অব্যয় অনিন্দ্য’র ৫টি কবিতা
অব্যয় অনিন্দ্য’র ৫টি কবিতা
১।
রাজহাঁসের কুচকাওয়াজ
কলম আর শ্যামের বাঁশির কলহে কোকিল এল রেফারী হয়ে
পৃথিবীর যাবতীয় চমক ঠোঁটে নিয়ে নাম নিল মিডিয়া
সেই থেকে মিডিয়াই পৃথিবীর একমাত্র চুম্বক
নামজারি করছে সুমেরু-কুমেরু
মাউথ অর্গানে ঢেউ তুলে
আর কলম আর বাঁশি দুজনেই এখন হলদে বুট পড়ে
মিডিয়ার পেছনে লেফট-রাইট করে
সুপন্থাকে আক্ষেপের খেয়ায় তুলে দিয়ে
নিরপেক্ষতার বেড়ালটাকে ভিজাতে সমান্তরালে খেঁউড়ও গায়
আমিও ভানুমতীকে সংবাদ দিয়েছি
উঠোনটা মেকুড় চলনক্ষম হলেই
জগতের যাবতীয় কলমবাজদের ফ্যাশনটিভিতে ডেকে বলব –
রাজহাঁসের কুচকাওয়াজ নিয়ে লিখুন।
** ক্যাট-ওয়াক = মেকুড় চলন
*********
২।
গন্ধ
পৃথিবীর হামাগুঁড়ি চুঁইয়ে পড়া দোলঘড়ি চেটে চেটে
স্থূল হচ্ছি আমি, স্লিম হচ্ছে আমার শৈশব
সাথে পাল্লা দিয়েই তন্বী হচ্ছে শৈশব কাঁখে হেঁটে চলা তিস্তা—
আহা, ফিগার বিলাসী মডেল--ডায়েট করেই চলছে
নদীর ডায়েটিংও বুঝি মিলন-সংক্রামক
যারা ছুঁয়েছিল, সবারই ঝরছে মেদ-
মাছের দুধ আর ধানের যৌবন ভরা জাহাজ ছেড়েছিল
ফিরে এসেছে মন-মাঝির শীর্ণ বৈঠা
আর একটু তন্বী হলেই তিস্তা ফ্যাশন-টিভিতে যাবে—
কূটনীতির টাইয়ের নট ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে হাঁটবে তিস্তাচুক্তি বরাবর
চুক্তির পাতায় আমার শৈশবের ঘ্রাণে ভাসতে থাকবে ডায়েটিং
ডায়েটিং বুঝি নদী আর ফুলে ভিন্ন
ফুলেদের মধ্যে রজনীগন্ধার ডায়েটই সবচেয়ে কার্যকর
ওর চিকন কোমর অনেকক্ষণ সইতে পারে--গন্ধের ভার
আমি তিস্তা নই, আমি রজনীগন্ধাও নই -
এই স্থূল আমিকে আর বেশীদিন বইতে পারবে না পৃথিবী
তবে পৃথিবী কথা দিয়েছে —
আমার সূক্ষ্ম গন্ধটাকে বয়ে চলবে সূর্য্য নিভে যাওয়া পর্যন্ত
তাই প্রতিটি রজনীগন্ধার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেখ—
একটা অব্যয় অব্যয় গন্ধ
**********
৩।
মাকড়শা
আমার মৎস্যজীবী বাবার ডুলা
প্রতি প্রভাতে মাছের পেছনে ছুটত,
বাবাও ছুটেছেন- ভেল, চাই, বর্শি আরো কী কী নিয়ে
আজীবন- আমার পিছনে।
কিন্তু খাল-বিল-নদী থেকে এক প্রজন্ম দূরত্বকে ছুঁতেই পারেননি।
না পারাটা কষ্ট নয়- অহংকারই হয়েছিল তাঁর।
অহংকারটা বেয়ে বেয়ে
মাছ না ধরে শিখলাম জাল বানাতে।
কিমাশ্চর্য জাল– ছেঁকে, শুকে সব ধরল
শুধু উড়ে গেছে সুখ –
সুখ নাকি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই একটা পাখি,
পাখিটা জাতিস্মর- ডিএনএতে জাল হ্যাকিং-এর সূত্র নিয়ে ওড়ে
জীবনের খাতায় ‘ইশ’ জাতীয় শব্দ ছুড়ে ছুড়ে।
ও বাবার সাথেই গেছে কিনা–
জগদীশ বোস বা সলিম আলী কেউই টুইট করেনি সে কথা।
পাখিটার ফেরার শর্ত পূরণে
এখন জালটা ছিঁড়তে প্রাণপণ চেষ্টা।
এক প্রজন্ম পেছন থেকে ভেসে আসছে একটা স্বর–
মানুষের মাকড়শা-গুণ নেই,
মাকড়শা নিজের জালে ধরা পড়ে না।
*******
৪।
যুগল অশ্রু
আমার জন্ম খরখরা আঘন মাসে,
জন্ম মুহূর্তে আকাশ, বাতাস কেউ কাঁদেনি-
একাই কেঁদেছি মায়ের মিঠা দুধে শব্দ ঢেলে ঢেলে।
এখন আমার প্রতিটা কান্নার ঘ্রাণ ছুঁয়ে
তারারা ফুঁপিয়ে ওঠে মিটমিট শব্দে;
ওই মুহূর্তে মেঘ দুগ্ধবতী হলে
আকাশও নামতে থাকে দুঃখের প্যারাসুট বেয়ে।
কান্নারও প্রাণ আছে–
কথাটায় এক জোড়া নারী চোখ হাঁটে আমাদের জানালায়,
লাভাকে জল করে বহমান শিল্প হতে– কেবল নারীই পারে
পুরুষের কান্নায় দুঃখ শুধু শব্দ হয়ে পাড় ভাঙে–
অশ্রু পায় না নদীর বহতা মাধুরী
তবে নারী কোকিলটা কথা দিয়েছে–
আমার মৃত্যুর দিনে- পুরুষ সঙ্গীকে নিয়েই কাঁদবে,
যুগল অশ্রুই সুন্দরতম– কথাটা অনুসিদ্ধান্ত হয়ে
ছাইগুলি হাসতে থাকবে ইতিহাসের চিতায় চিতায়।
******
৫।
বায়োস্কোপের আরশি
অন্তুর শৈশব হাতে হাসছে একফালি মেঘ
মেঘের দাঁতে সন্ধ্যারঙের তৈ তৈ হাঁস
হাঁসের ঠোঁটে হীরামণ পাখি, কাঁচরঙা ঘোড়া
ঘোড়াটা অন্তুর কৈশোর নিয়ে ক্রিকেট মাঠে-
মাঠের কোনে বন্ধুর হাতে ন্যুড ভিউকার্ড
ভিউকার্ডের তরমজা হয়ে অন্তুকে নিবুর প্রথম চিঠি
চিঠির উত্তর লিখতে পাঁচমুড়া পাহাড়ে রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের বজরা কীর্ত্তনখোলায় বিভাদেবীর ঘাটে-
ঘাটের সিঁড়িতে অন্তুর যৌবন হাতে জীবনানন্দ
ট্রামের চাকায় দেখছে বনলতার চোখ
বনলতাকে খুঁজতেই এলান পোর ঘরে ববমার্লোর গলা
মার্লোর হেয়ারস্টাইলে ঝুলে আছে লালন
লালনের চোখ- পৃথিবীর আরশিনগর
আরশিতে অন্তুর জীবনের বায়োস্কোপ
বায়োস্কোপের শেষ দৃশ্য–
নিবুর হাত ধরে ছেলেকে দেখছে অন্তুর বৃদ্ধ ব্লেজার-
ব্লেজার ঢাকা বৈরাগী মন সময়ের সাথে করছে রেসলিং