শা মী ম সি দ্দি কী
ফুলঘুড়ি
শা মী ম সি দ্দি কী
ফুলঘুড়ি
১.
চমৎকার ঘুড়ির কথা ভাবি, ফুলঘুড়ি।
চারপাশে সাজানো সব বাহারি ফুলেরা
ঘুড়িটির চোখের মধ্যে সুর, মুখের মধ্যে ঘ্রাণ
প্রেমের চেয়েও বেশি তরতাজা সে ঘুড়ির পরান।
আনকোরা সে এমন এক ঘুড়ি, সুতোর প্রহরা নেই
বৃষ্টি মেঘে উতলা দুপুরে প্রাণের চেয়েও বেশি
কদম্বের রেণু ভর করে ঝুলে গেছে চোখের উপর—
আয় ঘুড়ি দেখে যা দুটো ফুল রেখে যা—কোথায় সে বেয়াড়া ঘুড়িটা?
যত সব বজ্জাত ফটকাবাজের হাতে ঘুড়ি তার ছোঁয়াবে আঙুল
আমার দেহের পাশে, আমার কামের পাশে তোর জন্যে কথামালা আছে
কথা নয়, কথা নয়—আমার এ দুর্বিপাকে ঘুড়ির বিলাস—
খোলা আকাশের নিচে শিরোনামহীন আমি এক শুধুই জনতা
মেলার মোহের বশে কখনো কখনো একা একা আকাশে তাকাই
খাবি খাই
বাঁক খেয়ে পড়ে যাই পাড়ে, বৃষ্টির ভেজা ভেজা ঘাসে
পুষ্পবাণের ঘুড়ি আরও কত ছলাকলা জানে
মানে তার রোদের বিলাস, বিলাসবতীর বেশে
কোন আকাশে লটকাবে কে জানে?
কিন্তু আমি দুহাত বাড়াই
লাজের মাথায় বাড়ি, ফুল ঘুড়িটার রসের প্রবাল চাই
আলিঙ্গনে সিক্ত হবে শ্রাবণী মদিরা
আকাশে বাতাসে কাঁপে কামনার শিরা-উপশিরা—
বাজারের পাশে থাকে কল্পনার কদম্ব বাগান, সেখানে যদি না যাপি
কোথা পাব মনস্কামনা , পূর্ণরতি অধীর এ বর্ষায়!
আহা ঘুড়ি তুই একটু বাড়াবাড়ি ছুঁড়ি, তাই দুষ্টু ভীষণ; হাজার লোকের ভীড়ে
আমার এ তৃষ্ণার্ত নয়ন তোর কাছে পরিহাস— পুষ্পাহত জড়সড়
পুরুষ প্রেমের সাথে অনায়াস নিষ্ঠুরতা গান
ফুলের ঘুড়ির কাছে আমার এ জর্জরিত দেহ
তীব্র স্রোতে সহিষ্ণু সাম্পান।
২.
আজ বুঝি এগার শ্রাবণ
সারারাত কেটে যায় ইন্দ্রবতী ঘুড়ির স্বপন
সকালের সূর্যোদয়ে ভাবি, ফুলঘুড়ি কি আসে কোন কালে
কপালে যার কারুকাজ অভিজাত বকুল ফুলের
সুঘ্রাণের আতিশয্যে ভরে থাকে সমস্ত প্রহর
প্রেমের সুতোর টানে অচেনা সাহসে
কতটাই বা ধরা যাবে সহসাই দেখতে পাওয়া ঘুড়ি
তার কত মতিগতি, প্রেমপ্রান্তে আমি এক নিতান্তই বেগানা পুরুষ
মুগ্ধতায় দৃষ্টি হাসে, মনে আসে সে অনন্ত সাহস
তবু ছোঁয়া নেই, সীমা নেই সে ঘুড়ির নাগালে
শুধু অসহায় ছাইরঙ মেঘগুলো ভোরের আকাশে
উত্তরের বৃন্দাবনে ভাসে, কেন যে দেখেছি তারে
পদ্মফুলের রূপে এক আকাশে অনন্ত বিস্তারে
প্রেমের অধিক কিছু কুমন্ত্রণা অজানা আমার।
৩.
ওলো ঘুড়ি, ফুলঘুড়ি, কারিগরে বানায়েছে তোরে
ফুলের পরাগ মাখা অনির্বাণ বিম্ববতী করে
কোথায় সুতোর টান, কে আমারে বলে দেবে
কোথায় বসতি তোর লেখা
আমি তো দেখেছি তোরে নরসুন্দা পাড়ে
সুতোহীন বল্গাহারা গতির বিলাসে
সকল ঋতুর কাছে যেটুকু ঠিকানা, তাতে আর কত যাবে চেনা
তুই কি চিনিস তোকে অসীমের সম্ভাবনা রূপে
দশেচক্রে ভূপাতিত ঘুড়ি এই পরমাণু বিস্ফোরণের যুগে
ফুলের সকল কিছু বিক্রি হবে অষ্ট প্রবঞ্চনে আর আমার এ
স্বপ্নগ্রস্ত চোখ বেহুদাই খুঁজে যাবে তোমার ঠিকানা
শাপলা বিলে, সরোবরে, আলোর ঝলকে
তোমার প্রবল চোখ, রহমতের সুবহ সাদিক
৪.
ফুলঘুড়ি এলোমেলো করে দেবে প্রাণ, শহরের
প্রান্তে প্রান্তে রটে যাবে ঘুড়ির খবর
এই প্রথম এক অত্যাশ্চর্য ঘুড়ি আসে মহানগরীতে
কবিদের কণ্ঠে কণ্ঠে উচ্চারিত অনির্দিষ্ট তাহার উপমা
ফুলঘুড়ি তো সাবোটেজ, অনিবার্য প্রমত্ত উষ্কানি
প্রবল স্রোতের টানে বিপুল প্লাবণে কিছু নগরীর বাতাস কাঁপায়
লজ্জাবতী, সুলক্ষণা, তদুপরি ললিত প্রতিভা
দশক আঙুলে আছে শব্দাবলি মৃতসঞ্জীবনি
সব ফুল ফোটে না তো, কিছু ফুল বিস্ফোরিত হয়
সকাল অথবা রাত্রি, বিকেলেরও প্রান্ত আছে মেলা
সপ্তরথী, অষ্টরথী, দেবের দেবতা অনঙ্গেরও বাস্তুভিটা ঘুড়ির কাছে জমা
ক্ষমা করো সুলক্ষণা অভ্রভেদী কিশোরী আমার
প্রেমের উপমা ছাড়া অন্য কিছু বলিতে পারি না
তোমার রূপের কাছে দেখে নাও আমি শুদ্ধ কি-না
আর যা কিছু খুঁজে যাচ্ছ কাকাতোয়া শেখানো মন্ত্রণা
তোমারই রূপের পথ
তোমার প্রেমের কথা
তোমার সে পুষ্প উন্মাদনা
সবকিছু ধ্বংস করে ভেস্তে দেবে প্রতীতি তোমার
প্রচল পথের পথে তুমি যদি চল অরক্ষিত
বর্ণচোরা কদর্য আত্মারা তোমাকেও করে দেবে
অনায়াসে বিষাক্ত নর্দমা
স্বভাবে, স্বভাবদোষে স্বভাবেরই বিরুদ্ধে হেঁটো না
আমি তো চুম্বন চাই, আলিঙ্গনে যেতে পারি দূরে।
তোমাকেও নিয়ে যাব অপার্থিব সুরে-উপসুরে ॥
এ শহরে তুমি হলে বহুমূল্য প্রাণের প্রতীক।
তোমাকে চেনে নি কেউ, কেউ কথা বলে নি সঠিক ॥
আমি তো চিনেছি তোরে বাড়ি তোর সুবর্ণবীথিকা।
তোর জন্যে বসে আছি অনাস্বাদে বিপন্ন ও একা ॥
পুষ্পবতী, বিম্ববতী, চন্দ্রাবলি মানি তোরে মানি।
চলে আ ফুলের ঘুড়ি, তোর আস্বাদে জুড়াবো পরানি ॥