একবার এক রাজা ঋষির সন্ধানে বনে গিয়েছিলেন। একসাথে দুই কাজ করার জন্য হরিণ শিকারের প্রস্তুতিও নিয়ে নিলেন। বনের অভিরাম রূপ দেখতে দেখতে সামনের দিকে এগিয়ে চললেন রাজা। কয়েকজন রক্ষী ঘোড়ায় চেপে রাজাকে অনুসরণ করতে লাগল। বনের ভিতর প্রবেশ করে রাজা দেখতে পেলেন গভীর বনে এক ঋষি নিদিধ্যাসনে মগ্ন। রাজা তার বাহন ঘোড়ার পৃষ্ঠ হতে ভূতলে নামলেন। ঋষির মুদ্রিত আঁখিদ্বয় উল্মিলিত হল।
কি হেতু আগমন রাজন! জিজ্ঞাসা করলেন- ঋষি।
আপনি তো ঋষি, নিশ্চয় জ্ঞানী হবেন, দু'টি বিষয় নিয়ে এসেছি, বললেন- রাজা।
কি সেই দু'টি বিষয় রাজন! জানতে চাইলেন-ঋষি।
আমি হরিণ শিকার করতে এসেছি, তদ্ব্যতীত রাজকাৰ্যে আমার মনের দ্বন্দ্বের বিষয় স্বীকার করতে চাই। এই দুই 'শিকার, স্বীকার' আপনাকে নিবেদন করলাম। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার যেন বুদ্ধি বিপৰ্যয় ঘটবে, কারণ রাজ্য চালাতে গিয়ে প্রতিযোগ লেগেই আছে। আমি আমার মনের প্রতীতি ফিরে পেতে চাই, বললেন- রাজা।
আমি একটু ধ্যান করে দেখি, আপনিও একটু বন ঘুরে আসুন, তবে একটি শৰ্ত, আর কোনদিন হরিণ নিধন করবেন না, যদি করেন তাহলে বিধাতার খাতায় আপনি নিসূদক বলেও লিখিত থাকবেন, বললেন - ঋষি।
রাজা তাতে রাজি হলেন এবং মাথা নত করে সন্মতি জানালেন। উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি আজ থেকে আর হত্যাকারী নই।
ঘণ্টাখানিক পর রাজা ফিরে এলেন।
ইতস্তত এদিক সেদিক তাকাতে লাগলেন রাজা।
ঋষি বললেন, রাজন! আপনার এই দূৰ্বলতার কারণ আপনার মন।
আমি একটি উপমা দিয়ে আপনাকে বলছি, মনে করুন আপনি তাল গাছের মাথায় উঠেছেন, উঠার পর সেই মই ধরে রাখার শক্তি আপনার একার কাছে আছে কিনা। এই শক্তির ভারসাম্য রক্ষা হলে আপনার ভয় কেটে যাবে, বললেন-ঋষি।
এই ছোট্ট উপদেশটি শুনে রাজা বলে উঠলেন, ধন্য ঋষিবর! আমি প্রবোধিত হলাম, আপনাকে প্রণাম। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আপনার বিনায়িত পথে আমি চলব।