আজ আমাদের "ছাদ-ভালোবাসার" দুই বছর পূরণ হল। আমি আর শায়লা ঠিক করেছি, বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো। বয়সটা হয়ে যাচ্ছে সাতাশ, ওদিকে শায়লার বাসায়ও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আংকেল তো তিন বিল্ডিং পরের অ্যাপার্টমেন্টের তার বন্ধুর ছেলের সাথে শায়লার বিয়ে দিবেন বলে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিলেন। তবে শায়লার তীব্র আপত্তি এবং আমাদের ছাদ-ভালোবাসার কাছে কোনো বাধাই টিকতে পারেনি। অবশেষে আমাদের বিয়েটা হচ্ছে।
আমাদের প্রেমটা শুরু হয়েছিল লকডাউনের শুরুর দিকে। আমি বরাবরই খুব চুপচাপ প্রকৃতির ছেলে, অবসরে গান শুনে আর কবিতা লিখেই দিন কাটিয়ে দেয়া মানুষ। আমার বাসার ছাদে আম্মু সুন্দর একটা বাগান করেছেন, আমি প্রতি বিকেলে সেখানটায় গিয়ে বসি। ২০২০ এর তেমনই এক বিকেলে আমার শায়লার সাথে প্রথম দেখা। শায়লার বাসা ছিল ঠিক আমার বাসার পাশের বিল্ডিংয়েই। কাকতালীয়ভাবেই কিনা, আমাদের বিল্ডিংটাও সাত তলা, ওদের বিল্ডিংটাও সাত তলা। অবশ্য ওটাকে সাড়ে ছয় তলা বলা যেতে পারে, যেহেতু ওদের ছাদে ছোটখাটো একটা চিলেকোঠাও আছে। তো, কিভাবে দেখা হয়েছিল বলি। সেদিন আকাশে ভারী মেঘ করেছিল। বৃষ্টি আসার আগে মেঘময় আকাশকে দেখতে যেমন লাগে, সেটা দেখে আমি ফোনে একটা প্যানেরোমা ছবি ক্যাপচার করতে শুরু করেছিলাম। ছবি তুলতে গিয়ে ফোনটা ডান দিক থেকে পুরোটা ঘুরিয়ে বামে নিতে যাবো, এমন সময়ই একটা নারীকন্ঠঃ
- " এক্সকিউজ মি, এই যে, আপনি, ছাদে দাঁড়িয়ে মেয়েদের ছবি তুলছেন?"
আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি, পরে মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম পাশের বাসার সেই চিলেকোঠাযুক্ত ছাদে একটা মেয়ে, নীল শাড়ি পড়ে চোখ কটমট করে রাগী রাগী চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও আমি নিতান্তই মেঘযুক্ত আবহাওয়ায় একটা ছবি তুলছিলাম, তবুও তার কথায় লজ্জা পেয়েই কিনা, কিছু না বলেই চলে গেলাম বাসার ভেতরে। একটু বলে রাখি, আমি এর আগে প্রেম টেমের ধারে কাছেও ছিলাম না। তবুও সেদিন বিকেলে বৃষ্টি হবে হবে এমন একটা আবহাওয়ায় নীল শাড়িতে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকা একটা মেয়ের প্রেমে কিভাবে যেন পড়ে গিয়েছিলাম। পরেরদিন আবার গেলাম ছাদে, সেদিন ইচ্ছা করেই বারবার মাথা ঘুরিয়ে, সরু চোখে, অন্যদিকে তাকানোর ভান করে বারবার দেখছিলাম, সে আসে নি। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেলো। ছয়দিন পর শায়লার দেখা পেলাম। সেদিনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা, এরপর ধীরে ধীরে কথা হওয়া, জানাশোনা, এবং প্রেম।
শায়লা চুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাত্রই ভর্তি হয়েছিল, আমার তিন বছরের জুনিয়র ব্যাচ। কথায় কথায় ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। এরপর থেকে মায়ের একান্ত বাধ্য, চুপচাপ, নম্র ভদ্র ছেলেটাকে নিয়ম করে প্রতিদিন বিকেলে দুই ঘন্টা ছাদে দেখা যেত। কারণ তো আপনারা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।
যাই হোক, এই লেখায় প্রেমের কথা বলাটা উদ্দেশ্য না। সেটা না হয় আরেকদিন বলা যাবে। আজ তো আমাদের বিয়ে। অবশেষে আমাদের বিয়েটা হচ্ছে। শায়লার বাবা শরাফত আংকেল তো হুংকার দিয়েছিলেন, তিন বিল্ডিং পরে তার বন্ধুর ছেলের সাথেই শায়লার বিয়ে দেবেন। কিন্তু আমি যখন তাকে ফোন করে বলেছি, "আংকেল, এত দূরে যেতে গিয়ে যদি আপনার মেয়ের করোনা হয়ে যায়? তার চেয়ে আমরা কাছাকাছি মানুষ, কাছাকাছিই থাকি, কি বলেন?" এই যুক্তির কাছে শরাফত আংকেল শেষ পর্যন্ত অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে বাধ্য হলেন।
যথারীতি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হল। আমার বন্ধু রিয়াদকে দেয়া হল বিয়ের কার্ড বানানোর দায়িত্ব। সে সুন্দর একটা ডিজাইন বানিয়ে এলাকার সবাইকে এবং আত্মীয়দের ইমেইলে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরেক বন্ধু Rakim কে দেয়া হলো ভিডিওগ্রাফির দায়িত্ব। সে চট্টগ্রামের বিখ্যাত ইউটউবার। সে তার ড্রোন নিয়ে যথাসময়ে পুরো এলাকায় ইভেন্ট ফটোগ্রাফির মহড়া দেয়া শুরু করলো। খাবারের দায়িত্ব দিলাম আমাদের কেয়ারটেকার কুদ্দুস চাচাকে। তিনি ফুডপান্ডায় বিশাল একটা অর্ডার দিলেন, এবং বিয়ের তিন দিন ধরে পুরো এলাকার জন্য ফুডপান্ডার দুইটা ফুড-ভ্যান যাওয়া-আসা করতে লাগলো। এদিকে আমেরিকা থেকে আমার বন্ধু Tamim এর বাবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিয়েতে উকিল বাপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে সম্মত হয়েছেন।
আজ আমাদের হালদির আয়োজন। মানে "হলুদ" কথাটা প্রাচীনকালে থাকলেও কালের বিবর্তনে সেটা কিভাবে যেন "হালদি" হয়ে গেল। যাই হোক, আজ খুব স্পেশাল একটা ফিলিং হচ্ছে আমার। পাঠাও পার্সেলের মাধ্যমে নতুন পাঞ্জাবি আনিয়েছি, সব কিভাবে যেন একেবারে মিলে গেছে। আমাদের বাসার ছাদে চেয়ার বসানো হয়েছে, কুদ্দুস চাচা সব খাবার উপরে তুলে দিয়েছেন। শায়লার বাসার কেয়ারটেকার বশির চাচাও ভালোই কাজ করছেন। এদিকে এই লকডাউনের মধ্যেও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও এই প্রেমের প্রথমদিক থেকেই সবকিছু জানা বান্ধবী শ্রেয়া দুই সপ্তাহ আগেই রাঙামাটি থেকে চলে এসেছে শুধু আমার বিয়েতে থাকবে বলে এবং বিয়েতে আমার বোন না থাকায় সব দায়িত্ব সে ঠিকঠাকভাবে পালন করছে।
যাই হোক, হালদির অনুষ্ঠান চলতে লাগলো, আমার বিল্ডিংয়ের সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা সেজেগুজে উপরে এসেছেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়ির বয়স্করা নিচে নেমে গেলেন। এরপরই আমার আরেক বন্ধু বিখ্যাত গায়ক সামিন তার ব্যান্ড দল Samin's Territory নিয়ে তার বাসার ছাদ থেকে জুম এর মাধ্যমে গান বাজানো শুরু করলো। সেই গানের সাথে আমার এবং শায়লার বাসার ছাদের উপস্থিত সব অতিথি নাচতে লাগলেন। শেষের দিকে সামিন খুব আবেগঘন গলায় একটা গান গেয়ে সবাইকে কাঁদালো। আমিও আমার ব্যাচেলর লাইফের আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ দিন দেখে আবেগে কেঁদে ফেললাম। এটা দেখে আকাশে উড়তে থাকা রাকিমের ড্রোনটার স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে গেলো....
আজ আমাদের বিয়ের দিন। দুই বছর প্রেম শেষে, অবশেষে বিয়েটা হচ্ছে। সকালে উঠেই আমার একটা অভ্যাস শায়লাকে মেসেজ দেয়া, "গুড মর্নিং জান। আজ বিকেল ছাদে দেখা হচ্ছে?" লিখে। আজ লিখতে গিয়েও কেন যেন থেমে গেলাম। আরে, আজ তো আমার বিয়েই।
শায়লা তো আজ পাকাপাকিভাবে আমার কাছেই চলে আসবে।
দুপুর পর্যন্ত স্পেশাল গোসল করানো হইলো আমাকে। এরপর দুই ঘন্টা ধরে আলভিরাস থেকে আসা বিশেষ বিউটিশিয়ান মাস্ক পড়ে দূরে দাঁড়িয়ে আমার রূপচর্চার উপদেশ দিলেন। সে যে কি এক যন্ত্রণা। "ফেইস প্যাক" নামের একটা আজিব জিনিস আমার মুখের উপর বসিয়ে রাখা হল। এরপর চোখের উপর দুইটা লেবুর টুকরা। এটা তোলার পর আবার কি যেন গুড়ো করে মুখে বেটে দেয়া হলো, সেটা তোলার পর একবার পানি দিয়ে ওয়াশ করেই আরেকটা উপাদান। এভাবে টানা দুই ঘন্টা রূপচর্চার নামে অত্যাচার শেষে আমাকে মুক্তি দেয়া হল।
এখন নাকি আমার সিঙ্গেল ফটোশুট করা হবে। এ কাজে রাকিম তার বিশেষ ক্যামেরাম্যানকে পাঠিয়ে দিয়েছে। সে বাসার সিড়িতে, কিচেনে, ডাইনিংয়ে বসিয়ে, জানালার গ্রিল ধরে, এমনকি বাথরুমের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে আমার ফটোশুট করলো। আমিও যথারীতি "ব্যাচেলর জীবনের শেষ ফটোশুট" ভেবে নিয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে পোজ দিলাম। ফেসবুক খেলে একটা স্টোরি দিলাম সেল্ফি তুলে, "আজ আমার অবিবাহিত জীবনের শেষ দিন। সবাই দোয়া করবেন"। দুই মিনিটেই বিশটা লাভ রিয়েক্ট!!!
এরপর নিউজফিডে একটু দেখতেই দেখলাম, ফেমাস সিংগার Ayaz আমার বিয়ে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন! তিনি তার বিশেষ ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে আমার বিয়েতে Ending Song পরিবেশন করবেন। এরপরেই বন্ধু সামিন এর মেসেজ। " কি, সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম?"
বিয়ের সময়টা চলে এলো। দুই বাসার ছাদে মুখোমুখি দুইটা স্টেজ বানানো হয়েছে। আমি এইদিকের ছাদে এক প্রান্তে, শায়লা ওইদিকের ছাদের অন্য প্রান্তে। আকাশে উড়ে যাওয়া ড্রোনটা আমাদের ক্লোজ শট নিচ্ছে, ছাদজুড়ে লাইটিং ও সাজসজ্জার ভিডিওগ্রাফি করছে। শায়লাকে দেখতে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছিনা, দুই বছর আগে প্রথম নীল শাড়িতে দেখা শায়লা বেশি সুন্দর, নাকি আজ বিয়ের সাজে থাকা শায়লা? এরকম মধুর একটা প্রশ্নের উত্তরে এরকম কনফিউজড আমি সারাজীবনই হতে চাই...
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষের দিকে। আমার বন্ধু তামিমের বাবা আমেরিকা থেকে উকিল বাপের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন শায়লার বাবা শরাফত আংকেল (আজকের পর থেকে যিনি আমার শশুড়), তিনি জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে Raise Hand করলেন, আমিও আমার আইডি থেকে Raise Hand করলাম। তিনি অশ্রুসজল নয়নে তার একমাত্র আদরের মেয়ের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে তুলে দিলেন। আন্টি (যাকে আমি গত একবছর ধরে আংকেলের অগোচরে মা হিসেবে ডেকে যাচ্ছি), তিনিও কেঁদে কেঁদে বললেন, "বাবা রাহবার, আমার মেয়েটাকে তুমি একটু প্রতিদিন ভিডিও কনফারেন্সে দেখে রেখো..."। শায়লার ছোটভাই Partha ও কাঁদতে কাঁদতে তার বড় বোনের বিদায় দিল...
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল। আমাদেরকে ছাদে একা রেখে সবাই নিচে নেমে গেলো। আকাশে ভরা পূর্ণিমা। চাঁদটা যেন মুগ্ধভাবে আমাদের দেখছে। আমি একটা টুল নিয়ে বসেছি ছাদের একেবারে শেষ প্রান্তে। শায়লা তাদের দোলনায় বসেছে। মেসেঞ্জারে একটা Google Meeting এর লিংক দিল...
আমি জয়েন করতেই, সে এক্সেপ্ট করতে দেরি করছিল। কিছুক্ষণ পর এক্সেপ্ট করতেই, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ
" কি ব্যাপার, দেরি করছো যে?"
" আজ না বাসর রাত, এত সহজে কি ভেতরে আসতে দিতে পারি?"
" আকাশে চাঁদ উঠেছে, দেখো..."
" দেখেছি..আজ কি চাঁদটাই দেখবে?"
" হ্যা, ভাবছি আজ চাঁদ দেখেই কাটিয়ে দেবো। সিঙ্গেল জীবন অফিশিয়ালি শেষ, কেমন যেন অন্যরকম লাগছে।"
" আমারো। আচ্ছা, আমরা ঘুমোতে যাবো না?"
" হ্যা, যাবো তো। কিন্তু কোথায়?"
" কোথায় আবার? তুমি তোমার রুমে, আমি আমার রুমে"
" তাহলে বিয়ে?"
" বিয়ে কি?"
" না মানে আমরা তো এখন বিবাহিত.."
" কিন্তু এখন তো আসা সম্ভব না বাবু। এখন যে বের হলেই করোনা..."
" তুমি কি পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে এভাবে?"
" কষ্ট হলেও তো থাকতে যে হবেই। একদিন এই লকডাউন শেষ হবে। সেদিন না হয় আমরা একসাথে থাকবো..."
" তুমি কি আমাকে একটা ওয়েডিং কিসও দিবে না?"
" এটা কি ওয়েডিং ভিডিওগ্রাফির অংশ ছিল? দাঁড়াও আমি একটু তোমার বন্ধু রাকিমকে জিজ্ঞেস করি?"
" না না, ঠিক আছে। আচ্ছা, করোনার কারণে এটাও নাহয় স্যাক্রিফাইস করলাম?"
" আচ্ছা না মানে, আমারও কেমন যেন লাগছে। আজ বিয়ের দিন। গত দুইবছর না হয় স্যাক্রিফাইস করেছি। আজ তো বিয়ের দিন...
" তাহলে উপায়?"
" তুমি একটা কাজ করো। তুমি না অনেক ভালো লং জাম্প দিতে পারো? তুমি না বলেছিলে স্পোর্টসে তুমি ফার্স্ট হয়েছিলে?"
" হ্যা, বলেছিলাম তো?" (আসলেই কি বলেছিলাম?)
" একটা লাফ দাও না তাহলে। বিল্ডিং তো পাশাপাশিই।"
" ইয়ে মানে..বলছো?"
" হ্যা, তোমার উপর আমার বিলিভ আছে। তুমি পারবে"
অগত্যা, সারাজীবন একান্ত শান্তশিষ্ট, নম্র ভদ্র এই আমি বিয়ের রাতে বউয়ের কথায় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে লাফ দেয়ার প্রস্তুতি নিলাম। শেষবার আরেকটু জিজ্ঞেস করে নিলাম,
"শায়লা, তুমি কি সত্যিই আমায় আসতে বলছো?"
" তুমি কি আমায় বিশ্বাস করছো না? তুমি কি পারবে না তোমার কুইন এর কাছে আসতে?"
আমি আর দেরি করলাম না। একটা লাফ দিয়েই দিলাম। দশ সেকেন্ডের জন্য মনে হচ্ছিলো আমি হাওয়ায় ভেসেছি, এরপর হঠাৎ তার বাসার ছাদের একটা গ্রিল কোনোভাবে ধরলেও, অন্যটা ধরতে পারছিলাম না। একমুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল আমি পড়ে যাচ্ছি....
না, একটা হাত আমায় খামচে ধরলো। শায়লা বহুকষ্টে আমায় টেনে তুললো।
"কি, বলেছিলাম না, তুমি পারবে.."
" আরেকটুর জন্য তো পড়েই যেতাম"
"আমি থাকতে আমার বর কি পড়ে যেতে পারে?"
লজ্জা পেয়েছি দুইজনেই। আমি অবশ্য একটু বেশিই পেয়েছি। দুই বছর প্রেমের পর এই প্রথম শায়লার হাতের স্পর্শ পেয়েছি, পুরো শরীরে যেন অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেছে। আকাশে চাঁদ উঠেছে, সেই চাঁদের আলো এসে পড়ছে শায়লার মুখে, যেন আরো উজ্জ্বল করে তুলছে তাকে...
আমি শায়লার কাছাকাছি, খুব কাছাকাছি। জীবনে প্রথম এবং একমাত্র ওয়েডিং কিসটা থেকে আর মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার দূরে আছি...আমাদের দুজনের নিঃশ্বাস মিশে যাচ্ছে, ঘন হয়ে....
হঠাৎ শায়লা ঝট করে সরে গিয়েই বললো, "এই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইউজ করেছো তুমি? এর আগে আমায় ধরবে না..." বলেই খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো..
অতঃপর আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম, "হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার..."
...........................................
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আম্মু জোরে জোরে ডাকছে, "উঠো রাহবার, উঠো উঠো... আজ লকডাউন শেষ। বাংলাদেশ করোনামুক্ত হয়ে গেছে...."
__________________________________
গল্পঃ "শায়লা ও ছাদ-ভালোবাসা"
লেখাঃ রাহবার-ই-দ্বীন
(গল্পটা আমার ওয়েবসাইটেও যুক্ত করা হবে। ধন্যবাদ)