বিশ্বের অন্যতম এন্সাইক্লোপিডিয়া উইকিপিডিয়াতে জাকির নায়িকের ধর্ম হিসেবে পূর্বে 'সালাফী ইসলাম' উল্লেখ ছিল । বর্তমানে সেখান থেকে সালাফী ইসলাম কথাটা মুছে দিয়ে 'ইসলাম' লিখা আছে।
ডঃ জাকির নায়িক ইসলামের নামে সালাফীজম মতবাদ প্রচার করে থাকেন। পবিত্র কুর’আন ও হাদীসের অর্থ করে থাকেন তার ওহাবীজম/সালাফীজম মতবাদের অনুসারে।
জাকির নায়িকে বলেন, তার আকাশ প্রভুর দুই হাত, দুই চোখ, মুখ, পা ও বিশাল শরীর নিয়ে আরশের দিকে মুখ করে বড় চেয়ারে বসে আছে।কেউ একজন তাকে তার আকাশ প্রভুর হাত কেমন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন; আমরা জানি না, শুধু গড জানেন।
সালাফীদের আকাশ প্রভুর বর্ণনার সাথে হিন্দুদের প্রভু বিষ্ণুর সাথে মিলে যায়। মূল পার্থক্য হল হিন্দুদের প্রভু বিষ্ণু বিবাহিত কিন্তু সালাফীদের আকাশ প্রভু অবিবাহিত। হিন্দুরা তাদের দেবতা বিষ্ণুর মূর্তি তৈরী করে; কিন্তু সালাফীরা করে না। কিন্তু সালাফীদের প্রভূর এই বিশাল দৈহিক আকৃতি বিশ্বাস হিন্দুদের প্রভূর বিশ্বাসের সাথে মিলে যায়।
আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণে সালাফীরা নামাযে এই আকাশ প্রভুকে সিজদাহ করে থাকে। তারা দাবী করে তাদের আকাশ প্রভু মহাবিশ্ব তৈরী করেছে।
জাকির নায়িক আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কিত সালাফীদের এই বিশ্বাসকে ইসলামি বিশ্বাস বলে প্রচার করে এবং অনেককেই মুসলমান বানাচ্ছে দেখে গর্ব অনুভব করে। জাকির নায়িকের লেকচার শুনে প্রভাবিত হওয়া মানুষেরাও আস্তে আস্তে সালাফীদের আকাশ প্রভুকে আল্লাহ তা’আলা মনে করতে শুরু করে। (নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক) পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ডাঃ জাকির নায়েক মাযহাব বিরোধী । লা-মাজহাবিদের তিন জন বড় ইমাম:- ১। ইবনু তায়মিয়া, ২। ইবনুল কাইয়ুম যাওজি, ৩। ইবনু আব্দুল ওহ্হাব নজদী । ইবনু তায়মিয়ার আকিদা হল
اَنَّ اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ بِقَدْرِ الْعَرْشِ لَاَكْبَرَ وَلَا اَصْغَرَ
অর্থাৎ ‘আল্লাহর আরশটা যত বড় আল্লাহও তত বড় আল্লাহ ছোটও না বড়ও না’ ।
একথা যারা বিশ্বাস করেছে তাঁরা মুশরিক হয়েছে । অনেক নব্য লা-মাজহাবিদের এরূপ আকীদা রয়েছে । অথচ আমাদের আল্লাহ হলেন-
وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ
অর্থাৎ তিনি একক,তাঁর কোনও শরীক নেই, আকার নিরাকার কিছুই নন এবং দেহ হতে পাক ।
حَام تَنْزِيْلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ
আজিজ শব্দের ব্যখ্যায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী তাফসীরে কাবিরে লিখেছেন আজিজের দুইটি ব্যখ্যা একটি অর্থ গালেব অর্থাৎ বিজয়ী; দুই নম্বর
اَلَّذِى لَا يُوْجَدُ لَهُ مِثْل
অর্থাৎ আকাশ ও যমীনে যার কোন মেছাল বা তুলনা নেই ।
ইমাম রাযী লিখেছেন, আহলে সুন্নতের সকল মুহাদ্দেস একমত।
قَدْ اَنَّ عَقْدَ الْاِجْمَاعِ عَلى اَنَّ اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ مُنَزَّهٌ مِنَ الْجِسْمِ
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা দেহ থেকে পাক এ ব্যাপারে সবাই একমত ।
যদি কেউ বলে আল্লাহর আকার আছে আর আকার নিয়ে তিনি আরশে বসে আছেন কুরসীতে তবে সে হিন্দুদের মতো মুশরিক হয়ে যাবে । কারণ এর দ্বারা আল্লাহকে খাট ও ছোট করা হয় । আল্লাহ বলেছেন তিনি আকাশ ও যমীন সৃষ্টি করেন ৬ দিনে । এরপর আল্লাহ বলেছেন-
ثُمَّ اسْتَوَى عَلى الْعَرْشِ
অর্থাৎ আল্লাহ আরশে আযীমে সমাসীন হয়েছেন ।
‘আকার নিয়ে সমাসীন’ এ কথাটি বলা আল্লাহর শানের খেলাপ কথা । আমরা বলব ‘ইস্তাওয়া’ অর্থাৎ রকম প্রকারহীনভাবে সমাসীন । এখন যদি বলা হয় আল্লাহ দেহ নিয়ে আরশে বসে আছেন তবে এটা শিরক হবে । কোরআনে সুরা মু’মিনে আল্লাহ বলেছেন
اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ
অর্থাৎ যে সকল ফেরেশতারা আল্লাহর আরশ বহন করছে এবং তাঁরা চারপাশে আছে ।
কোরআন সাক্ষী দেয় আল্লাহর আরশটা ‘মাহমুল’ অর্থাৎ বহন করা হচ্ছে । আর এই বহনটা করছে আট জন ফেরেশতা । যদি বলা হয় আল্লাহ আরশে আযীমে আকার নিয়ে বসে আছেন তবে বলতে হবে আল্লাহ সহ আরশটাকে আল্গায় রাখছে মাত্র আট জন ফেরেশতা, তবে ফেরেশতার ক্ষমতা বেশি বোঝায় আল্লাহর চাইতে । দৃষ্টান্তঃ একজন লোক চেয়ারে বসা কেউ চারজন এসে যদি চেয়ারটা উঠায় তাহলে উঠবে । তখন তাদের চারজনের সম্মিলিত শক্তি বেশি বোঝায় আর চেয়ারে রাখা লোকটির শক্তি কম বোঝাবে । আল্লাহ পাক আরশে আযীমে সমাসীন হয়েছেন এটা আল্লাহর কথা । কিন্তু তিনি কিভাবে সমাসীন হয়েছেন সেটা তিনিই ভাল জানেন । ‘ইস্তাওয়া মা’লুম’ অর্থাৎ সমাসীন হওয়াটা জ্ঞাত ‘ওয়াল কাইফিয়াত মাজহুল’ এবং কিভাবে তিনি সমাসীন এটা আল্লাহই ভাল জানেন । কোন সৃষ্টি জানেনা । যদি বলা হয় আল্লাহর আকার আছে তবে বলতে হবে আকার নিয়ে আল্লাহ পাক আরশে বসে আছেন । আর আল্লাহ সহ পুরা আরশটাকে আট জন ফেরেশতা আল্গায় রাখছেন। তাতে আল্লাহর শক্তির চাইতে ফেরেশতার শক্তি বেশি বোঝাল । তবে পাঠকগণ ! এখন চিন্তা করুন, এভাবে ধারণা করলে শিরক হয়।
তথ্যসূত্র
· https://www.youtube.com/watch?v=kK4R-7NiUdc
· · https://www.youtube.com/watch?v=fid9o1DK5mg
· · http://www.correctislamicfaith.com/howallahviewssalafis.htm
· https://www.youtube.com/watch?v=PjSCpumPeqA
জাকির নায়িক অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের যেই ব্যাখ্যা দেয় তা খুবই বিতর্কিত। দেরীতে হলেও সেসব ধর্মের স্কলারগণ তার ব্যাখ্যাকে ভুল প্রমাণও করেছেন। ইন্টারনেট ও ইউটিউবে সে সব রয়েছে।
জাকির নায়িক তার লেকচার ও লিখনীতে অনেকবার উল্লেখ করেছেন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের কথা উল্লেখ আছে। আপনারে জেনে অবাক হবেন যে, এই চমৎকার তথ্যটি সর্বপ্রথম দাবী করেন আব্দুল হক বিদ্যার্থী কাদীয়ানি তার “বিশ্বের ধর্মগ্রন্থে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” কিতাবে। আব্দুল হক বিদ্যার্থী কাদীয়ানি ছিলেন লাহোর আহমাদিয়া আন্দোলনের একজন মিশনারী ।
আমরা এখানে জাকির নায়িকের হিন্দু ধর্ম নিয়ে জাকির নায়িকের পড়াশুনার মূল উৎসের উপর জোড় দিচ্ছি না। আনাদের মূল বিষয়-বস্তু এর থেকেও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ।
হিন্দুদের বেদ ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থাবলী মুসলমানদের আল্লাহ তা’আলা এর কিতাব হিসেবে গ্রহণ করা যাবে কি না এমন এক প্রশ্নের ডঃ জাকির নায়িক জবাবে বলেন,
কুর’আন ও সহীহ হাদীসের মাঝে এমন কোনো কথা নেই যেখানে বলা আছে উক্ত গ্রন্থাবলী ভারতে পাঠানো হয়েছিল। যেহেতু বেদ ও হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থাবলীর উল্লেখ কুর’আন ও হাদীসে নেই তাই কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে এটা আল্লাহ তা’আলার বাণী। এটা আল্লাহ তা’আলার বাণী হতেও পারে আবার নাও পারে।
যাই হোক, তিনি বেদ ও হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মী গ্রন্থাবলী সম্পর্কে যা বলেছেন তা আসলে আব্দুল হক বিদ্যার্থী কাদীয়ানির তথ্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থে আছে বলে পুনরাবৃত্তি করাও প্রকৃতপক্ষে এই কাদিয়ানীর আবিষ্কার।
জাকির নায়িকের এই সম্পর্কিত মন্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, তিনি আসলে হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থাবলীকে আল্লাহ তা’আলা এর বাণী বলে মনে করেন যদিও তিনি তা জনসম্মুখে প্রচার করতে ইচ্ছুক নন।
জাকির নায়িক যে আসলেই হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থাবলীকে আল্লাহ তা’আলা এর বাণী হিসেবে বিবেচনা করেন তা এর মাধ্যমেও বুঝা যায়। জাকির নায়িক সূরা আল-ইমরান এর ৬৪ নং আয়াতটি বারবার উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন হিন্দুদের মুসলমানদের সাথে একত্রিত হওয়ার জন্য। আয়াতটি হল
বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত।
— [সূরা আল-ইমরান ৬৪
সকল গ্রহণযোগ্য তাফসীরে এই আয়াতে ‘আহলে কিতাব’ বলতে ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের বুঝানো হয়েছে যারা ঐ সময় তাওরাত ও ইঞ্জীল অনুসরণ করত, কোনো মূর্তি পুজারকদের নয়। বর্তমান সময়ের হিন্দুরা সেই সময়কার মূর্তি পূজারকদের মত। এই বিষয়ে সবাই একমত থাকবেন। অথচ জাকির নায়িক আল্লাহ তা’আলা এর এই বাণী দ্বারা মূর্তি পূজারকদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করলেন। এমন কোনো হাদীস পাওয়া যায় না যেখানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূর্তিপূজারকদের সাথে ইসলামের যে সব সাদৃশ্য বিদ্যমান সেদিকে আহবান করেছেন। কিন্তু ডঃ জাকির নায়িক কেন এই আয়াতের মাধ্যমে হিন্দুদেরকে আহবান করলেন???
এর দ্বারা বিষয়টা আরও সহজতর হয়ে যায় যে, হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল্লাহ তা’আলা এর বাণী তা জাকির নায়িক প্রকাশ্যে দাবী না করলেও মনে-প্রাণে তিনি এটাই বিশ্বাস করেন।
ডঃ জাকির নায়িক কখনই অস্বীকার করতে পারবেন না যে, হিন্দুদের ধর্মীয় কিতাবগুলো আল্লাহ তা’আলা এর বাণী নয় কেননা তিনি নিজেই বলেছিলেন,
এটা আল্লাহ তা’আলার বাণী হতেও পারে আবার নাও পারে ।
ডঃ জাকির নায়িক জোরোয়াসট্রিয়ানিজম একটি প্রফেটিক ধর্ম হিসেবে এবং এর প্রবর্তক জোরোয়াস্টারকে নবী হিসেবে দাবী করেছিলেন। তার একটি লেকচারে বলেন,
জোরোয়াসট্রিয়ানিজম একটি নন সিমিটিক, আরিয়ান, নন ভেদিক ধর্ম যা হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং প্রফেটিক ধর্ম। জোরোয়াসট্রিয়ানিজমকে প্যারিসিজমও বলা হয়ে থাকে এবং এটার প্রবর্তক প্রফেট জোরোয়াস্টার।
— বিভিন্ন ধর্মে স্রষ্টার ধারণা, সিডি, ইসলাম ও ভুল ধারণা, লেকচার সিরিজ, ডঃ জাকির নায়িক, আহিয়া মাল্টি মিডিয়া ১২, এনলাইটেনিং সেশন
পবিত্র কুর’আন ঘোষণা দেয় প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ আলাইহিমুস সালাম আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে একই বার্তা বহন করতেন। কিন্তু জোরোয়াস্টার আগুনের পূজার করা জন্য বলত, অর্থাৎ অগ্নীপূজারক। আমরা বুঝতে পারলাম না ডঃ জাকির নায়িক কেন জোরোয়াস্টারকে নবী হিসেবে ঘোষণা দিলেন!!