পরমপুরুষের একাত্মানুভূতি
পরমপুরুষের পদধূলির স্পৰ্শে কুষ্টিয়াও ধন্য হয়েছিল। পুরুষোত্তমের আবিৰ্ভাব ভূমি পুণ্যসলীলা পদ্মার উত্তর তীর হিমাইতপুরে। পদ্মার দক্ষিণ তীরে কুষ্টিয়া অবস্হিত।
শ্রীশ্রীঠাকুরের কীৰ্ত্তনযুগের সাথী বীরু রায়, তরণী দাশ, অনন্তনাথ রায়, গোকূল মন্ডল, সতীশ চন্দ্র জোয়ারদার, খোকন, কিশোরী মোহন দাশ, খোকা ডাক্তার সহ আরও অনেকে ছিলেন। তন্মধ্যে খোকা ডাক্তার, বীরু রায়, সতীশ জোয়ারদার ও ডাঃ গোকূল মন্ডল ছিলেন কুষ্টিয়া নিবাসী সম্ভ্রান্ত লোক।
সৎসঙ্গে বারাদি-সৎসঙ্গ আজ পরিচিত একটি নাম। বারাদি একটি গ্রামের নাম। বেশ কিছু বিশিষ্ট লোক কুষ্টিয়ার বারাদি গ্রামের অধিবাসী। বিশিষ্ট উকিল প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডাঃ সত্যচরণ দত্ত, পূৰ্ণচন্দ্র কবিরাজ প্রমুখ ব্যক্তিবৰ্গ কুষ্টিয়া শহরের মৰ্যাদা সম্পন্ন লোক ছিলেন। আজও তাঁদের উত্তরসূরীদের অনেকেই সগৌরবে শ্রীশ্রীঠাকুরের মহিমা প্রচারে নিজেদের যুক্ত রেখেছেন।
খোকা ডাক্তারের বাসনা হল তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে বারাদিতে নিয়ে যাবেন। ঘোড়ার গাড়ি, পাল্কি, মহিষের গাড়ি, গাধা ইত্যাদি মানুষের বাহন। আজও কিছু চালু আছে ।
শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে যেতে একটি ঘোড়ার গাড়ি আনা হল। খোকা ডাক্তার সহ গন্যমান্য কয়েকজন পরমপুরুষের সাথী হলেন। গাড়ির ভিতর আলোচনা জমে উঠল। গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ধরে ঘোড়ার গাড়ি এগিয়ে চলল। গাড়ির গতি বাড়াতে কোচোয়ান ঘোড়াকে চাবুক দিয়ে আঘাত করতে লাগল। ঘোড়ার পিঠে চাবুকের আঘাত সহ্য করতে না পেরে করুণানিধি শ্রীশ্রীঠাকুর গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে লাগলেন। অন্যরাও গাড়ি থেকে নেমে শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুসরণ করতে লাগলেন। পরমপুরুষের মুখমণ্ডল বিষন্ন হয়ে গেল। প্রাণীর প্রতি আঘাত তাঁকে ব্যথিত করল। জীবজগতের অনন্ত ব্যথা নিবারণ করতে যাঁর আগমন, তিনি ঘোড়ার ব্যথা সইবেন কি করে? ঘোড়ার গাড়িতে তিনি আর উঠলেন না। খোকা ডাক্তারদা ভাড়া দিয়ে দিলেন।
বারাদি পৌঁছার পর শ্রীশ্রীঠাকুর স্নান করতে যাওয়ার সময় ভক্তেরা দেখলেন পরমপুরুষের পিঠে বহু চাবুকের দাগ লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। এই করুণ দৃশ্য দেখে জলে ভিজিল অনেকের আঁখি। এ যেন- পরমপুরুষের পরমসত্তার উন্মুক্ত পরিচয়। "মদাত্মা সৰ্বভূতাত্মা ......." ভাবের চেতনায় মানুষকে উন্নীত করতে যাঁর আগমন, তিনি একাত্মানুভূতির চরম জ্বলন্ত উদাহরণতো দেখাবেনই। উদাহরণ তিনি দিয়েছেন অনন্ত। তাঁর সমগ্র ঐশী সত্তা উদাহরণ আর উদাহরণে ভরপুর।
বিঃ দ্রঃ - পরমপুরুষকে বড় করার জন্য এই লেখনীর উদ্দেশ্য নয়। শ্রীশ্রীঠাকুরকে যখন প্রশ্ন করা হতো, আপনি কি ভগবান বা অবতার, ইত্যাদি, ইত্যাদি । তখন ঠাকুর প্রায় এভাবেই বলতেন, আমি তোমার মত হাত-পা ওয়ালা সাধারণ মানুষ, আমি শিব চন্দ্রের ছাওয়াল অনুকূল চক্রবৰ্ত্তী......
(চলবে)