লেখাপড়ায় দড় হলেই পরিবারটি সহজ শেখায়
শিক্ষা তারে কয় না গেঁথেই তুলতে চাস্ যদি
অভ্যাস, ব্যবহার, সহজ জ্ঞান গবেষণাগার, শিল্প-কুটীর
না হলে শিক্ষা হয় না । পাল্ কৃষি-ভুঁই নিরবধি।
শ্রীশ্রীঠাকুর।
শিক্ষা, সংস্কৃতি একটি জাতির উন্নতির মাপ কাঠি বটে। তবে তা হতে হবে দায়িত্ব পালন মুখী শিক্ষা, সংস্কৃতি। কোন একটি ভাষা ভালো লিখতে পড়তে পারা বা অনুবাদ করতে পারা জ্ঞানের মাপকাঠি নয়। এরকম বহু দেখা যায় ভালো ব্যাকরণ জানেন, অথচ পকেটে টাকা নাই, চাল কেনার পয়সা নাই। আবার পাশের ঘরে কারো ছেলে লেখা পড়ায় গোবর-গনেশ, কিন্তু রাজমিস্ত্রীর কাজ করে মাসে লক্ষ টাকা আয় করছে। বাজারে যে কথাগুলো আছে সেগুলো তো মানুষেরই সৃষ্ট। সেগুলোতে ভুল থাকতেও পারে। প্রাচ্যের কিছু দেশে কৃষকের ছেলে উচ্চশিক্ষিত মানে, সে আর কৃষি কাজ করবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে বলে নিজের বাড়িঘরের কাজ করতে লজ্জা পায়। রাষ্ট্রের কাজ ছোট হলে করবে না, অথচ ধনী দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে লেখাপড়ার খরছ যোগাতে যে কোন কাজ করে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বটতলায় গান যেমন দরকার, তেমনি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠাও জরুরী। বস্ গিরি বা স্যারগিরি ছাড়তে হবে এবং অনুজেরা দায়িত্বও পালন করতে হবে। দায়িত্বমুখী মনোভাব না হলে এই ধরনের সেবাখাত চলবে না। আর সেবামূলক কাজে আদেশমুখী মনোভাব বেমানান। কিছু মনে করবেন না, কথাটি একটু কৰ্কষ মনে হতে পারে। আমি বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চাই। আপনাদের মতে হয়ত ছেলেমেয়ে যত বেশী লেখাপড়া শিখবে দেশের তত বেশী লাভ হবে। এর বিপরীতে যে বক্তব্য তা হয়তো মূল্যহীন বা অজ্ঞতা প্রসূত। ধরুন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ছেলে মেয়েরা অনেকগুলো বই পড়ে। বড়রাও অনুরুপভাবে পড়ে এসেছিলেন। বাংলা ও ইংরেজী কবিতা মিলে দু'ডজন বা ততোদিক কবিতা তো ছিলই। যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ তারা ভেবে দেখুন, এখন কতটি কবিতা মুখস্ত আছে? ধরে নিলাম, কবিতার মাধ্যমে রসবোধ, চেতনা, ভাষা জ্ঞান ইত্যাদি বেড়েছে। কিন্তু যারা উচ্চমাধ্যমিকে রসায়নের অজস্র সূত্র পড়েছিলেন বা পদাৰ্থ বিজ্ঞান কিংবা জীববিজ্ঞান পড়েছিলেন আজ তার কতটুকুই মনে আছে? আমার বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেছি, তারা অধিকাংশই বিদ্যানুগ চাকুরী পায় নাই এবং তাদের মুখস্ত করা সেদিনের মহাগুরুত্বপূৰ্ণ লেখাপড়ার পেছনে শ্রম, সময় ও অৰ্থদান বৃথা বলে মনে হচ্ছে এবং ৯০ ভাগ স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। তাহলে আজকে আপনার সন্তানের চৰ্চানুগ লেখাপড়ার সাথে মিলসম্পন্ন চাকুরী না পেলে তাদের এই পরিশ্রমের ফল কি দাঁড়াবে। চিন্তা করে দেখার বিষয় নয় কি, সন্তান যদি ব্যাংকার হবে বা চাকুরী প্রাপ্তি সোনার হরিণের যুগে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হবে, তাকে কেমিক্যালের নাম ও সূত্র শিখতে হবে কেন? বিদেশের পদ্ধতি শতভাগ সঠিক কিনা আলোচনার বিষয়। কিন্তু এখানে মুখস্ত করার কোন ব্যাপার 5th Grade পৰ্যন্ত পাইনি। এই দেশের পদ্ধতি ঠাকুর শ্রীশ্রী অনুকূলচন্দ্রের কাছ থকে নেয়া নয়। অথচ শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শুধু গাদা গাদা বই পড়ে লেখাপড়ায় দড় (দক্ষ) হয়ে চাকর হতে ধৰ্ণা দেবে। শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায় - আমরা স্মৃতির বলদ। তাই তিনি হাতে কলমের লেখা পড়ার উপর জোর দিয়েছেন। স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, এই ব্যবস্থা ঢালাওভাবে সবার জন্য নয়। আমার বক্তব্য রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে কোন বিতৰ্কে জড়াতে নয়। কোন পদ্ধতির সরকার শ্রেয়, তার উত্তর আজও পাওয়া যায়নি। আজকাল ঠাকুরের বাণী আরও বেশী সত্য। যেমন call base চাকুরীগুলো। ফোন নিৰ্ভর job দুই তিন মিনিট কথা। আমার মতে চাকুরীর ডিগ্রী ও জ্ঞানী হওয়াকে দুইভাগে ভাগ করা দরকার। ব্যাংক লোন নিয়ে মাষ্টার ডিগ্রী অৰ্জন করে যে অংকের বেতনের চাকুরী পাওয়া যায়, অষ্টম শ্রেণী পাস করে ট্রেড কোৰ্স করে তার সমপরিমান বা বেশী আয় করা যায়। আর মাষ্টারস্ নিলেই কি জ্ঞানী বলা যাবে? অষ্টম শ্রেণী পাস করা ছাত্রকে লোনের বোঝা বইতে হবে না, বইতে হলেও তা হবে অনেক কম।
দায়িত্ব কৰ্তব্যবোধকে কাণ্ডজ্ঞান বললে অত্যুক্তি হবে কি ? রাস্তা ব্লক হয়েছে বা ভেঙ্গে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করে চালু করে দেয়াই সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ববোধের কাজ। ছেলেদের কিছু অংশ অল্প লেখাপড়ার পর রাস্তার কাজ শিখবে। বিদেশের আদলে রাস্তা বানাবে। যদিও বিদেশের রাস্তাগুলোতে high tech জড়িত। গাদা গাদা বই পড়ে ডিগ্রী নেয়ার পর সে কি রাস্তার কাজে আসবে? বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে, কয়েক মাস সময় নেবে না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঠিক করে চালু করে দেয়া দায়িত্বপালনমুখী শিক্ষা বলে বিবেচিত। আসলে জনগণের ধারনাটাই উল্টো। তেমনি মানুষ খাবার পাচ্ছে না বা চিকিৎসা পাচ্ছে না সবাই মিলে তাদের জন্য পৰ্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়াকে দায়িত্ববোধ বলে। এটাই দায়িত্ব-কৰ্তব্যবোধ বা Responsibility. অল্প লেখাপড়াওয়ালারা food bank চালাবে labour এর দায়িত্বটি পালন করবে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কোৰ্স নেবে। টাকা কোথা থেকে আসবে, ভাবছেন? টাকা উড়ে, উড়ে আসবে। গণতন্ত্র মানে - সবার সমান অধিকার। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে handicap দের সৰ্বত্র accessibility দেয়া দরকার। এই প্রকল্পে হাজার, হাজার গাড়ি দরকার। ড্রাইভার, garage, maintenance, nurse ইত্যাদি সবকিছু দরকার। এইগুলোর জন্য course base education দরকার। এইগুলোই দায়িত্ব পালনমুখী শিক্ষা। এইকাজে motivational training দরকার। চাকুরী ও বেতনমুখী training দিলে হবে না। এই খাতগুলো সেবামূলক খাত। এই সেবাগুলো মানুষ এখন চাই। এতেও বেকারগণ কাজ পাবে। গরীব দেশ হিসাবে স্বল্পমাত্রায় লাভ করতেই হবে, যেমন- ক্লিনিক। চিকিৎসাতো ব্যবসা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ এবং তার মত আরও দেশ কি ক্লিনিক ব্যবসা করছে না? এগুলো গণতন্ত্রও নয়, সমাজতন্ত্রও নয়। ঠাকুর এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে আহ্বান জানিয়েছেন, গবেষণা কেন্দ্র করতে বলেছেন বারবার। সেই ব্যবস্থা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ছুটাছুটিকে গণতন্ত্র বলে না। আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এগুলো করলেই গণতন্ত্রের ছবি ভেসে উঠবে। মিথ্যাচারের সস্তা রাজনীতি বন্ধ হবে। সচ্ছল দেশে গণতন্ত্রে সবার সমান অধিকার সূত্রে চিকিৎসা মোটামুটি এখনও সমান আছে। সচ্ছল দেশে সকল ডাক্তার সকল ইন্সুরেন্স গ্রহণ না করলেও অন্তত হাসপাতালে যাওয়ার সমান অধিকার সবার রয়েছে।
উক্ত ব্যবস্থাগুলোর জন্য wide range of research দরকার। এগুলোকেই দায়িত্বপালনমুখী শিক্ষা বলতে চেয়েছি। এইগুলো চালানোর জন্য সেবামুখী employee দরকার। ব্যক্তি উদ্যোগেও বহুকিছু হচ্ছে দুনিয়ায়, বাইরের তুলনায় এল.ডি.সি ভূক্ত দেশগুলিতে সেই উদ্যোগ চোখে পড়ার মত নয়। ব্যক্তি উদ্যোগে বিশ্বে সেরা এমন কিছু কি করা যায় না? অস্তিত্ববাদের উদ্ গাতা অনুকূলচন্দ্র বললেন, "অহংকারী ধনী মলিনতার দাস।" যাদের বিশাল বিশাল বিল্ডিং রয়েছে, তারা এই দায়িত্ব পালন করতে পারে। দায়িত্ববোধ নেই, অথচ আমি উচ্চশিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান, তাতে জাতির অগ্রগতি কি হচ্ছে বা হবে? দায়িত্বপালনমুখী শিক্ষার ব্যাপ্তী ঘটাতে হবে।
করার পথে শিখতে গেলে
এত ঠেকে শেখা দায় -
এত ঠেকে শিখতে গেলে
জীবনে কি পাড়ি পায় ? শ্রীশ্রীঠাকুর
শিক্ষার গোড়ার কথায় ফিরে যাওয়া যাক। টেপের পানি খেয়ে হতদরিদ্র পুরুষোত্তম কি না করেছেন !
***********************
"..............তিন বছরে ম্যাট্রিক পাস সম্ভব।" শ্রীশ্রীঠাকুর
আপুরয়মান শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দৈনিক বসুমতি পত্রিকার সম্পাদক,
জ্ঞানতপস্বী, সুগায়ক, শ্রীশ্রীঠাকুরের ভক্ত, লীলাসহচর বরিশালের সন্তান
শ্রী পঞ্চানন সরকারের কথোপকথন
শ্রীশ্রীঠাকুর: .........ডিগ্রী নেওয়ার পরে, ছেলেরা ত' দেখি চাকরীর জন্য দোরে-দোরে হত্যা দেয়,-নিজেরা কোন কিছু করে খেতে পারে না এভাবে যদি চলতে থাকে তা'হলে সারা দেশটাই হয়ে উঠবে, - চাকরের দেশ। স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখে এরা করবে কি দাদা ?
........... যাই হোক,- আমার ধারণা, ছেলেগুলোকে বেশ কয়েক বছর, ধরুন আট নয় বছর পৰ্যন্ত, দুনিয়ায় স্বাধীনভাবে ঘুরে-ফিরে, দেখতে শুনতে দিয়ে, মায়ের কাজের যোগান দিয়ে, কখনও বা বাপের সঙ্গে সংসারের প্রয়োজনে .......... চলবে Philosophy of S.S.Thakur দ্রষ্টব্য। Philosophy of S.S. Thakur
শ্রীশ্রীঠাকুর শিক্ষার পাশাপাশি ব্যষ্টি জীবন, দাম্পত্য জীবন ও সমাজ জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করাতে বিনিদ্র রজনী পরিশ্রম করেছেন; সমাজের মূল দাঁড়া ভেঙ্গে গিয়ে মানুষ যেন বিপন্ন হয়ে না পড়ে তার জন্যে। কোটি কোটি মানুষের মাঝে দাঁড়িয়েও মানুষ যেন একাকীত্ব বোধ না করে, তিনি সেই তাড়নায় তাড়িত করতে চেয়েছেন আমাদের।