রাতের অন্ধকার : জাহিদা মেহেরুন্নেসা
রাতের অন্ধকার : জাহিদা মেহেরুন্নেসা
স্পর্ধিত সূর্যের উজ্জ্বল আলোকে শাসায় আজ রাতের অন্ধকার।
আমাদের দিন নেই, ডুবে গেছে আজ রাতের অন্ধকারে।
সুদীর্ঘকাল ধরে টেনে গেছি বর্বর অচল অসার পাথর
যেন জানি, না জানি, মানি না মানি মুক্তি নেই আমাদের
এ অচল অন্ধকার ঘরঘর ঘোরের রথ হিমবাহের চাকা থেকে।
সত্যের শরীর
সত্যের শরীরের ভাঁজ থেকে লাল টকটকে রক্তের প্রবাহ
নদীর বুকে হিজল ফুলের মত ভেসে ভেসে চলে যায়,
বুড়িগঙ্গার কালো কালো দূর্গন্ধ নিমগ্ন মৃত-স্রোতের ধারায়
মিশে যায় যত শারদীয় শিউলি ফুলের শুভ্র সৌন্দর্যালোক;
অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারের কান্নার বেগে নীরবে নিভৃতে
আত্মাহূতি দেয় অনিরুদ্ধ পূর্ণিমার জোসনার অপরূপ আলোক।
বগনবেলিয়ার ঝাড়
সামনের বাড়ির ফুলে ফুলে ভরা বগনবেলিয়ার ঝাড়টিকে
নির্মমভাবে কেটে ফেলতে দেখে রাস্তায় দাঁড়ানো পথিককে জিজ্ঞেস করলাম,
কী ব্যাপার! পাড়ার সৌন্দর্য আজ বিপন্ন কেন ?
সে বলল, নতুন মালিক এসেছে যে।
আমি বললাম, তাই কি এই নির্মমতা?
আমি অবাক হলাম।
ভাবলাম, এ কী নতুন মালিক এলেই এ অবস্থা হবে ?
এটাই কি নিয়ম?
আমার বাড়ির ভেতর থেকে কে যেন বলে দিল, ‘তোমার অত কথায় কাজ নেই ।
শোনা গেছে শহরে এক ধরনের দৈত্য দেখা গেছে।
এদের হাত থেকে কারো শিশু এবং যুবকেরা রক্ষা পাচ্ছে না ।
শিশুকন্যারা যেমন রক্ষা পাচ্ছে না তেমনি শিশুপুত্ররা,
যুবকেরা
কারো নিস্তার নেই, যখন যাকে পাচ্ছে তাকেই গ্রাস করে নিচ্ছে।,
আমি বললাম,’আগেকার দিনে রাক্ষসের কথা শোনা যেত,
তারা প্রতিদিন দেশবাসীকে তাদের খাদ্য চাহিদার কথা জানিয়ে দিত।
জনগণ সে অনুযায়ী লোক ঠিক করত কে কবে কখন রাক্ষসের পেটে যাবে ।
এখনকার দেত্যরা অনেক আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন।
তারা অত কাঁচা কাজ করে না ।এইসব রাক্ষসেরা কারো ধার ধারে না ,
সে বলল,তারা যাকে পায় তাকে খায়। কী উজীর কী নাজীর
কী পাইক পেয়াদা কারো নিস্তার নেই।,
আমি বললাম আগের কথা জেনে আমাদের লাভ নেই
রূপকথার দিন শেষ, এখন কী করা যায় তাই বল,
সে বলল, আমাদের শরীর নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া
আমাদের কিছুই করার নেই।
চোখকে অবিশ্বাস
নিজ চোখকেও আজ হচ্ছে অবিশ্বাস;
এমন নৃশংসভাবে মানুষেরা কুপিয়ে মারছে মানুষ
এ কথা অবিশ্বাস করা আজ যেন মহাপাপ
তবু জানি ‘মানুষের উপরে বিশ্বাস হারানো পাপ’
রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে দিবালোকে
মানুষের হাতে অস্ত্রের রকমারি ঝকমারি-
স্বপ্নেও মানুষ দেখেনি কোনোকালে
এখন ঝলসে ওঠে মিছিলে মিছিলে-
এ কেমন দেশ আমাদের
এই কি আমাদের প্রাণের সেই বাংলাদেশ?
ত্যাগ তিতিক্ষা আর সম্ভ্রমের রক্তবন্যায় ভেসে ভেসে
একটি পতাকা যেখানে হুয়েছে উড্ডীন?
মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি একদিন এ চোখের দুপাতা ভরে
দেখেছি তাদের দুর্বার সাহসী রক্তের উচ্ছ্বাস,
অথচ তাদের হাতের গোপন অস্ত্র গোপনেই ছিল সেদিন
এখন অস্ত্র-শস্ত্র আসে খবরের পাতার স্রোতে ভেসে ভেসে।
এ কেমন দেশ আমাদের হে পিতা,
যা কিছু স্বপ্ন ছিল সবটাই কি মিথ্যে প্রতারণা?
তোমার আহবান যদি মিথ্যে হবে
তাহলে সেদিন কেন তুমি ডাক দিয়েছিলে
তোমার পতাকাতলে যে হায়েনারা ওঁৎ পেতে আছে
তাদের বিরুদ্ধে সজাগ না হলে
আমাদের ঘর-বাড়ি
বৃক্ষ নদী আকাশের অজস্র তারকারাজি
পুড়ে সব শব হয়ে যাবে