কুয়াশা : শামীম রফিক
কুয়াশা : শামীম রফিক
এক.
টুপটাপ বৃষ্টি। থামানো গেলো না মালগাড়ি, থামলো না সন্ধ্যা। শেষ প্রদীপের প্রত্যাশায় যে যার মতো ছুটে যায় বিষণ্ন অন্ধকারে। রেডরেস থেকে কালীমন্দির, বিপরীত গন্তব্য আমাদের। সময়কে তুমি বেহিসাবী উদাসীন কুয়াশার আড়ালে নির্বাসন দিয়ে হাহাকার করছো্ এখানে বড়ো একা বর্ণিল জীবন। পোড়া সূর্যের ধোঁয়াতে জন্মানো ছাই ঢেকে দিয়েছে চাঁদের রমণীয় শরীর। নিঃশ্বাসও কষ্টের। কিন্তু রোজ নামে সন্ধ্যা, মাঝে মাঝে চাঁদ। এইভাবে প্রতিদিন বুকের জমিতে চলে মায়াবী ঘর্ষণ। অনাহুত শীতের বাড়াবাড়িতে মাতাল ধোঁয়ার কী যে পরিপূর্ণ লাম্পট্য! ভাবা যায় না। তবু বাড়ে কর্পোরেট ভবঘুরে, দৈন্যতার মায়াজালে আবদ্ধ অচেনা মানুষ।
কিন্তু হৃদয়ে জন্মানো দুঃস্বপ্নগুলো নিঃসঙ্গতায় ভারী করে তোলে ঘূর্ণায়মান স্মৃতির পাহাড়। নাটমন্দিরের ছায়াতলে বসে তাদের মোহনীয় মাতাল আড্ডা। দ্বিধাগ্রস্থ ওরা আজন্ম ছায়া খুঁজে। আর একটু ওপরে উঠবে বলে ধাক্কা দিয়ে কী যে উল্লাস! পবিত্রতা চুরি করে ফুলদানিতে জমা হয় ডালিমের রক্তবর্ণ চোখ। তবু আহারের পাশে প্রায়শ্চিত্য রেখো কিছু। লাম্পট্য ভালোবেসে তাঁদের চোখ থেকে ঝরে পড়ে কুয়াশার বৃষ্টি, শর্ষে ফুলের মতো সবকিছু ভিজে একাকার হলেও কোনো ক্ষতি নেই। খুব জানি, ভুলগুলো একদিন না একদিন মাইগ্রেনের মতো ভুলাবে। তবু কী যে লাভ বিকৃত করে মানুষের কংকাল।
দুই.
সময়ের বাইরে যাবো বলে মাতলামি এতোটা। জন্ম বা মৃত্যু সে যেভাবেই হোক। ট্যাক্সির জানালা খুলে রোডজ্যাম দেখে, মশারী কেনো আর বিরক্ত যাই হও না কেন-মসজিদের মিনার থেকে নামবে না গম্বুজ। কষ্ট দ্যায় কুয়াশা অনুমান করি। কিন্তু ছাড়ছে না মৃত্যু; সবাই মরবে। দেখছো না এতকিছু পেয়েও অতৃপ্ততা কাঁদায় যেনো অবুঝ শিশু সবকিছু পেয়েও কেউ কেউ মনে রাখে দূরবর্তী পাহাড়ের ছবি, কাশবন, ক্ষুধা আর নদী। ভুলে না। অতৃপ্ত ঘুমের মিছিলে রাত্রিরা ইতিহাস। রাতভর ঝরে পড়ে তাদের নানাবিদ বিদ্রোহী স্লোগান। বিচিত্র রাত সময়ের সওয়ার হয়ে নেমে আসে রাজপথে। তাঁদের চোখে-মুখে মুখরিত স্লোগান দেখে উল্লা্সে হাসে জেব্রাক্রসিং। নারী ও কুয়াশার মুখরিত ব্যর্থতায় খুন হয় রাজপথ মাতাল পাহাড়ের চাপে। জমা হয় দীর্ঘশ্বাস। দীর্ঘরাত, তবু জয়-পরাজয় কেউ না কেউ পেয়ে যাবে নিশ্চয়্।
বার বার ফিরে আসে, চিনে নিতে চায় নিজস্ব ইজারাঘাট ভঙ্গুর পৌরুষের বিনিময়ে। হ্যামলক প্রাচীন স্মৃতি, ঘুমের প্রার্থনা প্রতি রাতে। স্বজনেরা নব ধোঁয়ার মতো গোলাপের ধ্যানে মগ্ন ঠাণ্ডাঘরে। কেন যে তাঁদের খুঁজি, দৃশ্য গত হলে প’রে! শর্ষে ফুলেরা হাসে কুয়াশার নুপুর পড়ে। স্বাদহীন মৃত্যুকে ভালোবেসে কিছুটা অনিয়ম চাই যতটা পারি না ঘুমহীন থেকেও।
তবু মৃত্যু হানা দেয়, গ্রাস করে, ক্ষমা নেই কোনো!