শিল্প
সৎসঙ্গ। আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি 'সৎ' মানে - জীবন-বৃদ্ধি। সৎসঙ্গ হলো- জীবনবৃদ্ধিতপা সংস্থা। পরমপুরুষের দৈবী চয়নের মধ্যে ষোলটি, ষাটটি কিংবা আশিটি স্তম্ভ আসেনি। তিনি চয়ন করেছেন চারটি স্তম্ভ। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা আর সু-বিবাহ। এখানে শিল্প নিয়ে তাঁর নিৰ্ভুল দৰ্শন তুলে ধরা হবে।
তার পূৰ্বে 'Industry' শব্দটি নিয়ে কয়েকটি লাইন লেখা যাক। 'Industry' শব্দটি এসেছে French শব্দ Industrie থেকে । এটির অৰ্থ এক্ষেত্রে Labor বা শ্রম বা পরিশ্রম নয়। Industrie or Industry মানে economic activity concerned with the processing of raw materials and manufacture of goods in factories. (শিল্প কারখানাতে কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণ এবং পণ্য বা উপকরণ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কাৰ্যকলাপ।)
Industry'র প্রকারভেদ বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এখানে আলোচনা সেদিকে এগিয়ে নেয়া অযৌক্তিক। আমরা সৎসঙ্গের ঋত্বিক হিসাবে কয়েকটি বিষয়ে বলব। এর বাইরে কিছু বললে সেটি অন্য Platform- এ বলতে হবে হয়ত।
যথাযথভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের শিল্প শব্দটির অৰ্থ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট। অন্যথায় এই শব্দটি "আশ্রম" শব্দের সংজ্ঞার সাথে সমান্তরাল ও সমাৰ্থক শব্দ বলে বিবেচিত হতো। যেমন পরমপুরুষ বললেন, শ্রমের মাধ্যমে যেথায় জ্ঞান আহরণ হয় তাই আশ্রম। তাঁর ভাষায় আশ্রমের সংজ্ঞাতে শ্রমের কথা বিশেষভাবে জড়িত। আশ্রমের সংজ্ঞাটি নিম্নরূপ-
যথাযথ পরিশ্রমে
জ্ঞানের যেথায় আহরণ,
সুধীজন করেন তারে
'আশ্রম' বলে সম্বোধন।
সুতরাং শিল্পালয়ে উৎপাদনের শ্রম এবং জ্ঞানোৎপাদনের শ্রমে আশ্রম তাদের আলাদা অৰ্থ সংগতি নিয়ে জীবনবৃদ্ধির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এই হল শিল্পে শ্রম বিনিয়োগের বিষয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর নিজ উদ্যোগে তাঁর জন্মভূমিতে কুটির শিল্পের অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে সমাগত জ্ঞানী-গুণীদের অনেকেই তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমরা কী ধরনের কুটিরশিল্প করতে পারি ?
এখানে সংক্ষেপ তার উত্তর। শ্রীশ্রীঠাকুর - কত রকম করা যায় তার কি ইয়ত্তা আছে ? ডালডা জাতীয় জিনিষ তৈরী করা যায় , তিলের তেলকে ঘি এর-মত করা যায় , কলার ডেগো থেকে লবন করতে পার । নানারকম ফল যা পাওয়া যায় তা’ থেকে সিরাপ করতে পার । খুব ছোট ধরনের কল করা যায় , যাতে কাপড়, গামছা, রুমাল ইত্যাদি তৈরী হতে পারে । ঐরকম কল হাজার খানেক টাকার মধ্যে বাড়ীর একখানা ঘরের মধ্যে চালু করা যায় । ছোট্ট তেলের কল করা যায় , ঘানির পরিবর্তে । এই সব লাভজনক ভাবে চালু করতে গেলে ইলেক্ট্রিসিটি সহজপ্রাপ্য করে তোলা লাগে । নানারকম ফল যেমন কমলা , আম , কাঁঠাল ইত্যাদির রস জমিয়ে Candy (মিসরি ) জাতীয় জিনিস তৈরী করা য়ায় । সোডা ওয়াটার তৈরীর কল , লজেন্স তৈরীর কল ইত্যাদি চালান কঠিন কিছু না । মালগুলি চালু করার ব্যবস্থা করা দরকার । দৈনন্দিন প্রয়োজনে যা’ লাগে তেমনতর জিনিষ তৈরী করলে খরিদ্দারের অভাব হয়না । ব্যবসা করতে গেলে পাকা ব্যবসায়ীর আওতায় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয় । ........ফিতে ও সুতো করার মেসিন তৈরী করা যায় । মোজার কল গেঞ্জির কল ইত্যাদি তো খুব সহজ ব্যাপার ।। আ: প্র: অষ্টম খন্ড ।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্পগুলোর মধ্যে ছিল তাঁরই আবিষ্কৃত ভেষজ ঔষধ শিল্প, যার নাম ছিল সৎসঙ্গ রসৈসনা মন্দির। এজামঞ্জিট, কাৰ্ডোটোন, বাসাৰ্জ্জুন, পৰ্ণাশপঞ্চক, নবরঞ্জিনী, গাইনোটোন ইত্যাদি আজও তৈরী হয় দেওঘর,ভারতে। তাঁর পবিত্র জন্মভূমিতে 'মাতা মনোমোহিনী মেকানিক্যাল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট' বোৰ্ডের অনুমোদনও পেয়েছিল। তৎকালীন পদ্মা হাৰ্ডিঞ্জ ব্রীজে অনেক কিছু সাপ্লাই করেছিল এই প্রতিষ্ঠান। তৈরী করেছিলেন ছোট কাপড়ের কল, প্রেস, পাখা চালিত জেনারেটর হতে বিদ্যুৎ ইত্যাদি।
বাঁচতে নরের যা যা লাগে
তা দিয়েই তো ধৰ্ম জাগে।
শ্রীশ্রীিঠাকুর
Whatever is necessary for a human to survive ,
certainly along with those, religion derive.
Translated
জীবনকে ঘিরে সবকিছু, তার বাইরে নয়। তার বাইরে যদি যাইও তা হতে হবে .00১%। এর বাইরে চলে গেছে বলেই তো অৰ্থ ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়েছে। অথবা দিয়ে দেয়া হয়েছে। মানুষ জুয়া খেলাতে অৰ্থ হারায় শুধু তা নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে তার চাইতে হাজারগুণ বেশী অৰ্থহানি হতে পারে। টেকনোলজি হতে হবে জীবন-বৃদ্ধির অনুকূল এবং যতটুকু হলে পৰ্যাপ্ত হয় ততটুকুই। এর বেশী যেন না হয়। এমনটি ঘটেছে বলেই পৃথিবী আজ ধ্বংসের সন্মুখীন। এমনটি ঘঠেছে ১৯৯৫ - ২০২০ এর মধ্যে। এই পঁচিশ বছরের মধ্যে ৮০-৯০% ঘটেছে। যেখানে বলা হচ্ছে ৩৫% লোকের গাড়ির ব্রেক প্যাড ও রোটর replace করার ক্ষমতা নেই। তাদেরকে ক্রেডিট কাৰ্ড ব্যবহার করতে হয়। Bone biting ঠান্ডার দেশে গাড়ি রাখতে মানুষ আজ অপারগ। সেই দেশে কি করে ৫০০ ডলার থেকে ৮০০ ডলারের কম্পিউটার প্রতি চার বছর পরপর বদল করতে হয় বা ট্র্যাশ হিসাবে রাস্তার পাশে ফেলে দিতে হয়? এগুলোর accessories তৈরী করেও তো মূল ডিভাইসের এক পষ্ণমাংশ জুয়া খেলার মত হারাচ্ছি। পরিবৰ্তন প্রয়োজন, কিন্তু সীমাতিরিক্ত প্রয়োজন ও পরিবৰ্তন ধ্বংস ডেকে আনে। মাঝে মাঝে লোকমুখে বলা হলো এবং সংবাদে তা পড়েছি-" ওমুক প্রেসিডেন্ট স্মাৰ্ট ফোন চালাতে জানে না।" প্রশ্ন জাগে, তাহলে তিনি কি করে বুঝবেন টেকনোলজির অসামঞ্জস্যতা ও সামঞ্জস্যতা? Modern version of many software এই সামান্য কয়েক বছর পূৰ্বের কম্পিটারের সাথে খাপ (Compatible) খায় না। এগুলো যে মানুষের উপাৰ্জনের সাথেও খাপ খাচ্ছে না সেটি কি বুঝা দরকার নয়? মানুষই তো প্রথম। মানুষের পকেট থেকেই তো নেয়া হচ্ছে টাকা। বৈজ্ঞানিকগুলোর জ্ঞান হয়ত উচ্চস্তরের, হয়ত মোটা বেতন পায়। কিন্ত আমাদেরও তো Common sense আছে। অনেক কম্পিউটার মেশিন আজ অচল। কেন? আশা করি বেশীরভাগ লোক তা জানেন। যান্ত্রিক ব্যবহার একটি থেকে অন্যটিতে যেতে হিসাব করতে হবে। যে পরিমান অৰ্থ বাইরে চলে যাবে, সেটি জাতি বহন করতে পারবে কি না।
বাঁচতে নরের যা যা লাগে মানে - অনন্ত কিছু লাগতে হবে এমনটি নয়। তেমনটি নয়, কারণ পরমপুরুষ বলেছেন সবসময় অল্পের ভিতর দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে। শিশুর চঞ্চলতা জাতিকে পেয়ে বসলে তো সমস্যা। উপকরণ বা বস্তু আমরা ব্যবহার করি। অধিকমাত্রায় উপকরণ নিৰ্ভর হলে উপকরণ আমাদেরকে ব্যবহার করবে।
আমিও নতুনত্বের এর বিরুদ্ধে নই। তবে তা মাত্রানুগ ও সহনশীল হওয়া চাই। ভেবে দেখুন যখন এত কিছু ছিল না তখন পৃথিবীতে কত বড় বড় দাৰ্শনিক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিষয় আছে যেগুলো হাস্যকর। ঘরে থাকা ভালো টিভিগুলো ফেলে দিতে হল।বাজারে Flat Screen টিভি এল। কিনতে না কিনতেই টিভি সমস্যা দিচ্ছে। মানুষ গৃহশিল্প, কুটির শিল্প বাদ দিয়ে টিভির দৰ্শক হয়ে বসল। আর টিভিগুলো যেন বৈরাগ্যপ্রিয়। এরা ঘরে থাকতে চায় না। এদেরকে রাস্তায় এগিয়ে দিতে হয়।
কৃষিনিৰ্ভর শিল্পের কথাও তিনি বলেছেন। শিল্প চলবে যদি সে বাজার পায়। এখনতো পণ্য বাজারে অন্য পণ্যের কাছে হেরে যাচ্ছে। পণ্যের নিৰ্মান কৌশলের ভিতর ত্রূটি রেখে মানহীন পণ্য কমমূল্যে ছেড়ে দিয়ে বাজার দখলে নেয়া হচ্ছে। নিয়মনীতির কথা বললে তাতে কেউ হয়ত আঘাত পেতে পারেন। কল্যাণকামী রাষ্ট্র অন্য দেশকে উৎপাদনমুখী করে দিতে পারে। কিন্তু এখন উৎপাদনবিমুখ করে দেয়া হচ্ছে। কিভাবে হচ্ছে? অন্য দেশগুলো কৃত্রিম প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারছে না। কৃত্রিম পণ্য, নীতিহীন পলিসিতে উৎপাদন ব্যবস্থা সমতা হারিয়েছে। কৃত্রিমগুলোর সাথে মাঝে মাঝে ভালোগুলো মিশাল দিয়ে সাধু বনে যাওয়া হচ্ছে। কৃত্রিম পণ্য নিম্নমূল্যে ছেড়ে দিয়ে বাজার দখলে নিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিবেশী দেশ সেই একই পণ্য উৎপাদন করে স্বদেশের বাজারেও বিক্রি করতে পারছে না। ব্যবসার নীতিমালা রয়েছে, আদৰ্শ রয়েছে, ভোক্তার অধিকার ও অৰ্থহানি রোধের বিষয় ইত্যাদিও বিশেষভাবে জড়িত।
সাধারণ মানুষেরা সবকিছু না বুঝলেও অনেক কিছু বুঝেন।
চলবে