নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার গুনাই নদী
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার গুনাই নদী
'নদী সবকিছু জানে' : রেজা আরিফ
জ্বরতপ্ত কপালে জননীর সুশীতল স্পর্শের মতো
জৈষ্ঠ্যমাসে কেন বৃষ্টি নামে,
বৈশাখে কেন বেড়ে যায় বায়ুর বেগ,
নদী সব জানে —
প্রিয় বেড়ালটা মরে গেলে হয়ে যায় শরতের মেঘ।
রাতের কুয়াশা ভোরের আলোয়
হরিদ্রাভ বুদবুদ হয়ে জমে গেলে,
তার ডাকনাম হয় জামের মুকুল —
কেমন করে প্রথম প্রেমের চিঠির গন্ধে
ফোঁটে বাতাবীলেবুর ফুল।
খুন হওয়া মানুষেরা কেন শিমুলের ফুল হয়ে যায় আর মাছেরা কেন স্রোতের বিরুদ্ধে চলে —
নদী জানে মৃত্তিকার ভাষা, চন্দ্রের প্রকৃতি, শিলালিপি অথবা যা লেখা আছে বৃক্ষের বাকলে।
নদী জানে, শেষ পর্যন্ত কে থাকে সাথে আর পথের কেন থাকে বাঁক—
কোন অনলে জোনাক জ্বলে,কতদূর যায় সাদা সারসের ঝাঁক।
তেপান্তরের মাঠে কেন ভাতঘুম দেয় দুরন্ত দুপুর,
নদী জানে, তাহার বাড়িটি যে গাঁয়ে,
তার নামটি কেন অচিনপুর?
নদী জানে — কেমন করে বসন্ত আসে,
কেমন করে চোখের তারায়
তৃয়ামা কালে তন্দ্রা হারায়
গোপন দুঃখেরা হাসে।
এ সব কথা, সব উত্তর, সব রহস্য
জমা আছে নদীর জলে,
যা তুমি বলেছিল — যা বলো নাই অথবা রেখেছ মনের অতলে।
তোমাকে একদিন তাই নদীর কাছে নিয়ে যাব,
কান পেতে শুনবে নদীর কথা — জানবে তোমার পরিচয়,
কেননা, জননী আর নদীর স্পর্শেই কেবল মানুষ নরম হয়।
(হেরমান হেসের 'সিদ্ধার্থ' —এর 'নদী সব জানে' বাক্যটির প্ররোচনায়। ছবিটি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার গুনাই নদীর।)