সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়া এবং সেটির ফলে তৈরি হওয়া খুব দুঃখজনক কিছু ব্যাপার আমাদের সামনে প্রতিনিয়তই চলে আসে, কিছু ঘটনা হয়তো খুব হাইলাইটেড হয়, কিছু হয়তো হারিয়ে যায়। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেক বড় একটা অংশ কোনো একটি সময়ে ছোট-বড় আকারে সাইবার বুলিংয়ের শিকার বা এর প্রভাবে পড়েছে, এটি আপনাকে মানতেই হবে।
সাইবার বুলিং বলতে যে কেবলমাত্র কোনো সেলিব্রেটির কমেন্টবক্সের কুৎসিৎ কোনো মন্তব্যকে বোঝায় তা নয়, বিষয়টি এর চেয়েও অনেক বেশি মাত্রায় ব্যাখার দাবি রাখে। অনলাইনে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ হয়তো নীল-সাদা স্ক্রিনের বিবেচনায় অনেকে পাত্তা দিতে চাইবেন না, কিন্তু সেটির ফলে সৃষ্ট আক্রান্ত ব্যক্তির সামাজিক ও মানসিক অবস্থানে প্রচন্ডভাবে আঘাত লাগার ব্যাপারটি কি কখনো উড়িয়ে দিতে পারবেন?
বেশিরভাগ মানুষই চায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদেরকে অন্যের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে, নিজেদের সুন্দর কোনো কাজ, ভালো কোনো উদ্যোগ এবং সর্বপরি নিজেদের ভালো দিক গুলো প্রকাশ করতে। এটিই তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সবচেয়ে সুন্দর একটি দিকের উদাহরণ হতে পারে। একটা ফোনের স্ক্রিনে লেখা কোনো পোস্ট কিংবা ছবি কিন্তু একটা মানুষকে তার ফ্রেন্ডলিস্টের হাজারখানেক মানুষের সামনে উপস্থাপন করায়। সেই মানুষটিই যখন কোনো ভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন, বাস্তবিক জীবনের যন্ত্রণার পাশাপাশি আরো অধিকভাবে তার জন্য পীড়াদায়ক বিষয় হয়ে দাড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভাকাঙ্খীদের কাছে তার ভাবমূর্তির বিষয়টি।
যে ভার্চুয়াল জগৎটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে একদম রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়েও শেষ মুহুর্তে মানুষকে তার বন্ধুবান্ধব এবং অন্যান্য শুভানুধ্যায়ীদের সাথে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত রাখে, সেই প্ল্যাটফর্মটিকে একে অপরের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং জিঘাংসার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে, এর ভালো দিকগুলো গ্রহণ করা কি যায় না?
যেখানে হাজারো নেতিবাচকতা প্রতিদিন আমাদের চারপাশকে আচ্ছন্ন করে রাখে, সেখানে অন্তত সামাজিক মাধ্যমগুলো কি হতে পারেনা কিছুটা প্রশান্তির জায়গা?
আপনার হয়তো যৌক্তিক কারণে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটি সরাসরি তার সাথেই মিটিয়ে না ফেলে বরং সেটিরই সুযোগ নিয়ে তাকে অনলাইন মাধ্যমে হাজারো লোকের সামনে অপমানিত কিংবা ভাইরাল করার মাধ্যমে একটি অভিযোগের সমাধান করতে গিয়ে আপনি কি নিজেই আরেকটি বড় অপরাধ করে ফেলছেন না??
প্রশ্নটা কারো কাছে করছি না। নিজের ভেতরের কিছু বোধের বহিঃপ্রকাশ করছি শুধু।
ফেসবুক এবং আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিরাপদ হোক, সুস্থ হোক। আমাদের পৃথিবীটা সুন্দর হোক আরো।
(সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এর ক্রমবর্ধমান নেতিবাচকতা নিয়ে পাঁচ পর্বে কিছু লিখব বলে ভেবে রেখেছিলাম। আজ দ্বিতীয় পর্ব লিখলাম)
রাহবার-ই-দ্বীন,
১৯-০৫-২০২০