অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীর পাল
(ওতো রেনে কাস্তিও থেকে অনুবাদ)
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীর পাল
(ওতো রেনে কাস্তিও থেকে অনুবাদ)
রায়হান শরিফ
১
সেই দিন খুব দূরে নয়,
যেদিন আমার দেশের
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীর পাল-কে
দীনহীন, ভুখা- নাঙ্গা আদম সব
দোর্দণ্ডপ্রতাপে রুখে দেবে।
২
তাদের জিজ্ঞেস করা হবেঃ
“কোন্ মহাযজ্ঞে মেতে ছিল তারা,
যখন তাদের স্বদেশ- স্বভূম
সম্ভাবনার শিখা জ্বেলে
ধুঁকে মরছিল,
আর নিভে যাচ্ছিল সহায় সম্বলহীন?”
৩
কেউ পুছবেনা তাদের পোশাকের দেমাগ,
দিন- দুপুরে নাক ডেকে ভাত-ঘুম,
বুজুরগি তত্ত্বের সাথে
নিষ্ফলা ধস্তাধস্তি,
কিংবা মাল কামানোর মার্গীয় বিদ্যা।
৪
কেউ পুছে দেখবেনা
তাদের গ্রীক-পুরাণের জ্ঞান-গরিমা,
কিংবা তাদের আত্ম-করুণা,
যখন তাদেরই কেউ কেউ
কাপুরুষের মত
মারা যেতে থাকে।
৫
কেউ ধারবেনা ধার তাদের
মিথ্যের বেসাতিতে গড়া
ওকালতি,
কিংবা অদ্ভুতুড়ে “সাচ্চা- সাফাই”
বায়ন্নাকা-দর্শন।
৬
আসবে সেদিন দেশের আম-জনতা
বুদ্ধিজীবীর গদ্যে-পদ্যে,
যাদের ছিল চিরকালের
“প্রবেশ নিষেধ”!
যদিও এরাই
জুগিয়ে গ্যাছে
তাদের পাতে
ভাত-মাছ আর
চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়,
সারা জীবন!
চালিয়েছে তাদের গাড়ির বহর
যত্ন নিয়েছে কুকুর ও বাগানের।
সারা জীবন!
৭
সেই লোকগুলো এসে
ঠিকই জানতে চাইবে-
যখন গরিবরা সব
ধুকছিলো,
আর তাদের কচি সবুজ প্রাণ
ঝলসে যাচ্ছিলো,
তখন বুদ্ধিজীবীর পাল
কোন্ ঘণ্টা করছিলো?
৮
হে আমার দেশের
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীর পাল!
তোমরা কোন ছাল-ছুতোয় পার পাবে না।
নৈঃশব্দের শকুন এক
তোমাদের নাড়িভুঁড়ি খুবলে খাবে।
আর নিজেদের সব আকাম-কুকাম
তোমাদের আত্মাকে খোঁচাতে থাকবে।
“মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য”
ওতো রেনে কাস্তিও' র জন্ম ১৯৩৬, গুয়েতেমালায়। একজন বিপ্লবী, গেরিলা যোদ্ধা এবং কবি। ১৯৫৪তে "সি, আই,এ"-র যোগসাজশগণতান্ত্রিক আরবেঞ্জ সরকার এর পতনের পর কাস্তিও চলে যান নির্বাসনে, এল সালভেদরে। সেখানে মোলাকাত ঘটে রোকে ডাল্টন এবং অনান্য কবি লেখকদের সঙ্গে যারা তাকে সাহায্য করেন তাঁর প্রথম দিককার রচনা ছাপতে। ১৯৫৭-তে স্বৈরাচার আরমাস এর মৃত্যুর পর তিনি ফিরে যান মাতৃভূমিতে- গুয়েতেমালায় ।
কিন্তু ১৯৫৯-এ আবার দেশান্তর। এবার জার্মানিতে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করেন সেখানেই। ১৯৬৪ তে আবারো গুয়েতেমালায়। সক্রিয় হন “ওয়ার্কার্স পার্টি”তে, প্রতিষ্ঠা করেন নিরীক্ষামূলক থিয়েটার, আর লিখে চলেন প্রচুর উদ্দীপ্ত কবিতা। ১৯৬৪-তেই গ্রেপ্তার হন কিন্তু পালিয়ে যান ঠিকই। চলে যান আবারো নির্বাসনে, এবার ইউরোপে। কিন্তু বেশিদিনের জন্য নয়।
চটজলদি একই বছর প্রত্যাবর্তন গুয়েতেমালায়। গোপনে যোগ দেন সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে। এই গেরিলাদের ঘাঁটি ছিল জাকাপা পর্বতমালা । ১৯৬৭-তে কাস্তিও অন্যান্য বিপ্লবীর সঙ্গে ধরা পড়েন। কাস্তিও, তাঁর কয়েকজন কমরেড ও স্থানীয় দরিদ্র কৃষকদের পাশবিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদের সবাইকে জীবন্ত দগ্ধ করে মারা হয়।
তাঁর অনেক কবিতার মধ্য থেকে একটি কবিতা অনুবাদ করলাম এর প্রাসঙ্গিকতা আর শাণিত বক্তব্যকে ভালোবেসে। স্বাধীনতা নিয়েছি প্রচুর বাংলায় এর মেজাজটি ধরতে গিয়েই । আশা করি খুব খারাপ হয়নি সেটা। অবশ্যই বলতে হবে আজফার হোসেন এর কথা, যার থেকে কাস্তিও এবং তাঁর কবিতার হদিস পাই। অনুবাদ করতে গিয়েও তাঁর সাথে জুড়ে দিয়েছি তুমুল আড্ডা মুঠোফোনে। এই অনুবাদে সেই বিনিময়ের ছাপ আছে। সেটিও খুব আনন্দের।