বিবাহে পরমপুরুষের নিৰ্দেশনা
* * * * * *
"বিয়ের ব্যাপারে সবার আগে
বৰ্ণের হিসাব করিস্
তার সাথেতেই বংশটিকে
বেশ খতিয়ে দেখিস।
বংশ দেখে শ্রদ্ধা হলেই
স্বাস্হ্য দেখিস কেমন তার
তার সাথে তুই বাজিয়ে নিবি
স্বভাব, অভ্যাস, ব্যবহার।
এ সবগুলির সুসঙ্গতি
মিলেই যদি যায়
বিদ্যা দেখিস নজর করে
কৰ্মের ওজন তায়।
পারস্পৰ্য্যে এইগুলি সব
মিলিয়ে দিলে বিয়ে
প্রায়ই দেখিস্ ঠকবি না তুই
মরবি না বিষিয়ে।
সবৰ্ণে সগোত্রে বিয়ে
দিসনে কোনদিনও ভুলে,
করবে বংশ জরাজীৰ্ণ
অসংবদ্ধ গুণবহুলে।
বিয়ের মধ্যে যদি গলদ ঢুকে যায়, তাহলে জাতির শিরে সৰ্পাঘাত হয়ে যাবে, তারপর আর ওঝাগিরি ফলাবার জায়গা থাকবে না। ভাল মানুষই জন্মাবে না। "
দেশ কালের অবস্থা ভেদে আরও অনেক বিষয় বিবেচনায় নিলে তাতে শ্রীশ্রীঠাকুরের আপত্তি থাকার কথা নয়। তিনি জ্ঞানের দরজা সবসময় উন্মুক্ত রেখেছেন। - চলবে
জানি, বৰ্ণ, গোত্র ইত্যাদি সম্পৰ্কে অনেকেই জানেন, তবুও লিখতে হয়-
আরও একটি কথা উল্লেখ করে রাখি, এই বিষয়ে অধিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি সমাজে আছেন এবং তাঁরা বই পুস্তকও লিখেছেন। মানুষ সে সব বই পড়ে যদি চলত তাহলে নিজের ও সমাজের কল্যান হতো এবং লেখকের শ্রমও সাৰ্থক হতো। তবে বহু মানুষ সেসব বই পড়ে হয়তো কল্যানের অধিকারী হয়েছে বা হচ্ছে তাও সত্য। আমি হয়ত আরও একটু দীৰ্ঘ করে লিখতে পারতাম, কিন্তু টাইপিং সমস্যা ও লোকবলের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে টাইপিষ্ট পেলে সব বিষয়ের উপর অভিজ্ঞতা লব্দ জ্ঞানের দীৰ্ঘ বৰ্ণনা দেয়ার চেষ্টা করব। বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানের কথায় উদাহরণ দেয়ার মতো কিছু থাকে না, তবে আমার কাছে বাস্তব ও চাক্ষুষ কিছু উদাহরণ আছে, যেগুলোর আলোকে পরমপুরুষের বাণীর উপযোগীতা মানুষের কাছে অমৃতের মত মনে হবে এবং মানুুষ সেই অমৃত গ্রহণ করে উপকৃত হবে।
সঃক্ষেপে বৰ্ণ সম্পৰ্কে ধারণা - শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায়- "বৰ্ণ মানে Classes of equicultural heredity. (তুলনা ভিত্তিক উৎকৰ্ষিত বংশের শ্রেণী)।"
সনাতনী কৃষ্টিতে বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র নামে চারটি শ্রেণীসহযোগ রয়েছে। এগুলো শ্রেণীভাগ নয়। আমরা বৰ্ণ মানব, কিন্তু বৰ্ণবাদ মানব না। আজকাল বৰ্ণ মানে না এমনও আছে। বৰ্ণ না মানলে গীতা পরিবৰ্তন হতে বাধ্য। কারো মনে যেন ধারণা না থাকে আমি উচ্চ বৰ্ণের, আর সে নীচু বৰ্ণের। এরকম করলে মানুষ শ্রদ্ধা করতে চাইবে না।
জাতিভেদ রাখবেন না। ছোঁয়া, খাওয়া না খাওয়া সেটা আরেকটি আলাদা বিষয়। অনেকটা এমন ব্যাপার ঘটে ছিল, ছোঁয়াছে রোগীর হাতে খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠল, বলা হল রোগীকে নিন্দা করা হয়েছে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, আমরা রোগীকে ভালোবাসব, তবে রোগকে নয়। আমার পরিবারে যদি কারো ছোঁয়াছে রোগ থাকে, তাহলে আমরা তাঁর খাবার আলাদা করব। রোগীর খাবার শেয়ার করে খাওয়া কখনো রোগীকে ভালোবাসা নয়।
উৎকৰ্ষমূলক কৰ্ম, সাধনা, চৰ্চা, ব্যবহার, জীবন চলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুণাৰ্জনের মাধ্যমে উৎকৰ্ষিত বৰ্ণে যাওয়া যায়। যেমন বিশ্বামিত্র ক্ষত্রীয় হয়ে ব্রক্ষ্মৰ্ষি তথা যথাৰ্থ ব্রাক্ষ্মন হয়েছিলেন। ভক্ত ধ্রুব ও উৎকৰ্ষিত বৰ্ণে উন্নীত হয়েছিলেন। বিভিন্ন জাতির মধ্যেও উৎকৰ্ষিত সমাজ ও বংশ রয়েছে। এখানে শ্রেণীভাগের কোন বিষয় নেই, শ্রেণী সহযোগ আছে। ছাত্র ও শিক্ষকের মত। কোন সমস্যা নেই। তবে জ্ঞানাৰ্জন না করে উৎকৰ্ষিত বৰ্ণ দাবী করা কি সমীচিন? গুণ, কৰ্ম, Culture, heriditary traits, social tradition, family values, habit and qualities ইত্যাদি বিষয় সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সমাজে মানুষের মধ্যে উৎকৰ্ষিত সমাজ এবং উৎকৰ্ষের পানে আগুয়ান জনগোষ্টি দেখা যায়। অপকৰ্ষে স্থিত থাকতে চায় এমন লোক সমাজও আছে।
উক্ত বিষয়টিকে কখনো শ্রেণী ভাগ হিসাবে দেখতে কোথাও উৎসাহিত করে নাই এবং কেউ কাউকে নিন্দা স্তুতি করবে এমন অভ্যাসকে প্রশংসা করে নাই। কৰ্ম ক্ষেত্রে সবাই সব কৰ্মে পারদৰ্শী নয়। বাস্তব ক্ষেত্রে আরও দেখা যায় সব কাজ করার গুণাবলী সকলের নেই। তা ছাড়া স্বাধ্যায়, অধ্যাপনা, গবেষণা, তপস্যা, ধ্যান, মন্ত্র-সাধনা, আধ্যাত্মিক- সূচিতা মানা, নিত্য পূজাভ্যাস ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে নেন যাঁরা, তাঁরা কি বিশেষ ব্যতিক্রমী নন? এসব মেনে চলা তো শাস্ত্রের নিৰ্দেশনা। এইগুলো মেনে চলেন এমন বিপ্র যাঁরা এবং তাঁদের একই পথে চলমান অন্য গুণীজনেরা কি মেনে না চলাদের সাথে একই দলভূক্ত হওয়া সমীচিন? শাস্ত্র না পড়লে শাস্ত্র শিখাবেন কে? এই গুণ ও কৰ্মের বিভাগ অনুসারে মানুষ কাজের ভাগ মেনে নিয়েছে। যুগাবতার শ্রীশ্রী রামকৃঞ্চদেব বৰ্ণ বিভাগ সম্পৰ্কে বলতে গিয়ে একটি চমৎকার কথা বলেছেন, কথাটি হুবহু মনে আছে কিনা জানি না, তিনি অনেকটা এরকমই বলেছিলেন, "গরুর গলার দড়ি খুলতে হলে ঐ দড়ির সীমার মধ্যে থেকেই খুলতে হবে।" অৰ্থাৎ একটি গরুকে যদি ২০ হাত লম্বা দড়ি গলায় বেঁধে মাঠে চড়তে দেয়া হয় এবং সেই গরুটির গলার দড়ি যদি খুলতে হয় তাহলে যিনি খুলবেন তাঁকে ঐ ২০ হাতের মধ্যে দাঁড়িয়েই দড়ি খুলতে হবে । মানুষকেও যদি বৰ্ণ থেকে বৰ্ণান্তরে উন্নীত হতে হয় তাহলে তাঁকেও তাঁর নিজ বৰ্ণের সীমার মধ্যে থেকেই কৰ্ম, সাধনা, অধ্যবসায়, প্রচেষ্টা ইত্যাদির মাধ্যমে উৎকৰ্ষিত বৰ্ণে এগিয়ে যেতে হবে।
যুগাবতার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এই ব্যাপারে অত্যন্ত সতৰ্ক হতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, 'বৰ্ণ ভাঙলে সৰ্বনাশ/ধ্বংস রাষ্ট্র জাতি দাস।'
'জল চল' করেন ক্ষতি নাই, তবে আপনার চলমানতা যাতে স্তব্দ না হয়ে যায়, তা খেয়াল রাখবেন। 'জল চল' ও বৰ্ণ এক জিনিষ নয়। ঋষিরাই বৈজ্ঞানিক বিধান দিলেন কিভাবে খেলে কি হয় তা নিয়ে। খাবারের ভিতর দিয়ে মানুষের মনোভাব সঞ্চারিত হয়। তা ছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূৰ্ণ। আহার শুদ্ধির ব্যাপারে ধ্রুবাস্মৃতিতে বিশেষ নিৰ্দেষণা রয়েছে। সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। বৰ্ণের কথায় ফিরে যায়। কৰ্মে দোষ নেই। ধরুন টিকুজী থেকে দেখা গেল কেউ কৃষক বা ঘরামির ঘরে জন্ম নিল এবং তাতে গণক মহোদয় লিখেছেন ছেলেটি বিপ্র বৰ্ণ থেকে আগত, আরও দেখা গেল ছেলেটি লেখাপড়ায় খুব মেধাবী হয়ে উঠতে লাগল এবং ছোটবেলাতেই অন্যকে শেখানোর ক্ষেত্রেও তার পাঠদান অতুলনীয় এতে নিঃসন্দেহ যে ছেলেটি বিপ্র বৰ্ণের। ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, গবেষণা ইত্যাদিতে দক্ষতা তার অপূৰ্ব। অধ্যাপনা, গবেষণা, পাঠদান, চিকিৎসা, ধৰ্মদান, ঈশ্বরানুরাগ তৈরী করা, পূজা, সাধনা, পৌরহিত্য করণ, যাগ-যজ্ঞাদি পরিচালনা করণ, সৰ্বোপরি সমাজের পরিপূরণ করন ইত্যাদি বিপ্র বৰ্ণের কাজ বলে বিবেচিত। তাহলে সকল অধ্যাপক কি বিপ্র বৰ্ণের? না, তবে হলে ভালো হতো। সকল অধ্যাপক বা শিক্ষক বিপ্র বৰ্ণের নয় বলেই লেখাপড়ার মান বিশ্বব্যাপী তলানীর দিকে যাচ্ছে। তবে বিপ্র বৰ্ণের কাছাকাছি যোগ্যতা আছে এমন শিক্ষক আছেন অনেকে। পাঠদানের সময় বুঝানোর যোগ্যতার বিষয়টিতে অনেক শিক্ষকের ঘাটতি আছে। আর তাই শিক্ষার মান কমছে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে আরও নানা বিষয়। ঠাকুরের মতে বিপ্রগুণসম্পন্ন ছেলেটি তার পিতার কাজও করতে পারে এবং তার পিতাও যদি মহৰ্ষী বিশ্বামিত্রের মত ব্রাক্ষ্মন হয়ে উঠেন তথাপি তিনি তাঁর পূৰ্বের পেশা বা কৰ্ম আনন্দের সাথে করে যেতে পারবেন। শ্রীশ্রীঠাকুর ব্রক্ষ্মজ্ঞ পুরুষ গুরু নানকের উদাহরণ দিলেন। গুরু নানক ব্রক্ষ্মজ্ঞ হয়েও তাঁর কৰ্ম কৃষিকাজ ছাড়েন নি। এখন ছেলে বিপ্র বৰ্ণ থেকে জন্ম নিলেও তার দশবিধ সংস্কারের পৰ্যায়ক্রমিক সংস্কার ব্রক্ষ্মচৰ্য ও উপনয়ন হলেই কেবল দ্বীজের পৰ্যায়ে উন্নীত হতে পারবে। তাই আৰ্য্য ঋষিদের আশ্রমে ব্রক্ষ্মচৰ্য পালনের জন্য সন্তানকে পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল। এই ব্যবস্থা দশবিধ সংস্কারের একটি সংস্কার ছিল, যার নাম ছিল 'চূড়াকরণ' সংস্কার। ' চূড়্ ' মানে প্রেরণ করা। ঋষির আশ্রমে প্রেরণ করত বলে এর নাম চূড়াকরণ। এগুলো ছিল। এখন তো এগুলো নেই। আমি জন্ম নেয়ার পরে আমাকে কেউ ধরে ধরে হাঁটা-চলা শিখাতে হবে তো? ঠিক সেরকম পাঠশালা কেউ রক্ষা করে চালাতে হবে।
উপরে যা লেখা হল তা অত্যন্ত সংক্ষেপেই লেখা হয়েছে। বাকী তিনটি বৰ্ণের ব্যাখ্যা লেখা যেতে পারে। মানুষের কাছে পড়ার ধৈৰ্য, মনোযোগ, সময় ও আগ্রহ ইত্যাদিও থাকতে হবে।
বিবাহের ক্ষেত্রে আরও অনেক বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশদ আলোচনা রয়েছে।
চলবে