'চলার সাথী,' 'আলোচনা প্রসঙ্গে' সহ বিভিন্ন গ্রন্হে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন সম্পৰ্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের আপ্ত নিৰ্দেশনা রয়েছে। শ্রীশ্রীঠাকুর সংগঠন পরিচালনা করার সঙ্গে আদৰ্শের প্রতি আপ্রাণতার সম্পৰ্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। তার সাথে যুক্ত করেছেন গতি, কৰ্ম, ব্যবহার, চরিত্র, সেবা, উন্নয়ন, যাজন-সামৰ্থ্য ইত্যাদি অনেক দিক। যারা সৎসঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তাদের এই বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা দরকার বলে এই ব্যাপারে দক্ষতা থাকার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেছেন।
আদৰ্শ পরিপূরণী কৰ্ম ব্যতীত গান, বক্তৃতা ও খিছুড়ী সৰ্বস্য উৎসব পালনকারী সংগঠন তাঁর বাণীর সঙ্গে বড়ই বেমানান।
অধিকাংশ সংগঠনের কৰ্মসূচীতে শ্রীশ্রীঠাকুরের কোন প্রকল্প নেই। এক শ্রেণীর মাতব্বর যাতীয় লোক জোড় পূৰ্বক পদ দখল করে বসে আছে যুগের পর যুগ। শিক্ষিত ও আদৰ্শ পরায়ণ লোকের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা দূরে থাক simply গায়ের জোড়ে পৈতৃক সম্পত্তির মত ধরে বসে আছে।
স্বয়ং পরমপুরুষ মানুষকে কথা শুনানোর জন্য আৰ্তনাদ করেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর দেবভিক্ষা, অৰ্থভিক্ষা, মানুষ ভিক্ষা চেয়েছেন ধ্বংসের হাত থেকে মানুষের অস্হিত্ব রক্ষার জন্য। অথচ, ধৰ্মীয় সংগঠনগুলোকে পদবীমুখী ক্লাবে রুপান্তরিত করা হয়েছে।
উক্ত বিষয়ে সরকারের কাছে নিয়ম করে দেয়ার আবেদনও করেছে অনেকে। সরকার যেন এই মৰ্মে আইন করে, যেন দুই বছরের অধিক কেউ সভাপতি ও সম্পাদক পদে আসীন হতে না পারে। সময় চক্রে ঘুরে তিন বারও একই পদে আসীন হতে পারেন, কিন্তু consecutively যেন বারবার না থাকে। একই পদে থাকার আগ্রহে তিনি গ্রুপিং করেন এবং আরেক দল ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকে, ফলে একদিন বিষয়টি বিরাট ঝগড়ায় রুপ নেয়। ঝগড়ার ঢেউ রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ঠেকে, অনাকাঙ্কিত সামাজিক ক্লেশ তৈরী হয়, সংঘাত বাড়তে থাকে, বৈরীতা আকাশচুম্বী হয়, পরিবেশ কলুষিত হয়, ছোটরা নোংরামী শিখে, জনকল্যান অবলুপ্ত হয়। ভালো মনের পরিকল্পনা বা প্রবাসী লোকের উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এর ফলে দেশ বঞ্চিত হয়। যারা কাজ করছেন এবং মানুষ যাদেরকে চাই তাদেরকে আমিও সাধুবাদ জানাচ্ছি। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এমনিই যে মানুষ অৰ্থ, সুখ, প্রভাব, যশ ইত্যাদি সবসময় একটু বেশী চাই।
অধিকাংশ সংগঠনগুলোতে নিজ নিজ গুরু বা উদ্দ্যেশ্যকে মুখ্য করে আদৰ্শের বাস্তবায়নের জন্য কোন প্রকল্প হাতে নেয়ার উদ্যোগ তেমন নেই। বেদ, উপনিষদ, গীতা ইত্যাদিতে যা করতে বলা হয়েছে, তা অধিকাংশরাই পালন করে না। দল, পদবী, মান ও যশ ইত্যাদির লড়াই চলছে। চেতনাহীন এই জনগোষ্ঠীর ১৫ লক্ষ মানুষ (পত্রিকা মতে তীৰ্থযাত্রীর সংখ্যা) মিলে লাঙ্গলবন্ধে ১২ জন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দিতে পারল না। এর চেয়ে বড় ব্যৰ্থতা আর কি হতে পারে? জনপ্রতি ১০ টাকা করে দিলেও এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সংগ্র্রহ হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি এসব ব্যাপারে বেশী উদ্বিগ্ন, কিন্তু যখন ফেসবুক বা মিডিয়ায় দেখি অন্য মানুষের উদ্বেগের ভাষা সীমা অতিক্রম করেছে, তখন বুঝতে পারি আমার উদ্বেগ যথাৰ্থ। যেমন 'X নাথ ' ফেসবুকে লিখেছে-"গরুর গাড়িতে করে গরুর মাংস নিয়ে গেলে গরু যেমন বুঝে না, তেমনি এক হিন্দু কষ্ট পেলে অন্য হিন্দুর মালুম হয় না .................।" এই যে কথা বলার ভাষা এই পৰ্যায়ে নেমে এসেছে, এটা অনুভব করতে হবে। অন্যথায় সমস্যা ঘনীভূত হতে পারে।
চলবে-