চৈতন্যের বাঁকে
মুকুল মল্লী
চৈতন্যের বাঁকে
মুকুল মল্লী
১
একবার ভ্রুণ থেকে খসে ভ্রুণে..ভ্রুণেই কেটে গেলো
মুক্তি যেন মুক্তোর মতো? শ্রুতিমধুর শ্রবণে ছড়ানো
আমাদের বোধিবৃক্ষ আরো কোন স্পর্ধার আড়ালেই ঘুমায়
আমরা কোন আয়নাই ঢুকে যেতে চাইনি বলে
দূর কিংবা নিকটের স্বরুপে ঝুলে আছি ইতিহাস বহির্ভূত ইতর ফল!
[২৬/০১/২০১২ খ্রি:]
২
গত হয়ে যাওয়া অন্তর্গত’র রক্তের নাচন বেয়াড়া হয়ে উঠছে
দূরাগত কোন পরবাসের রাধিকা-সন্নাসীনীর ডাক অনুরনন তুলছে
তুক-তাক! ইন্দ্রের ডাকে পাগল হয়ে উঠছি বৃষ্টিনামা উঠোন পানে
হে প্রেম!- বোবা পারির্শ্বিকতার গোরে কোন এক সুপ্ত শ্র“তির শ্রোতের স্নানে
ভেসে যাচ্ছো এ কোথায়!-ও কবি..!
[৩১/০১/২০১১খ্রি:]
৩
করুণার খেরোখাতা খুলে দেখি
একবারই পেতে ছিল হাত সে রমণীর কাছে!
বিমুখ পদ-পাতা চিহ্নের বিবর্ণ রেখা-
রেখে গেছে সে লাল টিপ জোস্নার মতো
জরায়ুকে প্রশ্ন করে দেখো-
জটিল বন্দনার গর্ভে আমিও ভ্রুণ ছিলাম!
[০৭/০২/২০১২খ্রি:]
৪
ছাপোষা চেতনার শরীরে উকি দিয়ে যায় উপমার চাঁদ!
উসল প্রাপ্তির খেরোখাতায় তোমার মুন্সিয়ানার হিসেব
শূন্য মাতালের ঘরে আমিও নামতা পড়ি
মানুষেককে-মানুষ- তুমিককে-তুমি- মনেককে-মন!
তুমুল কর্ষণের ঘামফল ঘুরে উঠে দেখে-বিরান আর বিরাণ ভূমি...!
আর কত... কত-দূর...!
প্রতিনিয়ত দৃশ্যের হাতে তুরুপের তাস হতে হতে
যে নিঃস্ব বাজিতে চলে যাই...
তুমি তাকে বলো নিয়তির ফাঁদ...তুমি পশ্চাৎ অগ্রদূত..!
[১১/০২/২০১২খ্রি:]
৫
আকণ্ঠ ডুবের ভেতরে- বিস্তৃত জীবনের মাঠ
পাঠ নিতে গিয়ে জেনেছি- দৃশ্য পড়ার ব্যূৎপত্তি
বোধের ভেতরে যে নির্জীব পাহাড়- তাকে দেখে বিশাল হয়েছি
অবদমিত রোদের ভেতরে হাঁটতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছি পরম্পরার-
যখন ‘নিশা হয়ে এলো মিষ্টি নুনের ভাত-প্রভাতের রাগ গায়তে
ক্ষণকাল পরেই কেন তার চরম আকুতি যায়- অধিকাংশ ব্যবহারিক আগলের পারে..!
[২২/০৩/২০১২খ্রি:]
৬
রোদ ও রাতের পদাবলি খুলে যে সব লিপিবদ্ধ আছে
এবং নিজেস্বতার উপর বিশেষ গোত্রের যা রঙের আরোপ
আমি তার ধুম ঘুমের ভেতর দিয়ে খুঁজে পাই জটাধর সন্ন্যাস!
উল্টো-চলার দোষে হুলিয়ার আগে আগে হাঁটি
হাটবার এলেও গমগম মানুষের আওয়াজে কোন শঙ্কের সুর নেই
দেখি তোকে- দেখি আমাকে দেখি এক যাদুকরী বিন্যাস! শুধু;
শুধু নিরাপদ-নিরাপত্তার রাস্তায় পথিক শুন্যতা নিয়ে হাহাকার যায়...
[২০/০৯/২০১২খ্রি:]
৭
ফিরতি তোকেই ভালোবাসা এক যৌক্তিক অপরাধ
মুখে মৃত্যু লেগে আছে বলে এইখানেই পাই তার সোয়াদ
যেখানে শুন্য গড়ে মহাজাগতিক- সেখানে তুই এই অনু
মরমের নদী ধরে একমুখীই স্রোত- বাজায় তার বেণু
এতো গল্পের এই রকম থমক- ঢুকে যাই বাকহীন বৃক্ষে
তবুও আপন- করি আপনাকেই যাপন- দেখা হবে সামগ্রিক জীবনের কক্ষে!
[২০/০৯/২০১২খ্রি:]
৮
চৌচির দেহ থেকে বেরিয়ে আসে ভগ্নাংশের রোদ
বেদনার প্রসবে কাঁদে জীবনের শিশু
দাঁড়িয়ে থাকা দাড়ি নিখোঁজ হলে
অরণ্যকের বেদে অন্ধকার অন্বেষী
দো-টানা দ্বন্দ্বে লুকালে লোকালয়
অস্থায়ী সত্যের সাথে দাবা খেলি!
[২১/০৩/২০১২খ্রি:]
৯
অনন্ত তন্ত্রে তন্তুর সূত্র হয়ে ছড়ান মাকড়সার শ্রম
সোর-গোল-আড্ডা অথবা বেদুঈন পেচাঁ
ক্লান্তির বিশ্রামে হাহাকার!
যে আঁটি দৃঢ়মূলে ধরেনি পরম
সেঁচের কৌশল দৃশ্যে অথই তলে সাচা
ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে হয়নিত দ্বার উদ্ধার
জিয়ল মাছের লোভ- শুকনা গাঙ্গের বাধাল
অঢেল কাতর শুয়ে আছে আহত কাতার-কাতার..!
[২১/০৩/২০১২খ্রি:]
১০
নদীর ভেতরে রঙতামাশা- তাম্রলিপিতে তোমার স্রোত
আমিও যেমন ইন্দ্র হতে পারি- তুমিও তেমন স্বরস্বতী
সৌর বীর্যে-অস্বথের ধ্যানে আছে একাকার সূত্র
ও অঙ্গাঙ্গী- কামের লতাতে মুদে-দেখো জীবনের পুত্র
পৃথিবীর আবহাওয়ায় যে নক্ষত্র প্রাণ ছুড়েছিল
আমাদের সমস্ত ঋণ কী তার কাছে!
না- তামান গতির গন্তব্য পরম্পরার স্বার্থে নিহিত!
[২৭/০৪/২০১২খ্রি:]
১১
দৃশ্যত রোদ পোহাবার পর আসে পারিবারিক রাত..
এমন নৈমেত্তিক ফলার নিচে থাকে উল্টানো ঘ্রাণের ঘুম..
আমাদের সু-গন্ধি’র ঘুম ভাঙ্গুক- ময় করার অঙ্গিকারে অঙ্গার হোক..
যে পোড়ার বাষ্প প্লাবিত করবে অধৈর্যের আয়ু...
অনন্ত গল্পের বাগানে এ সময় মহাকাব্য হয়ে যাক...
কবি এ পর্বে মানুষের মিছিল নিয়ে যাও কবিতার গ্রামে...
[১৩/১১/২০১২খ্রি:]
১২
কত সময় শ্রী বিস্ময় নিয়ে গেলো!
কত খেদ, আক্ষেপ- সোনালু লতার মতো বাড়লো!
হীরন্ময় রোদ খুড়ে দেখেছি- প্রত্নপিপাসার রাত...
দেখেছি সমস্ত উৎসব বিলুপ্ত হয়েছে দাড়কিনি মাছের সাথে
বোধি বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত যে বর, তা গোড়াতেই বেঁধে এসেছি
হীন হয়ে ওঠা দিনতার কাছে আমার চরিত্রের হার
রোদের কাছে পৌঁছে না এই সব বন্ধ্যাত্বের চিৎকার..!
অষাড় রক্তের বীজ কণিকায় কে তুলবে অঙ্কুরের গান
কবে পাবে, কবে কার ফেলে আসা মানুষস্নান
এই খানে আমার সমস্ত আফসোসের ঋণ-
ঐখানে আমার মৌকুফের ধান!
১২-১২-১২খ্রি:
১৩
রোদ পোহাতে পোহাতে আমার কেবল অন্ধকারের গল্প আসে;
পরখ করে দেখি- উপাখ্যানে নানির আক্ষেপের ফিনিক্স নিঃশ্বাস!
যে বয়সে আমার ইতিহাসের খাতায় তোমার নাম থাকার কথা- এবং/
তাবদ পরিচয় গল্পেই জানার কথা, সেখানে আমি গল্প খুঁজি পুরাতত্ত্বের মতো, /
আবিস্কার করি- ঢুঁরে ঢুঁরে সত্য বুঝি- রাফ খাতায় মির্জাফরের হিসেবটানি আর /
সৎকারের দৃশ্য দেখতে দেখতে জন্মসূত্র ভুলে কুণ্ডলী বায়ুর কোয়াসার আড়ালে-/
আমার গোলাপ জীবনের কান্নার অসুর শুনি; বাজিকর রঙ্গের আড়ংয়ে- /
দেউলে চোখে কলা ও রথের মেলা চলে যায়... এবং /
ক্ষোভের বাইসন এখনো রাগ শিখেনি বলে আজও সেই নিঃশ্বাসে ভর করে
আবারও মীথকষি- মানুষ দেখি, ভাজ খুলি- তো আগলাই...! /
এবং মানুষের নাম করুণা হলেও কল্যাণি! তো কি হয়েছে? তো কিছু হয় না তো!
[০২/০১/২০১৩]
১৪
একদিন হৃদয়ে শীত নেমে এলে
তোমার পাঁজরের কান্না আমি বুঝি
আর যা কিছু বুঝিনি তা মানুষের বৈচিত্র্র্য!
আমার প্রতিটি চলে যাওয়া- ছোটবেলার হলুদ পাখি...
উষ্ণতার খাতিরে অনুরাধার যোগ-
আর উন্নাষিকতা তো আমাদের ইতিহাস...
সুতরাং সূতপা যা করে ছিল ব্যাতয় করেনি!
অনুকম্পা কিংবা ক্ষমার বালাই তুলিনি শরীরে-
বিধায় তুমিও পণ্ডসুন্দর ভেস্তে দিয়েছো বারবার...
ভেবেছি কবে তুমি সৌন্দর্য তত্ত্বটা বুঝবে!
আমাদের লাল ঘূড়ির সংখ্যা নেই; এমনকি হারিয়েছি লাটাইরাখা দ্বার
তাই বেতাল-বেচালে বেচে যায় করিত-কর্মা চিন্তা এক শহুরে হকার...
[০৮/০১/২০১৩]