সম্পাদকের দৃষ্টিতে
Prayer is an important path in divinity. God knows all by his feelings and heart, not by creed, culture, or languages. The creator is one, our prayer reaches him, and prayer is an important process of healing.
ভাষা শহীদ দিবসের স্মরণে -
আজকের এই দিনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়।
বিভিন্ন গুণী লেখক এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও শুনেছি বাংলা ভাষার দাবীতে ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদানের কথা। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই পাকিস্হান গণপরিষদে ভাষা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত হয়। গণপরিষদের অধিবেশনের শুরুতে আলোচনার সূত্রপাত করে পূর্ব বাংলার কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন,- "Mr. President, Sir, I move, That in sub-rule (1) of rule 29, after the word ‘English’ in line 2, the words ‘or Bengalee’ be inserted.”
মহান ভাষা দিবসের এই ক্ষণে মহান ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকেও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং ভাষা দিবসের স্মরণে, মননে শহীদ সালাম, বরকতের নাম ও আবক্ষ স্মৃতি স্মারকের সঙ্গে শ্রদ্ধেয় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম ও আবক্ষ স্মৃতিস্মারক অন্তৰ্ভূক্ত করার জন্য পরামৰ্শ নিবেদন করছি। নিৰ্দ্বিধায় অনেকেই লিখেছেন, - পাকিস্থান গণপরিষদে বাংলা ভাষা বিষয়ক আলোচনার সূচনা হয় মূলত ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী। এই প্রসঙ্গে 'ভোরের কাগজ' পত্রিকার সম্পাদক জনাব শ্রী শ্যামল দত্তও বহুবার বলেছেন এবং আমরা শুনেছি। মুক্তি যুদ্ধে সবার অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু সরকার গঠণের সময় শুধু একজনকে (সাব) উপমন্ত্রী পদ দেয়া সমীচীন কি ? অবশ্য জননেত্রীর অপরাপর কিছু কাজে সাৰ্বজনীনতা বজায় রেখে আমাদেরকে কিছুটা কম অবহেলা করেছেন। অন্যান্য দলের সরকারে বড় জোড় একজন প্রতিমন্ত্রী জায়গা পায়। অৰ্থাৎ অসাম্প্রদায়িকতার চৰ্চা কমিয়ে ফেলা। কিন্তু বন্ধুকে বন্ধুর পথে লাগে। যেমন রাষ্ট্রীয় ওয়েব সাইড, সেখানে মসজিদ দেখা যায়, কিন্তু মন্দির দেখা যায় না, মনে হয় রাষ্ট্রধৰ্মের কারণে। সাত জন বীরোত্তম বা বীর মুক্তযোদ্ধার ছবি দিয়ে ১০/১২ বছর আগে নিউ ইয়ৰ্ক কনসুলেটে একটি পোষ্টার দেখে আমরা কয়েকজন জিজ্ঞেস করেছিলাম, সবকিছুতে সাম্প্রদায়ীকতা কেন? পোষ্টার যদি বানাতে হয় তাহলে সেখানে অপরাপর সম্প্রদায়ের বীরদের নামও ছবি অন্তৰ্ভূক্ত করতে হবে। স্বাধীনতা অৰ্জনের চেয়ে রক্ষা করার সংগ্রাম আরও কঠিন। লক্ষ কোটি মানুষের ভীড়ে কাপুরুষের মত লুকোচুরি খেলে শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চুপ করে থেকে এবং ৭১ সালে পালিয়ে গিয়ে কোন রকমে নিজের প্রাণটি বাঁচাতে তৎপর থাকলে ৮৫ বছর বয়সে জল্লাদদের হাতে নিৰ্মমভাবে হয়তো খুন হতেন না।
এই বক্তব্যে বিশ্বকবির একটি পংক্তি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য -
"মৃত্যুঞ্জয় যাঁহাদের প্রাণ
সৰ্ব তুচ্ছতার উৰ্দ্ধে দীপ যাঁরা জ্বালে অনিৰ্ব্বাণ
তাঁহাদের মাঝে যেন হয়
তোমাদের নিত্য পরিচয়,
তাঁহাদেরে খৰ্ব কর যদি -
খৰ্বতার অপমানে বন্দী হ'য়ে রবে নিরবধি।।"
এই প্রসঙ্গে লেখক জনাব রশীদ হায়দার লিখেছেন-
"আলোচনা বা বিতর্কের একটা পর্যায়ে আমরা দেখবো পরিষদ-নেতা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এই প্রস্তাবটিকে নির্দোষ ভেবেছিলেন, কিন্তু শ্রী দত্তের সংশোধনী প্রস্তাবের পর তিনি এর মধ্যে এমন কিছু ষড়যন্ত্রের আভাষ পেলেন, যা পরবর্তীকালে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করবে, পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। পাকিস্তানের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ় আস্থার সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন'Pakistan has come to stay'; কিন্তু ২৪ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলার বাঙালি প্রমাণ করে ছাড়লেন ‘Pakistan has come to be divided’ বলা বাহুল্য এই সিদ্ধান্তে আসার মূলে কার্যকর ছিলো ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পূর্বোক্ত গণপরিষদের ব্যবহার্য ভাষা বিষয়ক আলোচনার সূচনা। বলা চলে শুভসূচনা। যদিও আমরা দেখি ১৯৪৭-১৯৭১ সালের পাকিস্তানের ইতিহাসে কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় আমাদের বারবার ভাসতে হয়েছে রক্তগঙ্গায়।
আর এই রক্তগঙ্গার অন্যতম শিকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কী অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে সেই বিবরণ দিয়েছেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের নাপিত রমণীমোহন শীল। রমণীমোহন শীল হিন্দু হলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিলো পাকিস্তানী মিলেটারিদের প্রয়োজনেই, কারণ তাদের মৃত্যু হলে পাকিস্তানী সৈন্যদের চুল দাড়ি কাটার মতো কোনো লোক থাকবে না।"
বীর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ঘাতকদের হাত থেকে পালানোর জন্য লুকাতে চাননি। তিনি যেভাবে আত্মত্যাগের পথে কথা বলে ঘর থেকে ঘাতকদের সাথে বেরুলেন তা বীরোচিত এবং খুব কম লোকের সে সাহস রয়েছে। - যা আমরা কিছুদিন আগে তাঁর নাতনীর কণ্ঠে টিভি পৰ্দায় শুনতে পেলাম। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে যেভাবে অত্যাচার করেছে তার বৰ্ণনা লিখতে গিয়ে জনাব রশীদ হায়দার বিস্তারিত সংগ্রহ করে আমাদেরকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। জনাব রশীদ হায়দারের লেখনী ও বৰ্ণনার ছন্দ নিম্নরূপ -
"শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর যে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে তা দেখে কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষের চোখের জল সংবরণ করা সম্ভব নয়। সাখাওয়াত আলী খান প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়ঃ “ধীরেন বাবু সম্পর্কে বলতে গিয়ে রমণী শীলের চোখের জল বাঁধন মানে নি। মাফলারে চোখ মুছে তিনি বলেন, ‘আমার সে পাপের ক্ষমা নেই। বাবু স্কুলঘরের বারান্দায় অতি কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে আমাকে জেজ্ঞেস করেছিলেন কোথায় প্রস্রাব করবেন। আমি আঙ্গুল দিয়ে ইশরায় তাকে প্রস্রাবের জায়গা দেখিয়ে দিই। তখন তিনি অতি কষ্টে আস্তে আস্তে হাতে একটি পা ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠানে নামেন। তখন ঐ বারান্দায় বসে আমি এক জল্লাদের দাড়ি কাটছিলাম। আমি বারবার বাবুর দিকে অসহায়ভাবে তাকাচ্ছিলাম বলে জল্লাদ উর্দুতে বলে, ‘এটা একটা দেখার জিনিস নয়-নিজের কাজ কর।’ এরপর বাবুর দিকে আর তাকাবার সাহস পাইনি। মনে মনে শুধু ভেবেছি বাবু জনগণের নেতা ছিলেন, আর আজ তাঁর কপালে এই দুর্ভোগ। তাঁর ক্ষতবিক্ষত সমস্ত দেহে তুলা লাগান, মাথায় ব্যান্ডেজ, চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় উপর্যুপরি কয়েকদিনই ব্রিগেড অফিসে আনতে নিতে দেখি।” (শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ: পৃষ্ঠা ৩০২)।
শুরুর যাত্রা অনেক সময় প্রচার পায় না, কিংবা বট বৃক্ষের বীজের মত বিশেষ কোন মাত্রায় শোভিত হতে দেখা যায় না, কিন্তু ছোট ডাল আকৃতির ঐ বীজ থেকেইতো বিশাল বটবৃক্ষ তার শাখা, প্রশাখা বিস্তার করে প্রকাণ্ড মহীরুহে পরিণত হয়। মানুষ ছায়া পায় তার তলে। এই মহান শহীদের কথা লিখতে গিয়ে লেখক জনাব রশীদ হায়দার আরও যুক্ত করেন-
"আজ আমরা নিঃসংশয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন তা পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি তথা সামরিক জান্তা ভোলেনি, ভুলতে পারেনি। তাঁর অকুতোভয় ভূমিকাই যে পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করার বীজ বপন করেছিলেন তা পরবর্তীকালে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রমাণিত হয়েছে।" নিশ্চয় সকলেই জানেন বীর ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের লাশও আর ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।
লাঙ্গলবন্ধ ট্রেজেডী
২০১৫ সালে লাঙ্গল বন্ধে যা ঘটল তাতে অচেতন সমাজের চেতনা আসার কথা। তারপরও যদি চেতনা না আসে তাহলে বুঝতে হবে এই জাতি কোমায় চলে গেছে। পুণ্যাৰ্থীদের দুঃসংবাদ প্রচার হওয়াতে সবার মনোযোগ হয়েছে, অ্ন্যথায় তাও হতো না। পৃথিবীতে মানুষ যখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটছে, তখন এই সমাজের মানুষ কচুরিপানা পরিস্কার করতে অক্ষম। সংবাদে শুনলাম ১৫/১৬ লক্ষ মানুষ হয়েছে। জীবন ও সৌন্দৰ্য্য রক্ষাৰ্থে ১৫ লক্ষ মানুষের থেকে ২০ টাকা করে উন্নয়ন তহবিলের জন্য নেয়া হয় তাহলে ৩ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়। ২ লক্ষ করে ১২ জন মৃত পুণ্যাৰ্থীকে ২৪ লক্ষ টাকা দেয়া যেতো এবং কারো কাছে হাত পাততে হতো না। আপনাদের কাছে এই সামান্য জ্ঞানটুকুও কি নেই? এইভাবে অৰ্থ সংগ্রহ করেই সবকিছু হচ্ছে দুনিয়ায়। আকাশ থেকে কোন পরী এসে এগুলো করে দিচ্ছে না। এই শুভ কাজ না হওয়ার পেছনে কারণ কৃপনতা, দলাদলি, পদবীবাজ, কমিটিবাজি, অহংকার, চেতনাহীনতা ইত্যাদি। এই ফাণ্ড থেকে দশ লাখ টাকা বিশ্ব ইজেমাতে দিলেও ক্ষতি কি? এতে সম্প্রীতি বাড়বে বৈ কমবে না। আর মানুষ মানুষই। সাম্প্রদায়িক ভেদ বুদ্ধি বেশী বুদ্ধিদীপ্ত কিছু নয়। মুসলমান মুসলমানকে, হিন্দু হিন্দুকে যখন খুন করে তখন কি স্ব-জাতি হয়েও হিংসা সাধিত হয় না? অতীতে হিন্দু-মুসলমান উভয়ে উভয়ের জন্য ধৰ্মস্হান নিৰ্মান করে দিয়েছে এমন নজির কি নেই?
এবার আমি কিছু দিক নিৰ্দেশনা দিতে চাই। আমার ই-মেইলে দয়া করে যোগাযোগ করুন। আপনাদের এই সমাজ আবার জেগে উঠবে। আপনারা সবাই মিলিত হোন, বিশ্বস্থ ও বিপুল জনগোষ্ঠী নিয়ে তৈরী হয়ে সমাজের কল্যাণ করুন। আপনি নিজে অনায়াসে কল্যাণের অধিকারী হবেন।
জয় হোক মানবতার।