ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো তাওসীফ।এখন প্রায় সব ডিপার্টমেন্টেই লাঞ্চ ব্রেক চলছে,তাই ক্লাসে তেমন কেউই নাই।তাওসীফ আজ ক্লাসে যায়নি,দুপুর ১২.৩৫ এ ঘুম ভাঙার পর মেস থেকে বের হয়ে কোনোমতে মুখে একটা পাউরুটি আর এক কাপ চা খেয়ে চলে এসেছে ক্যাম্পাসে।কয়েকদিন পরই তার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা,মাহিরকে আগেই বলে রেখেছিল আমজাদ স্যারের নোটগুলো নিয়ে আসার জন্য।সেটার জন্যই মূলত আজ তার ক্যাম্পাসে আসা....
...
ঘড়ি ধরা দশ মিনিট অপেক্ষা করেও ডিপার্টমেন্টের কোথাও মাহিরকে দেখলো না।অগত্যা কল দিতেই দুইবার কেটে যাওয়ার পর তৃতীয়বার রিসিভ করলো মাহির।
-"কিরে কই তুই?আধা ঘন্টা ধইরা খাড়াই আছি,তোর কোনো খবরই নাই"
-"আরে ব্যাটা আইতাছি তো...(চুপিসারে পাশে কাকে যেন বলে,একটা মিনিট সুইটহার্ট,ক্লাসের ছেলে একটা কল দিসে) তারপরেই বলে,"দাঁড়া না ব্যাটা।রাধিকারে বাসায় নামায় দিয়া আইতাসি,দশ মিনিট লাগবো।"
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।ফোর্থ ইয়ারের ফ্রেন্ড তাওসীফ আর মাহির।ভার্সিটি লাইফে বলতে গেলে তাওসীফের "এটিএম বুথ" মাহিরই।যখন যেখানে কোনো হেল্প লাগে,মাহির ছেলেটা নিজের যা আছে সব দিয়ে চেষ্টা করে হেল্প করতে,সেটা ক্লাসনোটই হোক অথবা হঠাৎ পাঁচশ টাকাই হোক। এইরকম বন্ধু পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
...
রাধিকার সাথে মাহিরের সম্পর্কটা প্রায় তিন বছরের।বয়সে দুই ব্যাচ জুনিয়র হলেও মেয়েটা ক্যাম্পাসে এসেই সবার চেয়ে নিজেকে আলাদা হিসেবে পরিচিত করেছে,এবং সেটা নিজের যোগ্যতা দিয়েই।ভার্সিটির ডিবেট কার্নিভাল কিংবা আর্টস ফেস্ট,সবখানেই তার সরব উপস্থিতি।সম্প্রতি একটা জাতীয় দৈনিকের "ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ" পাতার প্রচ্ছদেও তার কৃতিত্বের কথা লিখা হয়েছে।নিঃসন্দেহে তার প্রতি সব শিক্ষকের এক্সপেকটেশন অন্যদের চেয়ে বেশি।এমন একটা ট্যালেন্ট মেয়েকে মাহির ব্যাটা কিভাবে পটিয়ে ফেললো সেটা এখনো ভেবে পায় না তাওসীফ।
...
এইসব নিয়ে চিন্তা করতে করতেই আরো প্রায় ১৫ মিনিট হতে চললো।না,আজকে মাহির মনে হয় মেয়েটাকে শুধু বাসায় না,একেবারে বেডরুমে রেখেই তারপর আসবে!!বন্ধুর উপর চরম মেজাজ খারাপ হচ্ছে তাওসীফের।ভেবেছিল আজ বিকাল থেকেই নোটসগুলো পড়া শুরু করবে।আরেকবার ফোন দিবে কিনা ভাবলো।
আচ্ছা থাক,কাউকে রোমান্সের মধ্যে থাকা অবস্থায় ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হবেনা।তাছাড়া বন্ধুই তো,একটাবার অন্তত মাফ করে দেয়াই যায়।
...
ভাবলো আরেক কাপ চা খেয়ে নিবে এই ফাঁকে।ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করতে বসা ছেলেমেয়েদের ভিড়টা ততক্ষণে কিছুটা কমে এসেছে।অনেকেই নিজেদের পরবর্তী ক্লাসে চলে গেছে,কেউ হয়তো বাইরে আড্ডা দিচ্ছে বসন্তের দুপুরবেলায়।
তাওসীফ একটা সিঙ্গেল চেয়ারে গিয়ে বসলো।এক কাপ চা দিতে বললো।তার ঠিক পাশের টেবিলেই একটা ছেলে খুব দ্রুত খাচ্ছে,সামনেই ল্যাপটপে কি যেন এসাইনমেন্টের কাজ দেখছে,কানে হেডফোন।
ছেলেটা হয়তো ফার্স্ট বা সেকেন্ড ইয়ারের,সিরিয়াসনেস দেখেই আন্দাজ করা যায়।এছাড়া অন্য টেবিলগুলো প্রায় খালিই বলা যায়।...
...
বসন্তের দুপুরটা হল প্রকৃতির সবথেকে আশ্চর্য একটা অনুচ্ছেদ।হঠাৎ খুব কড়া রোদ,আবার পর-মুহূর্তেই মৃদু একটা বাতাস,মন ভালো করে দেয়ার সবরকম উপাদান সৃষ্টিকর্তা বসন্তের আবহাওয়ায় দিয়েছেন।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই বাইরে তাকাচ্ছিল তাওসীফ।হঠাৎ দেখলো একটা গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছে,তা আড্ডা তো অনেকেই দেয়,তাওসীফের চোখে পড়লো সেখানের একটা মেয়ে,চেহারা কেমন জানি অপরিচিত।এই মেয়েটাকে সে ক্লাসেও কখনো দেখেনাই,আচ্ছা ও কি অন্য সেমিস্টারের? ক্যাম্পাসেও আগে দেখেছে বলে মনে হয় না।
আরেকবার তাকাতেই খেয়াল হল,আশেপাশের বান্ধুবীরা কি একটা ব্যাপারে হয়তো মজা করছিল,কিন্তু মেয়েটা কোনো কথাই বলছে না!!!!
এইদিকে যে কখন প্রায় ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে,তাওসীফের সেটা খেয়ালই নাই।একটা আকাশী রংয়ের ড্রেসে মেয়েটাকে অপ্সরীর মত লাগছিল।কোথা থেকে যেন ওর একটা বান্ধুবী এসে ওর চুলে একটা ফুল আটকে দিলো!!!
বাহ! কি সুন্দরই না লাগছিল মেয়েটাকে তখন!
আচ্ছা মেয়েটা কোনো কথা বলছে না কেন! আজিব ব্যাপার!!!
...
-"কিরে মাম্মা,কি দেখো বইসা বইসা? চা তো দেখি ঠান্ডা হইয়া গেল" মাহিরের গলার শব্দে হুশ ফিরলো তাওসীফের।অপ্রস্তুত অবস্থায় তোতলাতে তোতলাতে বললো,"কই কিছু না রে।এতক্ষণ লাগে তোর আইতে? নোট আনসোস?"
মাহির নোটগুলো দেয়,সাথে হাসতে থাকে।
-"কিরে শালা হাসতেসোস ক্যান?"
-"মাম্মা,তুমি তো পুরাই গেছো...."
কানে কানে বললো,"চোখ দেইখাই বুইঝালাইছি মাম্মা,চোখ যে মনের কথা বলে...."
...
তাওসীফের কেমন জানি লাগলো কথাটা।না,সে নিশ্চয়ই কোনো স্বপ্ন দেখছিল এতক্ষণ। একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কিভাবে!!!
হতেই পারেনা।এই ক্যাম্পাসে সে এখন ফোর্থ সেমিস্টার পড়ছে,পুরো ক্যাম্পাসে বলতে গেলে সিনিয়র হিসেবে ভালোই পরিচিতি।আজ পর্যন্ত কখনো এমন হয় নি।কোনো মেয়ে ক্লাসমেটকে নিয়েও তার কোনো অনুভূতি জাগে নি।তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে?
আচ্ছা,সে কি আসলেই স্বপ্ন দেখছিল?
....
(চলবে)
__________________
লেখা:রাহবার-ই-দ্বীন
গল্প: অস্ফুট নীল বিভাবরী(১ম অংশ)
(পরবর্তী অংশ: পাঠক চাইলে প্রকাশ করা হবে)