পবিত্র কোরআন শরীফের আলোকে “ হায়াতুন্নবী” (ﷺ)
✅ কুরআন শরীফে আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছে।
হে নবী আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন আর তারাও মৃত্যু বরণ করবেন। সুরা আল-যুমার, আয়াত ৩০।
“প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।” সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫।
আবার আল্লাহ তায়ালা বলেন ,,,,
وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
সুরা আল ইমরান আয়াত: ১৬৯
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও রিযিক প্রাপ্ত।
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ
সুরা বাকারা আয়াত: ১৫৪
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।
আর নবীগণ যেহেতু শহীদগণ থেকে আরো উচ্চ মর্যাদার অধিকারী সেহেতু এই আয়াত দ্বারা নবীগণও জীবিত থাকা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়।
শরহে মুসলিম খন্ড নং৫ পৃষ্টা: ২৮।
নাইলুল আওতার খন্ড ৩ পৃষ্টা: ৮০।
মাআরেফুল কোরআন পৃষ্ঠা: ৮০।
বরং বরযখের এই জীবিত থাকার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা শক্তি সম্পন্ন হলো নবীগণ অত:পর শহীদগণ।
✔️✔️ আমাদের নবী (ﷺ) ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেছেন...
ﻛَﻴْﻒَ ﺇِﺫَﺍ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻛُﻞِّ ﺃﻣَّﺔٍ ﺑِﺸَﻬِﻴﺪٍ ﻭَﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻫَـﺆُﻻﺀ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ
“তবে কেমন হবে যখন আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো, এবং হে মাহবুব,আপনাকে তাদের সবার ব্যাপারে সাক্ষী ও পর্যবেক্ষণকারীস রূপে উপস্থিত করবো?” (৪:৪১)
মহানবী ( ﷺ) যা জানেন না বা দেখেননি সে সম্পর্কে তো তাঁকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে বলা হবে না।
ﻭَﺍﻋْﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻥَّ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
“এবং জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) রয়েছেন” (৪৯:৭)।
ْ ﻭَﺳَﻴَﺮَﻯ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻤَﻠَﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ,
“অতঃপর তোমাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল , ( ﷺ) ” [৯:৯৪]
ﻭَﻗُﻞِ ﺍﻋْﻤَﻠُﻮﺍْ ﻓَﺴَﻴَﺮَﻯ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻤَﻠَﻜُﻢْ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺳَﺘُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﻋَﺎﻟِﻢِ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻭَﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓِ ﻓَﻴُﻨَﺒِّﺌُﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ
ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ( 105
এবং “আপনি বলুন: আমল করে যাও; অতঃপর তোমাদের আমল প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( ﷺ) এবং মুমিন মুসলমানগন”(৯:১০৫)
সুতরাং প্রমান হল নবী কারীম (ﷺ) দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরেও উম্মতের আমলনাম প্রত্যক্ষ করবেন মানে কবর শরীফে থেকে !
সহীহ হাদীসের আলোকে “ হায়াতুন্নবী (ﷺ)
✅ হাদীসে বর্ণিত আছে,
عن أنس رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الانباء احياء في قبورهم
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণীত হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন নবীগণ নিজ নিজ কবরে জীবিত।
মুসনাদে আবু ইয়ালা খন্ড:৩ পৃষ্ঠা ৩৭৯ হাদীস নং ৩৪১২।
হাইছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ খন্ড ৮ পৃষ্ঠা ২১১।
হযরত আওছ ইবনে আওছ (রা:) সূত্রে বর্ণীত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন তোমরা বেশী বেশী আমার উপর দরূদ পাঠ কর কেননা তোরাদের দরূদ আমার কিট পেশ করা হয়। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল আমাদের দরূদ আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে? আপনিতো (দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার পর) মাটির সাথে মিশে যাবেন। অতপর রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন: আল্লাহ তা'য়ালা মাটির জন্য নবীগণের শরীর হারাম করে দিয়েছেন।
ইবনে মাযাহ শরীফ খন্ড: ২ পৃষ্ঠা ২৯১ হাদীস নং ১৬৩৭।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণীত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন যে কেহ আমার উপর দরূদ পাঠ করে, সে তার দরূদ পাঠ করা থেকে ফারেগ হওয়ার সাথে সাথেই আমার কিট পেশ করা হয়। আবু দারদা (রাঃ) বলেন: আমি হুজুর (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম: মৃত্যুর পরেও? হুজুর (ﷺ) বললেন মৃত্যুর পরেও, কেননা আল্লাহ তা'য়ালা মাটির জন্য নবীগনের শরীর ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নবীগণ জীবিত ও রিযিক প্রাপ্ত।
মুসনাদে আহমদ শরীফ খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা ৮ হাদীস নং ১৬১৬২।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণীত রাসূল (ﷺ) বলেন: যে কেহ আমার উপর সালাম পাঠ করে আমি তার সালামের উত্তর দেই। কেননা আমি জীবিত, সালামের প্রতিউত্তর দিতে সক্ষম।
আবু দাউদ শরীফ, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা৩৯১ হাদীস:২০৪১।
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণীত রাসূল (ﷺ) বলেন: মেরাজের রাত্রিতে আমি মুসা (আঃ) এর কবরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন মুছা (আঃ) নিজের কবরে নামাজ রত ছিলেন।
মুসলিম শরীফ খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ১৮৪৫ হাদীস নং ২৩৭৫।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা একথা প্রমানিত হয় যে নবীগণ কবর শরীফে স্বশরীরে জীবিত। সালাম শুনা সালামের উত্তর দেওয়া সহ অন্যান্য ইবাদত করতে তারা সক্ষম। তবে তাদের এ জীবিত থাকা সর্বক্ষেত্রে দুনিয়ার জীবনের মত নয়। দুনিয়ার যিন্দেগীর মত খানা পিনার প্রয়োজন হয়না। বরং আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে কুদরতী রিযিকের ব্যবস্তা করা হয়।
শরহে মুসলিম খন্ড ৫ পৃষ্ঠা নং৩০।
আওনুল মাবুদ খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২৩১।
মেরকাত খন্ড:৩ পৃষ্ঠা ৪১৫।
মুসলমানদের আকিদা হচ্ছে-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলমে বরযখে নিজ কবর মুবারকে সশরীরে জীবিত আছেন। তাইতো কোনো মুসলমান দূর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –
এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ… করলে সেই ব্যক্তির থেকে তা ফেরেশতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট পৌঁছানো হয় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। এছাড়া কেউ রওযা মুবারকের নিকট এসে সালাত ও সালাম পাঠ করলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি গ্রহণ করেন। এ হায়াতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আকিদা ইসলামের দলিল দিয়ে প্রমাণিত।
তথ্যসূত্র: ---
মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৭৮/
সুনানে বাইহাকি, হাদিস: ১৫৮৩/
সুনানে দারিমি, হাদিস: ২৭/
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ আক্বিদা বুঝার এবং বাতিল আক্বিদাকে প্রত্যাখান করার তাওফিক দান করুন। আমিন