শিমুল সালাহ্‌উদ্দিনের কবিতা

প্রথম আকাশে চেয়ে

প্রথম সবকিছু মনে হয় খুব খুব নীল; খুব খুব হিমেল নরম। প্রথম দেখা আকাশের নীল; ভুলে যাওয়া মানবস্মৃতির মতো প্রথম সবকিছু; ফোঁপড়া-নিরেট! প্রথম সবকিছু খুব খুব বিহ্বল, বসন্তের নতুন পাতার মতো অজর প্রাচীন ঘ্রাণের নিবিড় উন্মীলনে- প্রথম সবকিছু ধোঁয়া ধোঁয়া গভীর ঘোলাটে; নীল-

প্রথম সবকিছু সূর্যমুখী ফুল- ফুলেল হাওয়ার স্পর্শ

প্রথম সবকিছু লাল লাল সাদা- সাদা সাদা লাল

রঙে রঙে রং বুক মাঝে বুক; লুকানো বিষাদে হর্ষোল্লাস

প্রথম সবকিছু পাথর পাথর বরফের হিমঘুম রোদ-

রোদের প্রতীক্ষা; ঝাপ্টানো ক্লান্তির ডানা

প্রথম প্রেমের মতো প্রথম সবকিছু; প্রচ- সুখ সুখ ব্যথা অনুভব! প্রথম সবকিছু লালের আলোর ভাসানো চিৎকার হাসি রক্তের ভয়ার্ত স্বাদের হাহাকার; প্রথম সবকিছু! প্রথম সবকিছু খুব খুব নীল হয় খুব খুব হিমেল নরম- শূন্যতা শূন্যতা গোধূলীর আবীরের মতো প্রথম সবকিছু দ্রুতজলজগতিপ্রস্থান !

প্রথম সবকিছু না পাওয়া কবিতা; এই বুকের হিম ঘুমে

বুক চাপা অভিমানে চালাঘরে জেগে থাকা জ্যোৎস্না!

 

 

সকালের গান

পুন্ড্র গৌড় যমুনার ঘোলাজলে ডুব

দিইনি যদিও তবু- বিস্মরণে তুমি!

 

মায়ের আঁচল তলে লুকোনো পয়সা

চুরি করে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়েছি পালিয়ে

ভুবনডাঙ্গার হাঁটে, লাল সুতো ঘুড়ি

উড়িয়েছি নিথর আকাশে, বাতাসের স্পর্শ মেখে

কেঁপেছি দারুণ।

আনপথে ভাঙাপাল হালহীন নদী

সাঁতরে সাঁতরে পাড়ে উঠিনি কখনো. . .

কোনো ভোরে পাখি ডাকে- ঘুম ভেঙে জাগি

নিকষ রাতের শেষে, নেভে কুঁপিবাতি

 

আঁধারের নিটোল মদিরা।

 

মা তো ভাত বেড়ে ডাকে, বাছুরের ডাক

জোর দেয় ঝড়ো দৌড়ে- গোয়ালের গন্ধ

হজমকারক যেনো- গপ গপ শেষ

থালা ভর্তি ভর্তাভাত।

 

বাজান ডাকেন-“ছোটন পাঁচন কই?

হারুরে কওতো দেহি- গরু ছাড়ে য্যান”

 

বাজান লাঙল নিয়া দূর ক্ষেতে যায়

ফুরায় চাষের কাল কতনা জলদি. ..

খোকা খালি পায় সঙ্গে ইস্কুলের পথ

ক্ষেতের দিকেই- বেড়ায় মায়ের চোখ

চিন্তিত; অম্লান- একটু পরেই যিনি

কামলার ভাত পাঠাবেন গামছায় বেঁধে।

 

বেড়ার পাশে মা’র নথ দুলে উঠবে

 

আর আমি, শহুরে লেখাপড়া শেষ করে

পৃথিবীর শেষ গ্রামে ফিরবো না কোনদিন।

 

পার্বণ

অজ্ঞাতনামা

কে যেনো আমায় ঠেলে দেয় নীল

ধাতুবিভ্রম গরলমুখের দিকে।

দৈব বাতাসে করুণ পাথর বাণীর আভাস

বিভাস ভাসিয়া আসে

কান ঝালাপালা করে, বেজে বেজে যায়-

                  মর, তুই মর

আমি নীরবতা তোকে পার্বণ বলে ভুল করি।

উত্তর দেই আগুণের শিখা: যাই

এসো, এসো বলে ডাকে, চন্দন কাঠ

চিতার বিভাস নীল আগুণের শিখার মাতমে

বিগত শীতের ঝরা মরা পাতাগুলি।

 

টের পাই শরীরে আমার

সুন্দর যারা আমাকে ভরিয়া ছিল

                 ছেড়ে চলে গেছে-

চলে গেছে বেওয়ারিশ বাদকের দল-

গান গেয়ে ছিল যারা, নাচ করে ছিল,

আড়ালে আড়ালে বুকের ভেতরে

তাকাবার স্পৃহা গড়ে ছিল, কিছু না বলেই কেউ

                 বিদায় নিয়েছে তারা।

ফুল-ভারে নত হয়ে, এই দেহ নিয়ে

নিজের সারথী আমি একাই আমার রথে বসে আছি

কারা যেন নিয়ে গেছে ঘোড়া

                 নিয়ে গেছে ডানাদুটো, খুলে

কৃষ্ণ বদলে রাধা বাজাবেন বাঁশি তাই ডেকেছেন আজ।

গুমঘরে ঘুমহীন ঘোরে দেখেছি বিকল বিকলাঙ্গকে

কেন্দ্রে বসিয়ে নাচছে নিটোল

নৃত্যপরবশ পুরুষরমণী।

 

পার্বণে, উড়ছে পাখি, নাচছে পশু।

উঠেছে আকাশে সৌন্দর্য্য খুব ।

পূর্ণিমা আলো ভাসিয়ে মাঠের ঘাস।

দূরে ঐ টিলা। উপরে হাসছে নীরব বেতস; বাঁশপাতাগুলি

 

জলের বিজন ধারে, তাল তমালের, বনশিরিষের,

হোগলাঝোপের, আশাবাদী সোজা সরল বাঁশের

চারটি বাহুতে নিদাঘলজ্জা নিবারণের আড়াল

আলোর উঁকিতে হাসে।

 

চারদিক থেকে ছুটে আসে সব হৃদয়বিদারী হাওয়া

জলের জ্যোৎস্না থেকে উঁকি দেয় পোষা                   ঠাণ্ডা মৃদুল সাপ

 

ত্বকজুড়ে ওকি অনঙ্গ মন্ত্রাচার!

গোপন দুধের মাটির মুকুটে লীন হয় ভীত

শ্রাব্যতার দেশ :
  ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম…

ব্যক্তিগত চোখের নীচে কাজল জামার ক্লান্ত অমা কাঁদে

তাহার নিচে অচীন জমি ভূমিদস্যুর ফাঁদে

আগ বাড়িয়ে বুকের ভেতর শ্মশানজুড়ে জেঁকে বসতে চায়

 

তবু নাচ হয়। নাচ হবে।

দিব্যদৃষ্টিতে পুড়ে যাবে মাতৃপ্রতিমা।

দেয়ালের নীল ছবি আলো দেবে ঘরে।

সুর হবে, লয় হবে। হাসি গানে গানে ভরে রবে সব।

 

ভোর নেই রাত্রি নেই সেই সে উড়ানে।

ভ্রান্ত আমার রথ আকাশের দিকে চেয়ে-                মর, তুই মর

 

 

পুরুষনামা

একদিন বাবার পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটি থ্যাবড়া মতোন ভারী পা আমার পাকে মাড়িয়ে দেয়। চলে যায়। ব্যাথায় আমি ‘উফ্ফ’ করে উঠি। আর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি রাতগচোখে আমাকেই দেখছেন। কঠিন কণ্ঠে বললেন, ‘পুরুষ মানুষ কখনো উফ্ফ বলেনা, মনে রেখো।’ সেদিন থেকে আমি আর কখনো কোন সময়ে ‘উফ্ফ’ বলিনি। এমনকি নিজে নিজে কিংবা অন্যের দ্বারা বা আঘাতজনিত ব্যাথা পেলে আমি ব্যাথাকে চেপে রেখে পিঠের আর ঘাড়ের পেশিকে আঁকড়ে ধরে নিজেই নিজেকে বলতে থাকি, ‘আমিতো পুরুষ; আমিতো পুরুষমানুষ’।

 

একদিন পায়ের তালুতে ফুটে থাকা কাঁচের টুকরো বের করে আনার জন্যে ডাক্তারের ছুড়িচিকিৎসায় মাংস ছিঁড়েখুঁড়ে রক্তপুঁজের ঢল… তীব্র ব্যাথায় সারা শরীর আমার ঘামের সমুদ্রে ডুবুডুবু। তবু আমি একবারের জন্যেও ‘উফ্ফ’ বলিনি। শরীর-ছেঁড়া সে রাতে সবাই ঘুমে বিভোর। এমনকি আমার সেবাদাসী। আমিও আধো ঘুমে আধো জাগরণে। সেই না ঘুম না জাগরণে সকাল হওয়া অব্দি ‘উফ্ফ উফ্ফ’ করে বারবার কেঁদে কেঁদে উঠছিলাম। ভোরে জেগে ওঠার পর আমি পিঠের আর ঘাড়ের পেশিকে আবার শক্ত করে চেপে ধরি; আর পৌরুষের অনপনেয় গর্বের ভঙ্গিতে নিজেকে নিজেই বলতে থাকি, ‘জানোনা! আমি পুরুষ; আমিতো পুরুষমানুষ!’

 

আরো কিছুদিন পরে। তখন আমি জেনেছি চুম্বনের আকুলতা কাকে বলে, কাকে বলে প্রশ্বাসের সুখ, কাকে বলে জল তিমির খননের। দয়িতাকে দেবী ভেবে পদযুগল চুম্বন করতে গিয়ে আমাকে শুনতে হলো ‘তুমি না পুরুষমানুষ, তোমার পায়ের তলায় না আমার বেহেশত; মাইয়্যাগো মতোন করও ক্যান?’ কী আর করা? আমি তাকে দেবী থেকে প্রলুব্ধ-প্রেষণের বলে নামিয়ে আনি রমনীয়তায় কোমল বিভূতির দিকে। আমি তাঁর নিতম্বযুগল আর পয়োধরেই সুবেশ কামুক পুরুষের মতো নিবিষ্ট থাকি। আমি তাকে সমস্ত ভীমতায় পিষ্ট আর শরিয়ামতন কর্ষণ করি। আমি তাঁকে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো কামার্তচৈত্রকুকুরের মতো ভক্ষণ করি। মিথুনশেষের তৃপ্তা দয়িতা বুকে মুখ ঘষে ঘষে আমাকে সমর্থ পুরুষের আমোদিত মর্যাদা প্রদান করে। পৌরুষের উদ্ভিন্নতায় সিংহকেশরের মতো আমার ঘাড়ও ফুলে ওঠে আর মনে মনে আমি জপতে থাকি ‘ওহ! পুরুষ। পুরুষ পুরুষ হ্যাঁ। পুরুষ হয়েছি বটে’।

এভাবেই আমার কোমলতাগুলোকে নারী আর হিজড়ামতো বালখিল্যময় অপমানে ঢেকে দিয়ে আর পাষাণপাথর দোর্দণ্ড খুনিস্বভাব অপরাধপ্রবণতার পুরষ্কারে ভূষিত হতে হতে দীর্ঘ হলো। দীর্ঘ হলো আমার মনন ও দিন। এভাবেই ধীরে ধীরে পুরুষের পুরষ্কার পেতে পেতে আমি পুরুষ হলাম। মানুষের চেয়ে পুরুষ অভিধা আমাকে স্বাতন্ত্র দিল। অনুভূতি অনুভব পেলো-‘পুরুষ জীবনে অপরাধ এক প্রয়োজনীয় সত্য মাত্র।’

আর নিজেকে পুরুষ প্রমাণে এটিই পুরুষদের জন্য একমাত্র সম্ভাব্য সহজ পন্থা। পুরুষরা খুনিস্বভাব কোমলতাহীন মাংসবাহুল্যময় অন্য পুরুষের জয়জয়কার করতে ভালোবাসে। একথাও জানানো দরকার, একপুরুষ অন্যপুরুষকে ঘৃণা না করে প্রশংসা করতে পারে না। অবচেতনের মাথায় তার গোপনাঙ্গের আকার খেলা করে। সমস্ত ফুটোকে যাহা বন্ধ করে দিতে উদগ্র উদগ্রীব।

 

 

গ্রাসপুরাণ

(কফিল ভাইয়ের গান রূপকথা রূপ ধরে টারজান ডাকে- মনে রেখে)

 

কোথাও কেউ নেই, কেউ ছিলো না কোনোদিন

কেবল একটি পাহাড় আছে,

সোনার পাহাড়…

 

সোনার পাহাড়ে আমাদের বহুদিন কাটলো,

রূপা নেই কাঁসা নেই তামা নেই, মাটি নেই,

শুধুই ঝলমলে সোনা

নারীদের বুক ছিলো সোনার গম্বুজ আর

পুরুষের শিশ্ন ছিলো সোনার মিনার

সোনায় মোড়ানো সেই ফুলের দল

পদ্ম গোলাপ জুঁই চম্পা চামেলী

টগর শেফালী

 

তখন

আমাদের গ্রাম ছিলো

জানালায় দেখা পাহাড়ের রূপকথা,

আমরা সারারাত স্বপ্ন দেখতাম দিনের,

আর দিনে

রূপকথাগুলো সত্য হয়ে যেতো।

ক্ষিদে পেট, ঘুম নাই, তবু সত্যি হতো রূপকথা…

 

আমাদের সারা গ্রামে দানব ছিলো বটে,

তবে দানবেরা ও আদরে কাছে টানতো,

আর ছিলো অথর্ব রাজা,

রাজকন্যা ছিলো, রাজপুত্র ছিলো, লড়াই ছিলো,

রক্তমাখা বীভৎস কান্না ছিলো

তবুও মানুষ জানতো কীভাবে হাসতে হয়,

কুশল শুধাতে হয়

 

একদিন রূপকথাগুলো বড়ো হলো। আমাদের গ্রামে

কোমল চেহারা স্যুট-টাই পরা দানবেরা এলো

তারা ঠেসে দিলো মাথার ভেতরে সময়জ্ঞানের বোঝা

আর স্বপ্ন দেখালো সোনার বদলে…।

 

আরো বেড়ে গেলো রক্তনদীর স্রোত- ঢেউ-গ্রাস

দৈর্ঘ্য আর প্রস্থে চিড়েচ্যাপ্টা রূপকথাগুলো

আধুনিক কাব্য হয়ে উঠলো…

 

আর আমাদের ছেড়ে প্রিয় গ্রামখানি

ধীরে ধীরে চলে গেলো রোমন্থনের শৈশবে

ও!

সোনার পাহাড়টা।

ভয়ার্ততা আর রক্তপ্রেতচ্ছায়া লালমুখে

প্রতিভোরের জানালায় শুভসকাল জানায় আমাদের

 

 

করতল

শব্দ ছিট্কে আসে। উঠোনে উঠোনে নাচে। পুষ্পবৃক্ষ নিছকই কাঠ হয়। অবশেষে অঙ্গার। মানুষেরা ঝরে যায়, নিজের নিলামদার হয়ে, বন্ধুট্রেনের তলায়। গাছেরাও প্রতি শীতে। ক্রমশ বিপদ আরো- সমুদ্র ক্ষুদেডোবা। জ্যোৎস্নার বালিকারা মাড়িয়ে শিশির অস্বচ্ছ ইস্কুলে যায়, স্তিমিত শীতরাত ল্যাম্পপোস্ট আলো, পুরুষ-কুয়াশায়। পড়ে থাকে একা। স্মৃতি-শাদা-শোক-নদী ছলাৎ ছলাৎ-এ সময় পোড়ানো গান। এখানে ওখানে পড়ে থাকা দলামোচা লাশ। ছেঁড়া-চট্-ত্যানা মোড়া। আমি মর্গবারান্দা। আয়েশে ধরানো সুখ- ধোঁয়ায় অধরা, বারান্দার মেঘেরা বিরক্ত করে। দূরবর্তী বিলীনতা- আরো দূরে সোনার হরিণেরা। উন্মত্ত তাদের চারপেয়ে নাচ।

 

ভোরের আমেজ কাটে। অথচ সময় দোলা দেয়, মেয়েমানুষ। রিউমারগুলি। ভোর-ভোর জেগে উঠে প্রসন্ন প্রকৃতি, দ্রুত উড়ে চলে ঝিনুকস্বভাব শঙ্খের দিকে। কী আশ্চর্য! গ্লানিরা দিনের অনিবার্য কোলাহলে, মৃতের পোষাক পড়ে। ধীরে খুব সবকিছু কোমল র্সাগাম। তানের ভেতরে ঢুকে, আমিই পৃথিবী, নগ্ন হাইওয়ে। ‘এসো মানুষ, পুড়ে যাচ্ছে নদী’ ডেকে ডেকে, পাখিকেই শিখি; একই তোতাকথা। শিখি উড়ানজীবন, দেখি আনত বিস্তৃতির জল। ভেতরে পর্বত-নদী, শ্যাওলা-অরণ্য, শতো বিষ-গ্লানি, শীর্ষ মুহূর্তের মতো স্ফুট-আলোড়ন কম্পাঙ্কে, জাগে অগ্নিস্রাব। ফেটে চৌচির হয়। অজস্র ভাঙচুর। মৃন্ময় উঠোন। বিবিধ সঙ্গমস্থল। কোটিকলাব্রীড়া। অনুবিস্মরণ। ছায়াঘনত্বে দেখো, নিজের পিঠের দিকে রূপোলী নখের চির। ঠোঁটের নিজস্ব চাওয়া, তাপে-চাপে অদম্য স্প্রিংনাচ। তাড়নায় বেজে ওঠা- ‘চুষে ফেলে দেয়া চোষ্য কেউ মুখে নেয় নাকি!’

 

নিজের ভেতর থেকে আমিও নোড়ার ভার। শিশ্নের গান। নত থাকা দুই হাঁটু মুড়ে। শরীরে শরীরে, শিরা-উপকূলে, হৃৎপি- যকৃৎ আগ্নেয়গিরি, উদর-নাভীর হ্রদে, লোম-অরণ্যের গহীন পথহীন পথে। বিষাদ-আঁধারে বিষের ক্রিয়ারা। তীব্র স্বানুভব। খেলে যায়। পাক খায়, তেড়ে যায়, প্রতিহত হয়- তীব্র বিস্ফার। মাংসের অতল আবরণে শব্দরা বেড়ে ওঠে টলমল, টলমল। কেমন কোমল থেকে অন্ত্রের দিকে স্রোত তোলপাড়। বর্শার আঘাত হেনে রক্তঝরা গান। মুখ থমথমে। অথচ কী নৈমিত্তিক শরীর ঘনিষ্ঠতা। তাপসঞ্চালন। গন্ধ চলে এলে, চলে এলে ফুল নিজে, পড়ে থাকে শুধু যন্ত্রণাবিদ্ধ বুক, ক্রসফায়ার ইন্দ্রিয়ে কুঁকড়ে থাকা শীতে জলে নামা সেঁধিয়ে যাওয়া মোম। একটি জীবন পোড়ে, শুধুই পোড়ে, আকাশমেঘবৃষ্টি এবং ঝড়ে। কাজ শেষ। এবার নিয়তি, ভেঙে পড়া বৃক্ষরাজি, টুকরো টুকরো পর্বত। হৃদ-বাসভূমি, ভেসে যাবে বিষ-নদী জলে। ভেঙে পড়বে দেয়ালেরা, চুমুর কানুন।

 

আসন্ন বিলয়ে, শক্তি নেই কোনো। প্রতিরোধের অমোঘ দেয়ালে ঠেকেছে ক্লান্তপিঠ। ভাঙচুর হতে হতে, সকলই বিদুর লালার্ত মুদ্রার রং। আলো দেখি থির। ভেতরে নিষাদ সময় বিস্ফার। প্রার্থনাগীত- বেজে চলো। কম্পন থেকে কোনো মুক্তি নেই। বিস্মরিত আগুনে পোড়ে নয়নের কোল।

 

রক্তবীজসম এই অন্ধকারে। হাতে আসে হাত। জানি না কে তাকে করতলগত করেছে অকস্মাৎ! কে সে? ও লো কে সে? এক মরে, আর এক বেঁচে ফিরে আসা? কথা বলো, কথা বলো। এক থেকে বহু? বহু বহু মরা! জ্বরের কম্বল থেকে খুঁটে খুঁটে তুলে ফেলি চোখ, আঁশ। ভেতরে চিৎকার তবু-

শব্দ নেই, শব্দ নেই কোনো।

 

 

প্রিয় ছোটবোনটাকে,

যদি তাকে, কাছে পাওয়া, যেতো সারাদিন

 

( যারা বলেছিল আমরা সবাই ধর্ষিত…)

 

একদিন, একা।

হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ি জলের অতল আকাশে হাঁ-মুখ বাড়িয়ে।

 

বন্ধুর বউ দেখে সঙ্গী চেয়েছি আমি।

বন্ধুবধুর তুলতুলে শিশু, কোলে তুলে শিশু।

বউ কি শিশু কি হায় প্রেমিকা জোটেনি অভাগা আমার।

 

মাছ হয়ে উঠি আমি। ধীরে ধীরে গাছ হয়ে উঠি।

নদী হয়ে উঠি আমি। ধীরে ধীরে বন হয়ে উঠি।

জল হয়ে উঠি আমি। চুপে চুপে স্নানঘরে জল হয়ে ঢুকি…

 

কিশোরী, বালিকা তবু গল-অঞ্চলে

নও-গম্বুজে লালচাকাদাগ, স্নানঘরে কাঁদে ছোটবোন আর

আমি কাঁদি হায়! ভুলে গেছি কথা পাহারা দেয়ার

কোনোদিন আর ভালোবাসবেনা কাঁদে একাকীনি ত্বক ছিঁড়ে খুঁড়ে

নধর শরীর ঘষে কালিমা উঠাতে চায়!

(ভাই! একবার অন্ধের মতো আঙুল বাড়িয়ে ছুঁয়ে দাও দেখি আমার শরীর)

 

জল আমার বড় একা লাগে।

জল আমার গলে বুকঢেউ বেয়ে ক্লেদ উঠে আসে।

জল আমার বড় একা একা লাগে।

 

পালাই পালাই।

আকাশের নীল অন্ধযষ্ঠি আশ্রয়ক্ষেতে দু’চোখ ডুবিয়ে দিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি,

আশ্রয় পাই।

চোখ খুললেই

শকুনেরা সবখানে।

মাংস লোভের এ-শহর হায় শরীর শরীর

কোনো প্রাণ নাই; ওষ্ঠে কঠিন মাটি

 

অচেতন সব শর্ত এবং

প্রত্যয়নহীন প্রস্তুতি-পাশে ধুলো জমে ওঠে।

তাকে দূর থেকে চেয়ে দেখা যায়–

একফালি জানালায়

গরাদের ফাঁকে কাঙ্ক্ষিত আশ্রয় খোঁজে আতিপাতি।

 

বিদ্যুৎচকিত ও মৌনমুখ কেবলই ঘুরে ফিরে দাঁড়ায় আঁধারে।

 

ছায়াবালিকাটি আজ

আঙুল নামায় জলে,

(আহা! সে আমার প্রথম প্রেমিকা!)

আমি ওর

স্বপ্ন ও চোখের জলে শুয়ে থাকি শব্দহীন, অনুভূতিহীন

ঝিনুক হয়ে চিরদিন–

চিরদিন আমি তার নিষেধ-খেলার সাথী;

গোপন সুখ তার একে একে আমিই কি ভেঙেছি!

 

কতভাবে ডাকলাম কাছে

ও বালিকা তবু কিছুই বোঝেনি! এ-ই ধরে নেবো!

 

যে বালিকা আজ আঙুল নামালো জলে,

এত ভোরে, চারপাশে তার ইতিউতি ঘুরে গেছি শিমুলের ফুল।

ও বালিকা তবু কিছুই বোঝেনি!

(দৃষ্টিহীনের আঙুল বাড়িয়ে একবার ভাই ছুঁয়ে দাও দেখি আমার কপোল)

 

শুধু কখন সে চুপিসারে, একা

শিমুলের আবডালে বসা

পাখিদের, মেঘেদের, বাতাসের, পরাগের সাথে জলের কণার

ঘোরলাগা কী দারুণ ভালোবাসাবাসি

দেখে গেছে চুপচাপ

আমাকে বলেনি। গেল কি হারিয়ে!

 

এইভাবে আজো, একা।

হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ি জলের অতল আকাশে হাঁ-মুখ বাড়িয়ে।

 

 

অহম

ভোর। জলের পলিশে খেলা করা আলো। দূর; দূর থেকে ভেসে আসা উজান-নহর। রক্তকরোজ্জ্বল। অব্যয়পথ বসন্তসেনা। জানালার ধার। দিগন্ত ওপার। ডেকে ডেকে ওঠা। ভোর; ভোর। আস্তীর্ণ নিসর্গ। উঠানে উঠানে। ছড়ানো ছিটানো ধানে। শালিকের ঠোঁট। ধ্রুবপদ। স্বপ্ন।

 

প্রকৃতির প্রকরণ সব। প্রগলভ। অ-তনু প্রত্যাশা। মেঘ। রোদভাঙা। ভোর; ভোর। ওমের জোয়ার। শিশির হয়ে। হেম হয়ে। হয়ে ওলা ওঠা নিদ। কোমলতা হয়ে। রয়ে রয়ে, সয়ে সয়ে। ছুটে আসছে। পরাগরেণুরা। আমার থেকে। ক্রমশ বিলীন। তোমার দিকে। জলে, ধূলোয়।

 

যারাপথ মেঠোপথ আমপাতা তারাপথ কাঁঠালপাতা

 

(আমার নদী তুরাগ আর আমার দেখা প্রথম কবি, ছোটমামা, আল ইমরান, শান্তিকে ও আমাকে না মেরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ওসব বড় হলে করতে হয়; আমরা, ফ্রক পরা শান্তি, হাফপ্যান্ট আমি, মনে আছে লজ্জা পেয়েছিলাম।)

 

আঁকাবাঁকা পথে ঘুট্ঘুটে আঁধার কেটে এইমাত্র পথ হারালো যে জোনাকি

বিষকাটালির ঝাড়ে মনে হলো অদৃশ্য এম্নি কারো ত্রস্তে চলে যাওয়া ধুমশলাগুন।

 

তুরাগের জল

পেন্সিল-রঙে আঁকা এলোমেলো সন্ধ্যালাল জলের কল্কল।

অনুভূত হয় একশোভাগ মনের সৌষ্ঠব।

দক্ষিণে চেয়ে এই নদী

চারশো বছরের বুড়ো শহরের জল, না না পানি, যেইখানে নিল বাঁক

কোনকালে কহর সদাগর প্রতিদিন সেখানে! তার আশ্চর্য ডিঙার ভাসানে !

আসমান হতে কি ধুপ্ করে পড়ে জ্যাঠার অপরূপ রূপকথা– সোনাভান,

আশিমণি ডেগের পুরাণ!

ঢাকার অদূরে আর গ্রাম নেই বলে এখানেই শুটিং,

চম্পা-ববিতার ঠোটের রঙে হাফপ্যান্ট ভেজায় জুলহাস ভাই,

যদিও তখন ক্লাস সিক্স

গলাগলি আমাদের

অন্যরকম ব্যাপারও আছে এদিক-ওদিক

একবার দুইটি কিশোর গাঙপাড়ে, পাকাধানক্ষেতে,

সোনালী বেড়ায় ঘেরা নির্জন আলে

কাঁচা ডালে ব্লেড আটকিয়ে বড় হওয়া টের পেয়েছিল,

ঘুমভেঙে দেখে ফেলা বাবা হয়েছিল পাটেক্ষেতে শান্তির সাথে বউ বউ খেলে

 

এখানে বসেই উত্তর খুঁজেছি কত করে

জীবনের কাছে কী পেলাম কিংবা জীবন পেয়েছে কী আমার কাছে?

এ জীবন শব্দহীন বলেই যেখানে জানি

কি করে যে লাগে পাঁজরে ঝাঁঝর প্রেমকিয়া হাওয়ার আদর

এ বুঝি জানে না কেউ

গুমট কষ্টের মাঝে টুকরো একটু সুখ রহস্যনিবিড় কোন পথ বেয়ে আসে–

 

ঘনতর হয় সন্ধ্যা-আঁধার, ও রাত তোমার অতিথিরা এসে গেছে

এল চিরকেলে দায়িত্বশালিনী

শুকতারকার মুখ মহান শূন্যে জ্বল্জ্বল, ধীরে খুব তারার গুলিস্তাঁ

আঁধার গায়ের মেঠোপথ আমার গায়ের তারাপথ ম্লান হয়ে আসে

আর কি ইচ্ছে হয় হিসেব মেলাতে ভেবে আজ জীবনের ঝরাপাতাগুলি?

 

দেখে বা না দেখে ফিরে আসা

যত পাতা ফুলেদের শৈশব-ঈর্ষা

জীবন বাবুর মতো হয়তো সেও এই হৃদয়ের নাম। হয়তোবা তোমারও। হয়তো তোমাদেরও।

হয়তোবা এ-ই সকলের হৃদয়ের নাম এমন আঁধিয়ার রাতে।

 

ওষুধ বস্ত্র ইটভাটা মলে

থামন নেমেছে তুরাগের জলে; ভেশাল-জাল লতা কল্মি

শাপলাশালুকফুল পাড়ে বাঁধা নৌকাদুটো সবাই আঁটকে গেছে

এখন ঘোলাটে কাঁচ তুরাগের জল

এবং ঘোলাটে কাঁচ হয়েছে হৃদয়

এই মনে সব আছে তাই সব সত্য আছে

সত্যের প্রয়োজনে যেমনটি হওয়া চাই হৃদয় তেমনি নাই।

শুধু “তোমার” লিখতে না পারার বিস্মরণে মনে আছে

‘সত্যই সুভিক্ষ যে, সত্যের মত সাধ অন্য কিছুতে নাই,

সাধ তাই পায় না জীবন।

 

কবি আমি বসেছি এখানে,

ক্ষয়িষ্ণু বটের গুড়ি মাটিহীন হাড়েরকাঁকাল

খাতা আর কলমটাকে তার বুকে রাখি।

তাদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো আবার

এমন যোগ্যতার তারা যদি হয় তা অন্য কোন চেহারাতে হবে,

এই চেহারাতে এই পরিচয়ে নয়;

 

এখন দৃষ্টি যেখানে আমার সেটাকে দেখি না।

হৃদয় এখন বহুধাতরঙ্গ হচ্ছে ফেনিলতর; হৃদয়ে আমার চড়া।

খাতাটি এভাবে ইবোনাইট বোর্ড হয়ে যায়।

তারপর একটুকরো ব্লটিং পেপার; ছোট্ট হাতপাখা

আয়না হয়ে যায়। কলম এভাবে থার্মোমিটার।

পরে পাটশোলা, পেন্সিল, ছিটকিনি, আইসক্রিম কাঠি।

যতক্ষণ না নিচ্ছি হাতে, চিত্তের লকআপে এই চেহারা ধারণ করে তারা।

লেখা হয় না আমার। শুধু বসে থাকা।

 

এই তরো বসে থাকা, চলে যাওয়া এ দিয়ে কি অস্তিত্ব পথিক আমি হারাই সকলি?

একতিল

দুইতিল

তিল তিল করে

নিজের অঙ্গবিশেষ হারাই; হারাই হারাই সদা পাই ভয়? ডোবে অন্তর্জলী।

 

দিনের গাঙকিণার হতে ওপারে যখন

বড়টিলাটির পূবপাশে দুটো শ্যাওড়ার মোকাবেলা;

উঁচু দুই সহোদরগাছ;

ওয়ারিশ নিয়ে পৌঁছুতে সিদ্ধান্তে কোন বোর্ড বসিয়েছে তারা

দেখে মনে হয়, এমন রাত্রির পটে তারা আজ আকাশের ছায়া।

আমি ও আমার ছায়া প্রশান্ত এপারে।

 

কোন অনুজ্ঞা অন্তরের কিছুমাত্র শাসন এইখানে নেই

সকল খাবার আছে সব প্রণোদনা

অথর্ব বাঁশির সুর তারার প্রমন্দ আলো চাঁদ সদাগর

সপ্তর্ষির রথে চড়ে সমগ্র আকাশ পেরোয়

কোন অনুজ্ঞা অন্তরের কিছুমাত্র শাসন এইখানে নেই

পেলব হৃদয় নির্মাণে শাসন বলে কোন সঠিক-সুস্থ উপাদান নেই।

 

কণ্ঠে তবু হৃদয়ের বন্দনা চাই

রক্তিম সবুজ প্রাণ; আত্মার বন্দনা চাই

দুই চোখ থেকে, মাথা থেকে, বুক থেকে, হৃৎপিণ্ড থেকে,

বেরোয় ব্যপন করে চঞ্চল যকৃৎ অপাঙক্তেয় আত্মার কোলাহল

সুবর্ণ ফড়িং হয়, লাফিয়ে লাফিয়ে যায়

কাঁটামেহেদি কচুড়িপানা ফুলে প্রবল ঝাকায়

 

ভালোমন্দের প্রভেদ ভুলে-না-যাওয়া পাপ,

এই আত্মাকে এই রাতে মনে হয় এক চিমটি বাতাস!

বা খানিকটা আলো!

 

এই রাত্রি কিনেছে আমাকে

ওঠা হয় না এখান থেকে

আগন্তুক আঁধারের সুরে সুরের তিরাশি কুটুম

ঘুমের সুবাসমাখা অন্ধ-অন্ধকারে

তারাপথ মেঠোপথ আমপাতা-নদী এক রঙে রঙা বলে সব

ইচ্ছেমত সেজেগুজে হাজারটা রঙে আসে চেতনায়; চেতনের শব।

 

হাঁটুভাঁজ করে বসি, মাথাগুঁজে দু’হাতের পেটে

দু’চোখ বন্ধ করি। অনুভূতির সত্য ছাড়া

এখন আর কিছু নেই। চার হাত পা আঙুলের মাথা থেকে শুরু করে

অস্তিত্বের কেন্দ্রের দিকে গুটিয়ে আনি অনুভূতির দিককল্পনা।

আমার হাত আমার পা

আমার শরীর

আমার তলপেট

গহীন মেঘাঞ্চল

যৌনকক্ষ

আমার বক্ষ

আমার ঊরু

এই সমুদয় ‘আমার’কে বাইরে রেখে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হই

মৌলিক আমার কেন্দ্রে; আভাস পাই ক্ষুদ্র নয়; বড়ো, বিস্তারিত করবার পালা নিজেকে এবার।

 

আমি বিস্তারিত হই। আমি বড় হই। ভয়ার্ত গতিতে

পার হয়ে মেঘের দেশ তারাপথ হয়ে তারার রাজ্য ছুঁই।

 

অনুভূতি দিয়ে সব হয়

আত্মা, জীবন, সময় ও সত্যগুলি অনুভূতি ছাড়া কিছু নয়।

 

অনুভূতিহীন আমিই বা কে! সবি হলো অনুভূতি আমি কিছু নয়।

সুচেতনা, তোমার কুটির আর কতদূর বলো, কতোটা দুর্জয়!

মামুর বাড়ি কহুতদ্দুর ॥ আরো আছে বহুদ্দুর ॥

দেখো ভাবনার মেঠোপথটাতে

দেখো ভাবনার তারাপথটাতে

দেখো ভাবনার আমপাতাটিতে

 

আড়ালের বুক খুলে একটুকু

সহজিয়া

ধুলো দাঁড়িয়েছি

এ ক্ষয়িষ্ণু বটবৃক্ষ; অথচ আজ ছায়াবালিকাটি

 

শৈশব শান্তির আঁচল-আঁচালে বসে জীবন দুপুরে

তুরাগের জল

কহরদরিয়া

জ্যাঠার কিসসা

ক্ষয়িষ্ণু বট

ভেহালের জাল

আউশের ধান

নাশিলা পরাণ, প্রথম সোনা ফোটানো সঙ্গী জাহাঙ্গীর-জুলহাস, বউবউখেলা শান্তি,

গোপনতা বালক দুপুর,

মনে করে চুরি করা কলার কাদি মায়ের বকুনি মার

                    এইটুকু কাঁদি।

 

 

পরিত্রাণ

বিষণ্ণ মাল্লার গান

বুক ভরে কুয়াশায় চুইয়ে পড়ছে জল

চোখ জ্বালা করে আর

বাতাসে তুলোর বীজ

এবং অস্থির গাছ, অস্থির অস্থির গাছ

পরিত্রাণ ভালোবাসি।