স্বাতন্ত্র্য, সম্মান, বৈশিষ্ট্য, ভিন্নতা, প্রভেদ, তফাৎ, তারতম্য, বিশেষত্ব ও পরিচয় ইত্যাদি প্রকাশের জন্য বহু যুগ আগে থেকে মানুষ নাম ব্যবহার করে আসছে৷ 'নাম' শব্দটি নিজেই বিশেষ্য পদ৷ নাম না থাকলে তেমন কিছু হতো কিনা সেটি আলোচ্য বিষয় হতে পারে৷ মৃত্যুর পর স্বৰ্গে, নরকে বা মোক্ষধামে কি নামে ডাকা হয় তা নিয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে৷ আধ্যাত্মিক কল্পনায় ভাবা হয়- আমরা সবাই অনামী পুরুষের অংশ, তাই আমরাও অনামী৷ বীজ নাম অনামী ৷ নামের নামীও অনামী ৷ যেহেতু 'নাম' ও 'নামী' অভেদ ৷ সৃষ্ট জীবকে নামী তথা পরমাত্মার অংশ জীবাত্মা বলা হয় ৷ তাই এই জীবও অনামী ৷ এর অপরপৃষ্ঠের চিত্র ভিন্ন ৷ জগতের সব নামের সাথে জাগতিক শরীরধারী মানুষের জাগতিক নাম রয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে এই নাম বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ৷
মানুষ স্বীয় বিবেচনা নিয়ে বেশী চলে ও কথা বলে। অন্যের বিবেচনায় চলে এমন লোকও আছে, তবে সংখ্যায় কম। মানুষের কৰ্ম তার গুণগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হয়, নাম অনুযায়ী নয়। তবে কৰ্মহীন মানুষের বক্তৃতা, কথামালা তার সুবৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হয়, এমনটি দৰ্শনে বলা হয়নি। তার কারণ বলা না থাকলেও অনুমান করে বুঝা যায়। কারণ তার মধ্যে সু-বৈশিষ্ট্য থাকলে সে অন্যের শুভকৰ্মের সহযোগী হয়ে উঠবে। নিন্দামুখী সে হবে না। জন্মগত গুণ-বৈশিষ্ট্য থেকে মনের মধ্যে কৰ্মের বিষয়গুলো সৃষ্টি হয়। সুকৰ্ম ও সাধনা তাদের আহৃত পথ হয়ে উঠে। পরিবেশ, পারিপাৰ্শ্বিকের প্রভাবও এতে জড়িত।যেমন- পরিবেশ,পারিপাৰ্শ্বিক অশুভ হলে মহাপুরুষও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
গুণগত বৈশিষ্ট্য ভালো নয়, অথচ শুভ কৰ্মী- এমন নজির খুব কম, কিন্তু কিছু লোক এই শুভ কৰ্মীদের পেছনে লেগেছে। এরা গলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে, তবুও থামছে না। নামের সাথে গুণগত বৈশিষ্ট্যের কোন সম্পৰ্ক নাও থাকতে পারে৷ যেমন- একজনের নাম হতে পারে-দীনবন্ধু ৷ দীনবন্ধু মানে- দীনের বন্ধু ৷ এখন দেখা যায় লোকটি দীনের দিকে ফিরেও তাকান না, বরং পারলে সব কেড়ে নেন ৷ এমন নামের সঙ্গে গুণের ভয়ানক অমিল প্রায়ই দেখা যায় ৷ সুচিন্তাও ও সুকাজে আত্মনিয়োগ করা আসল ব্যাপার, নাম নিয়ে নয় ৷
"......কৰ্মবিহীন সুচিন্তা সব নরক ঘেরার অভিশাপ।"
নাম প্রত্যাশী না হয়ে ভালো কাজ করেন এমন উদাহরণ থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোন অজুহাত খুঁজে না পেয়ে বক্তৃতা দানকারীরা অন্য কিছু খুঁজে পেতে চান। এটি বিদ্বেষ পোষণী মনোভাব। এই মনোভাবের কারণে ধৰ্মালয়গুলো বিভক্তির আখেরায় পরিণত হয়েছে। শুধু বক্তৃতা দিয়ে সংহতি ধরে রাখা যায় না। মিষ্টি কথার তুষ্টি দিয়ে এটা সংহতির প্রসারণ নয় ৷
তবে কিছু সাচ্ছা মানুষ আছেন তাঁদের কৰ্ম ও বলা সমানে সমান। পরমপুরুষের ভাষায়- উনারা প্রথম শ্রেণীর কৰ্মী।
আর যাদের কৰ্ম বেশী, বকৰ্তৃতা কম, উনারা ২য় শ্রেণীর কৰ্মী।আর যাদের বকৰ্তৃতা বেশী, কৰ্ম কম, উনারা ৩য় শ্রেণীর কৰ্মী।
আর যাদের বলতে আলস্য, করতেও আলস্য, তারা অধম।' মানুষের প্রীতির জন্য কাজ করলে মনের বিষাদ চলে যাবে। ঈশ্বরের আৰ্শীৰ্বাদ লাভ হবে। কলিযুগে ভালো কাজের জন্য মানুষের সাধুবাদ লাভ নাও ঘটতে পারে। ঈশ্বরের তুষ্টি হলো বড় কথা। দুঃখী ও অভাবীর সেবাতে ঈশ্বর তুষ্ট হন, কারণ ঐ জীবের মধ্যে শিব বিরাজিত। এরকম ভাবনামুখী কৰ্মযজ্ঞে নামের কোন ভূমিকা থাকে না ৷
ভালো কাজের জন্য প্রশংসা বৰ্ষিত হতে থাকবে, এতে কেউ অখুশী হলে সেদিকে তাকাতে নেই। অনিচ্ছা সত্বেও জাগতিক নামটির একটু প্রচার, প্রসার হয়ে যেতে পারে ৷ অন্যে এতে কাতর হতে পারে ৷ তবে সেদিকে তাকাতে নেই ৷ যেমন- হাতি তাকায় না। ছোট বেলায় দেখা একটি দৃশ্য আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছে। দৃশ্যের বিষয় ও আমার অনুভূতির বৰ্ণনা মানুষের মনোযোগ আকৰ্ষণ করেছে। হয়ত আপনাদের কাছেও ভালো লাগতে পারে। দৃশ্যটির বৰ্ণনার মধ্যে একটুখানি হাস্যকর দিকও আছে। দৃশ্যের নাম- হাতি তাকায় না। আমাদের গ্রামে একবার সাৰ্কাস দল এসেছিল। তাদের দলে হাতি, ভল্লুক, বাঘ ইত্যাদি কয়েক জাতের বন্য প্রাণী ছিল।
রচনাধীন- চলবে