এমন প্রেম আর কইরো না
মাসুদ পারভেজ
এমন প্রেম আর কইরো না
মাসুদ পারভেজ
আমি কিন্তু কিরে কাইটে বইলতে পারি আমি খাঁটি মোছলমানের ছাওয়াল; প্যাটের দায়ে মানুষ কাটি; জ্যাতা মানুষ কাটিনে, মরা মানুষ কাটি তো মেয়ের বাপ শুনিলে কয়— মানুষ কাটে তার সাথে মেয়ের বিয়া; না! না! না দিমু না। কথাগুলো সে বারবার বলত। ডোমের সাথে মেয়ের বিয়ে কোনো বাপ দিল না। দিত কিনা সেটাও জানা হল না। জানার সুযোগ সে দিল না।
এত রূপ তার দুচোখ কখনো দেখে নাই। চোখের বিস্ফোরিত মণি থেকে আন্ধার ঠিকরে পড়ে আছাড় খায়। রূপবতীর পায়ের পাতা দেখে, মাথার চুল দেখে তার সারা শরীর শিরশির করে ওঠে। ঘনঘন চোখের পাতার পলক রূপবতীর সারা শরীরের উপর আটকে থাকে। বিবস্ত্র রূপবতী, স্তম্ভিত নজর ডোম। স্তম্ভিত নজরের সামনে রূপবতীর গলার দাগ দগদগ করে। তখনও তার নেশা ছুটেনি, বহুগুণ বেড়েছে। তাড়ির নেশার সাথে রূপের নেশা, নজর ডোমের দুচোখে ধ্বনিত হওয়া আন্ধার সারা দেহে সংক্রমিত হলে সে নিঃসাড় হয়ে পড়ে। নেশাধরা নজর হু হু করে ওঠে— তুমি কিয়ের লাগি মরবার গেলা গো? কিয়ের লাগি? তোমার এত রূপ দেখি আমার হাত কাঁপে, শইল কাঁপে, তুমি ক্যান মরলা?
২.
ই শালা মলোতো মলো! ডোমের ব্যাটা হয়া শালা পেয়ার-মহব্বত। লাশ কাটি যার দিন দুনিয়া চলে তার সাথে বেটির বিয়্যা-শাদি দিবে এমন কলিজা আছে কুন বাপের! মানুষ ফাঁড়ে গো, মানুষ ফাঁড়ে! বালতি বালতি মদ ছাড়া যার হুশ থাকে না তার সাথে ঘর-সংসার করবে কেটা গো! আর তায় শালা বলে কুন মাগীর রূপে ডুবি মরে রাইত বিরাইতে স্বপন দেখি। চোউখের পাতা এক করিলে কয়— ঐ মাগী কথা কয়্যা ওঠে। এখন শালার লাশ কাটি ক্যামন করি। লাশ কাটা এত্তোই সোজা? কল্লাকাটা লাশ, ফাঁসি দেওয়া লাশ, খুন হওয়া লাশ, বিষ খাওয়া লাশ, আরো কত কাহিনির লাশ। আসুকনা কুন বাপের ব্যাটা মায়ের লাল, কার কত্তো সাহস- কাটুক না ব্যাটা একটা লাশ।
ই জীবনে কতো লাশ কেটেছি তার হিসেব লিজেও জানিনে। আর ই শালা একটা লাশ কাটতে গিয়ে সব গোলমাল লাগিয়ে দিল। বালতি বালতি মদেও নেশা ধরে না। লিজেও মরলো বিপদেও ফেললো। এখন ই শালাক কী করব? এতো দিনের চেনা; একসাথে খাতির; কত্তো কথা গো তাক এখন কাটি কী করি! শালা যে চোউখ দিয়ে দেখে আর কয়— আমারে কাটিস্ নারে দাদা কাটিস্ না। রাগে গা জ্বলছে। তোকে মরতে কে বলেছিল শালা ডোম। পিরিতে এক্কেবারে মইরে যাচ্ছিল। এখন তোকে কাটব না তো কি করব! আর যদি বাধা দিস তো বুঝবি কিন্তু? কুন সুন্দরীক ভালো লাগল, লিজেও মরলো আমাকেও বিপদে ফেললো। মরলি তো মরলি! ইখানে ক্যান মরলিরে, মরে যন্তণা দিচ্ছিস। শালা— বুলেছিল কিনা এমুন সুন্দরী আমি দুচোক্ষে দেখিনি গো; ওকে আমার মনে ধইরেছিল। কত্তোবার ওর হাত ধরে, নাক ধরে চোখের পাতা ছুঁলাম। ঠোঁট পর্যন্ত ছুঁয়েছি। আমি ওকে কাইটতে পারছিলাম নাগো, কত্তো নেশা তাও শালা হাত কাঁপে। কুনোদিন তো এমুন হয় নি। ওকে আমার মনে ধইরেছিল। আমি কাটতে পারিনা। ইদিকে সময় যায়। কাউকে কাটার জইন্যেও বলি না। তখন আমি লিজ হাতে করলাম। একটা টু শব্দও করলো না। আমি কত্তোবড় চাঁড়াল! আমি ওকে ভালোবাসলাম আবার আমি ওকে কাটলাম, আমি লিজেই কাটলাম!
৩.
ঐ রাইতে সে আমার সামনে আসিছিলো, দুইচোক্ষের পাতা এক করিতে না করিতে সে আসি হাজির হয়। এত্তো রূপ আমি দুনিয়ায় দেখি নাই গো; আমার ভয় লাগে। চোউখ মুদি না, ভয় লাগে; যদি সে আসে কিন্তু চোউখ খুলিলেও তার দেখা পাই। এত্তো মদ ঢালি তাও নেশা ধরে না; জমে না; সে নড়ে না; আমারে জাগিয়ে রাখে। তারপর আমারে কয়— তুমি ক্যামনে পারলা? তুমি না আমারে ভালোবাসলা, আমি না হয় একটা ভুল করিছিলাম তাই বলে তুমি আমারে কাটবা! তোমার মনে কি দয়ামায়া জমে নাই? আমার রূপ দেখি কত কিছু চিন্তা করলা; সেই তুমি আমারে কাটতে পারলা? তোমার মনে দয়ামায়া নাই, তুমি চাঁড়াল।
ইখন আমার আর নেশা চড়ে না, আমি মদ ঢালি; হয় না, কিছুই হয় না। সে আমার সামনে আইসে আমাকে জাগায় আর প্রশ্ন করে। এত্তো রূপ আমি জগতের কোত্থাও দেখি নাই। আমার আর ঘুম ধরে না গো, ঘুম ধরে না।
ইখন আর তারে দেখতে হলে আমার ঘুম লাগে না, স্বপন লাগে না। সে এমনি এমনি আমার সামনে আসে। কিন্তু কোন কথা কয়না। ধরা দেয় না। আমি যখন বলি তোমারে আমার চাই; আমি ক্যামনে পাবো তোমারে; তখন সে হাসে। তার হাসি দিয়া চান্দের আলোর জ্যোৎস্না পড়ে। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না গো, তোমার জন্যি আমি নীল যমুনায় ডুব দিব। গলায় ফাঁস দিব। বিষ খাব গো বিষ!
আমার মুখে নেশা চড়ে না। মড়া কাটতে হাত কাঁপে। কলিজার মধ্যি ভয় লাগে। সে আইসা আমারে কয় তুমি ক্যামনে কাটো, তুমি ক্যামনে আমারে কাটলা! তুমি না আমারে ভালোবাসলা!
৪.
শালা শেষ পর্যন্ত গলায় ফাঁস দিলো তাও আবার ঐ লাশ কাটা ঘরের ভেতর। ডোমের বাচ্চা হয়া শালা পেয়ার পিরিতি তাও ফের এক মড়া মাগির লাগি। শালার মাথা খারাপ না হলি কেউ কুনোদিন দেখেছে নাকি গো, না কেউ শুনেছে। শালা মরার আর জায়গা পেলো না, এমুন জায়গায় ম’লো ইখন ব্যবুস্থা আমি ছাড়া আর করবে কে?
জীবনে কত্তো লাশ কাটলাম কিন্তু আপনজনের লাশ কাটি নাই। ই শালা লাশ কাটা কি এত্তোই সোজা? আসুক না কুন বাপের ব্যাটা মায়ের লাল কার কত্তো সাহস কাটুক না একটা লাশ।
এত্তো মদ ঢালি তাওতো নেশা চড়ে না! ই শালা নজর তোক কাটব ক্যামন করি? ইতো আমার দিক ড্যাব ড্যাব করি দেখে গো!