6-29-2016
মানুষ যখন বিপদগামী হয়, তখন পাবকপুরুষ ধরণীতে আগমন করেন৷মানব জাতিকে সত্য ও সুন্দর পথে চলার নিৰ্দেশিকা দান করেন৷মানুষের কল্যাণে হিতোপদেশ দান করেন৷যে হিতোপদেশগুলো দুৰ্লভ সাহিত্য হয়ে উঠে আমাদের কাছে৷ পরমপুরুষ এবার জগতে সমাজের অবক্ষয় লক্ষ্য করে বললেন- "শিক্ষা, দীক্ষা ও বিবাহ এই তিনটে জিনিস ঠিক করে দেন..............৷" কারণ এই বিষয়গুলো সিমেন্টের মত। সিমেন্ট দুৰ্বল হলে যেমন- ইমারত দুৰ্বল হবে, সংহত হবে না বন্ধন, ঠিক তেমনি শিক্ষা, দীক্ষা (উৎকৰ্ষতা অৰ্জন) ও বিবাহ দূৰ্বল হলে ব্যক্তি, পরিবার, দম্পতির বন্ধন দুৰ্বল হবে৷ একজনের অশান্তি তখন অন্য দশ জনকে আহত করবে, ব্যথিত করবে৷এই কলামে সংক্ষিপ্তরুপে বিবাহ নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে৷ শ্রীশ্র্রীঠাকুরের আঠার হাজার ছড়াবাণীর একটিতে উল্লেখ আছে-
আরাধ্যদেব পিতাকে তুমি
নিত্য কর নমস্কার,
জ্ঞান দাতা তিনি জেনো
শিব রুপেতে তিনি তোমার৷
বিবাহের আইনগত দায়-দায়িত্ব এড়াতে বা অন্য একাধিক সুবিধা, অসুবিধা বিবেচনায় নানান দেশে এখন পাত্র বয় ফ্রেণ্ড হয়ে থাকছে৷ সন্তান জন্মানোর পর সে (পিতা)অন্যত্র চলে যাচ্ছে (সবাই নয়)৷ চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়৷ তাই সন্তানের প্রতি দরদ ভালোবাসা থাকে কম৷ তখন সে অন্য একজনকে সাথীনি করে আবার লিভ টুগেদার করে৷ এদিকে পূৰ্বের গাৰ্ল ফ্রেন্ড হয়ত অন্য একজনকে মন মত খুঁজে পেল৷ এর ফলে সন্তান পিতৃস্নেহ, পিতৃপোষণ, পালন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হল৷ বিবাহ যে সমাজে বা যেখানে আছে সেখানেও ত্রুটিপূৰ্ণ জুটি মিলন, বিবাহপূৰ্ব অসঙ্গত মেলামেশা, বিবাহপূৰ্ব শৰ্তাদি পরিপূরণে অসংগতি বা অজ্ঞানতা, বাল্যবিবাহ, পারিবারিক সমস্যা, অপ্রাপ্তবয়সীদের বড়দের আচরণ অবলোকন, শাশুড়ী সমস্যা(ক্ষেত্র বিশেষে), মাতলামি, অৰ্থের অপব্যবহার, পরকিয়া প্রেম ইত্যাদি আরও অনেক সমস্যা রয়েছে৷ এর ফলে সংসারে আসে ফাটল। এই ফাটল অৰ্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে৷ সেটি প্রবন্ধের শেষ দিকে উল্লেখ করব৷ যুক্তরাষ্ট্রে একজন সজ্জন ব্যক্তি মিডিয়াতে বলেছিলেন, "পারিবারিক শান্তির মত সুখ নেই, পারিবারিক অশান্তির মত দুঃখও নেই .......৷" সংসার ভাঙ্গনের ফলে পিতার অনুপস্হিতিতে নিৰ্বোধ শিশুর জীবনে শুধু বঞ্চনাই লাভ হয়। এরূপ ঘটতে থাকলে সন্তান আরাধ্য দেব পিতাকে শিব রুপে পূজা করবে কিভাবে। অন্তত বিবাহের পূৰ্বে বা সন্তান নেয়ার পূৰ্বে তার দায়িত্ব বা উভয়ের দায়িত্ব কি সেই বিষয়ে জ্ঞাত হওয়া আবশ্যক। এই বিষয়গুলোর সমাধান পেতে বহু মানুষ যুগাবতার শ্রীশ্রী রামকৃঞ্চ দেবের কাছেও গিয়েছিলেন৷ যুগাবতার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র নিত্য কাল অতিবাহিত করতেন মানুষের সমস্যার সমাধান নিয়ে৷ তাঁরই প্রণীত "বিবাহ বিধায়ণা," "নারীর নীতি," "নারীর পথে" ইত্যাদি গ্রন্হরাজিতে এই সম্পৰ্কে বিস্তারিত আলোচনা ও সমাধান রয়েছে৷ এই বিষয়গুলো কাউকে ছোট করার জন্য নয়৷ বরং মানুষকে সমস্যা মুক্ত করতেই যত প্রয়াস৷ পিতৃস্নেহে তিনি সবাইকে নিয়ম নীতি শিখালেন৷ সবার প্রতি অসীম ভালোবাসা ও সন্মান নিয়েই এই আলোচনার সূত্রপাত৷
প্রথমে বিবাহের সংজ্ঞা নিৰ্ণয় করা যাক৷ অনেকে অনেকভাবে এই সংজ্ঞা তৈরী করতে পারেন। তবে আমার অনুভবে বিবাহের সংজ্ঞা নিম্নরূপ।
সংজ্ঞা- শাস্ত্রোক্ত বচন অনুসরণ ("পুত্রাৰ্তে ক্রিয়তে ভাৰ্যা"), গাৰ্হস্হ্যনীতি পালন এবং মানব মানবীর সহজাত বৈশিষ্ট্য পরিপূরণের অঙ্গীকার পূৰ্বক বিবাহের পূৰ্বাপর যাবতীয় নীতি-বিধি যাচাই ও অনুসরণ সাপেক্ষে এবং আইনী বাধ্যবাধকতা মেনে উচ্চ বংশ বা বৈশিষ্ট্য জাত পাত্রের সঙ্গে অপেক্ষাকৃৃত নিম্ন hereditary বৈশিষ্ট্য সম্পন্না পাত্রীর দাম্পত্য জীবন গঠন শুরুর প্রাথমিক অনুষ্ঠান পৰ্বকে সাধারণ নিয়মে সু-বিবাহ বা অনুলোম বা Hyper-gamy বিবাহ বলা যেতে পারে।
উক্ত নিয়মের বিপরীত বিবাহ হলে তাকে প্রতিলোম বা অনুচিত বিবাহ বলা হয়েছে। মনুসংহিতা, যাজ্ঞ্যবল্ক সংহিতা, পুরোহিত দৰ্পণ, বিবাহবিধি এবং যুগাবতারগণের উপদেশ বচন ইত্যাদিতে এই ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
Mental insanity, mentally dissident, feeble minded, বিশ্বাসঘাতকতা, অসৎ, দুষ্ঠুভাব ও paradoxical mentality ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ার কারণ নিৰ্ণয় করতে গিয়ে বেদজ্ঞ ও মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগণ প্রতিলোম বিবাহ বা Hypogamy কে নিৰ্দেশ করেছেন।
সবাই জানেন যে বিবাহ আট প্রকার। যথা: ১) আৰ্য বিবাহ ২) প্রজাপত্য বিবাহ ৩) দৈব বিবাহ ৪) ব্রাক্ষবিবাহ ৫) পৈশাচ বিবাহ ৬) গান্ধৰ্ব বিবাহ ৭) অসুর বিবাহ ও ৮) রাক্ষস বিবাহ। তবে ইদানীং ফেসবুকে পরিচিত হয়ে টেলিফোনের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করে Spouse কে বিদেশে আনার নিয়মও দেখা যায়। ফেসবুক পরিচিতিতে যদি অনিয়ম হয় বা তথ্য লুুকানো হয় বা কণ্যার পিতা বা কৰ্তা স্হানীয় কাউকে বড় অংকের টাকা দিয়ে মেয়েকে কৌশলে বিবাহ করা হয় তা উপরে লিখিত অনুুচিত বিবাহের যে কোন একটির পৰ্যায়ে পড়বে।
প্রত্যেক প্রকার বিবাহের বৰ্ণনা লেখা হবে ...........................। আমাকে অন্যের সাহায্যে লিখতে হয়।
দুৰ্বল চিত্তের জনগোষ্ঠীকে পরাক্রমশালী করা সহজসাধ্য বা রাতারাতি পরিবৰ্তন করার বিষয় নয়। কাউকে ধরে, বেঁধে বা ধাক্কা দিয়ে বীর বানানো যায় না, কিংবা মেধা সম্পন্ন করা যায় না।
সাধারণত দেখা যায় শান্ত, ভদ্র, নিয়মনিষ্ঠ, ধৰ্মপ্রাণ, কৰ্তব্যপরায়ন, ঈশ্বরানুরাগী, উদার ও ত্যাগী, তপ-পরায়ন, জ্ঞাননিৰ্ভর চলন, বিদ্যানুরাগী ও রুচিশীল আচরণ সমৃদ্ধ এবং সংস্কৃতিমনা পরিবারের মাতা-পিতার মত ছেলেমেয়েরাও উৎকৰ্ষিত ধাঁচের হয়ে থাকে (ব্যতিক্রম ছাড়া)। অন্যদিকে এর বিপরীত চলন ও উশৃঙ্খলতামুখী পরিবারে ভালো সন্তান কমই জন্মে থাকে। উৎকৰ্ষ আনয়ন করতে হলে মাতা পিতার মধ্যে মনের মিল হতে হবে এমন পরিবার তৈরী করার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে। মনের মিল আনতে হলে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ টি বিষয় বিবাহের পূৰ্বে নিস্পত্তি হওয়া বা মিলানো প্রয়োজন। চোখের সৌন্দৰ্যের সাথে মনের সৌন্দৰ্য বা বুদ্ধির সৌন্দৰ্য মিলাতে হবে। তার সাথে বাদ বাকি বিষয়গুলো মিলাতে হবে। বিষয়গুলোর প্রয়োজনীয়তা সম্প্রদায় সাপেক্ষে কম বেশী হতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে উন্নত বৈশিষ্ট সম্পন্ন মানুষের আধিক্য এখনও আছে। এটা স্বীকার করতে বাধ্য। অন্যথায় একসাথে বাস করা যেতো না। আমাদের আশা এই উন্নত চলনা আরও সমৃদ্ধি লাভ করুক। যে জাতির উপর মানুষ নিৰ্ভর করতে পারে, আশা রাখতে পারে, শ্রদ্ধোচিত গুণ অনুসন্ধান করে পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারে, সে জাতিকে ঈশ্বরও টিকিয়ে রাখেন। উন্নত জাতি প্রচেষ্টা ছাড়া উন্নত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে তাদের বংশানুক্রমিক ও জাতিগত মহান গুণসমষ্টি। যেমন -discipline. যদিও একটি ছোট শব্দ, কিন্তু এটি রক্ষা করতে পারা মহান সাধনার ব্যাপার। এর সাথে ব্যক্তিত্বের একটি সম্পৰ্ক জড়িত। এই সুন্দর চলনা মানুষের admiration কে উদ্দীপিত করে। তারপর আছে সন্মিলিত প্রচেষ্টা। এটি জাতীয় সংহতির লক্ষণ। এটি না থাকা মানে সৰ্বনাশ। তারপর আছে প্রণোদনা। এটি innovation কে এগিয়ে নেয়। এরকম আরও আছে। যেমন- responsibility. এই গুণপনা বজায় রাখতে বলেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। এগুলোর পরিচৰ্যা করতে বলেছেন। জাত-বৰ্ণ না ভাঙতে বলেছেন তিনি। উন্নতির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরমপুরুষ পাশ্চাত্য জাতির জাতীয় গুণাবলীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এই আলোচনাগুলো ঠাকুরের বিভিন্ন গ্রন্হরাজীতে উল্লেখ রয়েছে। আৰ্যকৃষ্টির সমৃদ্ধির ইতিহাসও গৌরবোজ্বল। শত শাস্ত্র ও সংহিতা সমূহ ঋষিদের জ্ঞান গবেষণার ফসল। যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা, মনু সংহিতা ইত্যাদি গ্রন্হে বিবাহের ব্যাপারে বিশদ উল্লেখ রয়েছে। আমরাও বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি তাই। আমরা প্রাৰ্থনা করছি, এই উন্নত চলনা দীৰ্ঘজীবি হোক, আরও সমৃদ্ধি লাভ করুক। পাবকপুরুষের ঐশী ছড়া বাণী-
জাতে, বৰ্ণে আঘাত করে/বাতুল চালে সে দেশ মরে।
বৰ্ণ ভাঙলে সৰ্বনাশ/ধ্বংসে রাষ্ট্র, জাতি দাস।
উন্নত গুণপনা হারিয়ে গেলে দুধের মধ্যে মেলামাইন পাওয়া যায়। কুকুরের রক্ত বিক্রি হয়, মসলাতে কাপড়ের রং মিশায়, ৫০ কোটি টাকা মেরে দিয়ে তার থেকে পাঁচ কোটি দান করে দানবীর সাজা যায় আরকি। প্রতিলোমজ সন্তানেরা সমাজে ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করে৷ মহামারী রোগের মত ভালো লোককে এদের পথে যেতে বাধ্য করে৷ ধীরে ধীরে সমাজ পঁচে যায়৷ খুন খারাবী নিত্যদিনের বিষয় হয়ে যায়৷ ভালোর মধ্যেও আবার নিম্ন, মধ্যম ও উত্তম ভালো রয়েছে৷ eugenics এর সূত্রেই বলা আছে- উন্নত সংসার রচনার মাধ্যমেই উন্নত মানব গোষ্ঠী সৃষ্টি করা সম্ভব৷ বিচ্ছিন্ন সংসারে স্নেহ ভালোবাসাহীন পরিবেশে শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে শূণ্যতা সৃষ্টি হতে বাধ্য৷ এই অবস্থার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে শিশুর আবেগ বাধাগ্রস্থ হতে হতে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে৷ এই রকম বঞ্চনার মধ্যে তার শৈশব, কৈশোর অতিবাহিত হতে থাকে৷ জেদ তার মনে বাসা বাঁধতে থাকে৷ সুসংগত জীবন নিয়ে জুটি বন্ধন হলে ভালো, কঠোর নীতিবান, ন্যায়নিষ্ঠ সন্তান জন্মাবে৷ এর প্রমান খুঁজতে বেশী দূরে যেতে হবে না৷ সমাজেই এদের খুঁজে পাওয়া যাবে৷ নীতিবান ও স্থিত-ধী সম্পন্ন সন্তানগুলোর মাতা-পিতাই এর অন্যতম উদাহরণ৷ জেনে বা না জেনে এই ভালো জুটিবন্ধনগুলো হয়েছে৷ এসব পিতা-মাতার মধ্যে অধিকাংশ বিষয়ে মনের ও মতের মিল রয়েছে৷ এদের মধ্যে ছোট খাট বচসা হতেই পারে৷ তবে পরে এরা ঠিক হয়ে যায়৷
ভুল বিবাহ বা প্রতিলোম বিবাহ হলে হিন্দু শাস্ত্রে পুনরায় অন্যত্র বিবাহ দেয়ার বিধান রয়েছে৷ আৰ্যস্মৃতির এই বিধান পরমপুরুষ ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ছড়ার সুরে বললেন--
ভুলে অশ্রেয়ে কন্যা দিলে
হরণ করে শ্রেয়ে দিবি
আৰ্যস্মৃতির এই তো নীতি
ঋষির কথা মেনে নিবি৷
জাত-বৰ্ণ (চতুৰ্বৰ্ণ) ভাঙলে সেখানে যত স্মাৰ্ট তৈরী হোক না কেন, এদের শেষ ভালো ঠিক থাকে না। এটির জ্বলন্ত প্রমাণ দিতে গেলে নিরাপত্তা প্রহরীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে৷
কোন জাতিতে চতুৰ্বৰ্ণ নেই তা নয়৷ কারণ এটি হিসাব করা হয় গুণ ও কৰ্মানুসারে৷ তাছাড়া history of ancestors, hereditary traits, blood test(if needed), সহন-বহন ক্ষমতা সহ ৭০/৮০ টি বিষয় নিস্পত্তি করে বিবাহ বন্ধনে এগোনো যায়৷ মানব জীবনের চাইতে গুরুত্বপূৰ্ণ বেশী কিছু নেই৷ ভালো মানুষ ছাড়া অৰ্থনীতি অচল, অৰ্থনীতি ছাড়া শক্তি দূৰ্বল, শক্তি ছাড়া রাষ্ট্র দূৰ্বল৷ ধরতে গেলে ভালো মানুষ ছাড়া সবকিছুই দূৰ্বল৷
এটি সুন্দরভাবে সাজানো দীৰ্ঘ সময়ের ব্যাপার নয়৷ এখানে অন্য ধৰ্মের কোন মন্ত্র পাঠ করা প্রয়োজন হবে না৷
ফিরে যায় পরিবার গঠনের আলোচনায়। মাঝে মাঝে সমাজের গতিধারা নিম্নমুখী হতে দেখা যায় এবং তার গতি দ্রুততা লাভ করতে পারে। অনেক বাস্তব উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যে শিশু আজকে খারাপ আচরণ করছে, সেই শিশুইতো ভবিষ্যতে অপরকে শিখানোর আসনে বসবে। এগুলো হতে না দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা হাতে নিতে হবে। বেশী চাপ সৃষ্টি না করে ভদ্রোচিত ভাষায় এই বিষয়ের উপর শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা যায়। এটি হাই স্কুল থেকে চালু করা যেতে পারে।
দাম্পত্য জীবনে মনের সাথে মন, বৈশিষ্ট্যের সাথে বৈশিষ্ট্য বা চরিত্রের সাথে চরিত্র মিলানোর সুপ্রাচীন পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি মোটামুটিভাবে যথাযথ বলা যায়। কোন ব্যক্তি কোন ধরণের মানসিকতা সম্পন্ন এবং তার বৈশিষ্ট্য, চারিত্রিক লক্ষণ, গুণাবলী, স্বভাব ইত্যাদি কোন ধরণের তা জানার জন্য মোটামুটিভাবে সকল জনগোষ্টীকে ১২ টি গ্র্রুপে ভাগ করা হয়েছে। একজনের বৈশিষ্ট্য একটি গ্রুপের বাইরে গিয়ে গ্র্রুপের অন্য একটির কিছু বৈশিষ্টের সাথে আংশিক বা তার কাছাকাছি মিল থাকতে পারে। তবে মোটামুটিভাবে ১২ টি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক একটি ভাগ নিৰ্ণয়ের ব্যবস্থা দুই রকমে নিৰ্ধারণ করা হয়ে থাকে। একটি Genetic report বা Chart বা কোষ্ঠী অনুযায়ী, অন্যটি জন্ম তারিখ অনুযায়ী। Genetic report তৈরী করার একটি সুপ্রাচীন পদ্ধতি বা রীতি হিন্দু সমাজে প্রচলিত(ব্যতিক্রম বা অবহেলা বাদে) আছে। এই report এ লেখা থাকে একজন মানুষের ভূত, বৰ্তমান ও ভবিষ্যৎ। তাই এই রিপোৰ্ট তৈরী করে রাখা অনেক পরিবারের কাছে গুরুত্বপূৰ্ণ একটি বিষয়। এই রিৰ্পোট এতই গুরুত্বপূৰ্ণ যে এটিতে অকাল মৃত্যু, আয়ু, রোগ, অৰ্থযোগ ইত্যাদি বিষয়ও লেখা থাকে। নিজ ধৰ্ম, কৃষ্টি, বিশ্বাস শতভাগ অটুট রেখে এই বিষয়গুলো পালন করা যায় অথবা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। কারও উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়ার বিষয় মোটেই নয়। ভালো জিনিস অনেকে গ্রহণ করতে চাই। যেমন- মেডিসিন। সেটি যদি দূরারোগ্য ব্যাধি সারাতে পারে, সবাই সেই ঔষধ গ্রহণ করতে চাই। তখন কোন জাতি সেটি আবিস্কার করেছে সেই প্রশ্ন আসে না। জ্ঞান জীবনে ফলিত রূপ দেয়ার জন্য না হলে সেই জ্ঞান বা জানার সাৰ্থকতা কি? জ্ঞান আহরণ করতে বহু দূরে যেতে বলা হয়েছে। এখানে নিজ ধৰ্মমত এবং কৃষ্টি পরিবৰ্তনের কোন প্রয়োজন নেই। এতে পরিবার হবে শান্তির আশ্রয় স্থল। সমাজ হয়ে উঠবে আলোকময়। পরিবারে মৃদু সংঘাত হতেই পারে। এই মৃদু সংঘাতও বন্ধ করতে হলে আরও কতিপয় বিষয় যুক্ত করতে হবে। যেমন সংসার সৃষ্টি বা বিবাহের পূৰ্বে "বৃহতের প্রতি অনুগমনের চৰ্চার কোৰ্স" প্রাইমারী লেভেলে চালু করতে হবে। আৰ্যকৃষ্টিতে এই কোৰ্সকে বলা হয় ব্রক্ষ্মচৰ্য পালন। এসব পালনের বালাই নেই আজকাল। তাই সংসারে চলছে নিত্য কলহ। অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ব্রক্ষ্মচৰ্য পালন হলে সংসারে প্রবেশের পূৰ্বে জীবনের অৰ্থ, উদ্দেশ্য, গতিধারা ইত্যাদি নানা দিক সম্পৰ্কে শিক্ষা লাভ করা যেতো। ব্রক্ষ্মচৰ্য শিক্ষাদান কালে গৰ্ভাধান, বিবাহ, উপনয়ন ইত্যাদি দশবিধ সংস্কার বিষয়ে জ্ঞান শিক্ষা দান করা হতো। তারপর সংসার জীবনে প্রবেশের অনুমতি মিলত। উক্ত নিয়মনীতি এবং কুলাচার লোভ পেলে অনেক কিছুতে গোলমাল পেকে যায়। নিয়মনীতি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূৰ্ণ সংস্কারগুলো জীবন থেকে হারিয়ে গেলে জাতি সত্তা পৰ্যন্ত লোপ পেতে পারে বলে শ্রীশ্রীঠাকুর সতৰ্ক করে দিয়েছেন। অথবা পাগলাটে ধরণের হয়ে যেতে পারে৷ বৰ্ণসংকর হলেও একই পরিণতি ঘটে। কারণ বৰ্ণ-সংকর হওয়ার ফলে অনেকের জীবনে(সবার ক্ষেত্রে নয়) তৰ্পন, শ্রাদ্ধ, যজ্ঞ, কৃষ্টি, কুলাচার ইত্যাদি হারিয়ে যায়। ফলে বিগত পিতা মাতার আত্মার শান্তি কামনা, উদ্ধার কামনায় ব্রতী হওয়া, শান্তি, স্বস্ত্যয়ন, আচমন, ব্রত ও যজ্ঞ ইত্যাদি লোপ পায়। এই আচার পরিপালনের ফলে অন্তরে যে তৃপ্তিভাবের সৃষ্টি হয়, পক্ষান্তরে এসবের অভাবে মহা শূণ্যতার ক্ষত সৃষ্টি হয়। মা, বাবা, পরিজন ইত্যাদির সঙ্গে মানস-আবেগ, সত্তানুবৰ্তী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া মন ও জীবনের সঙ্গে জড়িত বলে উক্ত নিয়ম, আচার পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আপন জনের বিগত আত্মার প্রতি দায়িত্ব পালনে বিচ্যুতি সৃষ্টি হলে সেই বিচ্যুতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গুণসম্পন্ন বিবাহের একটি পূৰ্ণাঙ্গ রুপরেখা তৈরী করে দেয়া যেতে পারে। সৰ্বাধিক এবং বেশী গুরুত্বপূৰ্ণ বিষয়গুলো মিললে একজন ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিবাহ হতে পারে ........ এরকম একটি পদ্ধতি ধরে এগোতে হলে বিবাহের পূৰ্বে অবাধ মেলামেশা হতে দেয়া চলবে না, যেহেতু মিলানোর বিষয় জড়িত রয়েছে। অন্য কোন ধরণের বিবাহের ব্যাপারে আমার মতামত দিচ্ছি না। যেমন- টিন এজ বয়সে বিবাহ, উপাৰ্জন করার পূৰ্বে বিবাহ ইত্যাদি৷ আইনগত অনুমতি আছে এমনতর বিবাহের ব্যাপারেও আমার বক্তব্য নেই৷
অবাধ মেলামেশার কুফল : যেমন- ক) একজন টিন. এজ ছেলে বা মেয়ের তার নিজ জীবন সম্পৰ্কে অপরিপক্ষতা খ) অপরিপক্ষ আকৰ্ষণ ভাব গ) চিত্ত চাঞ্চল্যতা ঘ) লেখাপড়ায় ঘাটতি ঙ) অনাকাঙ্খিত মানসিক আনন্দ বেদনার মিশ্রন এবং বেদনার শান্তনা ও নিয়ন্ত্রন ত্রুটি হেতু অনৰ্থক অভিমান সৃষ্টি এবং চ) অভিমান হেতু আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয়া ইত্যাদি।একটি ছোট উদাহরণ দিচ্ছি, ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে safety পিন দিয়ে তার বাহুর উপর বেশ কিছু দাগ কেটে স্কুলে এল৷ স্কুলের অন্য সাথীরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, তার হাত এরকম কি করে হল? তখন সে বলল, তার বয়ফ্রেন্ড তাকে আর পছন্দ করে না বলেছে৷ বিষয়টি আমার কাছে হাস্যকর মনে হল৷ আমি মনে মনে বললাম, বয়ফ্রেন্ড নেয়ারও দরকার কি, ভাঙ্গারও প্রয়োজন কি? এরা তো কেউ অৰ্থ উপাৰ্জন করে না, এই ফ্রেন্ডশীপ চলবে কিভাবে৷ যে কোন কিছু চালাতে হলে তো অৰ্থের প্রয়োজন৷ ওর মাও নাকি বিষয়টি জানে৷ প্রাচীন ও সেকেলে ভাবধারায় গঠিত আমার মন ভিতরে ভিতরে বলে উঠল- এটা তো মেয়ের একার ভুল চলা নয়, এখানে মায়ের ভূমিকাও জরুরী৷ পিতা নেই, তিনি অন্যত্র চলে গেছেন৷ মাগুলো আসলে সংগ্রাম করে৷ মা সংসার নিৰ্বাহ করে একা৷ ক্লান্ত মায়ের পক্ষে সবকিছু দেখা তো সম্ভব নয়৷ পরমপুরুষের একটি বাণী মা'দের শিক্ষা ও দক্ষতার জন্য জরুরী হলেও জীবনসংগ্রামী এই মা-দের জন্য হয়তো প্রাসংগিক নয়৷ বাণীটি প্রায়ই এরকম -
মা হওয়া কঠিন যদিও
সন্তান পোষণ সহজ নয়
সন্ধিৎসা সহ বুদ্ধমতি
দক্ষ নিপুন হতেই হয়৷
বিবাহের জন্য নিৰ্দিষ্ট বয়স পৰ্যন্ত অপেক্ষা ও অপেক্ষার পর প্রাপ্তির তৃপ্তি:
' মেঘ না চাইতে বৃষ্টি ' আসলে- সেই বৃষ্টির পানি পেয়ে আনন্দ জাগে না। তীব্র খরায় অনেক অপেক্ষার পর বৃষ্টি যখন আসে তখন মানুষ প্রকৃতির মৰ্ম বুঝে। প্রকৃতির প্রতি নমনীয় হয়। ঠিক সেরকম একটি ছেলে ও মেয়ে নিৰ্দিষ্ট সময় হলে বিবাহের মাধ্যমে সংসার পাতবে, সেখানে প্রকৃত সুখ বা আপেক্ষিক সুখ লাভ হবে - এমন একটি আশায় অপেক্ষার প্রাৰ্থনা নিয়ে ধৈৰ্য্য ধরে থাকবে। অনেক মেয়ে আছে ভালো বর লাভের আশায় মহাদেবের কাছে বর প্রাৰ্থনা করে। এটি অপেক্ষার একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আবার এমন পরিবার আছে মেয়ের বয়স ৩০/৩৫ বছর হয়ে গেছে অথচ বিয়ে দিচ্ছেন না। এরকম কয়েকটি পরিবারের অভিভাবকের অভিমত হলো- উপযুক্ত পাত্র না পাওয়া গেলে মেয়েকে বিয়ে দেব কি করে, মেয়েতো আর ট্রাশ ব্যাগ নয় যে ফেলে দেয়া যায়।
সংসার রচনার প্রয়োজনীয়তা ও তার ফলাফল: মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সভ্যতাকে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে বৰ্তমান পৰ্যায়ে এনেছে। বিবাহের মধ্যেও মানুষ উৎকৰ্ষতা এনেছে। অন্তহীন সম্ভাবনা সম্পন্ন মানব জাতির এটি সহজাত শক্তি। হাজার হাজার বছর পূৰ্বে আৰ্য্য ঋষিরা সুপ্রজনন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁদের রচিত গ্রন্হরাজি তারই সাক্ষ্য বহন করে। এই সুপ্রজননকে ইংরেজীতে eugenic বলা হয়। Greek শব্দ Eugene থেকে eugenic শব্দের উৎপত্তি। Eugene অৰ্থ well born(সুপ্রজনন). সভ্যতার অংশীদারগণ স্বীকার করে নিয়েছেন যে ভালো সন্তান জন্মানোই সংসার রচনার মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে সামাজিক উৎকৰ্ষতা অব্যাহত রাখা সম্ভব। তাই হয়ত Dr. Alexis Carrel has said, 'Biological aristocracy দ্বারা সভ্যতা অক্ষুন্ন থাকে।'
তাঁর বক্তব্য- "Civilization remains untarnished by biological peerage."(সভ্যতা জৈবিক আভিজাত্য দ্বারা অক্ষুন্ন থাকে)
এই আভিজাত্য গুণপনা হারিয়ে গেলে মানুষ বিশ্বে সন্মান হারিয়ে ফেলে। যেমন লুথ সম্প্রদায়। একেবারে শেষও হয়ে যেতে
পারে।
He also said,
"Intuition comes very close to clairvoyance, it appears to be the extrasensory perception of reality."
"চৈতন্য বা বোধি আলোক দর্শনের খুব নিকটে নিয়ে আসে, এটা প্রকৃত বাস্তবতার অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি বলে মনে হয়।"
উৎকৰ্ষতাহারা চলন ও সুচিতা বিবৰ্জিত জীবনধারার মাঝে বোধি, দেবত্ব (আলোকময়তা), চৈতন্য, অতিমানবিক গুণাবলী ইত্যাদি সৃষ্টি হয়েছে এমনতর কোন
প্রমান আছে কি?
প্রজ্ঞানুবৰ্তী চলন, আচাৰ্য গ্রহণ, Meditation এবং মানবিক গুণাবলী ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ শান্ত হয়৷ এখন মানুষকে শান্ত রাখতে বা ঝিমিয়ে রাখতে স্কুলে
ড্রাগ ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷ যে ড্রাগ নিষিদ্ধ সেই ড্রাগ এখন বিভিন্ন দেশের স্কুলে কোথাও কোথাও অনুমোদিত৷ আমরা দেখেছি অতি বৃদ্ধেরা
মাত্রানুগ ড্রাগ নিতেন, অথচ এখন আঠার বছর থেকে তা অনুমোদিত হচ্ছে৷
মানুষ অশান্ত হয়ে উঠছে শুভ পরিণতির দিশা খুঁজে না পেয়ে। শুভ পরিণতির দিশা আসে হৃদয় হতে। হৃদয় উৎপন্ন হয় শক্তিশালী পরিবারে। পরিবার সৃষ্টি হয় দাম্পত্য জীবনের অটুট বন্ধনের মাধ্যমে। অটুট বন্ধনযুক্ত দাম্পত্য জীবন আসে সুবিবাহ হতে। হৃদয়বান সন্তানগুলোর মাতা-পিতার দিকে তাকালেই এই উদাহরণের প্রমান মিলবে। হৃদয়বান সন্তানের উৎসস্হল হল সুমাতা-পিতা, আর তাদের সুশৃঙ্খল পরিবার।
বিবাহপূৰ্ব যাচাইযোগ্য বিষয়সমূহ:
বয়স, শিক্ষা, সাস্থ্য, ঠিকুজী, বংশ, স্বভাব, ব্যবহার, বৰ্ণ(চতুৰ্বৰ্ণ -কৰ্ম ও গুণ অনুসারে যাচাই লব্ধ), গোত্র ইত্যাদির সাথে দেশ, সমাজ ও সম্প্রদায় ভেদে বাকী বিষয়গুলো নিস্পত্তি হওয়া জরুরী। বাকী বিষয়গুলোর মধ্যে পাত্রের পছন্দসই পাত্রীকে শাশুড়ি (পাত্রের মা) মনে প্রাণে পছন্দ করেন কিনা, দ্বিতীয় বিষয়- পাত্র যদি মা, বাবা, ভাই-বোনের থেকে আলাদা না থাকতে চাই অৰ্থাৎ এদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ কিংবা মা-বাবা'র সাথে একই ছাদের নীচে থাকতে চাই এতে পাত্রীর সন্মতি আছে কিনা ? উভয়ের পছন্দ ও রুচী এক হওয়া বাঞ্চনীয়৷ স্বামী হয়তো রাজনীতি ভালোবাসে, আর স্ত্রী ভালোবাসে অবসর কিংবা ভ্রমন৷ এখন একে অপরকে ফেলে দু'জন দুই দিকে চলে গেলে সেখানে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী৷ দেখা গেল পাত্র আপ্যায়ন প্রিয়, আর স্ত্রী তা মোটেই পছন্দ করে না৷ একজন হয়তো নীতি-শাস্ত্র মেনে সামাজিক দায়িত্ব পালনে চরম আগ্রহী,পক্ষান্তরে সাথী বা সাথীনী তা সহ্যই করতে পারে না৷ Alcohol, ধুমপান, উন্মুক্ত বার, অশালীন নৃত্য-গীত এইগুলোও মারাত্মক বিপৰ্যয় সৃষ্টিকারী বিষয়৷ এসব জটিলতা আছে এমনতর বেশকিছু লোকালয় রয়েছে, যেখানে অৰ্থের প্রাচুৰ্য রয়েছে৷ দারিদ্র্য যারা কোনদিন অনুভব করেনি৷ এই ধরণের লোকালয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ যেন অত্যাবশ্যকীয় বিষয়৷ বিচ্ছেদের অনন্ত কুফল যা বিভিন্ন ধৰ্মের উপদেশাবলীতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এইভাবে ৭০-৮০টি বিষয়ের উপর উভয় পক্ষের সন্মতিপত্র তৈরী করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে এক কপি সরকারী কৰ্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়। এই বিষয়গুলো বিবাহ পরবৰ্তি সময়ে সমঝোতা সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। পারিবারিক ভুল বুঝাবুঝি সংশোধন করতে সমঝোতা পত্র তৈরী করা একান্তই জরুরী৷ এর পাশাপাশি মানুষকে নিজ নিজ ধৰ্মের প্রতি খাঁটি অনুরাগ নিয়ে চলা প্রয়োজন৷
Eugenic এর ফলিত রূপদান প্রসঙ্গে বলতে গেলে এটাই বলতে হয় যে, Compatible (সংগত) দাম্পত্য জীবন গঠন (বিবাহের মাধ্যমে) অথবা (বিবাহের খরচে অসমৰ্থ হলে সংগতির সমস্ত বিষয়াদি পূরণ সাপেক্ষে অনুমোদিত live together এর মাধ্যমে ) করা eugenic বাস্তবায়নের পূৰ্ব শৰ্ত। অনুমোদিত live together হবে স্বামী- স্ত্রীর জন্য৷ বিবাহের পূৰ্বে অধিকাংশ বিষয় মিলানোর পর এঁরা ধৰ্মালয়ে বিবাহ সেরে নেবেন৷ তারপর live together অনুমোদিত হবে৷ অন্য কোন ধরণের live together হলে পুরো সমাজ পতিতালয়ের পৰ্যায়ে চলে যাবে৷ তখন আদৰ্শ পতিত হবে, লজ্জা হারাবে, সূচিতা হারাবে ফলে জাতি স্পিরিট হারাবে৷ অফিস আদালতে দায়িত্ব জ্ঞান হীন লোক বেড়ে যাবে৷
এগুলো বাস্তবায়ন করা বেশী সহজ না হলেও কঠিন বিষয় নয়, আবার যথাযথভাবে না হলে কিছুই হবে না। এখানে উন্নত বা সুপার উন্নত যা কিছু আছে তার সাথে এই নিয়ম যুক্ত করা অপছন্দনীয় কিছুই নেই। বাইরের কোন রং শরীরে প্রবেশ করার কিছুই এখানে নেই। বিবাহের পূৰ্বে অবাধ মেলা-মেশা উৎসবের পূৰ্বে উৎসব করে ফেলার সামিল। চোখের সুন্দর দিয়ে হুট করে সম্পৰ্ক পাতানো যুক্তসংগত নয়। এতকিছু যাচাই বাছাইয়ের পরও অনেকগুলো বিবাহে ত্রুটি থেকে যেতে পারে। একদিনে এই ত্রুটি কমবে না বটে, তবে যথাযথ তদারকি থাকলে ত্রুটি কমে যাবে। এই বিবাহ ধীরে ধীরে হেলথি বিবাহ বলে স্বীকৃতি লাভ করবে। সগোত্রে বিবাহ দেয়া সমূহ বিপদের। যুগদিশারীপুরুষ সতৰ্ক করেছেন। এই ব্যাপারে প্রজ্ঞামন্ডিত অমৃতক্ষরা ছড়াবাণী বেরিয়ে এসেছে তাঁর শ্রীকন্ঠ থেকে এভাবে-
সগোত্রেতে মেয়ের বিয়ে
নয়কো সিদ্ধ কোন কালে,
সদৃশ অসগোত্র হলে
বিবাহ সিদ্ধ সেই স্থলে।
বিবাহের পূৰ্বে কেউ কাউকে মন দেয়া নেয়া ঘটলে সেখানে সংগতি যাচাই করে তাদের সম্পৰ্ক ভেঙ্গে দেয়া অসম্ভব হবে। বিদ্যালয়গুলো মন দেয়া নেয়ার তীৰ্থস্হান বানানো মোটেই সমীচিন নয়। বিদ্যালয় হলো বিদ্যা অৰ্জনের পবিত্র স্হান। কারণ প্রেমের বিষয় ছেলে মেয়েদের মনের সিংহভাগ জায়গা দখল করে রাখে, পড়ালেখায় ঘটে চরম ঘাটতি। ফোনে বা বিভিন্ন অ্যাপে ভিডিও কলে চাটিং করে ঘন্টার পর ঘন্টা অতিবাহিত করা তার অন্যতম প্রমান। আপন পিতা তার কণ্যার জন্য যতটুকু বিবেচনা করবে, বিপিতা মনে হয়না ততটুকু করবে।
এই কথাগুলো সকল ভালো লোকের কাছে সমানভাবে সমাদৃত৷চিনির মিষ্টতা পৰ্যন্ত চোর ও সাধুর কাছে সমান৷আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ Mr. Granville Stanley Hall এর কথাও হাজার বছর পূৰ্বের আৰ্য্য ঋষিদের কথার সাথে মিলে যায়৷তিনি বলেছেন, "Great daily intimacy between two sexes especially in schools and colleges tend to rub off the bloom and delicacy which can develop in each. Girls suffer in this respect more than boys."
সহশিক্ষায় স্বপক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকলেও লেখাপড়ার মধ্যে মন দেয়া নেয়ার বাড়তি বোঝা বহন করার কি যুক্তি আছে? পক্ষান্তরে তারা লেখাপড়ায় থেকে যাচ্ছে দুৰ্বল৷ ১০ টি সংখ্যা যোগ দিতে বললে ক্যালকুলেটর খুঁজতে থাকে৷ যেখানে আমরা অনেকে ৭০-৮০টি সংখ্যা(দুই বা তিন ডিজিট) এনালগ পদ্ধতিতে নিৰ্ভুলভাবে যোগ করতে পারি৷
নারী ও পুরুষের সংখ্যার ব্যবধান সমস্যা: এটিও সমাধান করা সম্ভব। Misogyny এবং Philogyny সমস্যারও সমাধান সম্ভব। অনেক দেশে অনেক জাতিতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। তাই কেউ করো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। বরং একদিন দেখা যাবে মানুষ এখান থেকে সমাধান নিয়ে যাচ্ছে। যে জাতির মধ্যে ভালো বীজ এখনো প্রচুর রয়েছে, এমন আত্মবিশ্বাস আছে তারা পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করা উচিত নয়। জীবনকে ভাগ করে নিতে হবে৷ একটি ভাগে বিবাহ সেট করতে হবে৷সবকিছুর পূৰ্বে জীবন৷সভ্যতা আসার পূৰ্বে রাষ্ট্র ছিল না৷ সুনিয়ন্ত্রিত মানবগোষ্ঠী একদিন রাষ্ট্র গঠন করেছিল৷ রাষ্ট্র কোনদিন মানবগোষ্ঠী বা সমাজ গঠন করে নাই৷ ইউজেনিক্সের নীতি অনুসারে বিবাহ হলে ১৫ বছরের মধ্যে সুনাগরিকে দেশ ছেয়ে যাবে৷ তখন তারা গ্লানীর পথে পা বাড়াবে না৷
চলবে-
বিবাহ বিচ্ছেদ বা লিভ টুগেদারে বিচ্ছেদ হওয়া পিতা মাতার প্রতি আইনের নিৰ্দেশ থাকে যে সন্তানের খরচ বাবদ পিতা মাসিক ভিত্তিতে অৰ্থ প্রদান করবে এবং সন্তানকে সপ্তাহে একদিন কয়েক ঘন্টা সঙ্গ দেবে(সন্তান যদি মায়ের কাষ্টডি পাায়)। দেখা যায় আইনের এই নিৰ্দেশ বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের আইন রয়েছে। সম্পৰ্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পরের পৰ্বের জন্য আইন। আইন করে সম্পৰ্কের বন্ধন অটুট করা তো সম্ভব হচ্ছে না। সংসারে দেখা যায় স্বামী-স্ত্রীতে বা বয় ফ্রেন্ড ও গাৰ্লফ্রেন্ডে নিত্য সংঘাত। ফলশ্রুতিতে সেই পরিবারের সন্তানগুলোও দেখা যায় আদব-কায়দাহীন, উগ্র ব্যবহার ও অভদ্র আচরণশীল। চরম অশান্তির মধ্যে বেড়ে উঠছে সন্তান। শিশু মনে পড়ছে এর ব্যাপক প্রভাব। দেখা যাচ্ছে শিশুটি ধীরে, ধীরে শিষ্টাচারহীন হয়ে উঠছে। উন্নত দেশে এই ধরণের ব্যবহারের জন্য স্কুলে ডিটেনসন দেওয়া, চেক শ্লিপ দেওয়া, বাস সাৰ্ভিস বাতিল করে দেওয়া এবং আরও কঠোর আইন রয়েছে। সহমৰ্মী হতে না চাওয়া সন্তানের এক মা কে দেখা গেল তিনি টেলিভিশন দেখে দেখে ঐ ধরণের জীবন যাপন করতে চান। সকাল, বিকাল ও রাতে তিনবার তিনটি শাড়ী বদলান। এখন টেলিভিশন আর বাস্তব জীবন তো এক জিনিস নয়। দেখা যায় ঘরে শাড়ীর স্তূপ জমেছে। যে শাড়ী বাজারে প্রথম আসে সেটি তার কেনা চাই। এরকম আরও অনেক চাহিদা, এই চাহিদার মাত্রা স্বামী প্রথম প্রথম পূরণ করলেও শেষে কোন এক সময়ে যখন আর পারছেন না তখন শুরু হলো অসন্তুষ্টির পৰ্ব, বাড়াবাড়ি, সংঘাত ইত্যাদি। সংকট আরও ঘনীভূত হয় যখন স্বামী বলছে চাকুরী করতে, আর স্ত্রী বলছে খাওয়াতে না পারলে বিয়ে করেছ কেন? আর একজনকে দেখলাম বড় ও দামী গাড়ী চালানোর শখ। বয়ফ্র্রেন্ডটি একদিন দুঃখ করে বলল, দেখুনতো ৮ সিলিন্ডারের এই এস.ইউ.ভি কি তার দরকার ছিল? সে যখন সিটে বসে, তাকে তো দেখাই যায় না। চাকরীতে যাওয়ার জন্য গাড়ি কিনল অথচ দুই মাস যেতে না যেতে চাকুরী থেকে ফায়ার হয়ে গেল। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই সেই সম্পৰ্কটি ভেঙ্গে গেল। এখন লোনের মাধ্যমে কেনা এই গাড়ির মাসিক কিস্তি চালানো অনিশ্চিত অবস্হায় এসে ঠেকেছে। লোকে বলে না - আয় বুঝে ব্যয় কর। এখানে বুঝের অভাব, স্বামীর সঙ্গে সমভাবাপন্ন হতে না চাওয়া বা এক ধরণের জেদ। একই রকম সমস্যায় নিপতিত হয়ে শেষে মায়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে অন্য একজন। তার সংসারেও আছে নানান করুণ কাহিনী। স্বামী নাকি ঠিক সময়ে বাসায় ফিরে না। তাছাড়া বাসায় বান্ধব-আড্ডা খুলে। রাত তিনটে চারটে পৰ্যন্ত আড্ডা চালায়। এরকম অসংখ্য অনিয়ন্ত্রিত জীবনের গল্প আজ সৰ্বত্র। জন্মস্হানে স্হানীয় লোকালয়ে বেশ কিছু ঘটনা দেখলাম। মেয়ে বিয়ে দিতে না দিতে ছাড়াছাড়ি হয়ে বাপের বাড়িতে ফেরৎ এসেছে। গুরুজনের উপদেশ না শুনাও একটি বড় বিষয়। স্বাধীনতার নামে অমান্যতাও অবগুণের মধ্যে একটি বড় অবগুণ। শ্বশুড় মশায় বৌমাকে হয়তো উপদেশ দিলেন, শীত এইবার বেশী পড়ছে, তাই অমুক রাজ্যে সেই উঁচু পাহাড়ি পৰ্যটন কেন্দ্রে না যাওয়ায় ভালো হবে। কিন্তু জেদের বশে স্বামীকে নিয়ে সেখানে যাওয়া হলো। শেষে দেখা গেল, তুষার পাতের কবলে পড়ে বাস দূৰ্ঘটনায় পতিত হয়ে উভয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করল। জীবন হারিয়েছে এমনও আছে অনেকে। এগুলো তো গেল সংসারের ছোট খাটো দুই একটি বিষয়ের বৰ্ণনা। বৃহত্তর পরিবেশে আজকাল দেখা যায় ভীষণ মাত্রায় দলীয় কোন্দল। কিছু মানুষ সমবেত হতে না হতে সেখানে বিভক্তি শুরু হয়ে কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করছে। দলে দলে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে ও মতবাদে মতবাদে তীব্রতর সংঘাত। এইভাবে জেদ, খেদ, উগ্র স্বভাব নিয়ে বাসের যাত্রী ছাউনিতে অবস্হানের মত সংসার জীবন ও সমাজ জীবন যাতে না হয় তার জন্যে পরমপুরুষেরা দিয়ে গেছেন সাত্বত নীতি বিধি।
চলবে-