উপর যখন কোন বিপদ আসে তখন সেটাকে পরীক্ষা মনে করে আমাদের ধৈর্যধারণ করা উচিত। পরীক্ষা অথবা বিপদ-আপদের ধরণের উপর ভিত্তি করে সবরের তিনটি ধরণ হতে পারে-
১. এমন কিছুতে সবর যাতে বান্দার কোন হাত নেই। যেমন কেউ একজন অসুস্থ হয়ে গেল কিংবা কোন আত্মীয়-স্বজন মারা গেল। এরকম সকল বিপদে ধৈর্য ধারণ করা ওয়াজিব। আউন ইবনে আব্দুল্লাহ (র.) বলেন- الخير الذي لا شر معه : الشكر مع العافية، والصبر مع المصيبة. একটি কল্যাণ যার সাথে কোনো অকল্যাণ যুক্ত হতে পারে না: সুস্থতার সময় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও বিপদের সময় : ধৈর্যধারণ।
২. নিজের আয়ত্বের মধ্যে থাকা বিষয়গুলোতে আল্লাহর ভয়ে ধৈর্যধারণ করা। যেমন কেউ একজন রোজা রাখলো, সে ক্ষুধার্ত থেকে ধৈর্য ধরলো, কেউ রাতের ঘুম ত্যাগ করে নামাজ পড়লো, হারাম থেকে বেঁচে থাকলো এর প্রত্যেকটিই আল্লাহর ভয়ে ধৈর্য ধারণ। হযরত ওমর (রা.) বলেন, সবর হচ্ছে দুই প্রকার ১. বিপদে ধৈর্যধারণ- এটা ভালো। ২. এর চেয়ে উত্তম সবর হচ্ছে আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত বিষয় থেকে ধৈর্যধারণ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
ثلاثة لا ترى أعينهم النار: عين حرست في سبيل الله, وعين بكت من خشية الله, وعين كفت عن محارم الله
-তিনটি চোখ জাহান্নামের আগুনেও জ্বলবেনা। যে চোখ মুসলিম সা¤্রাজ্যের সীমানা পাহারা দিয়েছে, যে চোখ দিয়ে আল্লাহর ভয়ে পানি ঝরেছে, আর যে চোখ (কোন মন্দ দেখা থেকে) আল্লাহর ভয়ে নিজেকে বিরত রেখেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন- কোন লোক কোন মন্দ জিনিস দেখে সাথে সাথে যদি সে চোখ ফিরিয়ে নেয় তবে সে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে।
ঈমানের স্বাদ কি? এটা যারা আমল করেন তারা বুঝবেন। আপনি যদি এই নিয়ত করেন যে রাস্তায় নিজের চোখ সংযত রাখবেন, মন্দ কিছু দেখবেন না তবে নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ থেকে আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাসায় অঝোর ধারায় পানি ঝরবে। এটি পরীক্ষিত আমল।
নিজেকে যবান এবং দৃষ্টির পাপ থেকে বিরত রাখতে আল্লাহর ওলীগণ নির্জনে চলে যেতেন। ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরী (র.) বলেন- যিনি নির্জনে যাবে তাকে একথা ভাবলে চলবেনা যে মানুষের অনিষ্টতা থেকে আমি দূরে যাচ্ছি, বরং ভাবতে হবে মানুষকে আমার অনিষ্টতা থেকে দূরে রাখছি।
৩. ধৈর্য ধারনের ব্যাপারে স্বাধীনতা রয়েছে। আপনাকে যদি কেউ কষ্ট দেয় তবে আপনার জন্য দুটি পথ আছে। আপনি চাইলে সবরকারী হতে পারেন আবার তার কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারীও হতে পারেন। সে যতটুক অন্যায় করেছে তার বিনিময় নিলে অন্যায় হবেনা। তবে আপনি যদি আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন এবং ধৈর্যধারণ করেন তবে সেটাই হবে উত্তম। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ ﴿سورة النحل ١٢٦﴾
-আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম। (সূরা নাহল, ১২৬)
প্রতিবেশীর দেয়া কষ্ঠে ধৈর্যধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: হাদীসে এসেছেÑ এমন ব্যক্তি যার রয়েছে একজন কষ্ঠদানকারী প্রতিবেশী এবং সে তাতে ধৈর্যধারণ করলো ইহ-পরকালে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ঠ হয়ে যান।
صِلْ مَنْ قَطَعَكَ , وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ , وَاعْفُ عَمَّنْ ظَلَمَكَ "
বিপদগ্রস্থ মানুষের ৪টি প্রকার আমরা দেখি-
১. আস্-সাখিতু আলাল মুসিবাহ: বিপদে অধৈর্য ব্যাক্তি
এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা বিপদের সময় আল্লাহর উপর রাগ করে বসেন। কোন বিপদের সময় তারা বলে আমি তো এর যোগ্য ছিলাম না, আল্লাহ কেন আমাকে এতো পরীক্ষা করছেন? এটা হারাম। জেনে রাখবেন হাদীস শরীফে এসেছে- বান্দা কখনো এমন কথা বলে যে আল্লাহ তার কথায় অত্যন্ত কষ্ট পান, তার উপর আল্লাহর গযব চলে আসে। আবার কেউ এমনো সুন্দর কথা বলে যে আল্লাহ তার উপর খুশী হয়ে যান।
এজন্য যবান হচ্ছে অত্যন্ত দামী একটা বিষয়। এটা দিয়ে ঈমান আসে এটা দিয়ে ঈমান যায়, এটা দিয়ে বিবাদ করা যায় আবার বিবাদ দূর করাও যায়। যদি কারো উপর কঠিন বিপদ আসে তবে এটা চিন্তা করা উচিত না যে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন না। বরং এটা ভাবা উচিত যে তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিপদ মানেই আল্লাহর গযব নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুজাহানের সরদার হয়েও অনেক বড় বড় দুঃখ-কষ্ট এবং বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন।
এজন্য হাদীস শরীফে এসেছে-
ليس منا من لطم الخدود وشق الجيوب ودعا بدعوى الجاهلية
-সে আমার দলভুক্ত নয় যে (বিপদগ্রস্থ হয়ে) গালে আঘাত করে, কাপড় ছিড়ে ফেলে, অথবা এমন কথা বলে যা জাহেলী যুগে বলা হতো।
সুতরাং বিপদের সময় বলা যাবে না যে, আমার কেউ নেই, আল্লাহ আমার থেকে সুখ কেড়ে নিয়েছেন ইত্যাদি। এসব জাহেলী যুগের কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ বলতে নিষেধ করেছেন।
২. আস্ সাবিরু আলাল মুসিবাহ: <> বিপদের সময় যারা ধৈর্যধারণ করেন।
উম্মুল মু’মিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন যদি কোন বান্দা বিপদের সময় (ধৈর্য ধরে) নিচের দোআটি পড়ে তবে আল্লাহ তাকে তার বিপদ থেকে মুক্তি দেন এবং উত্তম প্রতিদানপ্রদান করেন। দু’আটি হলো-
انا لله وانا اليه راجعون - اللهم آجرني في مصيبتي، واخلف لي خيرا منها
-নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ হতে আর আল্লাহর দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন। আল্লাহ আপনি এই বিপদ থেকে আমাকে উদ্ধার করে নিন, আর আমাকে এরচেয়ে উত্তম কিছু প্রদান করেন।
উম্মে সালামা বলেন- আমার স্বামী আবু সালমা মারা গেলেন। তখন আমি এই দু’আটি বারবার পড়লাম যেহেতু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি ভাবলাম আমার স্বামী (তাঁর স্বামী আবু সালামা ছিলেন প্রথম শ্রেণীর মুসলমান, মুহাজিরদের অর্ন্তভুক্ত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বক্ষণের সঙ্গী) থেকে ভালো মুমীন তো আর দেখিনা। তাহলে তাঁর থেকে উত্তম প্রতিদান আর কী হতে পারে? কিন্তু আল্লাহ আমাকে উত্তম প্রতিদান দিলেন। কয়েকদিন পরেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে আমার কাছে বিবাহের পয়গাম আসে। (সহীহ মুসলিম)
যে কোন বিপদের সময় আমাদের এই দুআ পড়ে ধৈর্য ধারন করা উচিত।
৩. আর রাযী আলাল মুসীবাহ: যারা বিপদে সন্তুষ্ঠ
এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা অত্যন্ত উচু পর্যায়ের. মুমিন। যারা বিপদ আপদের সময় সন্তুষ্ঠ থাকেন। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবী আবূ তালহা (রাঃ)-এর এক ছেলে খুব অসুস্থ ছিলেন। তিনি বাইরে গেলেন। ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন আমার ছেলে কি করছে? স্ত্রী উত্তর দিলেন অন্যদিন থেকে ভালো আছে। তিনি তাঁর স্বামীকে উত্তম খাবার খাওয়ালেন এবং সেজেগুজে স্বামীকে সঙ্গ দিলেন, এক পর্যায়ে বললেন - পাশের বাড়ির মালিক একটি জিনিস আমার থেকে নিয়েছিলেন এখন ফেরত আনার সময় তিনি কান্নাকাটি করছেন আর ফেরত দিতে চাচ্ছেন না। আবূ তালহা বলেন- এ তো বড় অন্যায় কথা, এতে তো তাদের কোন অধিকার নাই। তখন তাঁর স্ত্রী বললেন- আপনার যে ছেলে ছিল আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন আর আল্লাহই তাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে পরদিন তারা হাজির হন। এক বর্ণনায় আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলেন আমি উম্মে সুলাইম (আবূ তালহা’র স্ত্রী)কে জান্নাতে হাটা-হাটি করতে দেখলাম।
আমরা এতটুক ধৈর্য যদি নাও ধরতে পারি তবু আমরা যেন অন্তত বিলাপ না করি যা করতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করে গেছেন। আবার অনেকে নির্দয়ের মতো মোটেই কান্নাকাটি করতে দেননা। এটা ঠিক না । কান্নাকাটি করা নিষেধ নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহেবজাদা হযরত ইবরাহীম (রাঃ) যখন মারা যান তখন তাকে কবরে রাখার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চোখ মোবারক থেকে দু’ফোটা অশ্রু পড়ল। আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) বললেন- হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনিও কাঁদছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন হে আব্দুর রহমান! এটা হচ্ছে রহমত।
৪. আল ফারিহ বিল মুসিবাহ: যারা বিপদে আনন্দিত
এক শ্রেণীর উচু দরজার মুমিন আছেন যারা বিপদে আনন্দিত হন। এটা ওয়াজিব নয় । সবার জন্য এটা সম্ভবও নয় । আল্লাহর ওলীদের পক্ষে এটা সম্ভব। খানসা ছিলেন আরবের প্রখ্যাত শোকগাঁথার কবি। তিনি তার যুদ্ধে নিহত ভাইয়ের জন্য শোকগাঁথা রচনা করে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি যখন ইসলাম কবূল করলেন এবং ঈমানের আলোতে উদ্ভাসিত হলেন তখন তার প্রকৃতির মধ্যে পরিবর্তন আসলো। যেমন কাদিসিয়ার যুদ্ধে তিনি তার তিন সন্তানকে নিয়ে শরীক হলেন। তাদেরকে যুদ্ধে সম্মুখভাগে থেকে বীরত্ব প্রদর্শনের নসীহত করলেন। মায়ের নসীহত মান্য করে ছেলেরা যুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করে তিনজনই শহীদ হয়ে গেলেন। এক ভাইয়ের জন্য যিনি প্রাণপাত করেছেন ঈমানের আলো তাকে হিম্মত দিয়েছে এমন যে তিনি ছেলেদের শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে বললেনÑ
الحمد لله الذي شرفني بقتلهم، وأرجو من ربي أن يجمعني بهم في مستقر رحمته.
সকল প্রসংসা সেই আল্লাহর যিনি তাদের শাহাদাত দ্বারা আমাকে সম্মানিত করেছেন এবং আমি আশা করি আল্লাহ তা’আলা তাঁর দয়ার আশ্রয়ে তাদের সাথে আমাকে একত্রিত করবেন।
অন্যদিকে আবুল আলী রাযী বলেন, আমি ফুদ্বায়ল ইবন আয়াদ্ব (র.)-এর সাথে ত্রিশ বছর ছিলাম। এর মধ্যে কোনো একদিন তাকে অট্টহাসি বা মুচকি হাসি দিতে দেখিনি। তবে একদিন তিনি হেসেছিলেন যেদিন তার পুত্র আলী মৃত্যুবরণ করেনএবং বলেনÑ : إن الله عز وجل أحب أمرا فأحببت ما أحب الله আল্লাহ তা’আলা একটি পছন্দ করেছেন আমিও তাই পছন্দ করলাম যা আল্লাহ পছন্দ করেছেন।
এটা কেবল আল্লাহর বিশেষ ওলীদের পক্ষেই সম্ভব।
আমরা বুঝতে পারলাম সবর মুমিন জীবনের নিত্য অনুসঙ্গ। সবরের মাধ্যমেই মানুষের ঈমান কামিল হয়, সম্মান লাভ করে; আল্লাহর ভালোবাসা, সমাজের নেতৃত্ব দুনিয়ার জীবনের উন্নতি এবং সর্বোপরি অন্যদিকে ফুদ্বাযল ইবন আযাদ্ব (রা.) এর ছেলে মারা গেলে তিনি বলেনÑ আখিরাতের অনন্ত নেয়ামত লাভ করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।