শিশিরের শব্দ : পুরনো সংখ্যা
কবিতা
আমার অভিকর্ষ : মলয় রায়চৌধুরী
আমার কবিতা : খালেদ হোসাইন
যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে (এক) : শামীম রেজা
পরিক্রমা : তরুণ গাঙ্গুলী
ত্রিপদী : গোলাম কিবরিয়া পিনু
গন্ধ ও ঘ্রাণ : অঞ্জন আচার্য
হাইকু : প্রেম ও প্রকৃতি বিষয়ক(৫, ৭ ও ৫) : বচন নকরেক
উনুনের পাশে শীতরাত : শোয়াইব জিবরান
ক্রীতদাসের হাসি : সোহেল হাসান গালিব
কার্তিক কোথায় গেল? : আহমেদ শামীম
কুয়াশা : শামীম রফিক
গানের গাণ্ডীব থেকে: মাদল হাসান
দশমাতৃক দৃশ্যাবলি ( উল্টো রথ) : হিমেল বরকত
ফেলানির জন্য সামান্য শ্লোক... : সুমন সাজ্জাদ
আগুনের কী গুণ আছে : তারেক রেজা
শামীম সুফিয়ান : উপলব্ধি
গহীন জলের ভেতর খুঁজি প্রাক্তন মাছের বিচরণফতাব : শাফিক আফতাব
যদি ভুল হয়ে যায় : রোকন জহুর
আহমেদ বাসার : মোহিনীর শরীরী কলা
মেঘবালিকা : সুমন সাহা
তোমাকে ভালোবেসে আমি ক্লান্ত : ইমরান কামাল
বৃদ্ধাঙ্গুল : ইপন শামসুল
মেঘ গড়ালেই রোদ : অলভী সরকার
যাপিত জীবন : উন্মেষ ধর
আগুনের গন্ধ থেকে : মঈন মুনতাসীর
অবতার : মৌসুমী রায় (ঘোষ)
ক্রোধ : খালিদ হাসান তুষার
কঙ্কাবতী : তাহিদ
রাতের অন্ধকার : জাহিদা মেহেরুন্নেসা
কবিতা : ভোরের শিশির-এর জন্য
খোঁপা খুলে দাও : শামশাম তাজিল
আরাধনা : মেহেদী হাসান
আকাশে বাতাসে এখন : আনোয়ার কামাল
স্বপ্ন-বিলাস : নাঈমুল আলম মিশু
কপোতাক্ষ শুকিয়ে যায়, মফস্বল মরে যায় : সোহাগ আলী
তুমি ছাড়া মৃত্যুর পথে হাঁটা : সোহেল রানা
যাত্রী : তন্ময় বিশ্বাস
বৃক্ষের জবানবন্দি : মোঃ আব্দুল কাইয়্যূম বিপুল
আমার অভিকর্ষ
মলয় রায়চৌধুরী
১.
সূর্ষের আলো-খেকো আটখানা কুচকুচে ঘোড়া
যা আমার অভিকর্ষে গূঢ়, জানে যে আনন্দে আছি
পা-জোড়া রক্তে চুবিয়ে ; তোর গেঁয়ো ধিঙ্গি-নাচ
পিঠে বাঁধা সন্ত্রাস নিয়ে কলকাতার জংধরা নদী
অচেনা ভাষায় ভেসে যায়
২.
হাসলে তোমার নাভি থেকে বালিতে হেঁটেছে খুনে-সাপ
সুনামি শরীর জুড়ে ; আমি তো আনন্দে আছি
বুক ওব্দি পচনে ডুবিয়ে যে রোদ পারে না ছায়া গড়ে নিতে
তারই পাল্টা আপতনে আমারই অভিকর্ষে কালো
আগুনের আটখানা কুচকুচে ঘোড়া
৩.
আমি তো দিব্বি আছি । ওনারা অভিকর্ষহীন
বকলসে বাঁধা নানা রঙে সস্তা গুজবে ঠাসা দামি মণীষিরা
এঁটুলি-পেশায় উন্নীত । আমি তো দুমুখো পথ
কলেজ স্ট্রিট নামে লোকে চেনে । জানেনই
কণ্ঠস্বর দিয়ে চিন্তা করি ।
৪.
ধর্ম জাত মতামত বেশভূষা যা-ই হোক
দলে-দলে কানমুলে ছুটিয়েছি ; লেজ মুচড়ে আজও হাঁটাই ।
হতে চলল কয়েকশ বছর মানুষেরা আসে আর যায়
যায় আর আসে যায় আর আসে এমুড়ো-ওমুড়ো
বাস পোড়ে লোক মরে ধোঁয়া খেয়ে নতুন গর্জনও
৫.
যেখানে ছিলুম আমি সেখানেই আছি
এমুড়ো-ওমুড়ো ; কিছুই বদলায়নি এখনও
তার কারণ অভিকর্ষ আমার আমিতে রয়ে গেছে
২৫ জুন ২০১৩
আমার কবিতা
খালেদ হোসাইন
কবিতা বিষয়ে আমার কথাগুলো
সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে
আমার কবিতা।
কোনো-একটি কবিতার সঙ্গে হয়তো
সংঘর্ষ রচনা করবে অন্য-একটি কবিতা,
তবু তারা যখন সমস্বরে কথা বলবে,
তখন তুমি বুঝতে পারবে কবিতা সম্পর্কে
আসলে আমি কী বলতে চেয়েছিলাম।
এমনও হতে পারে তারা সবাই
এক সুরে কথা বলছে না,
এমনও হতে পারে প্রকৃতপক্ষে তারা তৈরি করেছে
এক দুঃসহ হট্টগোল
এমনও হতে পারে
কথা না-বলে তারা ঘটিয়ে দিল
মর্মান্তিক বিস্ফোরণ
এমনও হতে পারে তারা ছড়িয়ে দিল
শীতাভ নীরবতা
যা সমস্ত চরাচরে বয়ে আনবে এক
স্তব্ধ অন্ধকার।
এমন-কি তারা আবির্ভূত হতে পারে
হন্তারক হিসেবেও অথবা আত্মহন্তারক।
হতে পারে একটি কবিতা অকালের শিশিরে ভিজে
এমনই মিইয়ে যাবে যে, তার মুখে ভালোবাসার কথা
শোনাবে নিতান্তই হাস্যকর। হয়তো একটি কবিতা
অকথ্য দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেছে তার
ডান হাতের সমস্ত আঙুল, যা কোনো
পিচঢালা পথের কিনারে
টিকটিকির লেজের মতো
অদ্যাবধি লাফিয়ে চলেছে।
একটি কবিতা বেড়াতে গেছে
টেংরাটিলায়--
পাহাড়ি কন্যা কল্পনার মতো
যে আর-কোনোদিন ফিরে আসবে না
স্বেদাক্ত মর্মের মৃত্তিকায়।
অথবা কল্পনা চাওলার মতো চিরকাল
মহাকাশে ভেসে বেড়াবে, এই তার পণ। জীবনের
অন্তর্গত মানচিত্র বদলাবে বলে
একটি কবিতা বছরের পর বছর
মধ্যপ্রাচ্যে নাইটশিফটে
কাজ করছে। একটি কবিতা ফ্লোরিডায়
নিগ্রোকন্যাকে ভালোবেসেছে গ্রিনকার্ডের মোহে,
এখন সে সারাসপ্তাহ টেক্সি চালিয়ে
উইক-এন্ডে রাতভোর মদ্যপান করে।
একটি কবিতা আটকে পড়েছে জয়পুরের
জি হোটেলের লিফটে, একটি চুম্বনের আকাঙ্ক্ষায়
সে থরথর করে কাঁপছে। ডিএমসির গাইনি ওয়ার্ডের
বারান্দায় রুক্ষচুল খুঁটেখুঁটে একটি কবিতা
বের করে আনছে রক্তভুক ঢাউস উকুন; বলাইবাহুল্য,
এ-কুমারী মাতার সঙ্গে
মেরিনাম্নী বিখ্যাত মহিলার কোনো
সম্পর্ক নেই, এমন-কি মেয়েটি তার
নামও শোনেনি; কোনো মিশনারি
এখনো তার ছায়া মাড়ায়নি।
আমার গরিব কবিতাগুলোর সঙ্গে
তোমার কি কথা বলবার সময় হবে,
অপুষ্টিতে যাদের স্তন কীটদষ্ট লাউয়ের মতো
ঝুলে পড়েছে?
একটি কবিতার জরায়ুতে কর্কট রোগ;
তার নিজের ধারণা এটা খুবই সুখকর, তাই
সে এখন সোনামুখে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করছে।
খিস্তি-খেউড়ে এদের দক্ষতা মন্দ নয়, তবে
ভদ্রলোকদের সঙ্গে মিতবাক। তা-নাহলে
তুমি জানতে পারতে, এদের প্রত্যেকের
হিরন্ময় ডানা আছে। এমন-কি মাঝেমধ্যে
এরা পেটে-ভাতে দিনভর পলিটিক্স করে। ফলে
কদাচিৎ মরতেও হয়। তবে এরা কেউ
মৃত্যুভীতু নয়।
বিকারগ্রস্ত একটি কবিতা ভাগ্য বদলাবে বলে
কয়েক বছর যাবৎ খুঁজে ফিরছে হাওয়ার বাড়ি।
একটি কবিতা খুবই আশাবাদী, কারণ তাকে
প্রায়ই ৩২ নম্বরের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে
দেখা যায়।
একটি কবিতা উত্তর-চলি¬শের বেদনায়
জর্জর। তার ধারণা প্রয়োজনীয় যৌনচর্চার অভাবে
তার জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে, তাই
সম্প্রতি এস্তেমাল করে ফিরছে অন্য-রকম নারী।
সর্বশেষ সাক্ষাতে সে তার
সাফল্যের বয়ান দিতে দিতে
ভাদ্রের একটি দুপুরকে অন্তঃসারশূন্য করে
চলে গেছে চোখে গাঢ়-নীল
সানগ্লাস পরে।
রাত যত বাড়ে
একটি পরকীয়া কবিতা আমাকে তত
আহ্বান করে; সে তার গোলাভরা শস্য
আমাকে দেখাবে বলে নিয়তির মতো টানাটানি করে।
সে এত অসঙ্কোচ ও দুঃসাহসী যে, আমাকে
পালিয়ে বেড়াতে হয় একটি সত্তা থেকে অপরসত্তায়,
এক কানাগলি থেকে অন্ধকূপের মর্মান্তিকতায়। আর
গত ফাল্গুন মাসে
আমি খুঁজে-পেতে ডেকে এনে বুকে বসিয়েছি
আমার মৃত্যুদূতকে। সে এখন
মাঝে-মধ্যে আমার শরীরে ছড়ঘষে
সুরের সিম্ফনি ছড়ায়।
শিলটন হোটেলের ছাদে
আমার উচিৎ হয়নি যাওয়া, কেননা,
আমি জানতাম, আমার মতো গোবেচারাদের জন্য
গ্রীষ্মের পূর্ণিমা কখনো নিরঙ্কুশ
আনন্দ বয়ে আনে না। উনিশ-বর্ষীয়া একটি কবিতা
আমাকে ঠেলতে ঠেলতে উঠিয়ে দিল
সর্বনাশের চূড়ান্তে আর আমাকে দেখতে হল
রসুনের খোসায় ঢাকা মৃত্যুর রহস্যময় মুখ Ñ
লুম্বিনী গ্রাম থেকে ঢের দূরে।
আমি স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের জন্য দীর্ঘকাল
চুম্বন করেছি ছন্দের বাঁট,
রঙ ও রেখার সমান্তরালে লালন করেছি
পদিপিসির বর্মিবাক্সের চোখ-ধাঁধানো
অলঙ্কার, যা আমাকে একদিন বীতস্পৃহায়
ছুঁড়ে দিল দূরতম মেরুর শেষবিন্দুতে।
ততক্ষণে আমার ভাণ্ডারে এক দানাসর্ষেও
সঞ্চিত হয়নি বা একরত্তি চন্দনের সুবাস।
আমাকে তাই করতেই হল শিকার-যাত্রার
আয়োজন।
গত রাতে একটি কবিতা
ধল প্রহরে আমাকে ডেকে তুলল
নিদ্রার গহীন ডুব-সাঁতার থেকে,
বলল, অনেক স্বপ্ন দেখেছ, এবার একটু
বাস্তবতা দেখ। আমি
নিষ্কলুষ চোখে চারপাশে তাকাতেই দেখি, সবকিছু
গলিত লাভা হয়ে অপূর্ব সব দৃশ্য
রচনা করতে করতে
দিগন্তের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
দিগন্ত-- যেখানে সব সময় বাতাসে উড়তে থাকে
আবছায়ার অখণ্ডিত উত্তরীয়।
যখন রাত্তির নাইমা আসে সুবর্ণনগরে (এক)
শামীম রেজা
এমন পাগলা বয়স, ঘুমরাত্তিরে মাটির বাঁশিবুকে ঘুমাইতে
পারি না, পাপ স্পর্শ করে না চোখের পাতা-পানশালায়
সাতাইশ বছর পইড়া আছি, বেহায়া বাতাস পিছন ছাড়ে
না ¾ অনুভূতির রহস্য আছড়ে পড়ে বুকে, দুঃখের
দেয়ালে ধাক্কা মারে ¾ ; পৃথিবীর বুকে ঘুট-ঘুটে আন্ধার
নিয়া অনিচ্ছায় শুইয়া থাকি কত কত বছর; চোখের লাই
ভাঙে না ¾ পুঁথির গয়না পরি সাঁঝবেলায়, শামুকের
ভিতর দিঘীর ঢেউ গুণি¾ ; ইন্দ্রপাশা গ্রামের মেলায়
পাশা শিকারীদের সঙ্গে পাশা-পাশা খেলি, ঘুম আসে না;
ধুলামাখা চাকতির মতো শবরীর স্তন, সবই কলকব্জা মনে
হয়, ছেউড়িয়ার ঘাটে সিকিচাঁদ পইড়া থাকে দীঘল দৃষ্টির
আড়ালে – এসব আমার চোক্ষে ধরে না । ময়মামতির
বৃক্ষ-ডালে মধুরাত্তিরে, জলপ্রণয়ী পাখিসাঁতারও ভালো
লাগে না; লাঙলের ঘষা খাওয়া রেখাহীন হাত দেইখা-
দেইখা মানুষ- জন্ম ভুইলা যাই, আদি-আদিম-একই
ঘৃণা কামশ্বাস-কোথাও ভালোবাসা নাই । পদ্মা-সুরমা-
কুশিয়ারা-আগুনমুহা কত কত নদী নাম বুকে বাজে না,
ঘুম আসে না; একবার কলমদহে প্রিয়তমার শরীর দাহ
হলে কমলারঙের আগুন ছড়ায়েছিল পূর্ণতোয়ার জলে;
আর আমি সেইদিন থেইকা সাঁতার কাটছি আগুন-জলের
ভিতর, তাতেও মৃত্যু আসে না ।
এমন পৃথিবীতে ঘুম আসে না – মৃত্যু আসে না ।
পরিক্রমা
তরুণ গাঙ্গুলী
হাজার ক্রুশবিদ্ধ যীশু বুকে নিয়ে বেঁচে আছি আজও।
প্রাচীন রোমানসাম্রাজ্যের পতন, ফল অফ বার্লিন,
ট্রাফালগার, টিয়েনানমিন স্কোয়ার,
বসনিয়া-চেচনিয়া, কাবুল-কাশ্মীর-বাগদাদ,
চেঙ্গিস থেকে ফুয়েরার, মুসোলিনী-প্রভাকরণ,
কোটি গলিত শবের দুর্গন্ধ আমার শোণিত ধারায়,
শিরায় উপশিরায়।
পাপ-পূণ্য, স্বর্গ-নরক কল্পনার অলস বিলাস,
সবাই ফস্টাস, আত্মা বিকিয়েছে মেফিস্টোফিলিসের কব্জায়।
শুষে নাও ভোগের সম্ভার, এই তো মাহেন্দ্রক্ষণ,
দামাল দেহে হৃদ নেই, শুধু পিণ্ড পড়ে আছে ---
মুহূর্তের অপেক্ষা, শয়তান প্রস্তুত প্রাপ্যের আশায়।
ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ পৃথিবীতে হয়নি একটিও --- তাই তো রামচন্দ্র-বিভীষণ, যুধিষ্ঠির-অর্জুনেরা
নীতিযুদ্ধে বারবার পরাজিত - পর্যুদস্ত রাবণ-মেঘনাদ, কর্ণ -ভীষ্মদের কাছে।
পাঞ্চালী-সীতার লাঞ্ছনায় যারা পেল অমরত্বের সন্ধান,
হীন কূটনীতিতে শকুনিকে অক্লেশে হারায় যে কৃষ্ণ,
সঙ্গত কারণে তারাই আজ নিত্যপূজ্য, শাশ্বত আদর্শ।
জয়ী হতে চাই যে মোরা-- কীভাবে-- অগ্রাহ্য।
তাই বুঝি পূর্ণিমার রূপালী সন্ধ্যায় ---
কোন ষোড়শীর ভীরু প্রেমালাপে
শুনি লেডি ম্যাকবেথের জিঘাংসা,
কোমল শিশুর নিষ্পাপ হাসিতে দেখি
Exorcist-দুহিতার লোলজিহ্বা বিস্ফারণ!
হে জারজ ধরিত্রী, কতকাল প্রসিবে তুমি বিকলাঙ্গ সন্তান?
বৃহন্নলা - শিখণ্ডীদের অজগর চাহনিতে
বীরেরা যে হয়েছে নিশ্চিহ্ণ!
একা হোমার - কালিদাস - সেক্সপীয়ার বা
একটি বুদ্ধ-যীশু-মহম্মদ কি করিতে পারে
লক্ষকোটি ক্লীবের মরণাসক্তির অবসান ?
প্রতি রাতে আঁধার যখন কালো হয়,
শয়নে যে মাত্র প্রার্থনা আমার চোখে ঘুম আনে,
নিদ্রাভঙ্গে প্রত্যুষে উঠে দেখি, হয়নি তা পূরণ।
নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ অঙ্গুলিহেলনে দেখিয়ে দেয়,
পাপক্লিষ্ট, কুব্জন্যূব্জ, মেহমেদুর নিরাত্মা দেহখানি
তখনও ফেলিছে নিঃশ্বাস ---
সর্পিণীর মত বিষাক্ত সে বায়ু!
ত্রিপদী
গোলাম কিবরিয়া পিনু
১
কিন্নরী তোমাকে কীটে দংশন করছে
তারপরও আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়
কালোবাজারে কি নিজেকে বিলিয়ে দিলাম!
২
কুলপ্রথায় কুলবধূ কুল ভেঙে
আসতে পারে না
কী আর কুশল জিজ্ঞাসা করবে!
৩
ঝুড়ি ঝুড়ি কষ্ট নিয়ে ঝড়ে পড়ে যাই
বহনের শক্তি আর থাকে না
টগবগানো অবস্থা লুপ্ত হলো কেন?
৪
ঝোপঝাড়ে আমিও লুকিয়েছি
কিন্তু একেবারে লুপ্ত হয়ে থাকেনি
নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ্যই থেকেছে বেশিরভাগ!
৫
কপটপ্রণয়ে কবুতর পোষা যেতে পারে
তবে সন্তানের জন্য
স্নেহের পরশ কমনীয়তা নিয়ে আসে।
গন্ধ ও ঘ্রাণ
অঞ্জন আচার্য
গন্ধ ও ঘ্রাণের মাঝে খানিকটা তফাত আছে
একটা হাওয়ায় ভাসে-
অন্যটা টেনে নিতে হয় বাতাসের শরীর থেকে।
রোদের আছে গন্ধ-
শীতের নরম চাদর গায়ে বাতাসে বেড়ায়
ছায়ার আছে ঘ্রাণ-
তীব্র তাপে জলের কাছে হাওয়ায় মিলায়
ধুপছায়ায় দাঁড়ালে গন্ধ ও ঘ্রাণের কাঁধে রাখা যায় হাত।
হাইকু : প্রেম ও প্রকৃতি বিষয়ক
(৫, ৭ ও ৫)
-বচন নকরেক
এক. শালুক বিলে,
মাছের নিমন্ত্রণ;
অপূর্ব পদ্ম...
দুই. খসা পালক,
বৃক্ষ বিবরে শীত !
হৃত সঙ্গীত...
তিন.
শিল্পই নারী,
সার্কাসে নাচে যারা,
মুগ্ধ স্রোতারা...
চার.
শিল্পের সেঁতু ,
ঝোলছে তেপান্তরে;
উড়াল সাঁকো...
পাঁচ.
সাঁতার কাটি,
গোপন জলাশয়ে;
তোমাকে নিয়ে...
উনুনের পাশে শীতরাত
শোয়াইব জিবরান
উনুনের পাশে বসে আছি, জবুথুবু।
নাচিচে প্রেতিনী, ডাকিনী, যোগিনী, বহাভূতগণ গগনবিদারি
তবু শীত নাহি যায় আজ এই রাতে।
এই উনুনের সাথে যোগ আছে হাবিয়া দোজখের
যতসব মাতৃগামী, সমকামি, অনাচারি, ব্যভিচারিগণের শিৎকার ভেসে
আসিতেছে
দপদপ পুড়ার ফলে সাতগুণ আগুনের।
ক্রীতদাসের হাসি
সোহেল হাসান গালিব
কে না জানে আরব্য রজনীর গল্প আর সেই গল্পের দৈত্যের কথা! তার অসীম ক্ষমতা। গন্ধমাদনের তুল্য
একটি প্রাসাদ উড়িয়ে আনতে পারে অবলীলায়---বিশল্যকরণীর মতো রাজকুমারী সমেত---ভিখারির
আঙিনায়। করতে পারে সে অনেক কিছুই---ধ্বংস ও সৃজন দুই হাতে তার; অথচ অবাধ্যতা এতটুকও
নয়। সে তো আজ্ঞাবাহী। হুকুমের দাস। হিতাহিত বিচারের ভারহীন।
অনেক রজনী পার হলো। এইসব কথা ও কাহিনিতে শেষ হলো দিবসের গল্প। হৃদয়ের উপর ছায়া ফ্যালে
যে দেবদারুবীথি, তারা সব জোছনার সরণীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ভগ্নজানু।
অতনু, তোমার উপেক্ষার নিঃশব্দ কোটরে, কৌটায় আমি বন্দি। পঞ্চশির তারার অনাত্ম কম্পনে এই যে
তোমার কণ্ঠে এনেছি গান, চিবুকে হিমশৈলের রৌদ্রবিভা; এই যে আমাকে রেখেছো ঢেকে অরণ্যের হলুদ
পাতার স্তূপে, হাতের তালুতে রেখে শিশিরবিন্দু, ভিজিয়ে নিয়েছো ভাগ্যরেখা---
একদিন সব ওলটপালট হবে। বরফে শিখার লেহন শেষে পর্বত সকল দুমড়ে গিয়ে অচিরাৎ সমুদ্রের
ফেনিল জায়নামাজের ঢেউয়ের ’পরে খাবে লুটোপুটি। সেজদা থেকে তখন উঠে দাঁড়াবে তিমি, খিন্ন
খিজিরের পাশে, স্বপ্নভঙ্গের মতো।
তবু সত্য, আমি কিম্ভুত ও কিমাকার। কিন্নর বিভ্রম যার। দেবি, তুমি কি তোমার কণ্ঠ শুনতে পাও!
শুনতে কি পাও, তোমার সংগীতে এক বন্দি দানবের হাসি-হাহাকার?
কার্তিক কোথায় গেল?
আহমেদ শামীম
চন্দনা-
চলে গেছে সেই কবে
কোলকাতা- বলে গেছে
এসো একদিন- বেড়াতে-
রাতে বসে চাঁদের-চিতায়
পুড়ে খাক হওয়া যাবে
কার্তিক বলেছিল
কাজ আছে চন্দনা
কাজ আছে- এন্তার কাজ-
বিরাম পাবো না
কার্তিক-
মিশমিশে কালো এক আবলুশ কাঠ
জেলা কমিটির নেতা- কাঁধে ক্যাম্বিস ঝোলা-
পায়ের গোড়ালিতে আঁকা চৈত্রের মাঠ
হামিদের গুরু- চন্দনার চিরকালের প্রেম-
হামিদ-
বয়স তখন তার আর কত
ষোল কিংবা খুব বেশি হলে
আঠারোর মত- তরুণ করুণ চোখে
চেয়েছিল চন্দনার চলে যাওয়ার দিকে
বলেছিল, দাদা, ভুল হল নাতো!
ভুল-
কী দারুণ মিল ভোলার সঙ্গে তার-
ভুলে গেছি ১৯০৫, ’১১, ’৪৭, ’৫২ আর
’৭১: ব্রিটিশ-ভারত-পাকিস্তান:
ধর্ম-জাতি-ভাষা- এসবের তলে ফেলে
মানবের মুক্তির আশা- বিনিময়ে পেয়েছি এ দেশ
দেশ-
সিঁড়ি বেয়ে আগ্নেয়গিরি-মুখে
উঠে গিয়ে উন্নতি হল-
এই সুখে- গিরি গালে গাল রেখে
ঘুমিয়ে পড়েছো তুমি!
জানলে না কার্তিক নিখোঁজ-
আজ বহুদিন হল-
হামিদ বেচে খায় কার্তিকের লাল বইগুলো
যাদবপুরে চন্দনা পড়াচ্ছে রুমি।
কুয়াশা
শামীম রফিক
এক.
টুপটাপ বৃষ্টি। থামানো গেলো না মালগাড়ি, থামলো না সন্ধ্যা। শেষ প্রদীপের প্রত্যাশায় যে যার মতো ছুটে যায় বিষণ্ন অন্ধকারে। রেডরেস থেকে কালীমন্দির, বিপরীত গন্তব্য আমাদের। সময়কে তুমি বেহিসাবী উদাসীন কুয়াশার আড়ালে নির্বাসন দিয়ে হাহাকার করছো্ এখানে বড়ো একা বর্ণিল জীবন। পোড়া সূর্যের ধোঁয়াতে জন্মানো ছাই ঢেকে দিয়েছে চাঁদের রমণীয় শরীর। নিঃশ্বাসও কষ্টের। কিন্তু রোজ নামে সন্ধ্যা, মাঝে মাঝে চাঁদ। এইভাবে প্রতিদিন বুকের জমিতে চলে মায়াবী ঘর্ষণ। অনাহুত শীতের বাড়াবাড়িতে মাতাল ধোঁয়ার কী যে পরিপূর্ণ লাম্পট্য! ভাবা যায় না। তবু বাড়ে কর্পোরেট ভবঘুরে, দৈন্যতার মায়াজালে আবদ্ধ অচেনা মানুষ।
কিন্তু হৃদয়ে জন্মানো দুঃস্বপ্নগুলো নিঃসঙ্গতায় ভারী করে তোলে ঘূর্ণায়মান স্মৃতির পাহাড়। নাটমন্দিরের ছায়াতলে বসে তাদের মোহনীয় মাতাল আড্ডা। দ্বিধাগ্রস্থ ওরা আজন্ম ছায়া খুঁজে। আর একটু ওপরে উঠবে বলে ধাক্কা দিয়ে কী যে উল্লাস! পবিত্রতা চুরি করে ফুলদানিতে জমা হয় ডালিমের রক্তবর্ণ চোখ। তবু আহারের পাশে প্রায়শ্চিত্য রেখো কিছু। লাম্পট্য ভালোবেসে তাঁদের চোখ থেকে ঝরে পড়ে কুয়াশার বৃষ্টি, শর্ষে ফুলের মতো সবকিছু ভিজে একাকার হলেও কোনো ক্ষতি নেই। খুব জানি, ভুলগুলো একদিন না একদিন মাইগ্রেনের মতো ভুলাবে। তবু কী যে লাভ বিকৃত করে মানুষের কংকাল।
দুই.
সময়ের বাইরে যাবো বলে মাতলামি এতোটা। জন্ম বা মৃত্যু সে যেভাবেই হোক। ট্যাক্সির জানালা খুলে রোডজ্যাম দেখে, মশারী কেনো আর বিরক্ত যাই হও না কেন-মসজিদের মিনার থেকে নামবে না গম্বুজ। কষ্ট দ্যায় কুয়াশা অনুমান করি। কিন্তু ছাড়ছে না মৃত্যু; সবাই মরবে। দেখছো না এতকিছু পেয়েও অতৃপ্ততা কাঁদায় যেনো অবুঝ শিশু সবকিছু পেয়েও কেউ কেউ মনে রাখে দূরবর্তী পাহাড়ের ছবি, কাশবন, ক্ষুধা আর নদী। ভুলে না। অতৃপ্ত ঘুমের মিছিলে রাত্রিরা ইতিহাস। রাতভর ঝরে পড়ে তাদের নানাবিদ বিদ্রোহী স্লোগান। বিচিত্র রাত সময়ের সওয়ার হয়ে নেমে আসে রাজপথে। তাঁদের চোখে-মুখে মুখরিত স্লোগান দেখে উল্লা্সে হাসে জেব্রাক্রসিং। নারী ও কুয়াশার মুখরিত ব্যর্থতায় খুন হয় রাজপথ মাতাল পাহাড়ের চাপে। জমা হয় দীর্ঘশ্বাস। দীর্ঘরাত, তবু জয়-পরাজয় কেউ না কেউ পেয়ে যাবে নিশ্চয়্।
বার বার ফিরে আসে, চিনে নিতে চায় নিজস্ব ইজারাঘাট ভঙ্গুর পৌরুষের বিনিময়ে। হ্যামলক প্রাচীন স্মৃতি, ঘুমের প্রার্থনা প্রতি রাতে। স্বজনেরা নব ধোঁয়ার মতো গোলাপের ধ্যানে মগ্ন ঠাণ্ডাঘরে। কেন যে তাঁদের খুঁজি, দৃশ্য গত হলে প’রে! শর্ষে ফুলেরা হাসে কুয়াশার নুপুর পড়ে। স্বাদহীন মৃত্যুকে ভালোবেসে কিছুটা অনিয়ম চাই যতটা পারি না ঘুমহীন থেকেও।
তবু মৃত্যু হানা দেয়, গ্রাস করে, ক্ষমা নেই কোনো!
গানের গাণ্ডীব থেকে
মাদল হাসান
ক্ষ্যাপা খুজলি জনমভর পরশপাথর...
শুধু স্পর্শ করলি না নিজের গা তোর...।
কালোকাঞ্চনসম
পরশপাথর হয়ে কোথায় ভ্রমো?
কতজনে হ'লো সোনা...
গুনলে যায় না গোনা...
যে-সাগরে এত নোনা
সে কি তবে নুনআশে হয়েছে কাতর?
আতর বলছে, কেন এতটা সুবাস?
আমোদিত হয়ে আছে আজ চারপাশ...
' কে তাকে বলবে, তুমি নিজেই আতর'?
সূর্য বলছে, চাদ,
জোছনার এত স্বাদ...
' অবশেষে অপবাদ...
বলে চাদ, তা তোর...।
ক্ষ্যাপা খুজলি জনমভর পরশপাথর...
শুধু স্পর্শ করলি না নিজের গা তোর...।
দশমাতৃক দৃশ্যাবলি ( উল্টো রথ)
হিমেল বরকত
পেলাম যাকে হারাই তাকে পেয়ে,
দূরে যে ফের তার দিকে যাই ধেয়ে।
একূল ওকূল দুকূল ভাঙে স্রোতে
না-পাওয়া সুখ উপুড় হয়ে কাঁদে।
বাউল আঙুল বাজায় যে তাই বাঁশি-
হারিয়ে পেলাম পাওয়ার চেয়ে বেশি।
না-দেখেই আজ অধিক হল দেখা,
না-পাওয়া ঘর স্বপ্নে বাড়ুক একা।
মুখ ফেরালাম চাঁদের বিপরীতে
জোৎস্না ফুটুক, ফোটে যদি চোখে।
বার্ডস আই ভিউ
সুমন সাজ্জাদ
(ফেলানি, কাঁটাতারে রক্তাক্ত প্রজাপতি --- কন্যা ও জননী)
খুব অবাক হচ্ছো, তাই না? পাখিদের কেন পাসপোর্ট নেই?
ভাবছো, ঠিক কোনখানে আকাশের কাঁটাতার? নোম্যান্সল্যান্ড?
ওখানে কি পাখিশিশু বসে? গান গায় হারানো মায়ের খোঁজে,
হারানো বাবার খোঁজে? মায়ের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট রেখে স্নেহ
নেয়, আনন্দ-শুশ্রূষা নেয়? ভাবছো, পাখিদের জেলখানা আছে?
বুলেট-বন্দুক-সীমান্তপ্রহরী? দক্ষিণের একটি পাখি যদি বটফল
ঠোঁটে ক'রে উড়ে যায় উত্তরে, যদি ছোঁয় কুতুবমিনার, উত্তরের
একটি পাখি যদি ছুঁয়ে ফেলে ইতিহাস, ঈশা খাঁর কামান, পাহাড়পুর,
পুণ্ড্রবর্ধন, যদি ভেঙে ফেলে আকাশপরিধি তখন কি গর্জায় মাংসভুক
করুণ কার্তুজ? পালক ভেজানো রক্ত কি ঢেকে দেয় দিগন্তদুপুর?
পাহাড়চূড়ায় বসে লাল-নীল পতাকাবৈঠক? তখন কি উপড়ে যায়
মানচিত্র-সার্বভৌম-প্রাচীর-প্রাকার? এক ঝাঁক সশস্ত্র আবাবিল
পাথরে পাথরে কখনও কি ভেঙে দেয় টুনটুনি-সংসার,বাবুইবসতি?
খুব অবাক হচ্ছো, তাই না? ভাবছো, এইসব সহজ জিজ্ঞাসা
উড়ে যাচ্ছে জটিলেশ্বর মানববসতির দিকে যেখানে রাষ্ট্রসংঘ, তেলখনি,
আফ্রিকার দাস, ভারতীয় সিনেমা ও বঙ্গোপসাগর এক সাথে খেলা করে...
তারেক রেজা
আগুনের কী গুণ আছে
আমাকে জ্বালাতে চাওÑ আগুনের সাধ্যের অতীত
হাড়ের গভীরে আমি চিতার চাবুক পুষে রাখি
ঝিনুকের ম্লান চোখে জল হয়ে যদি বসে থাকি
তোমার গ্রীষ্মের গায়ে আমি হবো শিশিরের শীত
এমন অবাধ্য দিনÑ মুছে দেয় ঘরের ঠিকানা
অপেক্ষার ডান চোখে কেঁপে ওঠে মৃত্যুর ছায়া
সময়ের গতিবিধি ভুলে যাও : এমন বেহায়া
বিকেলের মেঘে তুমি পঙ্খিরাজ : মেলে দেবে ডানা
আমাকে ভেজাতে পারে অন্য এক বাতাসের গান
প্রণয়ের পাঠ শেষে ঘসে যায় রাতের আঁচল
জলের শরীরে তুমি ঢেউ ছিলে আজ শুধু জল
কবিতার পানপাত্রে লিখে রাখি পুরনো আখ্যান
লোক্যাল ট্রেনের মতো ক্লান্তিকর জীবনের প্রেম
হরতাল অবরোধে ঝুলে থাকে স্তব্ধতার ফ্রেম
০১ ডিসেম্বর ২০১৩
শামীম সুফিয়ান
উপলব্ধি
উপলব্ধি-১
ভিজতে চাইলেই কি বলো ভিজে ওঠা যায় বৃষ্টি?
পলিথিনে মোড়ানো নকল নাগরিক জীবন…
যেদিকে দৃষ্টি, দেখি আমাদেরই রক্তের ঘ্রাণ,
বুঝতেই পারিনি শা…লা! খুন হয়ে গেছি কখন!
উপলব্ধি-২
কিছু ভ্রুণ বোঝে না প্রাণের স্পন্দন!
কিছু জন্ম পায় না জীবনের স্বাদ-স্বপ্নের কোনো ইঙ্গিত!
গতির গন্তব্য দিগন্ত যখন-
ইঁটচাপায় বেড়ে ওঠে হলুদ ঘাস আর বিষাক্ত বৃশ্চিক।
(১৮ আগস্ট ২০১৩, মিরপুর, ঢাকা)
গহীন জলের ভেতর খুঁজি প্রাক্তন মাছের বিচরণফতাব
শাফিক আফতাব
ভালোবাসিয়াছে কেউ তোমাকে__যদি মনে করি, রক্ত পানি হয়ে আসে __
কেউ ভালোবাসে নাই তোমাকে__কিংবা তুমি, যদি মনে করি, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়,
এক গাঢ় অনুভবে আমি বোদ্ধা এক পুরুষ হই,
হই পৃথিবীর সেরাসুখী মানুষ__সুবাসের উৎসবে চারপাশ ম ম করতে থাকে।
আমি তোমার চোখে চোখ রাখি, তোমার বুকে কান পেতে শুনি কলরব,
থার্মোমিটারে মাপি তাপমাত্রা__আমি তোমার শ্বাসের গন্ধ শুঁকি, অন্তর্গত সৌন্দর্য অনুপুঙ্খ ব্যবচ্ছেদ করি,
তোমার গভীরে যাই__গহীন জলের ভেতর খুঁজি প্রাক্তন মাছের বিচরণ __
কিছু বোঝা হয়ে ওঠে না আমার, আমি এক অচেনা রহস্যলোকের দিকে ক্রমশ যেতে থাকি,
তোমাকে বড় রহস্যমানবী মনে হয়।
ভালোবাসা কেউ বাসিয়াছে কি-না ? সে তো বিশ্বাস, ঈশ্বরের অস্তিত্বের মতোন,
সমুদ্রের জলে মাছরাঙা ঝুপ করে পড়েছি কি__ ? সে তো এক বোকার ভাবনা
ফলত তোমাকে আমি আর ব্যবচ্ছেদ করি না__
তাই বাড়ে উদ্বেগ___এত রহস্যময় তাই ভালোবাসার মেঘ।
১০.১১.২০১৩
যদি ভুল হয়ে যায়
রোকন জহুর
যদি ভুল হয়ে যায়
অচেনার ডাকে ফেরাব না
কোন দিন সীমারেখায়
জীবনের কাছে এসেও ফিরে গেছ
অনন্তহীন অসীমে
বারংবার...
প্রকৃতির কাছে অনেক মোহ
বোঝানো যাবে না
সময় বোঝনি- তুমিও নয়
গোলাপের পাপড়ির মতো মসৃণ হলেও
মনকে বেঁধে রাখা যায় না...
মানুষ মন বোঝে না বলেই ভুল হয়ে যায়
যেভাবে বাতাসে ঝরে পরে
পাখির পালক
তুমিও ঝরে যেতে পারওÑ অন্যমনে অন্যখানে
চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই বলে
আমিও ভুলে যাই-
আশাহত পাখির মত...
জীবনের রং বদলায় জানি
আকাশের রঙে-
আলো-আঁধারী খেলায় ডোবে ভালোবাসা
যদি ডুবে যাই...
একা থাকার আনন্দ আয়োজনে
তোমার নাম লিখছিলাম
বুকে
বেদনা হয়ে আঁকা থাক- চাই না
তোমার হাসিতে মুক্তো ঝরুক
বিকেলের রঙে
চেয়ে দেখি সেই সবÑ না বলা কথার মত
তুমি একদিন হেঁটে যাবে না বলে
পথের দিকে চেয়েÑ
যদি ভুল হয়ে যায়...
(‘যদি ভুল হয়ে যায়’ কবিতাটির অনুবাদ)
If it is wrong because
By Rokon zohur
If it is wrong because-
Unheard of postal force to come back no limit line
I have been back
The bar unending Infinite…
The Earth has much emotion
Can’t be shut- time don’t appreciate me
You are also
If as like as rose leaf obvious
Can’t flame your mind …
Men discover with won mind that the mistaken
How the wave of the plume
You also the wave any where the absent mentality
Nothing to do only see that I am also forget
Like desperate birds…
Life in color change as like as sky color
Low lighting never sink deep love
If I were sink…
I make alone averages write your name in my heart
Don’t be pain ported in my mind- no need
Laughing the wave to pal, the afternoon color
In silence I see
Although you wake a day in silence
Don’t say any how-
To see in the road
If it is wrong because…
আহমেদ বাসার
মোহিনীর শরীরী কলা
তোর মুখে হাজার থু থু সুন্দরী চাঁদ
এই নষ্ট সময়ে তোর কেন এত
নির্লজ্জ বেহায়া হাসি!
ভেবেছিস, দিগন্তের কাদাজল পায়ে ঠেলে
ঠা ঠা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে
পেরিয়ে যাবি অনায়াসে আকাশ-সড়ক
নগ্ন মেঘের কাছেও শিখেছিস কিছু
মোহিনীর শরীরী কলা
তবু বলি, তুলো-ওড়া এই বাতাসের সীসায়
শুকে দেখ কালো কাঁচা রক্তের উদোম সুবাস
কত নিহত মাংসের লাশ ফুলে আছে খল জলে
তোর চশমা-পরা পটল চোখে
কেবল দৃশ্যের বিপরীত আল্পনা
নির্মোক খুলে ফেলে একবার ফেরা চোখ
দেখ, দগদগে ক্ষতের মুখে কত নীল মাছি
ঠোঁট রেখে তুলে আনে জাগতিক বিষ
তবু তুই কোন মুখে দিয়ে যাস শিস?
মেঘবালিকা
সুমন সাহা
প্রিয় পঙক্তিমালা লিখা হয়ে গেলে
অন্ধকার জানালায় যখন আলো জ্বলে-
অস্বচ্ছ কাঁচের শার্সির ওপারে
তোমার তৃপ্ত-ক্লান্ত মুখচ্ছবি
এপার থেকে অনেক দেখেছি বালিকা।
কিম্বা কোনদিন-ই আমি দেখিনি তা
দেখার তুমুল ইচ্ছেও হয়নি ততোটা-
কেবল আমার অনুভব ও অভিজ্ঞতায়
তোমার স্পর্শের উষ্ণতার উপভোগ
ছুঁয়ে গেছে অশরীরী স্পর্শ মায়ায়!
সুখে থাকো মেঘময় মেঘবালিকা
নিয়ে তোমার উষ্ণ কবিতার খাতা-
যেমন ইচ্ছে লিখুক তোমার কবি।
আমিও লিখছি আমার মতো-
সঙ্গে অসীম নিঃসঙ্গতা!
তোমাকে ভালোবেসে আমি ক্লান্ত
ইমরান কামাল
সমাচ্ছন্ন গত রাত্রির মধ্য প্রহর
তোমার ঘুমন্ত শরীরে ছুঁয়ে কোমল পরশ
তোমাকে ডুবিয়ে দিয়ে নতুন মূর্ছনায়, স্বপ্নীল গাঢ় ঘুমে
ফিস্ ফিস্ করে, একে একে বলেছি
তোমাকে নিয়ে আমি ক্লান্ত, আশার গান শুনে শুনিয়ে আমি ক্লান্ত
প্রবল বর্ষণে, তিক্ত গরমে, চামড়ায় চড়া জাগা ওমে
ভাঙা ফুটপাথ, হেঁটে হেঁটে
সিগরেটের শেষ আগুনের মতো লোক দেখানো অর্থপূর্ণতায় ক্লান্ত আমি,
আমাদের পরিপাটি রন্ধনশালার অন্তরালে জমানো পঁচা গলা ঘেটে ঘেটে আমি ক্লান্ত
আমি ক্লান্ত বলে বলে, তোমাকে; তোমাকেই চাই
তোমাকে ভালোবেসে আমি ক্লান্ত।
২.
কি কুৎসিত তুমি জ্বলন্ত সূর্যের নিচে
দানবীর মতো তীব্র তোমার চাহনি, ক্লেদময় কটাক্ষ
হায়নার মতো বীভৎস তোমার হাসি, তোমার শরীর বেশ্যার মতো শীতল।
কিন্তু যখন ঘুমিয়ে থাকো, তুমি আমার নিষ্পাপ কোজাগরী রাতের স্নিগ্ধ মৌনতা, বকুল।
রমা, আমি ডুবন্ত জাহাজের সারেং
শেষ অট্টহাসিতে রামের তরানি চাটছি, অন্তিমের সমাচ্ছন্নে
সংঘর্ষের তীব্র জ্বালায়, ভয়ে নিজেরই তামাশায় মেতে আছি
অসম্পূর্ণ পুরুষ
তোমার পুরুষ হয়ে আমি ক্লান্ত।
তোমাকে ভালোবেসে আমি … ক্লান্ত।
বৃদ্ধাঙ্গুল
ইপন শামসুল
বৃদ্ধাঙ্গুল
খঁচিত নকশা
দিতে পারে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ; বন্ধনের স্বীকৃতি-
যে পুরুষ হারিয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুল
ভীষণ অনিচ্ছায়-
তারও তো ইচ্ছে আছে...
আজ ভোরে কাটা পরেছে বালিকা
ব্রডগেজ...
আনমনে পাড় হই রোজ
একাধিক বার-
বিবেক কাটা পড়ে না!!!
অদৃশ্য বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়ছি শুন্যে
এবং নাড়ছি...
[উৎসুক জনতা নিরবে করছে পর্যবেক্ষণ ]
মেঘ গড়ালেই রোদ
অলভী সরকার
এক পশলা বৃষ্টি হলে
আমার কেমন ঘুম পেয়ে যায় ভোরে,
এক পশলা বৃষ্টি হলে
শুকনো রোদেও মেঘ থমথম করে।
এক পশলায় মেঘ কেটে যায়,
ফুল ঝরে যায়, গন্ধ থাকে বাকি;
পশলা খানেক বৃষ্টি হলেই
সরস্বতী করেন ডাকাডাকি।
এক পশলাÑ দুই পশলাÑ
তিন পশলা বৃষ্টি যেদিন হোলো,
নীলকণ্ঠের ভাঙলো জটা,
গঙ্গানদী বইলো টলোমলো।
এক পশলা বৃষ্টি হলে
রোদ-বিকেলে গাছের ছায়া কাঁপেÑ
বৃষ্টি হলেই মেঘ সরে যায়,
মন পুড়ে যায় প্রখর সৌরতাপে।
যাপিত জীবন
উন্মেষ ধর
পরজনমের বিশ্বাস রেখে যেও পাখি,
আরো কিছু অহমিকা পালকের মত ইতস্তত
তারপর উড়ে গেলে ছায়া দেখে পথ চিনে নেবে
সদ্য সাবালকেরা ।
'উড়ে যেও পাখি, উড়ে যেও...'
কিছু বিশ্বাস হাতের চেটোয় নম্র থাকুক-
না হলে বালকেরা ছায়া দেখে ভেবে নেবে,
'পাখি সব তস্করের ঘরে পরিচিত হয়ে ওঠে শুধু'
তাই পাখি পরজনমের বিশ্বাস রেখে যেও,
হাতের চেটোয় দিয়ে যেও আকালের খড় টুকরোটুকু ।
আগুনের গন্ধ থেকে
মঈন মুনতাসীর
আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কংক্রিটের দেয়াল,
কামনায় লালায়িত জিভ নেই তার।
তবু আমি জাপটে ধরি বুকে। বলি-
আরো জোরে চেঁপে ধরো আমায়। যেনো-
দম বন্ধ হয়ে আসে। যেনো-
পাঁজর দুমরে মুচরে যায়। যেনো-
একটুখানি শান্তি পাই এক শারীরিক যাতনায় !
অবতার
মৌসুমী রায় (ঘোষ)
তুমি ছিলে, তুমি আছো আমাদের সাথে।
কোন সে সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর-কলি যুগ থেকে, যুগান্তরে।
তুমি নিষ্ঠুরতা করেছো দমন, ভেঙেছো দর্প দাম্ভিকের,
অসহায়দের দিয়েছো স্নেহালিঙ্গন, রক্ষা করেছো সৃষ্টি।
কিন্তু, কোথায় তুমি আজ? তুমি কি শুনছো না?
-জীবন্মৃত মানুষের আর্তনাদ চারিদিকে; শুনতে পাচ্ছো না
তাদের বেদনার্ত চিৎকার? তাদের কান্না? তাদের হাহাকার?
জাগো! ঘুম ভেঙে ওঠো! আরো একবার,
নিশ্চিহ্ন করো যতো পাপ পৃথিবীর বুকে!
হে ত্রাতা! তোমায় যে আজ ভীষণ দরকার|
আমাদের মধ্যে থেকেই জেগে ওঠো সেই - "অবতার"।
ক্রোধ
খালিদ হাসান তুষার
শ্বেতাক্ষী
যখন উঠতি কোনো কবি তোমাকে
সম্বোধন করে প্রিয়তমা বলে
আমার পাঁজরের হাড় কেঁপে কেঁপে ওঠে
না- হারানোর ভয়ে নয়
ক্রোধে ।
ভ্রাম্যমান বখাটে যুবক
যখন তোমায় দেখে
তৃপ্তির ঢোক গেলে
বলে; বাহ্ কী সুন্দর !
বাতাসে ওড়ায় শিস ।
ইচ্ছে করে
আমার ইচ্ছে করে তার কণ্ঠনালী ছিঁড়ে
এখনই ছুঁড়ে মারি মাংসাশী শাবকের
পায়ের তলায়
দু-চোখ উপড়ে ফেলি সাইক্লোনের মতো ।
অব্যহৃত আবর্জনার সাথে
পুঁতে ফেলি শহরের নোংরা ডাস্টবিনে
যেন কেউ খুঁজে না পায়
পথের টোকাই ।
ঈশ্বরের বুকে পা তুলে
আমি কেড়ে আনব
তোমার স্বত্তাধিকার
সমস্ত কবিদের ফাঁসি হবে
পার্কের মোড়ে
যারা তোমাকে নিয়ে লিখেছিল কবিতা
বলেছিল, তোমায় ভালবাসি ।
শুধু স্পর্শের প্রতীক্ষায়
প্রিয়তমা ।
কঙ্কাবতী
তাহিদ
রূপকথার কঙ্কাবতী, চোখ মেল একবার মৃত্যুঘাতী
বাস্তবের দেশে;
পশ্চিমী হাওয়ার এই দোলাচল উদাত্ত ইমেজ :
ধ্বংস হোক।
কঙ্কাবতী, তুমিও কি বিকে গেলে কল্পনার ঘুমের হাটে!
এখানে পতনশীল মৃত্যু তার রক্তে স্রোতে
জাগায় শেকড়,
ক্ষুধার্ত বৃক্ষের শাখা ভরে ওঠে লাল-লাল ফুলে,
কঙ্কাবতী, এখানে বাস্তব হয় সাধারণ কল্পনার মত
তুমিও অশ্রু ধর আমাদের বাস্তবের নাট্যশালায়।
অথচ সাধারণ এই নিয়মিত রক্তারক্তি খেলা,
বৃষ্টির ফোঁটার মত মানবিক সত্তার পতন।
ঘুমে থাক কঙ্কাবতী রূপকথা-বাস্তবের দেশে,
তোমাকে প্রতিষ্ঠা করি নিদ্রাহারা একক তন্দ্রায়।
ভয় হয় যদি এই সাধারণ কল্পনার মত
এই ঘোর বদলে দেয় আমাদের স্বপ্নের আকাশ।
নিরন্ধ্র মৃত্যুর মুখে ঝড় তুলে কেঁপে ওঠো মানসী আমার!
তোমাকে পাওয়ার মতো রূপকথা এলোনা জীবনে!
রাতের অন্ধকার
জাহিদা মেহেরুন্নেসা
স্পর্ধিত সূর্যের উজ্জ্বল আলোকে শাসায় আজ রাতের অন্ধকার।
আমাদের দিন নেই, ডুবে গেছে আজ রাতের অন্ধকারে।
সুদীর্ঘকাল ধরে টেনে গেছি বর্বর অচল অসার পাথর
যেন জানি, না জানি, মানি না মানি মুক্তি নেই আমাদের
এ অচল অন্ধকার ঘরঘর ঘোরের রথ হিমবাহের চাকা থেকে।
সত্যের শরীর
সত্যের শরীরের ভাঁজ থেকে লাল টকটকে রক্তের প্রবাহ
নদীর বুকে হিজল ফুলের মত ভেসে ভেসে চলে যায়,
বুড়িগঙ্গার কালো কালো দূর্গন্ধ নিমগ্ন মৃত-স্রোতের ধারায়
মিশে যায় যত শারদীয় শিউলি ফুলের শুভ্র সৌন্দর্যালোক;
অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারের কান্নার বেগে নীরবে নিভৃতে
আত্মাহূতি দেয় অনিরুদ্ধ পূর্ণিমার জোসনার অপরূপ আলোক।
বগনবেলিয়ার ঝাড়
সামনের বাড়ির ফুলে ফুলে ভরা বগনবেলিয়ার ঝাড়টিকে
নির্মমভাবে কেটে ফেলতে দেখে রাস্তায় দাঁড়ানো পথিককে জিজ্ঞেস করলাম,
কী ব্যাপার! পাড়ার সৌন্দর্য আজ বিপন্ন কেন ?
সে বলল, নতুন মালিক এসেছে যে।
আমি বললাম, তাই কি এই নির্মমতা?
আমি অবাক হলাম।
ভাবলাম, এ কী নতুন মালিক এলেই এ অবস্থা হবে ?
এটাই কি নিয়ম?
আমার বাড়ির ভেতর থেকে কে যেন বলে দিল, ‘তোমার অত কথায় কাজ নেই ।
শোনা গেছে শহরে এক ধরনের দৈত্য দেখা গেছে।
এদের হাত থেকে কারো শিশু এবং যুবকেরা রক্ষা পাচ্ছে না ।
শিশুকন্যারা যেমন রক্ষা পাচ্ছে না তেমনি শিশুপুত্ররা,
যুবকেরা
কারো নিস্তার নেই, যখন যাকে পাচ্ছে তাকেই গ্রাস করে নিচ্ছে।,
আমি বললাম,’আগেকার দিনে রাক্ষসের কথা শোনা যেত,
তারা প্রতিদিন দেশবাসীকে তাদের খাদ্য চাহিদার কথা জানিয়ে দিত।
জনগণ সে অনুযায়ী লোক ঠিক করত কে কবে কখন রাক্ষসের পেটে যাবে ।
এখনকার দেত্যরা অনেক আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন।
তারা অত কাঁচা কাজ করে না ।এইসব রাক্ষসেরা কারো ধার ধারে না ,
সে বলল,তারা যাকে পায় তাকে খায়। কী উজীর কী নাজীর
কী পাইক পেয়াদা কারো নিস্তার নেই।,
আমি বললাম আগের কথা জেনে আমাদের লাভ নেই
রূপকথার দিন শেষ, এখন কী করা যায় তাই বল,
সে বলল, আমাদের শরীর নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া
আমাদের কিছুই করার নেই।
চোখকে অবিশ্বাস
নিজ চোখকেও আজ হচ্ছে অবিশ্বাস;
এমন নৃশংসভাবে মানুষেরা কুপিয়ে মারছে মানুষ
এ কথা অবিশ্বাস করা আজ যেন মহাপাপ
তবু জানি ‘মানুষের উপরে বিশ্বাস হারানো পাপ’
রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে দিবালোকে
মানুষের হাতে অস্ত্রের রকমারি ঝকমারি-
স্বপ্নেও মানুষ দেখেনি কোনোকালে
এখন ঝলসে ওঠে মিছিলে মিছিলে-
এ কেমন দেশ আমাদের
এই কি আমাদের প্রাণের সেই বাংলাদেশ?
ত্যাগ তিতিক্ষা আর সম্ভ্রমের রক্তবন্যায় ভেসে ভেসে
একটি পতাকা যেখানে হুয়েছে উড্ডীন?
মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি একদিন এ চোখের দুপাতা ভরে
দেখেছি তাদের দুর্বার সাহসী রক্তের উচ্ছ্বাস,
অথচ তাদের হাতের গোপন অস্ত্র গোপনেই ছিল সেদিন
এখন অস্ত্র-শস্ত্র আসে খবরের পাতার স্রোতে ভেসে ভেসে।
এ কেমন দেশ আমাদের হে পিতা,
যা কিছু স্বপ্ন ছিল সবটাই কি মিথ্যে প্রতারণা?
তোমার আহবান যদি মিথ্যে হবে
তাহলে সেদিন কেন তুমি ডাক দিয়েছিলে
তোমার পতাকাতলে যে হায়েনারা ওঁৎ পেতে আছে
তাদের বিরুদ্ধে সজাগ না হলে
আমাদের ঘর-বাড়ি
বৃক্ষ নদী আকাশের অজস্র তারকারাজি
পুড়ে সব শব হয়ে যাবে
কবিতা : ভোরের শিশির
খোঁপা খুলে দাও
শামশাম তাজিল
অলক অরণ্যে খুঁজি অলৌকিক সোনা
নিঃশব্দ নির্ঝরে নিবিড় ডুবিয়ে পা হোক মিথ্যের জালবোনা
সাংসারিক আগুনে পুঁড়ে গেল হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো
জ্বেলেছি অগ্নি-আমিও পুড়েছি ঘর অন্য কারো
ভালোবেসে মাটি হবো; পোড়ামাটি ছাই
বিবিক্ত মনে-দ্বিধান্বিত পদসঞ্চালনে তবু প্রেম আছে
-তোমাকেই চাই
অনুধ্যান স্বপ্নে ফলে না শ্রমের সম্মান
কাঁকন মাটি হলে ফলাতাম সোনামুখী ধান
ধানের শীষে নাচে পুরনো বোধ-স্বপ্ন, বঙ্কিম তাকায় নারী
তিনবেলা আহার্য-জল গ্রহণ করি; তবু আটাশের অনাহারী
তোমাকে পেলে শরীরে খুজে নেবো মাটি-সোনা-জল
তোমার দৃষ্টি রাঁজহাস, পায়ে চলা পথে জ্বলুক
শিশির টলমল।
আরাধনা
মেহেদী হাসান
চুম্বনে চুম্বনে রক্ত-লাল বেল রং শরীর, আর নয়-
এবার হালকা-নীল মেঘের মত জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয়।
মৃদু জলে ভরা সমুদ্র চোখ দুটো বিছিয়ে রেখো,
সেখানেই ঘুমোবো দুজন জড়াজড়ি করে।
কাশফুলের মত তোমার নরম চুলে
আঙ্গুল চালাতে চালাতে-জিজ্ঞেস করবো:
তুমি আমার ঈশ্বর হবে?
ছি ছি ছি---
না না না না---
তুমিই আমার শরীরী ঈশ্বর,
তোমাকে গড়েছি আমার একান্ত ঈশ্বর।
মানুষ কি পারে তৈরি করা ঈশ্বর ছাড়া বাঁচতে?
কাঁচা আলোর নদী ছেড়ে, কে ডুবে মরে
সাত স্তর অন্ধকারের ওপারে!
বিছানা ছেড়ে কেন যাবো এতো দূরে-সেই সপ্তম আসমানে!
তোমার অভ্যন্তরে তো কয়েক মুহূর্তের উষ্ণ প্রাসাদ,
আর তাহার মাঝে জমাট শীতলতা করি অনুভব।
তুমি নিথর থাকবে শুয়ে:
তোমার প্রতি অঙ্গে শিহরণ হয়ে ফুটবে আমার আরাধনা;
তোমার নাভীমূল থেকে আপনি গজিয়ে উঠবে পূজোর রঙ্গিন ফুল।
শীৎকারে-চিৎকারে তোমার নরম ছোট হাত
মাথায় বুলিয়ে-ছড়িয়ে দেবে মুঠো মুঠো চূর্ণ আশীর্বাদ।
ভক্তিতে উঠলে উপচে নগ্ন দেহ পেয়ালা,
কিছুটা ঝাঁকুনি ছিলকে ফেলে আবার নিথর হয়ো।
অবয়বহীন কি ভালোবাসা যায়-
কীভাবে বাসা যায় ভালো!
ভয়ই বা কি- তবে আর সমীহই বা কেন?
পূর্ণিমার রাতের আঁধারে পাশের জানালাটি যাবে খুলে,
জ্যোৎস্নার সাথে গলে মিশে পরবো ছড়িয়ে,
তোমার শরীরের সমস্ত আনাচে কানাচে-
আলোর ধর্ম অমান্য করে এগিয়ে যাবো বাহারি গলি পথধরে।
চাঁদটাও ক্লান্ত এতক্ষণে,
আমিই শুধু অবিরাম স্পষ্ট আরাধনায়।
আকাশে বাতাসে এখন
আনোয়ার কামাল
প্রতিদিন বাসের চাকা পিষে ফেলছে মানুষ
কালো পিচঢালা পথ উষ্ণ রক্তে লাল টকটকে হয়ে যাচ্ছে
খাদ্যে বিষ! ফরমালিনে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে
বাতাসে কালো ধোঁয়া, সিসের প্রলেপ লেপ্টে আছে
দেহতে বসতি গেড়েছে ক্ষয় রোগ।
ঢাকার ফল মাছ না এখন হোটেলের ভাতে
মাছের বদলে বরফে ফরমালিন ফুটপাতে
আমরা তা দেদারসে শরবত বানিয়ে আর
দামি রেস্তোরায় ফালুদা বানিয়ে খাচ্ছি।
আকাশে এখন ঈগল নখর মেলে
ভেসে বেড়াচ্ছে, কখন যেন থাবা দেয়
হৃদয়ের টুকরো নাড়ি ছেড়া সোনার ধনকে
গ্রাস করে। সুন্দরের বিশাল বনরাজি নিভৃতে কাঁদে
সমুদ্রের গর্জন আরো বেড়ে যায়
প্রতিবাদী হয়ে ওঠে মৎসকুল।
কি সুন্দর অন্ধকার আমাদের সুনীল স্বপ্নকে
আলো থেকে কালো অমানিশায় ছেয়ে দেয়
জীবনের অনেক চাওয়া পাওয়া রুদ্ধ হয়ে যায়।
তবে কী আমরা অমানুষ হয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন?
তারপরেও কিছু মানুষ প্রতিবাদ করে গর্জে ওঠে
চেতনায় শাণিত হয় আরো কিছু মানুষ
মানুষে মানুষ একাকার হয়, কণ্ঠ কণ্ঠে মিলে যায়
সুন্দরী, ধুন্দল, কেওড়া, গড়ান, গোলপাতা
ঝাঁ ঝাঁ করে প্রতিবাদে গর্জে ওঠে।
স্বপ্ন-বিলাস
নাঈমুল আলম মিশু
হৃদয় থেকে উপচে পড়া
কিছু স্বপ্নরা-
আজ ঠিকানা খুঁজে বেড়ায়।
হয়তো তোমাদের ব্যস্ততায়;
হয়তো নীরবতার গভীরে;
নয়তো চায়ে চুমুক দেয়া ঠোঁটের কোণে।
কিছু মৃত স্বপ্ন জেগে ওঠে
সুখের প্লাবন আনবে বলে।
তবু তারা ফিরে যায়
তোমাদের মহাশ্মশানে;
যেখানে তোমরা বেঁচে আছ
জীবন্ত লাশ হয়ে।
কিছু স্বপ্নরা নীড় খুঁজে ফিরে
হারিয়ে যাওয়া পাহাড়ী সুরে;
গেরুয়া মাটিতে মিশে থাকা-
কিছু জীবাশ্মের মাঝে।
এক চিলতে রোদ হয়ে
কিছু স্বপ্ন সাজিয়ে রাখে-
গোধূলীর আকাশটাকে।
কিছু স্বপ্ন বেঁচে থাকে হৃদয়ে
তোমাদের ব্যস্ততায়
নাগরিক কোলাহল হয়ে।
কপোতাক্ষ শুকিয়ে যায়, মফস্বল মরে যায়
সোহাগ আলী
কপোতাক্ষ মিশে যায় মাটিতে প্রতিবেশি কোনো এক রাষ্ট্রের স্বার্থপরতায়-
অথবা জ্ঞাতি কোনো এক নদী ভাগীরথীর স্বার্থে, যে বয়ে ভারত মহাসাগরে ।
আমরা, শত চেষ্টায় সেখানে আজ জোয়ার-ভাটা
পাওয়া যায় হঠাৎ জলোচ্ছ্বাস যখন বন্যা নামে অকালে ।
কপোতাক্ষ, অনেক বয়স হল
তাই শুকিয়ে যায়, বুকে ধরে আছে অজস্র সবুজ শেওলা
আর নীল ফুলগুলো যারা দিয়ে যায় অবিরত বাতাসে দোলা ।
আর আমার এই মফস্বল আধা শহর,
হতে পারেনি শহর, ফিরে যেতে পারেনি কোথাও ফেলে আসা গ্রামে ।
তাই পড়ে রয় দ্বিধাহীনতায় ।
আজ এই পাড়া ভরে আছে নিঃশব্দতায় ।
অনেক বয়স হল, জীবিকার উৎসগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসে ।
পাড়াগুলো তাই নীরবতায় ছেয়ে আছে, শব্দগুলো ছড়িয়ে গেছে,
দেশে-বিদেশে, আনাচে-কানাচে কিন্তু পাড়া হতে অনেক দূরে ।
নিজেকে এখন কপোতাক্ষ মনে হয়, মনে হয় এই পাড়ার প্রতীকরূপী একজন,
পারেনি নিজেকে নিজ স্থানে মিলাতে, পারেনি পর স্থানে টিকিয়ে রাখতে ।
আমাকে টেনে আনে ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বপ্ন,
এই চির কোলাহলের শহরে, বাড়িয়ে আরও কিছু শব্দ যতটুকু কমে যায় মফস্বলে ।
জানি না কপোতাক্ষ বেঁচে কিবা হত, হয়তো কিছুই না অথবা অনেক কিছু
ফেলে আসা ছন্দময় সময় তো ফিরে পেতাম ।
যেখানে জেলেদের আনাগোনা
জোয়ারের জল, জল টলমল, সৃষ্টি সুখের অসংখ্য গান ।
তুমি ছাড়া মৃত্যুর পথে হাটা'
সোহেল রানা
তোমাকে বলি আমাকে থামাও
ঘুমের ঘরে আমি হাটি
করুণ ভয়ের দীর্ঘশ্বাসে ছুটি
আমি জাগি, বাস্তবে আমি
মৃদু কিছুটা ঘামি।
তুমি আমাকে ফেরাও প্রেয়সী
শরৎ সন্ধ্যায় বিধ্বস্ত মনে
তুমি দেখ দুয়ারে দাঁড়িয়ে
মৃত্যুর পথে আমি হাঁটি
তুমি নেই সঙ্গী।
প্রেমের কঠিন বজ্রপাতে
ধারালো ছুরির আঘাতে
শূন্যতার বেদনার্ত মেঘাচ্ছন্ন
আকাশ শিউরে উঠে
ভালবাসাহীন আমার কান্নায়।
মৃত্যুর অপেক্ষায় অলস আধার
ঢেকে দেয় মুক্তির আলো।
নীল বেদনার উল্লাস জাগে
দগ্ধ বালির দ্বীপে,
সেখানে আমি আঁকি
চলে যাওয়া প্রেমের ছবি
ফেলি দুঃখের করুণ চিহ্ন
লিখি প্রেমহীন আমার গল্প
হাঁটি,
তুমি ছাড়া মৃত্যুর পথে!
যাত্রী
তন্ময় বিশ্বাস
কত রাত খুঁজেছি তোমায় তারাদরে পথে
দূর তারাদের প্রান্ত সীমায় ভেসে যায়,
প্রিয়তমা মনোরমা স্মৃতি
চাঁদ, তারা, ফুলে স্মৃতি রোমন্থন,
মনে নেই।
ফুল বনে কে বসে নেই?
পাহাড়ি ঝর্ণা পাথর তো কথা বলে কত
সে কথা শোনার মন নেই,
কোথা গলে বসন্ত সেই ...?
চেনা অচেনার ভীড়ে
খুঁজে বেড়ায়।
তুমি রাত্রী, সাজাবো তোমায়;
সে জানে না এসেছিলো খুঁজতে আমায়
রাত্রী তুমি,
চাঁদ লীলাময়, আমি পেতেছি ফাঁদ
পেতেছি দু ঠোঁট
মেশার নেশায়, ভেঙে গেলে ঘুম
ভেঙে গেলে বাধ চুমুতে চুমুক
কে আগলায়?
সে এসেছিল খুঁজতে আমায়
কাল সারা রাত আকাশরে মাঝে,
চাঁদ জানে সব কি হয়ে গলেো
বিচ্ছেদের হোমানলে বিশুদ্ধ,
হোমানলের পরশমণিতে পরিশুদ্ধ।
বৃক্ষের জবানবন্দি
মোঃ আব্দুল কাইয়্যূম বিপুল
ভূবন নামাঙ্কিত চিত্রে-স্থির এক ‘ব’বৃক্ষ-
বাংলা নামে বহু সাহিত্য কর্ম-নিষ্কর্মের জাগরণ,
বৃক্ষরূপে কালের আদালতে দিচ্ছে সাক্ষ্য
ধরেছি কলম, লিখব গোড়াপত্তন
ঘাটব ইতিহাস, খুলব মুখোশ-প্রকাশ্য-
লিখব না নিজ, করব বৃক্ষের উচ্চারণ।
বেড়েছে বৃক্ষ নীরবে; হয়ে সাক্ষী গোপাল
বিয়াল্লিশে দিল পা, অবগত সবাই তা-
জানল না কেউ, মুক্তির মাঝে সৃষ্টি হল নব কঙ্কাল
বলতে নাই দ্বিধা, বৃক্ষের চূড়ায় বসেছে, শাখামৃগের মিতা।
বহু ত্যাগের মাঝে কা-র প্রত্যাবর্তন-
স্নেহ-মমতাবিহীন বেড়ে চলা একাকী
তবুও সুখ-মুক্ত প্রসারণ; হ্যাঁ
আজ অবধি শুধু তারই গড়ন।
বহু স্বপ্নের প্রতিফলন শাখা-প্রশাখায় তার
বেড়েছে বয়স, বেড়েছে পাতার-আকার
প্রতিটি পাতা যেন, এক-একটি রূপকথা-
আফসোস, বোঝে না যে কেউ তার মর্মব্যথা।
জোটে না তার শিশুকালের স্বর্ণালী সে ভোর
পায় না সে যৌবনের গানে নৃত্যের কোলাহল-
ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন সে, হয় না আনন্দে বিভোর-
বৃদ্ধ সে, ব্যথায় কাতর, অন্তিমের ঢাক-ঢোল।
প্রকৃতির দোলে বৃক্ষটা খেলে;
কিন্তু এ প্রকৃতি আজ বিষণ্ণ;
কৃত্রিমতার আভাষ যে কা-েই মেলে;
সত্য পরিচার্যক না পেলে ধ্বংস আসন্ন।
পরিচার্যকরূপী বন্ধু এসেছে, গিয়েছেও বটে;
প্রথমে ভেঙেছে শাখা-প্রশাখা; অতঃপর-
মুছে ফেলেছে পাতার ইতিহাস, মিষ্ট বুলির ডাঁটে-
সাজিয়েছে রঙের মেলা; বৃক্ষের কাণ্ডের উপর
হরেক রকমের বেলুন; ঘাড়ে বন্দুক- নরাধমদের হাটে।
হাঁক দেয়; দশটি গুলি- দুই টাকা, দুই টাকা
উদ্দেশ্য কারও যেন হয় ঝুলি ফাঁকা।
সুযোগ হয় কিছু নতুন সুখ দেখার-
উৎসুক জনতার ভিড়; কার হাত কত ঠিক।
ছয়টি বেলুনে, চারটে বিঁধে বৃক্ষে-
পালাক্রমে চলে তা, নাই কোন রক্ষে-
বন্ধুর নাই কোনো চিন্তার ভাঁজ; ভাবলেশহীন ব্যবসা-
পরিবারতন্ত্রের অল্প পুঁজি, অধিক লাভ-
বৃক্ষ পঁচুক, পঁচে যাক।
ধিক্কার তোরে, যে কা- তোর অন্নদাতা-
তারেই দিলি পাশবিক যাঁতা।
ও-দিকে বৃক্ষ থেকে রস বেরোয়,
ঘৃণার সংকেত; বুঝেও না বোঝার ভাণ-
শুধু বন্ধু নয়, মূর্খ জনতাও চোখ ফিরিয়ে রয়-
যার ছায়া ব্যতিত বাঁচবে না কেউ-
নাই তারই প্রতি টান; বিশিষ্ট অম্লান।
বৃক্ষ আজ খেলনা; খেলা শেষে
নিজ নিজ জ্বালাময় বিষে বন্ধুগণ
হারিয়ে গেছে চিরতরে অবশেষে।
মনে করে নিকো খেলনাটার অবদান
নেকড়ের মত ভেঙেছে অংশবিশেষ
তার দগ্ধময় দাগ; আজও আছে মিশে।
নতুন বন্ধুর আগমন; বৃক্ষের প্রসন্ন মন
আশায় বুকটা বাঁধে; নিরাশা কিছুক্ষণ
সেও খেলবে তাকে নিয়ে আমরণ
শুধু খান খান হওয়ার অপেক্ষণ।
প্রশ্ন ছুঁড়ে বৃক্ষ- কেন এই অবমাননা
খেলা আনন্দের তা কি জান না
খেলনা ভাঙলে অংশিত কিছু
মমতার বাহুডোরে সারিও নিও পিছু।
এমন বন্ধু কি আছে?
অদূর ভবিষ্যতে পাব কি তার দেখা-
আসবে কি এমন সুহৃদ-
জুড়াবে কি? প্রাণভরে বৃক্ষের ছায়া-
পড়বে কি? পাতায় খোঁচিত সে বেদনাবিধুর ইতিহাস।
প্রশ্ন রেখে যায় বৃক্ষ-
বুদ্ধিজীবীদের মাথা থাকে নত,
জানা আছে উত্তর; মিছেমিছি ভাবান্তর-
সৎসাহস নেই বলবার;
বৃক্ষ আর কিছু বলে না; শুধু হাসে
নির্মম সে হাসি ঘৃণার আবেশে।
হেসে যাবে বৃক্ষ এভাবে আজীবন
ব্যথা উপচে পড়ে; যন্ত্রণার দরুণ-
হবে না যে বৃক্ষের সহজ মরণ।