ইবনে সা’আদ ও ইবনে আবি শায়বা হযরত আবু আল-আশহাব (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি (মদীনার সন্নিকটে) মুযায়না অঞ্চলের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে
রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত উমর (রা:)-কে কোনো নির্দিষ্ট জামা পরতে দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: “এটা কি নতুন, না ইতোমধ্যেই ধোয়া হয়েছে?”
হযরত উমর (রা:) উত্তর দেন: “এটা ইতোমধ্যেই ধোয়া হয়েছে।”
এমতাবস্থায় মহানবী (দ:) বলেন, “ওহে উমর! নতুন কাপড়-চোপড় পরো, অনিন্দনীয় জীবন যাপন করো, আর শাহাদাত বরণ করো!”
— এটি মুরসাল হাদীস
নোট
ইবনে আবি শায়বা (৮:৪৫৩, ১০:৪০২) ও ইবনে সা’আদ (৩:৩২৯) কর্তৃক দুর্বল মুরসাল সনদে বর্ণিত, কেননা হযরত আবু আল-আশহাব জা’ফর ইবনে হায়্যান আল-উতারিদী (রা:) ওই সাহাবীর সাক্ষাত পান নি; তবে আল-দুলাবী (১:১০৯) আল-বুসিরী (রহ:)-এর ‘মিসবাহ আল-যুজাজা’ (৪:৮২) বইয়ের ভাষ্যমতে আল-যুহরীর সূত্রে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মুত্তাসিল সনদে এটি বর্ণনা করেছেন; এঁদের সবগুলোই আল-বুখারী ও মুসলিম ব্যবহার করেছেন যা আল-হায়তামী (৯:৭৩-৭৪)-এর ভাষ্য দ্বারা সমর্থিত;
এই হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে ইমাম আহমদ তাঁর ’মুসনাদ’ (আরনাওত সংস্করণের ৯:৪৪০-৪৪২ #৫৬২০) এবং ফযায়েলে সাহাবা (১:২৫৫ #৩২২-৩২৩) গ্রন্থগুলোতে,
ইবনে মাজাহ,
ইবনে হিব্বান (আরনাওত সংস্করণের ১৫:৩২০-৩২২ #৬৮৯৭),
আল-বাযযার (যাওয়াইদ #২৫০৪),
আবু এয়ালা তাঁর ’মুসনাদ’ পুস্তকে (#৫৫৪৫),
আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (১২:২৮৩ #১৩১২৭) এবং আদ্ দু’আ (পৃষ্ঠা ১৪৩ #৩৯৯) কেতাব দুটোতে,
ইবনে আল-সুন্নী ও আল-নাসাঈ নিজেদের ‘আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লাইলা’ বইগুলোতে (যথাক্রমে #২৬৯ এবং ১:২৭৫ #৩১১),
আবু নুয়াইম তাঁর ‘আখবার আসবাহান’ (১:১৩৯),
আল-আযদী নিজ জামে’ পুস্তকে (১১:২২৩),
আবদ্ ইবনে হুমায়দ স্বরচিত ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩৮ #৭২৩),
ইবনে আবদ্ আল-বারর নিজ ‘আল-এস্তিয়াব’ কেতাবে (৩:১১৫৭),
আল-বাগাবী তাঁর ‘শরহে সুন্নাহ’ পুস্তকে (১২:৫০ #৩১১২), এবং
আল-বায়হাকী নিজ ‘শুয়াব’ গ্রন্থে;
গ্রহনযোগ্যতাঃ
এঁদের সবাই বর্ণনা করেছেন হযরত আবদুর রাযযাকের (#২০৩৮২) মাধ্যমে যাঁর সম্পর্কে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন যে আল-যুহরীর মাধ্যমে এই হাদীস বর্ণনায় তাঁর ভ্রান্তি ছিল, যা ইবনে রাজাব নিজ ‘শরহে এলাল আল-তিরমিযী’ পুস্তকে (২:৫৮৫) ব্যাখ্যা করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে আল-বুখারী এটাকে আত্ তিরমিযীর ‘এলাল’ (পৃষ্ঠা ৩৭৩) পুস্তকে ‘লা শাইয়’ তথা অনির্ভরযোগ্য বলেন;
ইবনে আদি নিজ ’আল-কামিল’ কেতাবে (৫:১৯৪৮) ‘মুনকার’ বলেন;
আল-নাসাঈ স্বরচিত ‘আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লায়লা’ যেখানে এয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-কাত্তান (রহ:)-এর উদ্ধৃতি রয়েছে।
দেখুন আল-বায়হাকী প্রণীত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ (৬:৮৫ #১০১৪৩) এবং ইবনে আবি হাতিম (যিনি ‘বাতিল’ বলেছেন) কৃত ’আল-এলাল’ (১:৪৯০)।
আত্ তাবারানী (রহ:) আল-যুহরীর পরিবর্তে আল-সাওরীর সূত্রে আরেকটি সনদে এই হাদীস বর্ণনা করেন নিজ ‘আল-দোয়া’ পুস্তকে (#৪০০)।
দেখুন -- আল-হায়তামী, মাওয়ারিদ আল-যামান (১:৫৩৬ #২৩৮১) এবং হযরত জাবের (রা:)-এর সূত্রে একটি দুর্বল সনদে আল-বাযযার এটি বর্ণনা করেন নিজ ‘মুসনাদ’ বইয়ে (যাওয়াইদ #২৫০৩)।
সংক্ষেপে, ইবনে হিব্বান এটাকে মৌলিক তথা নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করেন; আর ইবনে হাজর তাঁর ‘নাতাইজ আল-আফকার’ (১:১৩৭-১৩৮) গ্রন্থে সিদ্ধান্ত নেন যে এটা কমপক্ষে ‘হাসান’ (বিশুদ্ধ), যেমনিভাবে ইবনে হিব্বানের ’আল-আরনাওত’ সংস্করণও তাই মনে করে।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রওয়ায়াত করেন যে হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা:) একদিন জিজ্ঞেস করেন:
তোমাদের মধ্যে কে কে স্মরণ করতে পারো রাসূলে পাক (দ:) সেই ফিতনা সম্পর্কে কী বলেছিলেন যা সাগরের ঢেউয়ের মতো উত্তাল হবে?
হযরত হুযায়ফা (রা:) বলেন, “এয়া আমিরাল মোমেনীন, আপনার এ সম্পর্কে চিন্তা করা লাগবে না। কেননা, আপনার এবং ওই ফিতনার মাঝে একটি দরজা আছে যা বন্ধ।
আতঃপর হযরত উমর (রা:) বলেন, “ওই দরজা কি খোলা হবে, না ভেঙ্গে ফেলা হবে?
হযরত হুযায়ফা (রা:) উত্তর দেন: “ভাঙ্গা হবে।”
এমতাবস্থায় হযরত উমর (রা:) জবাব দেন: “দরজা খুলে দেয়ার চেয়ে ওটাই বেশি যথাযথ।”
পরবর্তীকালে হযরত হুযায়ফা (রা:)-কে জিজ্ঞেস করা হয় ওই দরজা বা ফটক কে, আর তিনি উত্তর দেন, “ওই ফটক-ই হযরত উমর (রা:)।”
তাঁকে মানুষেরা আবারো জিজ্ঞেস করে, “তিনি কি এটা জানতেন?”
উত্তরে হযরত হুযায়ফা (রা:) বলেন, “হাঁ, অবশ্যঅবশ্যই দিনের আগে যেমন রাত অতিক্রান্ত হয়, (তেমনি) আমিও তাঁর সাথে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কখা বলছিলাম।”
— হযরত আবু ওয়াইল শাকীক ইবনে সালামা থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন এটি
আত্ তাবারানী হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণনা করেন যে
রাসূলুল্লাহ (দ:) একটি প্রাচীর ঘেরা বাগানে অবস্থান করছিলেন, যখন হযরত আবু বকর (রা:) তাতে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন। হুযূর পাক (দ:) এরশাদ করেন, “তাকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং বেহেশতপ্রাপ্তির সুসংবাদও প্রদান করো।” এরপর হযরত উমর ফারুক (রা:) ওই বাগানে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, “তাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বেহেশত ও শাহাদাতের সুসংবাদ প্রদান করো।” অতঃপর হযরত উসমান (রা:) অনুরূপ অনুমতি চাওয়ার পর তিনি আবার এরশাদ ফরমান, “তাকেও প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বেহেশত ও শাহাদাতের সুসংবাদ প্রদান করো।
নোট
হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে দুর্বল সনদে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (১২:৩২৭);
আল-হায়তামী (৯:৭৩)।
আল-বাযযার, আত্ তাবারানী ও আবু নুয়াইম হযরত উসমান ইবনে মাযউন (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে হযরত উমর (রা:) প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি, ‘এটা গালক্কু আল-ফিতনা (বিবাদ-বিসম্বাদের বজ্র)। এই ব্যক্তি (অর্থাৎ, হযরত উমর) যতোক্ষণ তোমাদের মাঝে জীবিত থাকবেন, ততোক্ষণ তোমাদের এবং ফিতনার মাঝখানে একটি দরজা শক্তভাবে বন্ধ থাকবে’।
নোট
এই হাদীস বর্ণনা করেছেন আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৯:৩৮ #৮৩২১),
আল-বাযযার,
আল-ওয়াসিতী নিজ ‘তারিখে ওয়াসিত’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ২৪৪-৪৫), এবং
দুর্বল সনদে ইবনে কানী’ তাঁর ‘মু’জাম আল-সাহাবা’ কেতাবে (২:২৫৮ #৭৭৪);
আল-হায়তামী (৯:৭২);
গ্রহনযোগ্যতাঃ
এই রওয়ায়াতের বিশুদ্ধতা সমর্থিত হয়েছে আত্ তাবারানীর ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে বিধৃত বর্ণনায়, যেখানে ইবনে হাজর (রহ:)-এর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (১৯৫৯ সংস্করণের ৬:৬০৬) উদ্ধৃত তাঁরই মতানুযায়ী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে হযরত আবু যর গিফারী (রা:) হযরত উমর (রা:)-কে ‘ক্কুফল আল-ফিতনা’ তথা ’বিবাদের জন্যে তালা’ বলেছেন;
আল-হায়তামী (৯:৭৩) অবশ্য এর ব্যতিক্রমস্বরূপ সন্দেহ করেন যে হযরত হাসান বসরী (রা:) ও হযরত আবু যর (রা:)-এর মধ্যে কোনো বর্ণনাকারীর ছেদপড়েছে। একই বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে আদ্ দায়লামী নিজ ’আল-ফেরদৌস’ কেতাবে (১:৪৩৮ #১৭৮৫) উদ্ধৃত করেছেন।
আত্ তাবারানী হযরত আবু যর (রা:) হতে আরও বর্ণনা করেন যে নবী পাক (দ:) বলেন:
তোমাদেরকে কোনো ফিতনা-ই ছুঁতে পারবে না যতোক্ষণ এই ব্যক্তি (উমর ফারুক) তোমাদের মাঝে আছেন।
— ক্কুফল বর্ণনার একই সনদে আত্ তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে (২:২৬৭-২৬৮ #১৯৪৫)
একদিন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা:) শাম (সিরিয়া) দেশে মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন; এমতাবস্থায় এক লোক তাঁকে বলে, “ফিতনা আবির্ভূত হয়েছে!”
হযরত খালেদ (রা:) উত্তর দেন, “যতোদিন ইবনে আল-খাত্তাব জীবিত আছেন, ততোদিন নয়। তা শুধু তাঁর সময়ের পরেই হবে।”
নোট
ইমাম আহমদ, আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ কেতাবে (৪:১১৬ #৩৮৪১),
নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ তাঁর ‘আল-ফিতান’ গ্রন্থে (১:৪৫, ১:২৮১ #৮১৯) বর্ণনা করেছেন;
গহনযোগ্যতাঃ
এঁদের সবাই সনদের মধ্যে কায়স ইবনে খালেদ আল-বাজালী নামের এক অপরিচিত তাবেঈর সূত্রে এটি বর্ণনা করেন। তবে এই নিষ্কলুষ তাবেঈ গ্রহণযোগ্য বিধায় ইবনে হাজর তাঁর ’ফাতহুল বারী’ বইয়ে (১৯৫৯ সংস্করণের ১৩:১৫) এই এসনাদকে ‘হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) হিসেবে চিহ্নিত করেন।
দেখুন আল-হায়তামী (৭:৩০৭-৩০৮) এবং আল-মোবারকপুরী প্রণীত ‘তোহফাত আল-আহওয়াযী’ (৬:৩৬৮)।
হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা:) নিজ মতামত এভাবে ব্যক্ত করার কথা না; অতএব, দৃশ্যতঃ তিনি মহানবী (দ:) থেকে এটা শুনেছিলেন, নতুবা এমন কারো কাছথেকে শুনেছিলেন যিনি স্বয়ং মহানবী (দ:) থেকে শুনেছিলেন।
মহানবী (দ:)-এর অদৃশ্য জ্ঞানবিষয়ক ৮০টি হাদীস-[ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (রহ:)-এর ৯০০ পৃষ্ঠাব্যাপী গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহি আ’লাল আ’লামীন ফী মো’জেযাতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন (১৩১৭ হিজরী/১৮৯৯ খৃষ্টাব্দ) হতে সংগৃহীত]-মূল: শায়খ ড: জিবরীল ফুয়াদ হাদ্দাদ দামেশকী-অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন