কোকিল / মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
বিদেশি পাখিটি ফেলে গেছে সোনালি আলোর ডিম
তাকে রাখি যত্নে, আমিও আলোটি ছুঁই কায়মনোবাক্যে ,
অবিজ্ঞ আফিমগাছে অপ্রীতিকর আশ্রয় মেনেছি , তাই
পাখিটির নিরুপায় নীড় হয়ে আছি আমি৷
ভুল ও বেভুল সব আলোর অপাত্র চিত্রে আকাশে ছুটেছে তীর৷
অপকারী নই আমি, ফোটাব আলোর ডিম , অপরাহ্নে ঝড় উঠলে
কাকের কর্কশ ডাকে বিদেশি পাখিটিও ডাকে ---
কুহু কুহু ...ধ্বনি অপরিবর্তিত ... শেষে সূর্যরশ্মি রামধনু হয়৷
সোনালি আলোরছানা পলক চেনায় , এ কোন যাযাবর জন্ম তোর সুখে ৷
আপ্তসুখী ঋদ্ধ যত আলো জীবন ও মৃত্যু ঋণজালে
পাখিটি আমার নীল আশমানের উড়ন্ত চাঁদ ৷
জলেই সেজেছি / মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
বৃষ্টি অসম্ভব , সম্ভাব্য বন্যায় রাজা প্রজা আমি তুমি
সোনার দুয়ার খোলা শূন্যঝুলি ৷ রিক্ত দুই হাতে জলের সন্ন্যাসরূপ৷
বৈরাগীর বেশে মেঘতলে একা চোরাবালি
মেরুদন্ডী মেঘে আমি স্থির অবিচল আমি সময়ে আসিনি ,সময়ে যাবো কেন তবে বলো ?
বেজেছে নদীটি মেঘসুরে বেজেছে জলের তান
জলতুড়ি দিই মিটল জলের আশ ?
থেমে গেল বাঁশি থেমে গেল কাঁপানো বাতাস -বাজলো নিঝুম আলো
জলপরী তুমি সময়ে ও অসময়ে বিশ্বাসঘাতক
বনতলে নেই বর্ষামধুর চিহ্নটি , জলকলকলে পুবহাওয়ার পরিত্রাহি রব ৷
পরানের পদ্মবনে নেই মিলনের উৎসব ,ধরণী দ্বিধায় ছবি জাগে কোন দুরাশায় ?
আমি শুধু আত্মহারা জল ৷
জলেই সেজেছি রাজা , জলেই সেজেছি রানী আমি , ভেসেছি প্রত্যহ .........
আকাশ বুঝেছে তার আনন্দ আমার ৷
আকাশদুহিতা / মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
বৃষ্টি ও বজ্রের বেদনা নেই .যা আছে স্বাধীন সাড়া
মেঘে তাই নতুন নয়নতারা না বলা কথার কথা
হয়ে ভেসে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়
আকাশ ভেঙেছে মেঘ —.
বজ্র থেকে বানিয়েছি বৃষ্টিবীনা . মেঘ থেকে অজবীথি .
অন্নপাত্রে অবিচল পরীক্ষিত মন ও মুখের জলছাপ
সবুজের শীতে , একি বৃষ্টি অবতল সমতলে !
কান্নায় মেপেছি অশ্রু , প্রতিটি অশ্রুর ফোঁটা অগ্নির অতীতচারী ৷
আমি সেই মেয়ে যে জল বইতে শিখি মেঘ হয়ে
আমি সেই মেয়ে যে বজ্রকে অঞ্জলিবদ্ধ করেছি নতুন খেলাজলে ৷
অতিথিবৎসলে নামিয়েছি জল , আজ তবে কেন বলো অতিবৃষ্টি ?
আমি শুধু জলের হাসিটি নিয়ে অধোগামী আলোরথ ৷
ও রে শোন শোন পাষাণী পাথর জল ও আলোর কোনো মুখোশ কি আছে ?
আমার এ হাতে বৃষ্টি অন্য হাতে বজ্র নিয়ে একাই আকাশপথে যাই হেঁটে হেঁটে ৷
আকাক্ষিত শুভ শব্দেরা সুদূরে কার সাড়া পেয়ে ঝরিয়ে দিয়েছে জল ৷
আকাশদুহিতা তুমি কেন বৃষ্টি মাপো বেদনার অশ্রজুড়ে ?
জন্মদিন / মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
আলো জ্বেলে তোমাকে বসিয়ে রাখি অনন্ত অব্যয় পদে
অনভ্যস্ত ফোঁটায় অনন্য শান্তিও উত্তরহীন ,
অনুকার শব্দমোমে যত গাঙশালিকের করতাল ...
করপদ্মে উপহার রাখি ৷
এমন ইচ্ছুক সব ছায়ায় আকাশবাণী শুনি ৷
উপসাগরের ঢেউ বন উপবনে কুন্দফুলে জন্মরাত্রি মৃদু আলোতে পালিত হয় ৷
এই দিন আজ মগ্ন সমাচ্ছন্ন মেঘে কৌণিক লৌকিক৷
অতুল শৃঙ্খলে হাততালি যারা দিল তারা মায়াময় মোমে দেখেছে তোমার মুখ ?
আমি দিন, আমি জন্ম দেব আরেক নতুন দিন ৷
দিনের উদারতম আলো তুমি এসো জন্মদিন হয়ে বারবার, প্রতিবার ৷
দেহের গোপনে রাখি মৃত্যু আমি
আমি যাপন করেছি যম ও যমজ ভ্রুণ
যমদূত তুমি আমাকে পোড়ালে শেষে অবশেষে ৷৷
শাস্তি /মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
ছোট্ট এক দেশলাই যদি দীপাবলি , ছোট্ট এক গল্প যদি
টুকরো মেঘের কোলে উল্কা কোনো বজ্র যদি ---
আমি সব বলে দেব কে জল , কে মরু কে বা আমি !
যদি বলতেই হয় আমি কি ও কেন , শত্রুকে চেনাবো সিক্ত ক্ষত ৷
মাথা নিচু করে যে পথ অনন্ত পথে মেশে ' যে জলাশয়ে নামে চাঁদ
অহঙ্কারী নব নব ঢেউ দেখি চূর্ণ ৷
অমানবিক বলেই _--
জ্যোৎস্নাকে চুপ করিয়ে বলেছি
আমি তোর দীপাবলী ও উত্থান একাদশী ৷
জীবন বিস্ময়ে লিখি নবজাতকের পূর্বজন্ম ৷
ছোট্ট এক পাখির মতন মেঘ ওড়ে , মেঘডানা জুড়ে দেখি বৃষ্টিপুতুল ও ঈশ্বর ৷
কে হাসে কে কাঁদে কোন কোন অক্ষরে বসেছে মাত্রা ?
এতে কার কি বা যায় আসে ---
এইবার দেখি পলাতক আলো কে বিদ্যুত নাম দিল কারা !
ছায়াকথা / মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
গান থেকে সুর তুলে নিয়ে বসাই আমার ঠোঁটে ,
শব্দ পর ও আপন বোধে স্তব্ধ বোবা তাই -
কথা বন্ধ হলে শব্দ আসে জোরে
শব্দ জোরে এলে , শূন্যতা শ্রী-হীন তবু :-
কথাকে বলেছি -চলো তোমাকে বসাবো ,
অচিন ছায়ার বুকে ৷
শব্দকে বলেছি - এসেো হাত ধরাধরি ক'রে
সুর বুনি খেয়ালি জলের তানে ৷
ধ্বনিকে বলেছি - আমি তোমার সন্তান হ'ব
দিতে পারো ধ্বনিময় ছায়া ?
একটা ইচ্ছের সঙ্গে ইচ্ছে এসে বসে
কথা বন্ধ হলে জোরে শব্দ আসে ৷
দেখি শব্দের মানুষি ছায়া আমি আর তুমি .......
সব অন্ধ ছায়ারা কথাতেই শব্দ পায় ফিরে ,
অবশেষে প্রাণ পেয়ে হেঁটে যায় ছায়াকথা সব ৷
অন্য চাঁদ / মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
এখানে বাতাস জলে ডুব দেয় , সবুজ মাছেরা রোদ মাপে
প্রতিটি শালুক সাদা সূর্যলোকে স্তিমিত পথের বাতি
অথচ জাগ্রত হয় আলোর নির্মান ছায়া ,
অন্তরালে জলের বর্ণালী চিত্রে বাতাস একাকী......
এ পুকুরে ছায়া ভাসে , দুলে উঠি আমি ,
অন্য চাঁদ নামে জলে , নতুন চাঁদের জন্ম দেখি ......
মঙ্গল আলোয় ছবি বলো কোন পরিশ্রমে তুমি ?
চাঁদের প্লাবন জলে , পাতায় পাপড়ি ওকে ছঁয়ে দেখো
মাটি তার বাঁক খোলা বাতাসের মহাদ্বীপ ঘুরন্ত ভূচর ৷
শাস্তি /মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়
ছোট্ট এক দেশলাই যদি দীপাবলি , ছোট্ট এক গল্প যদি
টুকরো মেঘের কোলে উল্কা কোনো বজ্র যদি ------
আমি সব বলে দেব কে জল , কে মরু কে বা আমি !
যদি বলতেই হয় আমি কি ও কেন , শত্রুকে চেনাবো সিক্ত ক্ষত ৷
মাথা নিচু করে যে পথ অনন্ত পথে মেশে ' যে জলাশয়ে নামে চাঁদ
অহঙ্কারী নব নব ঢেউ দেখি চূর্ণ ৷
অমানবিক বলেই _--
জ্যোৎস্নাকে চুপ করিয়ে বলেছি
আমি তোর দীপাবলী ও উত্থান একাদশী ৷
জীবন বিস্ময়ে লিখি নবজাতকের পূর্বজন্ম ৷
ছোট্ট এক পাখির মতন মেঘ ওড়ে , মেঘডানা জুড়ে দেখি বৃষ্টিপুতুল ও ঈশ্বর ৷
কে হাসে কে কাঁদে কোন কোন অক্ষরে বসেছে মাত্রা ?
এতে কার কি বা যায় আসে ---
এইবার দেখি পলাতক আলো কে বিদ্যুত নাম দিল কারা !