মুজিব ইরম
বাওফোটা
মুজিব ইরম
বাওফোটা
গন্ধটা কী আর রেহাই দেবে না, মা!
বিপুলের চোখে-মুখে বিকালের রোদ কান্না করে ওঠে। টিএসসি, ক্যাম্পাস, পাবলিক লাইব্রেরি, শাহবাগ, শিল্পসাহিত্য, বন্ধুদের মুখ, ফ্রিলেন্স সাংবাদিকতা, পত্রিকা অফিসের ধর্ণা, কাজ, মেসের বকেয়া, এসবের ভেতর গন্ধটা তাকে ঘিরে ধরলে বুকরে ভেতর গুমড়ে ওঠেÑ আমার খালি উমাফোটা লাগে গো মাই, এ-শহরে আমার খালি উমাফোটা লাগে!
আসলামের ডাকে পেছন ফেরে সে। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আসলাম। বিপুল বুঝতে পারে, এসাইনমেন্ট ছিলোÑ কাজ শেষ?
আসলাম মাথা নাড়ে। তাকে নিয়ে পাশের স্টলে চা খেতে যায়!
Ñএকটা কাজ আছে, করবেন?
Ñকাজ! কোন পত্রিকায়? আপনাদের?
Ñঠিক পত্রিকায় না, তবে ভালো বেতন, নির্বাচনের পরে স্থায়ী, তখন পত্রিকায়ও হতে পারে, কিন্তু...
Ñকিন্তু কী?
বিপুলের কপালে ভাঁজ পড়ে। আসলাম জানায়Ñ শিল্পপতি এস তালুকদার প্রধান বিরোধী দলে নমিনেশন না-পেয়ে শেষে নিজেই একা দল করে দলের সভাপতি হিসাবে নিজেকে ও মহাসচিবকে নমিনেশন দিয়েছেন! নিজে লড়ছেন শহরে, মহাসচিবকে পাঠিয়েছেন দেশের বাড়িতে। এস তালুকদারের নির্বাচনী কাম সদ্য গড়া পার্টির প্রধান কার্যালয়ে আসলাম পিএস পদে নিয়োগ পেয়েছে। কালই সে যোগ দেবে। একজন সহকারী দরকার। কাজ দুটিই অস্থায়ী, তবে নির্বাচনের পর মিডিয়া সেকশনে স্থায়ী হবে।
Ñকাজটি কি করবেন?
বিপুল সেই গন্ধটা তাড়িয়ে দিয়ে রাজি হয়ে যায়।
এস তালুকদারের গ্রুপ অব কোম্পানির হেডঅফিসে আসলামের পরিচয়ে বিপুলও স্যার হয়ে গেলে প্রধান ফটক হাট করে খুলে যায়। গন্ধটার উপস্থিতি পুনরায় তাকে তাড়া করে। একের পর এক আলো-বাতাসহীন শীতল রুম ডানে-বায়ে রেখে করিডোর বরাবর গন্ধটা তাড়াতে-তাড়াতে এস তালুকদারের দরজায় এসে দাঁড়ায়। হাহাকারটা আবার গুমড়ে ওঠে।
তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়। এতো শীতল রুমেও তার ঘাম ঝরে। আসলামের কোনো ভাবান্তর নাই। এ কী আর যদু-মধু যে বললাম আর দেখা হয়ে গেলো! হাজার হাজার কর্মচারী যে-মানুষটির ছায়া দেখে স্যার-স্যার বলে মুখে ফেনা তুলে, যার কলমের একটা আঁচড়ে অনেকের জীবন বদলে যায়, যাকে নিয়ে তার এক লেখক বন্ধু আরশ নামে একটা উপন্যাস লিখতে চায়Ñ কিভাবে আরশে বসে এস তালুকদার জাদুর কলকাঠি নাড়ে, তা তার কলমে ঠিক যুতসই হচ্ছে না বলে শাহবাগের প্রতি সন্ধ্যা কম দামি চায়ের স্বাদে বিস্বাদ টেকেÑ সেই আরশে পৌঁছানো কি আর চাট্টিখানি কথা?
দীর্ঘ অপেক্ষার পর এস তালুকদারের মুখের এইটুকুই যথেষ্টÑ কাল থেকে এসে পড়–ন।
বিপুল বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ায়।
আবাসিক এলাকার দেয়াল ঘেরা এই বাড়ি কিছুদিন আগেও খালি পড়েছিলো! কতদিন মনিরের সাথে এদিকে হাঁটতে গিয়ে বাড়িটি তার চোখে পড়েছে। বাড়িটির পাশে এলেই মনিরের মুখ খুলে যেতো। সেও তাতে যোগ দিয়েছে কতবার। ধুত্তুরি ছাই, কেনো যে এসব মনে পড়ে! গন্ধটা কি আর রেহাই দেবে না? প্রতিদিন তো ওই একই ঘটনা, বাড়িটির সামনে এলেই গন্ধটা কেমন ঝাপটে ধরে। না, এতো আমল দিলে আর হবে না। সে কী আর এমন চেটের বাল, যে বাড়িগুলো এই শহর থেকে নাই করে দেবে!
শিল্পপতি এস তালুকদারের এরকম কতো বাড়িই তো এ-শহরে পড়ে আছে। কম্পিউটার থেকে সামুদ্রিক মাছ, ইন্সুরেন্স থেকে হাউজিং, শিপিং থেকে ফেব্রিক্স, মেডিসিন থেকে কনস্ট্রাকশন, মিডিয়া, হেনতেন কী এমন নাই! যতদিন ব্যাংক আছে, ততদিনই নামেমাত্র এক সেক্টর বন্ধ হয়ে অন্য সেক্টর ফুলেফেঁপে ওঠবে। অবশ্য মাঝেমধ্যে দু-একটা পত্রিকা বদ্ধ জলায় ঢিল ছুঁড়ে একটু কম্পন তোলার মতোই এসবের হেডলাইন করে তা আবার মিলিয়ে যায়, বরং হাউজিং ও ফেব্র্রিক্সের বিজ্ঞাপন টিভি এবং কাগজের বদৌলতে ঘরে-ঘরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই নির্বাচন কি তাকে আরো জনপ্রিয় করে তুলবে?
বিপুল মাথা থেকে এসব তাড়াতে চায়। গেটে টাঙ্গানো সাইনবোর্ড হাতের ডানপাশে রেখে, পরিত্যক্ত উঠানে গজিয়ে ওঠা ঘাসÑযা এরই ভিতর মানুষের পায়ের চাপে কাতর প্রায়, মাড়িয়ে মানুষের ভিড় ঠেলে প্রতিদিনের মতই এগোতে থাকে সে। অফিসে ঢোকা মাত্র তার নাকে আবার সেই গন্ধ এসে ঝাপ্টা দেয়। মাকে তার বড়ো মনে পড়ে, যেরূপ প্রথমদিন এই শহরে এসে যাত্রাবাড়ি বাস থেকে নামামাত্র মনে পড়েছিলো! এই মনে পড়া আহাজারি হয়ে আরামবাগের স্যাঁতস্যাঁতে মেসরুমে সেই যে বসত করে নিয়েছিলো, গন্ধটা আর এ-শহরে পিছু ছাড়া হয়নি কখনো। বরং সুযোগ পেলেই সময় অসময়ে সে ঘুরেফিরে হাহকার হয়ে নামে।
অফিসে ঢুকে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কী করা উচিত। বাড়ির তিনটি রুমের এয়ার কুলার তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দরজাগুলো খোলা পড়ে আছে। ঘর উপছে মানুষের ভিড় উঠান পর্যন্ত গড়িয়েছেÑ একটু পর যা আরো ছড়িয়ে পড়বে। বিকাল হতে না হতে সামনের জীর্ণ পার্ক পর্যন্ত প্রসারিত হবে এই মানুষের ভিড়। তারপর বেশ কিছু সময়ের জন্য চাকরিজীবী কজনকে একলা ফেলে পিঁপড়ার পালের মতো এস তালুকদারের পিছু নেবে। ঘর একেবারে খালি পড়ে থাকবে যতক্ষণ না বড় সাহেব আবার রাতের শেষ দেখা দিতে আসেন, তখন ভিড় ও শ্লোগানে বাড়িটি হাঁপিয়ে উঠবে। তখন না-হয় এক ফাঁকে ঘর ছেড়ে পার্কে গেলেই বাঁচা কিন্তু এখন তাহলে কী করা যায়? জানলাগুলো খুলে দেওয়ারও কোনো সুবিধা নাই। দলে দলে ছেলে-ছোকরারা মিছিল নিয়ে হুট করে ঢুকে পড়ছে। একদল যাচ্ছে তো আরেক দল এসে পড়ছে। দেখতে না-দেখতে আরেক দল দরজায় এসে হাজির। কী আর করা, চেয়ার টেনে বসে পড়ে সে। কিন্তু মন তার বসে না। মিছিল-ফেরতা ছেলে-ছোকরাদের ঘামে-ভেজা শরীরের গন্ধ, হৈচৈ, সিগারেটের ধোয়া, ভিড়, আর আলো বাতাস আটকে-থাকা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে গন্ধটা তাকে রেহাই দেয় না। কী করবে সে! এ-শহরে কি মা আছে, যে গন্ধটা তাড়িয়ে দেবে?
গন্ধটাকে মা বলেন বাওফোটা গন্ধ। মা কিছুতেই তা সহ্য করতে পারেন না। যখন বাদলা নামে, রোদের দেখা নাই, ঘরের মেঝে-দেয়াল ভিজে থাকে, দরজা জানালা প্রায় খোলাই যায় না, মার মনে হয়Ñলেপ-তোষক সব গিল্লা হয়ে গেছে। সেই গিল্লা-হওয়া জিনিসপত্রই গন্ধটাকে ডেকে আনে ঘরে। এই গন্ধ তাড়াতে মাকে কতো কিছু না করতে হয়! ঘনঘন ঝাড় দেওয়া, সময়-সুযোগে দরজা-জানালা খুলে দেওয়া, গিল্লা হয়ে-যাওয়া বিছানা-তোষক রোদে গরম করে আনাÑছেলের ঘর থেকে গন্ধ তাড়াতে মার কী আর বিশ্রাম আছে! শীতে যেন মার ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। দুপুর-রোদে বিছানাপত্র গরম করে কী যে পরিপাটি করে রাখেন! ছেলে তার কিছুতেই গিল্লা-হওয়া বিছানায় ঘুমাতে পারে না, দম বন্ধ হয়ে আসে, উমাফোটা লাগে।
Ñডাক সাংবাদিক রে!
বড় ঘর থেকে হুঙ্কার ওঠে। ভাবনা তার উধাও হয়ে যায়। হুঙ্কার দিয়েছে মিছিল ও জনসভা-ফেরত ছেলে-ছোকরাদের বিলু ভাই, বিগত সরকারের আমলে যে প্রতিদিন পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকতো। কালা বিলুর নাম জানে না, এমন লোক এ-তল্লাটে খুব কমই পাওয়া যাবে। সেই কালাবিলু তার বাহিনি নিয়ে এস তালুকদারের দলে যোগ দিয়েছে। বড় ঘরের টেবিল ঘিরে পাতিরা গিজগিজ করে। এর মাঝে দুজন নাকি কোনো এক সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। পাশের রান্নাঘর এবং বাবুর্চি পর্যন্ত তার সাম্রাজ্যের অন্তগর্ত। প্রেস এবং ক্যাশও যে তা থেকে বাদ যায় না, বিপুলের বিষয়টি বুঝতে আর দেরি হয় না। কালাবিলুর এক সাগরেদ এসে শমন পৌঁছে দেয়। বিপুল বড় ঘরে আসে। কালাবিলুর চোখেমুখে বিরক্তি।
Ñধুর, এটা আবার কোন সাংবাদিক! বড়টা কই? বড়টা রে ডাক!
Ñআসলাম সাংবাদিক তো রুমে নাই, বিলু ভাই।
সাগরেদের কথায় কালাবিলু পত্রিকার পাতায় চোখ ফেরায়। বিপুলকে কোনো পাত্তাই দেয় না। টেবিলে ফিরে আসে সে। দিনের কাজ শুরু করা চাই। সব কথা শুনলে কী আর চলে! পত্রিকা হাতে নিতেই কালাবিলুর হুঙ্কারের মর্মার্থ বুঝতে দেরি হয় না তার।
নিউজটিতে সে বড় করে দাগ কাটে।
আসলাম অফিসে এসেই হেডঅফিসের দিকে চলে যায়। বিপুল কোনো প্রশ্ন করে না। এ আর নতুন কী! প্রতিদিন তো এরকমই ঘটে। আর কী এমন কাজ যে অফিসে বসে থাকতে হবে? টেবিলে-রাখা পত্রিকাগুলোতে সে চো বোলাতে থাকে। আজকের ছাপা-হওয়া প্রেস রিলিজগুলো দাগ দিয়ে রাখতে হচ্ছে। তারপর একসময় কেটে নিলেই হবে। হঠাৎ করে চোখে তার আটকে যায়, যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। যে-পত্রিকা এই সে-দিন ঋণখেলাপি হেডলাইন করে আলোচিত হয়েছিলো, সে-পত্রিকাই এস তালুকদারের পক্ষ নিয়ে লিড করেছে। কাল রাতেই সে অবশ্য টের পেয়েছিলো, শুধু বিশ্বাস হয়নি। প্রেস রিলিজ পৌঁছে দিতে গেলে স্বয়ং সম্পদক নির্বাচনী খোঁজখবর নিয়েছিলেন। আসলাম বের হয়ে বলেছিলোÑবুঝলেন তো দামি গাড়ির মাজেজা?
গন্ধটি এয়ারকুলারের হাওয়ায় মিশে তার বুকের ভিতর আবার গুমড়ে উঠতে চায়।
Ñবিপুল ভাই, আজ আর আগে প্রেস রিলিজ লিখলে হবে না, জনসভায় যেতে হবে, নতুন খবর আছে!
অনিল দে চলে আসায় গন্ধটি সাময়িক গা ঢাকা দেয়। বিপুল হাসিমুখে তাকায়। অফিসের প্রথম দিনেই আসলাম বুঝিয়ে দিয়েছিলো প্রেস রিলিজ লেখার জন্য রাত পর্যন্ত বসে-থাকার দরকার নাই। এক ফাঁকে লিখে ফেললেই হবে। জনসভায় কী আর কচু নয়া কথা বলা হয়, সবই-তো গৎ বাঁধা। রাতে প্রেস লেখা গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে শুধু কম্পিউটারের পুরনো প্রেস রিলিজ নতুন করে রদবদল করে প্রিন্ট নিলেই হবে। কিন্তু অনিল দে আবার কী এমন খবর নিয়ে এলো বিপুল তা বুঝতে পারে না!
অনিল দে মিডিয়া সেকশনের বিনোদন পত্রিকায় কাজ করে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে তাকে এই অফিসে পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিন অফিসে আসার আগে কলিগদের সাথে একবার দেখা করে আসে। এতে করে অনেক খবর তার আগেই জানা হয়ে যায়। আসলামও গেছে হেডঅফিসে। অনেক নয়া খবর সে নিয়ে আসবে। বিপুলের কাছেই কোনো খবর থাকে না। হেডঅফিসে দৌঁড়াবে কী, জনসভায়ই সে যেতে চায় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে অফিসে থেকে যায়।
আসলামকে তাতে বেজার দেখায় না। বিকাল হলে অনিলকে নিয়ে জনসভায় সে আগেই রওয়ানা দিতে চায়। এস তালুকদারের চোখে একবার না-পড়ে কি শান্তি মিলে? বিপুল অবশ্য এই সুযোগে শাহবাগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়ে যায়। বিকাল বেলায় এই মৃতবাড়ি নিয়ে কী করবে সে? সারদিনই লোকজন গিজগিজ করে। লোকজনের ভিড় অফিস উপচে বাইরের পার্ক পর্যন্ত গড়ায়। আগ বিকালে এস তালুকদার জনসভায় যাবার জন্য অফিসে এলে ভিড় আরো বাড়তে থাকে। কিন্তু জনসভায় চলে যাবার পর মৃতবাড়ি প্রাণ পেতে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মিছিল ফেরত লোকজনদের চাপে শেষবারের মতো বাড়িটি আবার জ্বলে ওঠে। তখন ফিরে এলেই হয়। অনিল জনসভায় ছবি দিয়ে মোটরসাইকেলে হাওয়া হয়ে যায়। নির্ধারিত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তারা। সব পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পৌঁছে দিয়ে কাজ শেষ। কিন্তু আজ এমন কী ঘটবে যে, আগের প্রেস রিলিজ দেওয়া যাবে না!
অনিল আগে চা খাওয়াতে বলে, তারপর না-হয় গোমড় ফাঁস করবে সে। কিন্তু অফিসে তো চা বন্ধ। মিছিল-ফেরত ছোকরারা ফেনসিডিল খেয়ে চিনি-দুধে নেশা বাড়াতে গেলে পিয়ন বাঁধা দিয়েছিলো কাল। এতে করে কিলঘুষি খেয়ে পিয়ন বেচারা বিলু ভাইয়ের আশ্রয় নিয়েছিলো, কিন্তু কালা বিলু ছেলেদেরকে কিছু না-বলে অফিসে চা বন্ধ করে দিয়েছে। আজ থেকে চা খেতে হবে বাইরে। তাতে অবশ্য অসুবিদা নাই। পার্কের কোনায় চায়ের ছাপড়া আছে। এনামুল হককে ডাকলেও মন্দ হয় না। আড্ডা জমবে ভালো। অনিলকে নিয়ে উঠে পড়ে সে।
আসলাম ঘেমে-নেয়ে চা-স্টলে উপস্থিত হলে হেডঅফিসের খবর তাতে যোগ হয়। আজকের জনসভা হবে সচিত্র। নির্বাচনে পার্টি জিতলে কী রকম সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ হবে তার একটা নির্বাক ডকুমেন্টারি বানিয়েছে ঢাকাইয়া ছবির নাম করা এক পরিচালক। আজকের জনসভায় এস তালুকদারের বক্তৃতার সময় পেছনের পর্দায় তা ভেসে ওঠবে। এনামুল হকের অবশ্য বিষয়টি আগেই জানা ছিলো। সকালবেলায় তার জন্য বড় অংকের চেক সে ক্লিয়ার করেছে। অনিল দের খবরে সত্যতা থাকে, তাই দ্বিতীয় কাপের অর্ডার দিতে হয়।
আসলাম দ্বিতীয় কাপে সুডুৎ করে টান দেয়Ñদেখছোনি কা-! একেই বলে বিপ্লব! ডিজিটাল জনসভা! এই নামেই আজ প্রেস রিলিজ লিখবো, শুধু ফাটাফাটি কিছু ছবি দিবেন, অনিল দা!
ছেলে-ছোকরার ভিড় ঠেলে কোনোমতে ক্যাশরুমের পাঁচিল দিয়ে নিজের দরজায় আসতে পেরে তার হাফছেড়ে বাঁচার কথা। কিন্তু একি! তার চেয়ারে বসে আছে ঢাকাই ছবির এক উঠতি নায়িকা, আসলামের চেয়ারে আরেকজন। অনিল দের চেয়ারে ঢাকাই ছবির সেই পরিচালক, যার হাত দিয়েই না কি নায়িকা তৈরি হয়। আশপাশে দাঁড়িয়ে আছে আরো এক দঙ্গল উঠতি নায়ক-নায়িকা। কী করবে বুঝতে না-পেরে ক্যাশরুমেই ঢুকে পড়ে সে। এনামুল হক বলেÑআপনার কাহিনি পরে, আমার কাহিনি আগে!
Ñআপনার আবার কী কাহিনি?
এক পাতি-মাস্তান একটু আগে এসে বিলু ভাইর কথা বলে ক্যাশ এক লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এনামুল হক ভাউচার চেয়েছিলো। কিয়ের বালের বাউচার ফাউচার, আমরা কি বাল খামোকাই মিছিল চোদাই, কইছি টেহা দেন, নাইলে ফুটা কইরা দিমু! পিস্তল টেবিলে দেখে একটা পিচ্ছিল সাপ সেই যে এনামুল হকের বুকের ভেতর প্যাঁচ দিয়ে উঠলো, এখনোও তা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এখন বিলু এসে আবার কী বলে কে জানে! এর ভিতর এসে হাজির নায়ক-নায়িকার দল। অতএব চেক পাশ করো। সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ নামে ছবি হচ্ছে। জনসভায় একই ডকুমেন্টারি লোকজন আর দেখতে চাচ্ছে না, তাদের চাই নাচে-গানে ভরপুর ঢাকাইয়া ছবিÑযাতে নিবাচন পরবর্তী বিজয়ী এস তালুকদারের সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ দেখা যাবে। বিকেল বেলায় তার মহরত।
Ñআপনি আজ আর চেয়ার-টেয়ার পাবেন বলে মনে হয় না, চলেন পার্কে যাই, চা খেয়ে আসি।
এমন সময় দরজা ঠেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এসে হাজির। তার সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা এস তালুকদার ও তার নয়া দল নিয়ে বিশেষ প্রকাশনা করছে, তাই আরেকটা বড় অংকের চেক পাশ করে দিতে হবে। এনামুল হক আটকা পড়ে। বিপুলকে একাই বেরিয়ে আসতে হয়।
দুপুরের খাবার নিয়ে আজ আর ভাবতে হবে নাÑআসলামকে বড়ো খুশি দেখায়। এনামুল হককে আগে খবরটা দেওয়া চাই, শুধু বিপুলকে দিলেই তো চলবে না। আর এখানে আছেটাই কে শুনি? সবাই তো নির্বাচন শেষে পালাবে, থাকবে শুধু এনামুল আর অনিল। ওরাই শুধু গ্রুপ অব কোম্পানির পুরান লোক। আর সকলেই তো চেলা-চামটা, মুরদ আছে না কি কাজ পায়? ইলেকশন তাই ফুটানি দেখায়। শেষ হোক না ইলেকশন, এখন তো দাম দেয় না, তখন দেখা যাবে কোথাকার কালাবিলু কোথায় যায়! নির্বাচনের পর তো হেডঅফিসে বসবে। তখন সাংবাদিক বলে দেখ না হুঙ্কার দেখি?
ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশানের নিচতলায় হোটেল খোলা হয়েছে। খাবারের আয়োজন দেখার মতো! চার-পাঁচটা তরকারি কী আর সোজা কথা! কোথা থেকে যে এতো বড় পাঙ্গাস আর রুই এলোÑসেটা এনামুল হককেও ভাবতে হয়। অনিল দে অবশ্য গরুর মাংস খেতে পারছে না বলে আফসোস থাকে। তাতে কী! খাবার তো আর কম হচ্ছে না। এখন একটা কোল্ড ড্রিংক হলে জমতো ভালো!
খাবার শেষ করেই এনামুল হককে নিয়ে ড্রিংক্সের খোঁজে সে বেরিয়ে যায়। আসলাম যায় হেডঅফিসের দিকে। বিপুলও বসে থাকে না। শাহবাগের দিকে রওয়ানা দেয়। এই দুপুরে কাউকে কী আর পাওয়া যাবে না?
মনিরকে ঠিকই পাওয়া যায়। পাবলিক লাইব্রেরির সিঁড়িতে ঝিম মেরে বসে আছে। পাতাবাহারের টবে প্যাথেড্রিনের পরিত্যক্ত টিউব দেখে তার বুঝতে অসুবিধা হয় না এই দুপুরবেলায় কেনো সে এমন ঝিম মেরে আছে। বিপুলকে দেখে চোখ তুলেÑ তুই নাকি ঋণ খেলাপির অফিসে চাকরি নিছস?
কোনো উত্তর করে না সে। পাশে বসে থাকে। মনিরকে হঠাৎ বড়ো করুণ দেখায়Ñ আচ্ছা বলতো, তালুকদারেরও ল্যাওড়া একটা, আমারও একটা, তাইলে সে কেনো ধনী হয়, আর আমি ফেনসিডিল টানি, পেথেড্রিন নেই?
পাশের পার্কে দুপুর ঘনাতে শুরু করেছে। গাছের নিচে, ঝোঁপঝাড়ে জুটিগুলো এক হয়ে দুপুর আরো ঘন করে তুলছে। আসলাম বলেÑচলেন একটু জিরিয়ে যাই। ধকল তো আর কম গেলো না! নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা না-করে পিয়ন-টিয়নের সাথে দেখা করে কী লাভ! এস তালুকদারের দেওয়া তকমা দেখে সিকিউরিটি অবশ্য বাঁধা দেয়নি, কিন্তু লাইনে বেশ দাঁড়াতে হয়েছিল। পরে সব পুষিয়ে গেছে। কমিশনার স্বয়ং চা খাইয়ে তালুকদার সাহেবের জন্য নতুন ভোটার তালিকার একটা কপি দিয়েছেন। এখন আর তাড়া কিসের?
Ñআচ্ছা আসলাম ভাই, আমি একটা কথা ভেবে পাই না, যে দেশের মানুষ একবেলা ভালো করে খেতে পায় না, সেখানে তালুকদারের মতো লোক থাকে কেমনে?
Ñওই আপনাকে নিয়া এক সমস্যা! আমি মরি আমার চিন্তায়। কাইল বাদ পরশু ইলেকশন, চাকরি থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়াই আমার ঘুম নাই, আর আপনি আছেন বিপ্লবী কথাবার্তায়। বাদ দেন এসব। তারচে বলুন তো যে দেশে মানুষের এতো অভাব, সে দেশের পার্কে এতো রস আসে কোত্থেকে?
বিপুল আর কিছু বলতে পারে না। পার্কের জুটিগুলো আসলামের চোখে আনন্দ ছড়ায়।
বাড়িটাকে কিছুতেই আর চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ভুল বাড়িতে সে বসে আছে। অথচ কালও বাড়িতে পা রাখার জায়গা ছিলো না, আজ তো অন্যরকমই হবার কথা ছিলো। এই খালি বাড়ি নিয়ে এখন সে কী করবে! আসলাম গেছে হেডঅফিসে খোঁজখবর নিতে। গেছে তো গেছে, ফেরার আর নাম-গন্ধ নাই। তাকেও যেতে বলেছিলো, অফিস দেখে রাখার অজুহাতে যায়নি। ছেলে-ছোকরা সব কোথায় গেলোÑএনামুল হক তা ভেবে কুলকিনারা করতে না-পেরে শেষে হেড অফিসে রওয়ানা দিয়েছে। কালাবিলুর টিকিরও দেখা নাই। শুধু কম্পিউটার সেকশনের ছেলেগুলো গেইম খেলে উৎকণ্ঠা তাড়াতে চেষ্টা করছে। দুপুর গড়ায়। অবস্থার কোনো পরিবর্তন নাই। টেবিলে দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়ে আছে। পড়তেও ইচ্ছা হচ্ছে না। ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিংয়ের নিচতলার হোটেলও খোলা হয়নি। বাবুর্চি বয়-বেয়ারা উধাও। অথচ এসময় মাছ ভাজা আর পোলাওয়ের ঘ্রাণ এ-বাড়িতে ভেসে আসার কথা, তা না, সবকিছু কেমন মৃত পড়ে আছে। এই মৃত বাড়িতে বসে কী করবে সে!
পার্কে এসে আরো বেশি দ্বন্দ্বে পড়ে সে। পার্কটাকে যেন আজ চেনাই যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে চারপাশ ঝিম মেরে আছে। আকাশে মেঘের দেখা নাই, বাতাসও বন্ধ। গাছগুলো মলিন পাতা নিয়ে স্থির, তারাও যেন হঠাৎ করে মানুষ শূন্য বেদনায় কাতর হয়ে আছে। এমনিতেই ছোটখাটো পার্কে কেউ আসে বলে মনে হয় না। কয়টা গাইগরু শুধু পাশের টঙ দোকানওয়ালা বেঁধে রাখে। সেগুলোও ঝিমুচ্ছে। বিপুল পার্কের বেঞ্চিতে বসে ব্যাপারটি আঁচ করতে চায়। কাল ইলেকশন, আজই তো সবচেয়ে উত্তেজনা হবার কথা, তাহলে!
অনিল দে তার পাশে এসে বসে। কোনো কথা বলে না। ক্যামেরায় চোখ লাগিয়ে আশপাশ দেখে, ক্লিক করার জন্য তার হাত নিশফিস করে কিন্তু কোনোখানেই নির্বাচনী উত্তেজনা নাই। এই পড়তি দুপুরে বাড়িটাকে আরো বিষণœ দেখায়। একজন দুজন আসছে বটে, তবে কেউই কিছু বলতে পারছে না। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জটলা করছে, একসময় চলেও যাচ্ছে। কালাবিলু নাই, নির্বাচন কমিটিরও কেউ নাই, বড় সাহেবের আসার কথা তো ভাবাই যায় নাÑ লোকজন খামোকা দাঁড়িয়ে থেকে কী করবে?
আসলাম বেজারমুখে ফিরে আসে। হেডঅফিসে থেকে সে কোনো খবর নিয়ে আসতে পারেনি। মনে হয় চাকরিটা আর স্থায়ী হলো নাÑ তার গা ঘামতে থাকে। বিপুল কিছু বলে না। এনামুল হকও একসময় তাদের দলে এসে যোগ দেয়। কম্পিউটার রুমের ছেলেগুলোও আসে। বাড়িটিতে শূন্যতা হাহাকার ছড়ায়। বিকাল নামে, নীরবতা ঘন হয়, উৎকণ্ঠা বাড়ে। এমন সময় হেডঅফিস থেকে নোটিশ আসে আজ আর কেউ পার্টি অফিসে আসবে না। কাল ভোট কেন্দ্রে থাকারও কোনো দরকার নাই। অফিস কাল বন্ধ। পরশু হেডঅফিসে যোগাযোগ করার আদেশ থাকলো।
Ñকী হচ্ছে বলেন তো, এনামুল ভাই?
Ñআসলাম ভাই, গুটি মনে হয় পাল্টে গেছে। কাল ইলেকশনে আমাদের উপস্থিতি আর থাকছে না। বুঝলেন না, ওই রফা-দফার ব্যাপার আর কি!
Ñকার সাথ?
Ñআর কার সাথে, বিরোধী দলের সাথে! তাদের সাথেই তো স্যারের ইলেকশন করার কথা ছিলো। বাদ দেন এসব। চলেন বাড়ি যাই।
সকালবেলায়ই আসলাম এসে হাজির। বিপুল তেমন খুশি হয় না। এখনই বিছানা ছাড়তে সে নারাজ, রাত জেগে নির্বাচনী ফলাফল দেখেছে। তাছাড়া অফিস থাকলে নাকি তাড়া থাকবে! সেই তো হেডঅফিসে গিয়ে ধর্না দেওয়া। একসময় গেলেই হবে। অস্থায়ী অফিস তো মৃত, কে আর তাকে পাহারা দেয়?
Ñএখনও বিছানায়, চলেন তাড়াতাড়ি চলেন!
Ñকোথায়?
Ñনেত্রীর বাসায়।
Ñনেত্রীর বাসায় কেনো? আমরা সেখানে কী করবো?
Ñঘুমিয়ে থাকলে কি চাকরি স্থায়ী হবে? বিরোধী দল জিতেছে, এ কী আর সাধারণ জেতা! কতো কিছুর পর, ভেবে দেখুন! তাছাড়া এতো আন্দোলনের পর জনগণ কিভাবে সব পাল্টে ফেললো, দেখুন দেখি! এতো বড় ঐতিহাসিক বিজয়, দেশ ভেঙে পড়ছে নেত্রীর বাসায়। বসও শুনলাম সেখানে।। আর আমরা বসে থাকবো? চলেন তো তাড়াতাড়ি!
Ñআপনি বরং যান, আমার ঠিক...
Ñলেখকদের মাথা গরম কি আর সাধে বলি? করেন তো লিটলম্যাগ, চাকরিটা যে কী জিনিস এখনও বুঝলেন না! আমার মতো যদি এ-পত্রিকা থেকে ও-পত্রিকা, বেতন আছে তো নাই করতেন তাহলে বুঝতেন ঠেলা। উঠেন তো!
বিপুল আর না করতে পারে না। তাছাড়া একসময় তো যেতেই হবে, চাকরি এখনও আছে। অতএব এখন গেলেই হয়।
ভেতরে পা রাখার জায়গা নাই। রুমগুলো থেকে মানুষের জটলা উপচে পড়ছে ভেতরের উঠান পর্যন্ত। লোকজনের গুঞ্জনে ঘরের বাতাস মনে হয় পাল্টিয়েছে। ফ্যানগুলো যথাযত তাদের দায়িত্ব পালন করছে ঠিকই কিন্তু না করলেই মনে হয় ভালো হতো। এতো জটলা, যেনবা সে ভুল করে কোনো বিবাহ উৎসবে ঢুকে পড়েছে। কোনোমতে সে জটলার পাশে জায়গা করে নেয়। নেত্রী ওপর থেকে নেমে আসায় নিচের ঘরগুলো রাজপথ হয়ে গেলে শ্লোগানে শ্লোগানে বাড়িটি যেন ডানা বেয়ে উড়ে যেতে চাইছে। এস তালুকদারকে নেত্রীর পাশে দেখে আসলাম সেদিকে দৌঁড়ায়। ভিড়ের চাপে বিপুল উঠানে ছিটকে পড়ে। নেত্রী উপরে উঠে গেলে জটলা আবার ঘর ছেড়ে বাইরে গড়ায়। দেখতে-না-দেখতে বাড়ির রঙ পাল্টাতে থাকে। ভাবি-প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনি দখলে নিলে মেটাল ডিটেক্টর, কড়া নিরাপত্তা বাড়ির প্রবেশ-পথে ঠাঁই নেয়। বাড়ির হাওয়া আরো থমথমে হয়ে ওঠে। গন্ধটা দ্বিগুণ হয়। আসলামকে আতিপাতি খুঁজেও সে দেখতে পায় না। হঠাৎ এসে হাজির, তাকে বড়ো ফুরফুরা দেখায়।
Ñভালো খবর আছে, বসের সাথে কথা হইছে।
Ñকী কথা?
Ñবললেন বিজয়ী সব এমপিকে অভিনন্দন পাঠাতে হবে। হাতে হাতে যেন পৌঁছায়। আমি আসছি, দাঁড়ান আজই কাজে লেগে যেতে হবে।
আসলাম ভিড়ের ভেতর আবার নাই হয়ে যায়। তাকে আর দেখতে পায় না সে। কোন জটলার ভেতর সে নাই হয়ে আছে, কে জানে! গন্ধটা তাড়া করলে সে আর দাঁড়াতে পারে না, বেরিয়ে আসে। বাইরের সূর্য গনগনে চুল্লি হয়ে আছে। গাছবর্তী লেকপাড়ের ছায়ার নিচে সে পালাতে চায়, কিন্তু যানজটের চিকন চিৎকার সূঁচ হয়ে মগজে খোঁচাতে থাকে। একটা খালি রিক্সা পেয়ে উঠে পড়ে সে। আবাসিক এলাকা ছেড়ে সদর রাস্তায় ওঠার আগেই দীর্ঘ যানজটে রিক্সা আটকা পড়ে। যানজট ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গভবন-যাত্রা যাতে নির্বিঘেœ হয়, পুলিশ বাহিনির কর্মতৎপরতায় সব শাখা রাস্তা আগে থেকেই বন্ধ। হর্ণ, হৈচৈ চেচামেচি বাড়তে থাকে। একসময় দূর থেকে ভেসে আসে গার্ডবাহিনীর যাত্রা-সংকেত। নেত্রীকে দেখার জন্য মানুষের ভিড় সেদিকে দৌঁড়ায়। সে রিক্সায় বসে থাকে। ড্রাইভারের খালি গা বেয়ে পসিনা ঝরে রাস্তা যেন নদী করে তুলতে চাইছে। পারছে না বলেই মনে হয় মুখ দিয়ে খিস্তি ঝরায়। একসময় ফুটপাতে লুঙ্গি তুলে বসে পড়ে সে। ড্রাইভারের নয়া প্রস্রাব পুরনো প্রস্রাবের গন্ধ জাগিয়ে তুললে দূরের যাত্রা সংকেত নিকটবর্তী হয়। রাষ্ট্রীয় সাইরেন, যানজটের আওয়াজ, মানুষের খিস্তিখেউড়, রোদের তেজ, প্রস্রাবের গন্ধ এতসব মিলেমিশে চারপাশ যেন হঠাৎ বড়ো গিল্লা হয়ে ওঠে। বুক তার গুমড়ে গুমড়ে ওঠে, হাহাকার ছড়ায়Ñশালার পুয়ার দেশটাই কি তবে বাওফোটা হয়ে গেলো? আমার বড়ো উমাফোটা লাগে গো মাই, আমার বড়ো উমাফোটা লাগে!