"অপারেশন কিং প্যালেসঃ ৩য় অংশ
(গল্পটা কল্পনাপ্রসূত। ভুলত্রুটি ক্ষমা করে বিনোদনের স্বার্থে পড়ার অনুরোধ রইলো)
.........................
সকাল ৯ টা। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটা স্পেশাল ফ্লাইট এসে নামলো কিছুক্ষণ আগে। ভিভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের হয়েই পার্কিং লটে গাড়ি দাঁড়ানো, Sadabe উঠতেই গাড়ি ছুটলো। সচরাচর যতবারই সে চট্টগ্রাম এসেছে, এখানের চেম্বার অফ কমার্সের অফিশিয়াল, পোর্ট অথোরিটি, বিভিন্ন করপোরেট জায়ান্টদের প্রতিনিধির সাথে মিটিং হয়েছে। তবে এবারের যাত্রাটা একটু আলাদা। এবার তো অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই!!!
ঢাকা থেকে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে একাই চট্টগ্রামে এসেছে Labiba. সামনে কি কি হবে তা অজানা৷ আপাতত গন্তব্য জিইসিতে চ্যানেল ফোরটি এইট এর অফিস। সে কাউকে জানায় নি, সাংবাদিকদের জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক। তার ক্যারিয়ারে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রজ-অনুজে খুব বেশি পার্থক্য করেনি সে। সবসময়ই যেটা করা দরকার বলে মনে করেছে, কারো দিকে না তাকিয়েই সরাসরি নিজেই চলে গেছে। এবারের মিশনটা তার কাছে অন্যরকম। যতটা না Labiba's Live Cast এর অসমাপ্ত এপিসোডের জন্য, তার চেয়েও বেশি একটা রহস্য সমাধানের জন্য। খাগড়াছড়িতে পুলিশের ওপর হামলা, দুই পুলিশ সদস্যের আহত হওয়া, টিভি স্ক্রিনে স্থানীয় অফিসারের থমথমে অভিব্যক্তি, দশ মিনিটের মাথায় সাদাবীর হঠাৎ ফোন এসে চলে যাওয়া, মধ্যরাতে এয়ারপোর্টের দিকে সাদাবীর বের হয়ে যাওয়া, এসবের মধ্যে একটা যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা থাকতে পারে, যা তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। প্রথমেই দরকার এখানের চিফ রিপোর্টারের সাথে কথা বলা।
......................................
চ্যানেল ফোরটি এইট অফিস, জিইসি। ঢাকা থেকে এই সুপরিচিত সাংবাদিক এসেছে, তাই অফিসের সবার মাঝে সাজ সাজ রব। ব্যুরো প্রধান তো বলেই দিয়েছেন আজ অফিসের সবার স্পেশাল লাঞ্চ। তবে লাবিবার সেদিকে খেয়াল নেই। সে শুধু জিজ্ঞেস করেছে,
-"আচ্ছা, খাগড়াছড়ির রিপোর্টটা করেছিল কে?"
-" ও আচ্ছা তুমি জানো না? রিপোর্টার Asifa। আমাদের সাউথ জোনে গত তিরিশ বছরের সবচেয়ে পারফেক্ট নিউজ রিপোর্টার।"
- "আমি কি তার সাথে একটু কথা বলতে পারি?"
- "হ্যা অবশ্যই, ও তো এখনো আসে নি, আমি কি ওকে ফোন করবো?"
- "না, ধন্যবাদ। আমি নিজেই যোগাযোগ করে নিবো তার সাথে। আচ্ছা, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। দুপুরে লাঞ্চে আপনাদের সাথে দেখা হবে আবার।"
অফিসের ডেস্ক থেকে আসিফার ঠিকানাটা নিয়েছে লাবিবা। বের হয়ে একটা উবার নিয়েই চললো সেদিকে। হিলভিউ আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর রোডের ঠিকানায় গিয়ে বাসার সিকিউরিটির কাছে পরিচয় দিয়ে চলে গেলো উপরে। বেল বাজার দুই মিনিট পরেই দরজা খোলা হল।
- "হ্যালো ম্যাম, আপনি একেবারে আমার বাসা পর্যন্ত চলে আসবেন, ভাবতেই পারিনি.."
- "না ঠিক আছে। আমি কি ভেতরে আসতে পারি?"
- "জ্বী অবশ্যই। কফি চলবে?"
- "না থ্যাংকস। আমি কি তোমার সাথে আধা ঘন্টা কথা বলতে পারি?"
- "অবশ্যই। কেন নয়? একটা মিনিট। আমি কিচেনটা দেখে আসি একবার।"
- "শিউর"
আসিফা এলো। লিভিং রুমে চেয়ার টেনে বসে দুই সাংবাদিকের আলাপঃ
লাবিবাঃ "যে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে তোমার বাসায় চলে আসা। আমার কিছু ইনফরমেশন দরকার। খুবই সেনসিটিভ। তুমি রিসেন্টলি খাগড়াছড়ির রিপোর্টটা করেছিলে, তাই না?
আসিফাঃ " হ্যা, আমিই গিয়েছিলাম।"
- "ওই ব্যাপারটা নিয়েই বলছি। তোমার কি মনে হয়, এই ঘটনা ঘটার পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে?"
- "ওয়েল, আপনি যদি আমাকে রিপোর্টার পরিচয়ের বাইরে চিন্তা করতে বলেন, তাহলে অনেকগুলো নিয়ামক চলে আসে।
১) এটা একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু এটা যুক্তিতে মিলবে না। কারণ প্যাকেটে লেখাই ছিল "কেবল পুলিশ সদস্যরা এটা খুলতে পারবেন।" প্রচ্ছন্নভাবে একটা হুমকি হিসেবেই ছিল মনে হয়।
২) পুলিশের সাথে স্থানীয় কোনো গোষ্ঠীর বিরোধ থাকতে পারে, এটা খুবই সম্ভব। পূর্বাঞ্চলের পুলিশ গত এক বছরে এখানে প্রকাশ্য অপরাধকে প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছেন।
৩) কোনো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী চক্র এখানে কাজ করে থাকতে পারে। তবে গত বিশ বছরে খাগড়াছড়ি জেলায় অন্তত বাংলাদেশ ভূখন্ডে বড় কোনো চক্রের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
লাবিবার জিজ্ঞাসা, "আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, ১ নাম্বারকে বাদ দিয়ে, ২ ও ৩ নিয়ে চিন্তা করলে, এই ঘটনার পেছনে কোনো হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে?"
আসিফাঃ "না, আমার সেটা মনে হচ্ছে না।"
- "কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটাও খুবই সম্ভব।"
- "কিভাবে?"
- "দেশের একজন টপ বিজনেস ম্যাগনেট এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।"
- "কিন্তু তিনি তো নিজের কাজেও এখানে আসতে পারেন"
- "হ্যা, নিজের কাজ। ভালো বলেছো। এবার তিনি হয়তো একেবারেই নিজের কাজে এসেছেন। আর আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে তার সাথে খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হতে যাচ্ছে।"
- "মানে?"
- "বুঝতে পারবে সবকিছু। তুমি আপাতত তিন দিনের ছুটি নিতে পারবে অফিস থেকে?"
- "কিন্তু কেন?"
- "খাগড়াবাড়ি যেতে হবে, তুমিও যাবে। সিক্রেট রিপোর্ট করতে যাবো। অফিস যেন না জানে।"
- "কিন্তু আমি তো সেদিনও গেলাম, ওই ঘটনার পর তো নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। আর ওখানে আমাদের লোকাল প্রতিনিধি আছে, কিছু সংবাদ জানতে চাইলে তার কাছেই পাওয়া যাবে।"
- "লোকাল প্রতিনিধি দিয়ে সব হবে না। তুমি লাঞ্চের পরেই ছুটি নিচ্ছো, খাগড়াছড়ি যাচ্ছো, ব্যস। আর হ্যা, এটা যেন আমি আর তুমি ছাড়া কেউ না জানে।"
..........................................
সাপটা Rahat এর দিকে এগিয়ে আসছে, আর কয়েক সেন্টিমিটার দূরে মাত্র। এদিকে দড়িতে আটকে নড়তেই পারছে না রাহাত। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়েই মরে যাবে। সে চেষ্টা করে যাচ্ছে, হঠাৎ দূর থেকে একটা লাঠি এসে পড়লো তার কাছে এবং সে কোনোভাবে সাপটাকে জোরে একটা আঘাত করেই সরে গেলো। ততক্ষণে আকিব কাছে চলে এসেছে, দূর হতে অটোমেটিক নাইফ টা ছুড়ে দিতেই দড়ি টা কেটে গেলো। এগিয়ে এলো ডিটেকটিভ Rima ও ডিটেকটিভ Labanya। ততক্ষণে কালো অবয়বের মানুষগুলো দূরে সরে গেছে, কয়েকটা বাইক দ্রুত চলে যাওয়ার শব্দ। লাবণ্য ব্যাকপ্যাক থেকে পানির বোতলটা বের করে রাহাতকে দিলো।
- "অফিসার, আপনি ঠিক আছেন তো?"
- "হ্যা, একটুর জন্য বেঁচে গেছি মনে হচ্ছে। সাপটা তো কাছেই চলে এসেছিল।"
আকিব গম্ভীরমুখে বললো, "সাপটা আপনাকে কামড় দিতো না।"
রাহাত উত্তেজিত হয়ে, "মানে? কি বলতে চান? আমি জীবনে এত ভয়ংকর সাপকে এত কাছাকাছি দেখিনাই।"
আকিবঃ "জীবনে কয়টা সাপ দেখেছেন আপনি? এই সাপটা আপনাকে কখনোই কামড় দিতো না। কামড় দিতে চাইলে সে এতক্ষণ ইঞ্জুরি টাইমে না রেখে, শুরুতেই দিয়ে দিত। এটা শুধুই আমাদেরকে ভয় লাগানোর জন্য করা হয়েছে।"
- "মিস্টার আকিব, আপনি কি বলতে চাইছেন? সবটাই ফেইক ছিল? আমার জায়গায় আপনি থাকলে বুঝতে পারতেন।"
- "শুনেন, আমি আমাজনে গিয়েছি, ওখানের সাপ পালক কিছু গোষ্ঠীকে দেখেছি, যাদের কথা ছাড়া সাপ কাউকে কামরায় না।"
- "সরি টু সে, এটা আমাজন না, এটা খাগড়াছড়ি।"
- "এটা যে আপনাকে ভয় দেখানোর জন্যই করা হয়েছে, সেটা কিভাবে বুঝবেন জানেন? এরা আদিম কোনো ভয় দেখানোর টেকনিক ফলো করে আপনাকে ব্যস্ত রেখে, হয়তো গাড়ি থেকে মূল্যবান কিছু একটা নিয়ে গেছে।"
রাহাত একমুহূর্ত ভেবে হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়, গাড়ির দরজা খুলতেই দেখে, জিপিএস ট্র্যাকারটা নেই!!! রাগে তার হাত পা কাঁপতে থাকে....
রিমাঃ "আকিব, আপনি যদি এটা বুঝতেই পারেন, তাহলে গাড়ি থেকে নেমে দূরে দাঁড়িয়েছিলেন কেন?"
আকিবঃ "কারণ, যে সাপ দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছিলো, সে আসলে মারতে চায়নি, ভয় দেখাতে চেয়েছে। আর যে জিপিএস ট্র্যাকারটা এর মাঝে কৌশলে নিতে এসেছে, তার সামনে আমরা গেলে এতক্ষণে এখানে শুধুই আমাদের দেহ পড়ে থাকতো। এরা আদিম ভয় দেখানোর টেকনিক অবলম্বন করে একটা জরূরী জিনিস নিয়ে গেছে। মাঝেমাঝে প্রতিপক্ষকে খেলার সুযোগ দিতে হয়। তাহলে প্রতিপক্ষ তৃপ্তি পাবে সাময়িক, সেই সুযোগে আমরা নিজেদেরকে গোছাবো।"
লাবণ্যঃ "কিন্তু আমরা তো জিপিএস ট্র্যাকার ছাড়া পথ হারিয়ে ফেলেছি।"
আকিবঃ "মাঝেমাঝে পথ হারিয়ে ফেলতে হয়। নাহলে নতুন পথে পাওয়া যায়না। চেনা পথ সবসময় খেলা জেতায় না। চলুন আজ রাতটা আশেপাশে কোথাও স্থানীয় পাড়ায় কাটিয়ে দিই। আমার সাবকনশাস মাইন্ড বলছে, আমরা কোনো একটা ক্লু পেয়ে যাবোই।"
....................................
চট্টগ্রাম থেকে তিন ঘন্টায় খাগড়াছড়ি সদর। এখানে সাদাবীর এক স্থানীয় উপজাতি মানুষের বাসা। লোকটা দেখতে যতটা ছাপোষা সাধারণ, ভেতরে তার অন্য পরিচয় সে ডায়মন্ডের ডিলার।
-"আসুন আসুন ম্যাডাম, আপনি এই গরীবের ঘরে, আমার কি সৌভাগ্য। আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?"
- "না, ইটস ওকে। কোনো খবর আছে?"
- "না এখন তো সেদিনের ঘটনার পর থেকে পুরো শহরে পুলিশের কড়াকড়ি। উত্তরের দিকের রাস্তাগুলোয় কেউ যেতে পারে না।"
- "আর কিং প্যালেস? ওখানের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়েছে?"
- "না, কেউ কিছু বলেনি। কিং এখানেই আছেন নাকি অন্য কোথাও চলে গেছেন, আমরা জানিনা। ম্যাডাম আপনি কি তার খোঁজেই......"
কথা শেষ করার আগেই দরজায় ধাক্কা। এই অসময়ে আবার কে এলো, ভাবতে ভাবতে লোকটা দরজা খুলে দিতেই একটা কালো চাদর পরিহিত কেউ ঘরে ঢুকলো। সরাসরি সাদাবীর দিকে গিয়েই, "সালাম নেবেন, আমাদের হিকোচগামা কিং Minhazul এর পক্ষ থেকে আমি Muntaha আপনার প্রতি বিশেষ উপহার সামগ্রী নিয়ে এসেছি। এর মাধ্যমে আমাদের কিং আপনার প্রতি তার বিশেষ অনুগ্রহ ও সহায়তার দরজা সবসময় উন্মুক্ত বলে আবারো ঘোষণা করেছেন।" বলেই একটা বক্স খুলে সাদাবীর সামনে রাখতেই, একটা কালো ফোঁটা ফোঁটা দাগযুক্ত অত্যন্ত ভয়ংকর সাপ বের হয়ে এলো এবং সেটি মুখ খুলতেই কয়েকটা ডায়মন্ডের টুকরা গড়িয়ে পড়লো। বক্সের ভেতরে রাখা একটা চিঠি। সাদাবী সেটা খুলে পড়তে শুরু করে, ভেতরে লেখাঃ
"ওয়েলকাম টু দ্যা কিংডম অফ হিকোচগামা কিং। তোমার প্রতি আমার বিশেষ সহায়তা সবসময় থাকবে, তারই অংশ হিসেবে, তোমাকে আমার কিং প্যালেসে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সাপটার ভেতরে একটা জিপিএস ট্র্যাকার সেট করে দেয়া আছে, যেটি তোমাকে নিয়ে আসবে কিং প্যালেসের ঠিকানায়। আজ রাতেই সাপটাকে কেটে ফেলো এবং ট্র্যাকার নিয়ে আগামীকালই মুনতাহার সাথে চলে এসো আমার প্যালেসে।হিকোচগামার রাজবাড়ি রয়েছে অপেক্ষায়..."
......................
সেদিন থেকেই The Queen of Snakes Munifa তার একটা সাপ খুঁজে পাচ্ছিলো না। কে জানতো, খাগড়াছড়ি শহরের একটা ঘরে সে সাপটাকে রাত চারটায় কেটে দ্বিখন্ডিত করা হয়, যে মরে যাওয়ার সময় ভাবছিল, পৃথিবীতে সবচেয়ে বিষাক্ত প্রজাতিটা মনে হয় এই মানুষ প্রজাতি....
অপারেশন কিং প্যালেস, দ্যা ট্র্যাকার-গেইম উইল কন্টিনিউ!!!
___________________
লেখাঃ রাহবার-ই-দ্বীন
আগের অংশের লিংকঃ অপারেশন কিং প্যালেস (২য় অংশ)
পরের অংশের লিংকঃ অপারেশন কিং প্যালেসঃ ৪র্থ অংশ
(গল্পগুলো পর্যায়ক্রমে আমার ওয়েবসাইটেও যুক্ত করা হচ্ছে। ধন্যবাদ)