(নিম্নোক্ত সংলাপ বন্ধুজনদের সাধারণ ধারণার উত্তর দিতে তৈরী করা, এখানে সভ্য একজন কল্পিত প্রশ্নকৰ্তা। বৰ্ণনা বাস্তব সত্য।)
পাঠক- আমার নাম সভ্য। আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
সম্পাদক- বলুন আপনার প্রশ্ন।
পাঠক- আপনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সম্পৰ্কে লিখছেন। কিন্তু জীবনী লেখার সাধারণ নিয়ম মানছে না কেন? যেমন- নাম, গোত্র, ভাষা, জাতীয়তা, বংশগতি, পেশা, বিবাহ ও পরিবার- ইত্যাদি ধারাবাহিক লিখছেন না কেন?
সম্পাদক-সাধারণ নিয়ম অসাধারণ মানবের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে কিছু সমস্যা হয়, তাই। যেমন ধরুন, মহাপণ্ডিতের কাছে মহামূৰ্খ কিছু প্রশ্ন নিয়ে এল। প্রশ্নের উত্তর মূৰ্খের মনের মত হলো না বলে মূৰ্খ রেগে গিয়ে পণ্ডিতের একটি ক্ষতি করে দিল।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, "কোন পরমপুরুষের সাথে তোমার নিজের তুলনা করো না।" নিজের বা সমাজের সঙ্গে তুলনার ভিত্তিতেই সাধারণ মানুষ বিচার করে। যখনই নিজের বিচার ও তুলনার সঙ্গে পরমপুরুষ মিলে না, তখনই পরমপুরুষকে ধরে গালাগালি করে। তাই আগে অসাধারণ বিষয়গুলো জানলে পরে ঐ পরমপুরুষের সাধারণ সংসারের বিষয় তথা পারিবারিক জীবন মিলাতে পারবে। অন্যথায় 'অবজানন্তি মাং মূঢ়া .......' হয়ে যায়।
পাঠক- মহিমা-প্রচার ও বিচ্যুতি একসাথে লিখছেন কেন? এতে মহিমার গায়ে কি আঁচড় পড়ছে না?
সম্পাদক- ধরুন কোন বিজ্ঞানী একটি নতুন জিনিস আবিষ্কার করে বাজারে ছাড়ল। দেখা গেল, সে জিনিসটির হুবহু নকল জিনিস বাজারে বের হল। বিজ্ঞানী তাঁর নতুন জিনিসটির প্রথম টিভি বিজ্ঞাপনের সাথে দ্বিতীয় নকল জিনিসটির ব্যাপারেও সতৰ্ক করে দিল। এতে বিজ্ঞানীর প্রথম জিনিসটির মান কি কমে যাবে?
পাঠক- মহাপুরুষদের হাঁটা, চলা, বলা ইত্যাদিতো সাধারণ মানুষের মত, তাঁদের দেখতেও মনে হয় যেন আমাদের মত রক্তমাংস সঙ্কুল।
সম্পাদক- যারা "অবজানন্তি মাং মূঢ়া......."বাণী বা শ্লোকটির উপযোগী হয়ত তাদের জন্য অবতার পুরুষদের দেখতে অন্যরকম হতে হবে। তিনি যখন ধরাতে অবতীৰ্ণ হন, তখন দু'টো ডানা থাকতে হবে, এই রকম হয়তো তাদের ধারণা। ডানা থাকলে হুট করে উপরে উঠে যেতে পারতেন, আবার মুহূৰ্তে কোথাও নামতে পারতেন। মানুষ তাঁকে ভয় পেত বা সন্মান করতো আলাদা বলে। এটা বললাম অবজ্ঞাকারীদের জন্য। আর সত্য কথা যেটা সেটা হলো, অবতার পুরুষগণ প্রয়োজনের তাগিদে অশরীরিও হতে পারেন। তাঁরা সাধারণ ও অসাধারণ দু'টিই সত্য। এইভাবে ভাবতে হয়। তাঁদেরও ঠাণ্ডা লাগলে সৰ্দি হয়, জ্বর হয়। আবার নামী পুরুষ বা অসীমের(Spirit) সসীম রুপ বিধায় নামের শক্তিতে প্রায়োজনে বা পুরুষকারের তরে পুরস্কারস্বরূপ আয়ু বৃদ্ধির জন্যে মৃতকেও জীবিত করতে বা প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারেন।
পাঠক- সব মৃতকে জীবিত করেন না কেন? এতে আপনজন খুশী হতো।
সম্পাদক- সব মৃতকে জীবিত করা তাঁর ডিউটি নয়। কারণ মানুষ সৃষ্টিতে নিজের ইচ্ছাশক্তি নিজের অধীন করে স্বাধীনতা পেয়েছে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কৰ্মে পূৰ্ণ অধিকার পেয়েছে। পবিত্র বেদে উল্লেখ আছে -কৰ্মে মানুষের অধিকার আছে। তাই মানুষের কৰ্মফল অনুযায়ী মানুষ বাঁচবে, বাঁচাবে, মরবে ও মারবে। মানুষের কু-কৰ্মফল মানুষকেই পরিবৰ্তন করতে হবে এবং তার দায় নিতে হবে। সঠিক পথে চলার জন্যে তিনি যুগোপযোগী বিধান নিয়ে আসেন। তিনি আহ্বান জানান, তাঁর সেই আপ্ত বিধান গ্রহণ করতে। তিনি তাঁর কাছে অনুরাগাবিষ্ঠ ও আচরণশীল শরণাগত ভক্তকে রক্ষা করেন। বেশী দিন বেঁচে থাকার এই বাড়তি সুবিধা পেতে হলে তাঁর ভক্ত হয়ে তাঁর পথে থাকতে, চলতে ও করতে হবে।
পাঠক- অপরাপর সম্প্রদায় কিভাবে বিষয়গুলো ভাবতে পারে?
সম্পাদক- শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায়- ধৰ্ম বহু নয়, ওসবগুলি মত, যত মানুষ তত মত হতে পারে, কিন্তু তাই বলে ধৰ্ম বহু হতে পারে না। তিনি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ করতে একদম প্রশ্রয় দেননি। পর সম্প্রদায় বলতে কিছুই নেই, তিনি এই শিক্ষাই দিলেন। বিভিন্ন সম্প্রদায় নিয়ে তাঁর শাশ্বত বাণী ধ্বনিত হলো এই ভাবে-
বুদ্ধ, ঈশায় বিভেদ করিস ধৰ্মে সবাই বাঁচে বাড়ে
শ্রীচৈতন্য, রসুল, কৃষ্ণে সম্প্রদায়টা ধৰ্ম নারে।
জীবোদ্ধারে হন আবিৰ্ভাব (সম্প্রদায় ও ধৰ্ম এক জিনিস নয়।)
একই ওঁরা তাও জানিসনে?
তিনি প্রত্যেক মতকে সঠিক বলে মত দিয়েছেন এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ মতে থেকে খাঁটি ও আদৰ্শবান হয়ে চলতে বলেছেন। দুৰ্যোগ, বন্যা, মহামারীতে মানুষে মানুষে কোন ভেদ থাকে না। দুষ্ট বুদ্ধিসম্পন্নরা এই ভেদবুদ্ধি সৃষ্টি করে। নিজ বিশ্বাসে অটুটু থেকে যদি তাঁর বাণী থেকে কেউ উপকৃত হন, তিনি তাঁর বাণীগুলো অনুসরণ করতে পারেন। সমভাবে আমরাও অপরাপর অবতার, Prophet বা নবীর বাণী অনুসরণ করতে পারি। বড় বড় সাধক, পীরদের কাছেও কখনও সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ছিল না।
পাঠক- আচ্ছা! শ্রীশ্রীঠাকুর প্রায় সময় খালি করণে থাকতেন কেন?
সম্পাদক- শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে খালিও যা, পূৰ্ণও তা। তিনি শিক্ষার তরে সব কিছু করেছেন। তাঁর কাছে কোন কিছুরই অভাব থাকতে পারে না, তিনি সবাইকে তা করে দেখালেন। তিনি তাঁর আবিৰ্ভাব ভূমি পাবনায় শূন্যহস্তে বিশাল সাম্রাজ্য তথা 'জীবনবৃদ্ধিতপা সংস্হা' গড়ে তুললেন, আবার শূন্যহস্তে দেওঘরে লোকহিতৈষী সাম্রাজ্য গড়ে তুললেন। তাই অভাবের কারণে যে খালি গায়ে থাকতেন তা নয়। তবে আমি অনুভব করি অন্য কারণ। শ্রীশ্রীঠাকুরের এবারের প্রকল্প ছিল মানুষকে ভালোবাসা শিখানো। মানুষ যে ভয়ানক ভাবে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাবে, তার অশুভ করাল প্রভাব থেকে মানব গোষ্ঠীকে রক্ষা করতে পথ দেখানোর জন্য তিনি সম্ভবত খালি করণে থাকতেন। অসংখ্য ঘটনার একটি উল্লেখ করছি। শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন তিনি সবেমাত্র যুবক। গাঁয়ের হত দরিদ্র এক লোক দৌড়ে এসে যুবক অনুকূলচন্দ্রকে বলল, আমার পড়নে কাপড় নেই। প্রতিবেশী লোকটি একটু ধমকের সুরে বলল, হুট করে তুই কাপড় চাস কেন? উনি (অনুকূল) কি এখানে তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল। যা যা পরে দেখা যাবে। কিন্তু লোকটি ছাড়তে রাজী নয়। লোকটি অনুকূলচন্দ্রকে বলল, তোমার ধূতিটি আমাকে দিয়ে দাওনা ভাই। তুমিতো দরদী বন্ধু।
যুবক অনুকূলচন্দ্র ধূতিটি অৰ্ধেক কেটে লোকটিকে দিয়ে দিলেন। মানুষের অভাবের দহন জ্বালা শ্রীশ্রীঠাকুরের চাইতে বেশী অনুভব করতে কেই বা পারে? কুলিদের কষ্ট অনুভব করতে অনুকূলচন্দ্র বাজিতপুর ষ্টিমার ঘাটে বিনা পয়সায় বোঝা বহন করতেন। মানুষের দুঃখ তিনি অনুভব করতেন তিলে তিলে। হয়ত মানুষের অভাবের এই দুঃখানুভব থেকে অনুকূলচন্দ্র নিজেই খালি গায়ে থাকতেন। কারণ পীড়িতের কষ্টে ত্রাতার দুঃখ যে অপরিসীম।
পাঠক- শ্রীশ্রীঠাকুর নতুন করে কি দিয়েছেন, কেনই বা তাঁকে আসতে হল আবার?
সম্পাদক- পরমপুরুষের দৈবী উক্তি দিয়েই আমি আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে চাই। পরমপুরুষের আগমন ও প্রস্হান তাঁর ইচ্ছানুগ নিয়মেই হয়। আমরা নিৰ্ধারণ করার কেউ নই। তারপরও মানুষের জিজ্ঞাসার অন্ত নেই। যদিও মানুষের জিজ্ঞাসা করার যৌক্তিকতাও নেই। মানুষ জিজ্ঞাসা করার চাইতে তাঁকে গ্রহণ করে নিশ্চিত ধ্বংসের বা ধ্বসের সম্ভাবনা থেকে বাঁচার পথে ফিরে এসে এগিয়ে চলাই ঢের শ্রেয়। তারপরও পিতার স্নেহে অপার দরদ দিয়ে তিনি সবকিছু শিখালেন এবং উত্তর দিলেন। তাঁর অমৃত নিৰ্ঝরিণী একটি ছড়া বাণী থেকে আমরা বুঝতে পারি কেন তাঁকে আসতে হল। ছড়া বাণীটি এরকম-
ধৰ্ম যখন বিপাকী বাহনে
ব্যৰ্থ অৰ্থে ধায়,
পূরণ পুরুষ তখন আসেন
পাপী পরিত্রাণ পায়।
পরমপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অবধারিত দুৰ্দশা থেকে মুক্তির জন্য পরিপূরণী যে দৰ্শন দিয়েছেন, তা সমাজ আজও গ্রহণ করতে পারেনি। বিশ্বে বিপুল জনগোষ্ঠী আজও বিকৃতির পথে ধাবমান এবং ক্ষয়ের মাঝে নিমজ্জিত। সুনিয়ন্ত্রিত ও ধৃতিমুখী(ধারণ-পালনমুখী) চলনের মাধ্যমে নিজে বেঁচে থেকে অন্যকে বাঁচিয়ে রেখে সত্তার পোষণ দিয়ে চলার মধ্যেই অসীমকে অনুভব করার যে পথ, সে পথেই তিনি চলতে শিখিয়েছেন। আর সেটিই জীবনীয় ধৰ্ম। জীবের সেবার মাধ্যমে প্রাণন-সত্তা পোষণ পায় বলে জীব প্রেমে ঈশ্বর সেবা বাস্তবায়িত হয়। এই প্রাণন সত্তার মালিক সৃজনী শক্তি বা Holy Spirit বা ঈশ্বর। এই সত্তার অবস্হিতি অটুট রাখা মহাপুণ্য, আর তার বিলোপ (হত্যা করা) সাধন করা মহা পাপ। তাই নর হত্যা মহা পাপ। বাঁচা-বাড়া মহা সংকটে নিপতিত হয়ে মনুষ্যত্বের ভিত ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে বলেই শ্রীশ্রীঠাকুর বাঁচা-বাড়া নিয়ে অযুতবার বলেছেন।
তাই ধৰ্মের প্রকৃত বাণী বুঝাতে গিয়ে তিনি বললেন-
ধৰ্ম নীতি ধৃতির নীতি
করলে তারে উপহাস
সত্তা যে তোর ধ্বসবে ক্রমেই
নিজের গলায় পড়বে ফাঁস।
২০১৫ সালে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু তরুণের সাথে সমাজের প্রতি দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করলাম। আলোচনার এক পৰ্যায়ে শহরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকার নাম ধরে বললাম, এই লোকালয়গুলোতে মনে করুন ২০ লক্ষ পরিবার বসবাস করে, ধরুন দুই হাজার পরিবারে চরম অৰ্থ সংকট আছে, তন্মধ্যে একহাজার পরিবারে কোন খাবার নেই, এই লোকগুলো এই মুহূৰ্তে খাবারের সহায়তা পাবে এমন কয়েকটি জায়গার নাম বলুন। তরুণ ভাইয়েরা বললেন, একটিও নেই। তখন তাদের বললাম, এই জন্য ঐ ভদ্র মহিলা (যার কথা এই সাইটে লেখা হয়েছে)এক বছরের শিশু কোলে নিয়ে দুই দিন উপোস থেকে তৃতীয় দিন দুটো পান্হা ভাত খাচ্ছিলেন।
যাদের অস্বচ্ছলতা আছে শুধু তাদেরকেই সাহায্য করতে হবে। যারা যাঞ্চাকারী তাদেরকেই দিতে হবে। মানুষের বাঁচার আৰ্তি উপেক্ষিত হলে পাপ হয়। কারণ মানুষের সমস্ত চাওয়া পাওয়ার শেষে শুধু যে বাঁচার আৰ্তিটুকু থাকে তার পূরণকারীরা যদি উপেক্ষা পরায়ণ হন, তখন সমস্যা নেমে আসে। সত্তার তোষণ-পোষণে অনাদর ও অবহেলা যেখানে উন্নতিও বাধাগ্রস্হ সেখানে। সমাজ, জাতি ও বিশ্বের প্রগতির পথে বাধা দূর করতে শ্রীশ্রীঠাকুর কিছু নিয়ম নীতি উপহার দিয়েছেন। ইষ্টভৃতি, যাজন, স্বস্ত্যয়নী, সেবা, যজ্ঞ, দীক্ষা, নাম-ধ্যান, সংহতির উপাদান, উচ্ছলতার তুক্, উন্নতির কৌশল, উন্নত জাতি গঠনে জাত প্রক্রিয়ার নিয়ম, জাতি গঠনের নিয়ম, শান্তির নিয়ম, দেবত্ব সম্পন্ন হওয়ার ঐশী পদ্ধতি, জীবন নীতির ধারা, মানুষের নৈতিক দায়িত্ব এবং ঘৃণা, লোভ, অবিশ্বাস ইত্যাদি থেকে জাত রেডিয়েশনের ঝলসানি থেকে রক্ষা পাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি অমূল্য সম্পদ তাঁর নতুন উপহার। এসব কিছু তাঁর আপন জীবনে বাস্তবায়িত এবং তাঁর সাহিত্যরাজিতে দেদিপ্যমান। লক্ষ-লক্ষ মানুষ তাঁর জীবন চলার সাক্ষী। তাই তিনি সকলের প্রিয়পরম শ্রীশ্রীঠাকুর। আর তিনি প্রিয়পরম রূপে তখনি নন্দিত হন, যখন মানুষ তাঁর আগমনের জন্য বিপুল আগ্রহে অপেক্ষা করে।
পাঠক-শ্রীশ্রীঠাকুর জগতের কল্যানে এত অমূল্য সম্পদ দান করে গেছেন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এবং মানুষের শান্তির জন্য, তারপরও জগতে এত অশান্তি কেন?
সম্পাদক- মূল কারণ অস্তিত্ব রক্ষার পথ না জেনে পথে নেমে পড়া এবং ভাবা, বলা ও করার মধ্যে প্রচুর ফাঁকি রাখা। সংসার, সমাজ, জীবনের নিয়ম, দায়িত্ব-কৰ্তব্যবোধ, শিক্ষা, বিবাহ, প্রকৃত ধৰ্মবোধ, প্রাচীন বোধিতত্ব তথা অষ্টগুণ শিক্ষাদানকারী যোগ্য গুরুর অভাব, দশবিধ সংস্কারের কিছু বিধির বিলুপ্তী সাধন, ধৰ্ম সম্পৰ্কে ভুল ব্যাখ্যা দান, যুগাবতারের দৈবী উপদেশ উপেক্ষা করা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক কুমতবাদ গ্রহণ করা ইত্যাদি কারণে ব্যষ্টি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন আজ বিধ্বস্হির পথে। তাছাড়া ষড় রিপুর ঝাপটা ও সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণের নিয়ম না জানা এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে গুরু ব্যবসা, পাণ্ডিত্যপূৰ্ণ কথার দোকানের লগো তৈরী করে সস্তা ইলেক্ট্রনিক প্রচারের মাধ্যমে সমস্যার ভুল-ভাল সমাধান দিয়ে দুই চারটি ইংরেজী শব্দ বলে মূৰ্খদের করতালির আওয়াজের মধ্যে বিশাল প্রতিবন্দী জনগোষ্ঠী আজ দিশেহারা। তথাকথিত কিছু গুরু আজ অন্যায়কে ন্যায় বলছে। প্রায়শ্চিত্ততুল্য কৰ্মকে বৈধ বলছে, সামান্য একটু বাড়তি জ্ঞান আহরণ করতে পেরে, ফকিরি ফকিরি ভাব প্রকাশ করে, শরীর সাজিয়ে দাৰ্শনিক ও গুরু বনে যাচ্ছে। আর এক শ্রেণীর গুরু সৃষ্টি হয়েছে, যারা আরও মারাত্মক। এরা বায়ু থেকে স্বৰ্ণের চেইন এনে কিছু লোককে উপহার দেয়। বিশ্ববাসী অঙ্গুলি নিৰ্দেশ করে দেখাচ্ছে, দেখ প্রতারকেরা সাধু বা ফকিরের বেশ ধরে ধৰ্মে কিভাবে প্রতারণা করে চলে এবং সমাজ তা মেনে নেয়। Ultra super lens দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আঙ্গুলের ফাঁকে টেবলেট সদৃশ পিল রেখে (অথচ দেখাচ্ছে সেগুলোকে বায়ু থেকে নিচ্ছে)শিবের ভস্ম রুপে ভক্তদের দান করছে। প্রতিবন্দী কিছু মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে ব্যবসায়িক ফন্দীর আড়ালে শুধু নিজের আরাম নিয়ে ব্যস্ত। ওরা অল্প কিছু লোককে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিয়ে সাইনবোৰ্ড সৰ্বস্য দাতব্য চিকিৎসালয়ও খুলে। কয়েক হাজার মানুষ জড়ো করে মিছিলও করে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্রগ্রামে কিছু লোকের সঙ্গে আমার আলাপ হলো। সমাজে বঞ্চনা সম্পৰ্কে আমার এই জাতীয় বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় কি হয়েছে? আমি তখন গ্রামের এবং শহরের কয়েকটি পরিবারের করুণ চিত্র তুলে ধরলাম। আর একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি বললেন, অৰ্থের সংকট নেই। অৰ্থবানদের অৰ্থ তাদের পকেটে থাকলে তো হবে না, গরীবের কাছে সেই অৰ্থ পৌঁছাতে হবে। সেই ধনীদের কোন উদ্যোগ নেই, কোন পরিকল্পনা নেই অথচ সমাজ বঞ্চনা, জুলুম, বৈষম্য ইত্যাদিতে নিমজ্জিত।
কে কার খবর রাখে। "....জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে।" বৈরাগী দাশ বাস্তু ভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে তিনটি উপযুক্ত মেয়ে নিয়ে কোপারেটিভ ব্যাংকের বারান্দায় কাটিয়ে দিলেন জীবন। মেয়েগুলোর আর কোন দিন বিয়ে হলো না। বলাই ঠাকুরের ৩২ বছর বয়সী ছেলে, গ্রামে প্রায়ই দেখা হতো। তার পরিবারে চরম অৰ্থ সংকট। যে চাকুরী করতো তা দিয়ে নিজে চলা মুসকিল ছিল। একদিন শুনলাম সে আত্মহত্যা করেছে। বিমল সহায় সম্বলহীন। কৃষিকাজ ও বাজারে পান বিক্রি করে সংসার চলতো। ছোট ছোট দু'টি শিশুও ছিল। তাকে খুন করে দিল রাত্রে। তথাকথিত পুলিশ এসেছিল। বিচার হিমাগারে। নেতারা কোথায়? যদি কিছু করতে হয় এদের কাছে যেতে হবে। পারার অপর নাম জানা। প্রকল্প নেই, উদ্যোগ নেই, সংহতি নেই, তাই সাহায্যও নেই। মানুষের অধিকারও কি আছে? ১১ই ফেব্রুয়ারী,২০১৬ তারিখে ইত্তেফাকের অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম ন্যাপের ঢাকাস্হ প্রধান কাৰ্যালয়ে সংখ্যালঘুদের উপর নিৰ্যাতন বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা, প্রতিবাদ ইত্যাদি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর এসব ঘটেই চলেছে।
পাঠক- সংহতি নেই কেন?
সম্পাদক- সমাজে দেওয়া নেওয়ার যে বিধান ছিল সেগুলো বিলুপ্তির পথে। দেওয়া- নেওয়ার মাধ্যমে প্রীতিময়তা জাগে। আর প্রীতির মাধ্যমে সংহতি গড়ে উঠে। যেগুলো ঋষিরা নিশ্চয় পালন করতেন, না হলে তাঁদের সংহিতাতে এত শক্তিশালী উপদেশ বচন লিখে গেলেন কি করে? এই দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করে নাই। সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোথাও পূৰ্ণাঙ্গ ও স্হায়ী ব্যবস্হা গড়ে উঠে নাই। যে ব্যবস্হাগুলো পশ্চিমা দেশে গড়ে উঠেছে। এরা সমাজের প্রতি দায়িত্ব ভুলে যায় নাই। এই ব্যবস্হাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে হলে জ্ঞান ও উদারতা দুটি জিনিসের প্রয়োজন। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, 'অহংকারী ধনী মলিনতার দাস।' একজন ইষ্টপ্রাণ ছেলে তার চাকুরীর প্রয়োজনে একজন গ্যারান্টার খুঁজে পায় নাই। এটাই উদারতার লক্ষণ। গায়ের জোরে সমাজপতি। কয়েকজন তরুণকে বহুবার অনুরোধ করেছি এসব সমাজপতিকে সমাজের দূরবস্হার কথা জানাতে। তরুণরা আমাকে উত্তর দিল- এরা বারশত টাকা কেজি দরে খাঁসীর মাংস এনে ঘরের দরজা বন্ধ করে খায়। সমাজের খবরকে এরা তোয়াক্কা করে না। এদের নাকি দুই দেশে দুই বাড়ি। এক বাড়ি মালায়েশিয়াতে আর এক বাড়ি স্বদেশে। বাড়ি দুইটা থাকলেও দোষের কিছু হতো না, যদি দায়িত্ব পালন করতো।
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিমাসে দুটি খাদ্যসামগ্রীর থালা(ভুজ্যি) উপহার দেয়ার বিধান দিয়েছেন। সেই খাদ্য সামগ্রী অভাবী লোকের কাছে পৌঁছানো হলে তারা অন্তত পেটের জ্বালা কিছুটা লাঘব করতে পারতো। মানুষের বুক ফাটে তবুও মুখ ফাটে না। যোগেশ চন্দ্র (ছদ্ম নাম) মনে হয় জুট মিলে চাকুরী করতেন। বয়স ৬৫'র মত হবে। ঘরে উপযুক্ত মেয়ে আছে। মিল বন্ধ, বেতন নেই। গ্রামীন বাজারে মুদির দোকানী বকেয়া টাকা পাবে। যোগেশ টাকা দিতে অপারগ। তাই দোকানীর অগোচরে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতো যোগেশ। একদিন মুদি-দোকানী তা আঁচ করতে পারল। যোগেশ যাত্রীবাহী বাসে বসল, হয়ত কোথাও যাবে। মুদি-দোকানী বাসের গোড়ায় আগেই থেকেই বসে অপেক্ষা করছিল। অনেক যাত্রীর সামনে সে বকেয়া টাকার জন্য যোগেশকে অপমান করে দিল। কিছুদিন পর শুনা গেল যোগেশ আত্মহত্যা করেছে। যদিও বেশ পূৰ্বের কথা। সময়ের ব্যবধানে ঘটনার ছবি মুছে যায় না। পুলিশ কি ঘটনার জন্য কি মামলা করে বসে, তাই মিথ্যা ছড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি দাহ করার পৰ্বও শেষ করা হয়। কিন্তু পরিবারে সত্যের দহন জ্বালা জ্বলতেই থাকে, আর প্রকৃতি তার স্বাক্ষী হয়ে থাকে। আরও অনেক ঘটনার জ্বলন্ত প্রমান রয়েছে। চরম অভাবের নিস্পেষণে থেকে এরা মুখ খুলতে পারে না। অভাবের বিভিন্ন পৰ্যায় আছে এবং বিভিন্ন ধরণও আছে। উন্নত দেশে ধরণ অনুযায়ী ব্যবস্হা রয়েছে, যেগুলো গবেষণার ফসল। বাংলাদেশ থেকে ২৫০ ডলার নিয়ে আসা ৪জনের একটি পরিবারকে আমার NJ'র বাড়িতে আট মাস আশ্রয় দিয়েছিলাম। যেখানে চারজনের জন্য প্রতিমাসে শুধুমাত্র ঘরভাড়া ও খাদ্য বাবদ ৩৫০০ ডলার প্রয়োজন। লেখাপড়া, চিকিৎসা, গাড়ি ও অন্যান্য খরচ আলাদা। New York শহরে ২ বেড রুমের ঘর ২৫০০ ডলার। উনি এমন চতুর ও জ্ঞানী (পেশায় আইনজীবি) লোক ছিলেন যার ফলে আসার সময় ১৪ kg salt সঙ্গে এনেছিলেন। কাঠের পিড়িও একটি এনেছিলেন। অতিরিক্ত ওজন বাবদ ঢাকাতেই উনি মাশুল দিলেন। অবশ্য লবনগুলো ফেলে দিলে মাশুল দিতে হতো না। সেই ভদ্রলোক এখানে এসে সন্তানের Cereal এবং দুধ যোগাড় করতে অক্ষম। বোৰ্ডওয়াকের কাজ পারছিলেন না, পরে আমি উনাকে 3 star হোটেলে চাকুরীর ব্যবস্হা করে দিই। মোটামুটি সকল ধরণের বেনিফিট ছিল। এক মাসের মাথায় তিনি চাকুরী থেকে ফায়ার হয়ে গেলেন। তারপর তিনি প্রায় ১১৫ মাইল দূরে পেনসিলভেনিয়াতে চলে গেলেন। সেখানে অবস্হা আরও করুণ। অবশেষে একটি চাৰ্চে গিয়ে দূরবস্হার কথা জানানোর পর কৰ্তৃপক্ষ তার বাসায় বিনামূল্যে হিটের জন্য Oil tank পূরণের দায়িত্ব নিল। এভাবে ৩/৪ বছর সাহায্য করেই চলেছে। এখনও হয়তো করে। Tank পূরণ করতে প্রতি শীত মৌসুমে ১২০০/ ১৪০০ ডলার প্রয়োজন হয়। চাৰ্চের ভক্তেরা আরও অনেক কিছু দিল, সন্তানদের ২টি সাইকেল দিল। ভদ্রলোককে নিয়ে কাহিনী লিখলে একটি বই হবে। মূল কথা হলো ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্রে সবে মাত্র এসেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সাহায্যের জন্য মনোনীত নাও হতে পারেন। কারণ উনিতো ভিসা প্রসেস করার সময় সেখানে Solvency দেখিয়ে এখানে এসেছেন। তাই সরকার জানে যে, উনি একজন Solvent লোক। এখন মূল ব্যাপার হলো, ভদ্রলোকের শরীরে ক্যালরী দরকার। Solvency নিয়ে ঝগড়া করলে তো সমাধান আসবে না। সমাধান দিতে এগিয়ে আসল চাৰ্চ। এরকম সাহায্যের প্রোগ্রাম নিয়ে প্রস্তুত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।
শ্রীশ্রীঠাকুরও তাঁর আচরণশীল জীবনের আলোয় আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে জেগে উঠতে আহ্বান জানিয়েছেন। অত্যন্ত আবেগের সাথে বলছেন, দুঃসময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে এবং নিঃস্ব মানুষের জন্য সাহায্যের দুয়ার খোলা রাখতে। যুগ-পুরুষোত্তমগণ যুগে যুগে আমাদের দূৰ্দশা থেকে বাঁচিয়ে তুলতে চেয়েছেন। পরমপুরুষগণ যত বেগে রক্ষা করতে চেয়েছেন, পক্ষান্তরে আমরা তার দ্বিগুণ বেগে ধ্বংস হতে চেষ্টা করেছি। যেমন উক্ত ভদ্রলোকের আশেপাশে কয়েক মাইলের মধ্যে কয়েকশত হিন্দু পরিবার থাকে এবং দু'টি সংগঠনও আছে, মেগাজিন ছাপিয়ে প্রকাশ করে, ফেইসবুকেও পেষ্ট করে। সংকটে নিপতিত এরকম দুই চারটি পরিবারকে সাময়িক সাহায্য দিতে এগিয়ে আসার উদ্যোগ, আয়োজন ক্লাব, সংগঠন বা মন্দিরগুলোর থাকা খুবই প্রয়োজন নয় কি। এই ধরণের সাহায্যের কোন প্রকল্প নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু করবে এমন লোকও কমে যাচ্ছে দিনদিন। হ্যাঁ কিছু লোক নাকি নিজেদের ফলানো শাক-সব্জি দিয়ে যেত। মানুষের জীবনে অনন্ত সমস্যা রয়েছে। -O degrees তাপমাত্রায় শাক-সব্জি দিয়েতো আর জীবন চলে না। এক সময় একজন অপরজনের পরিচয়ে আমার বাসায় কিছু তরুণ এসে থাকতো। কেউ সদ্য দেশ থেকে এসেছে বা কেউ চাকুরীর সন্ধানে অন্য সিটি থেকে এসে পড়তো। এরা অধিকাংশই অন্ধ্র প্রদেশের ছেলে, এদের মধ্যে খৃষ্টানও ছিল। প্রথম এক মাস চাকুরী নেই, তাই অনেকেই ভাড়া দিতো না। তখন আমার পরিবার ছিল না, তাই তরুণদের জায়গা দেয়াটা সহজ ছিল। একটি সংগঠন এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসলে অনেক সুবিধা হয়। এই উদাহরণগুলোর ৫/৭ বছর বয়স হয়েছে, আমি লিখতে চাইনি, তবে কিছু লোক বলেছেন, "না, আপনি লিখুন, নয়তো লোকে বলবে, আপনিই বা কার জন্য কি করেছেন? তাছাড়া অনেক সমাজপতি বা মোড়ল তারাওতো কোন মন্দির বা ক্লাব নিৰ্মানে কি করেছে সেগুলো বইতে লিখে রেখে যাচ্ছে।" নিজের প্রচারে মশগুল। সেবার মাধ্যমে প্রচার হোক সেটি চায় না।
আমার বক্তব্য সমাজের অনগ্রসরতা নিয়ে, সমাজের মানুষের দায়িত্ব পালনে প্রভূত ঘাটতির বিষয়ে। মানুষ মানুষের জন্য করলে তবেই সংহতি সংহত হবে। শুধু ফাঁকা ভালোবাসা দিয়ে কখনও প্রীতির সেতু তৈরী করা সম্ভব নয়। সরকারের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সমাজের দায়িত্ব, গণমানুষের দায়িত্ব মিশিয়ে দিতে চাই না। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু বাধ্যতামূলক দায়িত্ব ধৰ্মশাস্ত্রে নিৰ্দেশিত আছে। যেমন গীতায় বিভিন্ন যজ্ঞ পালনের বিধান রয়েছে। তন্মধ্যে অনেকগুলো হলো দান যজ্ঞ । ঋষিদের সংহিতায়ও সমাজের প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে নিৰ্দেশনা রয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য করলেই সংহতি, প্রীতি, অহিংসা এবং বন্ধুত্ব ইত্যাদি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমি সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত নই। কারণ স্কুলে সংস্কৃত ও ধৰ্ম শিক্ষক নেই। তবুও বিভিন্ন বই-পুস্তক পাঠে চোখে পড়েছে আৰ্য্য ঋষিদের সেই অমূল্য বাণীগুলো। তেমনি একটি বাণী উল্লেখ করছি-
গৃহস্হহোপি ক্রিয়াযুক্ত নঃগৃহেন গৃহাশ্রমী
ন-চৈব পুত্র-দারেণ যজ্ঞ, কৰ্ম পরিবৰ্জিত।। যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা ।
অনুবাদ- গৃহস্হ হলেই বা স্ত্রী-পুত্রাদি থাকলেই তাকে গৃহাশ্রমী বা সংসারী বলে না। তাকে সেবা ও দান-যজ্ঞাদি করতে হবে।
পাঠক- মানুষ হাত থেকে ছাড়তে চায় না কেন?
সম্পাদক- মানুষ একটি বড় আশ্চৰ্য ভাবনার মধ্যে ডুবে আছে এবং ভাবে সেই ভাবনাটি চিরস্হায়ী। সেটি বলছি শুনুন, যক্ষ ধৰ্মাত্মা যুধিষ্টিরকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল মানুষের কাছে সবচাইতে আশ্চৰ্য কি? উত্তরে যুধিষ্টির বলেছিলেন, "বহু মানুষ প্রতিদিন যমালয়ে যাচ্ছে, অন্যেরা তা দেখেও চিরজীবীত্ব ইচ্ছা করে। এটি অপেক্ষা আশ্চৰ্য কি আছে?" এই যে স্হায়ী হবার ব্যৰ্থ ইচ্ছা বা কামনা এটি মানুষের জীবনকে এক ধরনের মোহে আচ্ছন্ন করে রাখে। কামনামুখী মানুষ বিষয় বৈভব আঁকড়ে ধরে থাকতে ভালোবাসে। মৃত্যুর সময় বিষয়, বৈভব কিছু সঙ্গে যাওয়ার নিয়ম থাকলে মানুষ তাও নিয়ে যেত। মানে death body'র সাথে দিতে বলত৷
পাঠক- কি ব্যবস্হা নিলে মানুষকে সেবাযজ্ঞে নামানো যায়?
সম্পাদক- মানুষকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং শিক্ষায় সফলতা অৰ্জনকারী ব্যক্তিকে সাৰ্টিফিকেট দিতে হবে এবং সেই সাৰ্টিফিকেটের মূল্যায়ন করতে হবে। যেমন আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে পাস করার পর একটি সাৰ্টিফিকেট চান এবং পানও।
পাঠক- সঠিক শিক্ষা কি এবং কিভাবে তা দেয়া যায়?
সম্পাদক- যেমন পরমপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সত্যানুসরণে লিখেছেন-"আদৰ্শে মন সম্যক প্রকারে ন্যস্ত করার নাম - সন্ন্যাস।" এই ক্ষেত্রে আপনি গেড়ুয়া বসন পরিধান না করে সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী বা সাধু হতে পারেন। ধৰ্মাচারের মূৰ্ত্ত প্রতীক যুধিষ্টিরও প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন- "সৰ্বভূতে হিতকর ব্যক্তিই সাধু।" তাই সাধু হতে হলে পরহিতে ব্রতী হওয়া জরুরী,লম্বা চুল দাঁড়ি রেখে পোষাকী সাধু হয়ে ঘুরে ঘুরে মুক্তির পথ খুঁজতে বেরিয়ে যেতে হবে, এমন মানে নেই। জঙ্গলও আজ নিরাপদ নয়। শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে যাঁরা জঙ্গলমুখী হয়েছেন, সংসার ত্যাগের সেই প্রাচীন বিধান মেনে চলছেন, তাঁদের রীতিকে আমি আনত শিরে শ্রদ্ধা জানায়। তবে তাঁরাও সমাজ, রাষ্ট্র, দায়িত্বপালন, জ্ঞান চৰ্চা ইত্যাদি ভুলে গেলে চলবে না। যেমন আৰ্য্য ঋষীরা বনেই সাধনা করতেন এবং আশ্রমগুলো বনেই ছিল, অথচ ওজস্বী ভাষায় সংহিতাগুলো রচনা করলেন সমাজের সুষ্ঠু কল্যাণের নিৰ্দেশনা দিয়ে এবং তাঁরা শিক্ষাও দিতেন। এগুলোই হলো সঠিক শিক্ষা। এই শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে আশ্রমগুলো থেকে Spirit সৃষ্টি হবে না। Quality সম্পন্ন মানুষের আকাল হবে। এইভাবে ছেলেদের শিক্ষিত করে সাধুর সাৰ্টিফিকেট দিতে হবে এবং তাদের মাধ্যমে output আনয়ন করতে হবে। সমাজের মানুষ জানবে এরা এই কাজ করে, অতএব আমাকে এই কাজে সাহায্য করতে হবে। এর পাশাপাশি সাহায্যকারীকেও স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাঁদের উৎসাহিত করতে হবে। তাছাড়া জোর প্রচারণা চালাতে হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে সাহায্য দিতে রাজী না হলে সাহায্য দিতে বাধ্য করতে হবে।
পাঠক- সমাজে একটি দ্বিমুখী আচরণের সমস্যা আছে। মানুষ নিজের ক্ষেত্রে যদিও স্বীকৃতি সবার আগে চাই, ছবি সুন্দরভাবে ছাপা হলো কি না, নিজের নাম, পদবী পত্রিকা বা ফেইসবুকে আসলো কি না, কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি চাওয়াকে নিরুৎসাহিত করে এবং সূৰ্যের উদাহরণ দেয়। সূৰ্য নাকি কিরণ দিয়েই চলেছে, বিনিময়ে কিছু চাই না। এই স্বীকৃতির ব্যাপারে একটু বলবেন কি?
সম্পাদক- দেখুন মানুষ যদি মানুষের পথে থাকতো, তাহলে মানুষকে জাগানোর জন্য বা অসুর নিধনের জন্য যুগাবতারগণের যুগে-যুগে, বারে-বারে ধরায় আসা প্রয়োজন হতো না। আর মানুষ তো সূৰ্য নয়। তাছাড়া সূৰ্যকে আৰ্য্য ঋষিরা পূজা করতেন। সূৰ্যের অবদানের জন্য তাঁকে পূজার বিধান রয়েছে। মানুষেরা তো পূজা চাই না, স্বীকৃতি চাই, সাৰ্টিফিকেট চাই। উন্নত সমাজে সমাজ সেবা, দরিদ্র কল্যাণ, ফ্রী স্বাস্হ্য সেবা ইত্যাদির জন্য গ্রামার তৈরী হয়েছে, যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের উপযোগী। বাইরের জগতের সমালোচনা করে আর কত যুগ আত্মতৃপ্তিতে ভুগবে? নিজেদের দায়িত্বের দিকে নজর না দিলে একদিন বিপন্ন হয়ে যেতে হতে পারে।
পাঠক- সামনের দিনগুলো কেমন দেখা যাচ্ছে?
সম্পাদক- অন্ধকার। কারণ মানুষ কুম্ভকৰ্ণের মত শুধুই ঘুমাচ্ছে। উন্নতির যে আলোটুকু দেখা যাচ্ছে সেই আলো পৰ্যাপ্ত নয়। যাঁরা আলো আনতে কাজ করে চলেছেন তাঁরা অতিরিক্ত কাজের চাপে সাৰ্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছেন। আর যাঁরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন বলে ভাবছেন, তাঁরা ত্রুটিযুক্ত চলার কারণে আম ও ছালা দুটোই হারাবেন।
পাঠক- ত্রুটিগুলো কি কি?
সম্পাদক- ত্রুটিগুলো হলো রোগ। বিভিন্ন ধরণের রোগ। এগুলো ডায়াগনোসিস্ করার ব্যাপার আছে। এই বিষয়গুলো রকেট সায়েন্সের থেকে কোন অংশে কম গুরুত্বপূৰ্ণ নয়।
পাঠক-উদাহরণস্বরূপ দুই একটি রোগের কথা বললে মানুষ জানতে পারতো এবং ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে সচেষ্ট হতো৷
সম্পাদক-রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো সাধারণ মানুষের অসহযোগীতা৷ ধৰ্মীয় বিধি-বিধানে উল্লেখ রয়েছে এমন সব নিয়ম নীতিগুলোর অধিকাংশ সবাইকে পালন করতে হবে৷ এরা অন্য ধৰ্মমতের মানুষের প্রচেষ্টা ও বিশাল কৰ্মযজ্ঞ দেখেও নিজেদের নিস্তেজ করে রেখেছে৷ এরা নিজেকে প্রশ্ন করে না, আমরা কিছু করছি না কেন? এরা সিন্ধুকে ভয় পায় না, বিন্দুকে ভয় পায়৷ বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু গড়ে উঠে এই মহাসত্য ভুলে গিয়ে এরা আজ দিশেহারা৷ এরা দ্বন্ধ-সংঘাত সৃষ্টি করতে সিদ্ধহস্ত৷ আমার এক বন্ধু বললো এই বিষয়গুলো নতুন কিছু নয়৷
নিজ নিজ গুরু বা দেবতা এবং তাঁদের দৰ্শনের উপর কোন গবেষণাধৰ্মী লেখা এবং সেই দৰ্শনমোতাবেক কাৰ্যক্রম গ্রহণ এগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প পরিমানে থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেই৷ ছবি ছাপালেই হয় না, মানুষ ভালো করে জানে কত জনকে সাহায্য দেয়া হয়েছে৷ মানুষ আজকাল এগুলো বুঝে৷ উন্নত দেশ সমূহে আমরা দেখতে পাই তাদের বিভিন্ন প্রকল্পগুলো কত ব্যাপক ও গভীর৷ উপমহাদেশের বেশকিছু জ্ঞানী-গুণী লোক উন্নত দেশগুলো দেখে গিয়ে নিজ দেশের পুস্তক, পত্রিকা ও মেগাজিন ইত্যাদিতে লিখেছেন এবং নিজেদের উদ্যোগের দীনতা দেখে দুঃখ প্রকাশও করেছেন৷
পাঠক- কোথা থেকে শুরু করতে হবে এবং কিভাবে?
সম্পাদক- সব সময় শুরু করতে হবে প্রথম থেকে৷ মধ্যম ও উচ্চ স্তরে যারা ভোতা হয়ে পড়েছেন তাদের পুনরায় সক্রিয় করতে হবে৷ প্রতিটি মঠ, মন্দির ও আশ্রমে লোক-কল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিতে হবে৷ হিসাব নিকাশে প্রশ্নাতীত স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে এবং জনসমক্ষে লিখিতভাবে তুলে ধরতে হবে৷প্রকল্পে সহায়তাদানকারীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে৷আপনারা পণ্ডিতেরাই তো বলে থাকেন- "যেখানে গুণীর কদর নেই, সেখানে গুণী জন্মায় না৷" তবে কমিটির সভাপতি হয়ে সেখানে (একই জায়গায়) প্রধান অতিথি হওয়া বন্ধ করলে ভালো মানাবে আর কি৷
পাঠক- আর কি করতে হবে?
সম্পাদক- জ্ঞানকে প্রাধান্য দিতে হবে, অহঙ্কারকে নয়৷ একবার একজন পুরোহিত এক মোড়লকে বলেছিল, ওমুকের কাছে বেশ কিছু মন্দিরের ছবি আছে, সেই ছবিগুলো দেখতে পারেন৷ মোড়ল কোনদিন সেই ছবিগুলো দেখেনি৷ কারণ মোড়ল একটু ভদ্র হলেও নীচু তলার মানুষের প্রতি নাক সিটকানো স্বভাবের ছিলেন৷ তারপর যখন মানুষের দানের টাকায় নিজের বুদ্ধি মত মোটা অহঙ্কার নিয়ে মন্দির বানালো তখন সেখানে বড় বড় ত্রুটি ধরা পড়ল৷ দোতলা, তিন তলা, চার তলা থেকে নামার নেই Emergency exit, সিঁড়িতে নেই পৰ্যাপ্ত জায়গা৷তৈরী হওয়া সিঁড়ি ও ওয়াল ভেঙ্গে নতুনভাবে সিঁড়ি বাড়াতে হল৷ এরফলে দেয়ালে লাগল ধাক্কা, অপচয় হলো মানুষের দানের টাকা৷ এই ধরণের লোক ক্লাবঘর চালাতে পারবে হয়ত, তবে মন্দির বা আশ্রম নয়৷
পাঠক- Knowledge থাকা লোকদের wise বা জ্ঞানী বলে৷ আমাদের ভূ্খন্ডেতো জ্ঞানীর অভাব নেই৷ আবার অনেকে বেশী বিজ্ঞ দেখানোর জন্য নিজেকে অজ্ঞ বলেন৷বিজ্ঞতা দেখালে প্রশ্ন করে ধরাশায়ী করতে তৎপরতা দেখায়, তাঁরা আবার অনেকে বহু দেশও ভ্রমন করেন, কিন্তু নিজের দেশে ময়লা পরিস্কার করতে জানেন না ব্যাপার কি? যেমন বলা যেতে পারে মাৰ্কেটে হাজার হাজার মুরগী জবাই করে রোজ বিক্রি করে এবং মুরগীর মাথাগুলো ব্যস্ততম রাস্তার উপর অনন্তদিনের পঁচা দুৰ্গন্ধময় ময়লার উপর ফেলে রাখছে।এলাকার লোকেরা সেগুলোর উপর বসে বা দাঁড়িয়ে প্রস্রাবও করে৷ কখন Clean করবে কেউ জানে না৷রাষ্ট্রের যেন কেউ নেই৷ এসবের সমম্য় ও সমাধান করতে মহাজ্ঞান কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?
সম্পাদক- উত্তর আছে৷ উত্তর তখনই দেয়া হবে যখন জ্ঞানীরা বলবে- আমরা সারেন্ডার করলুম৷আর কোনদিন মূদ্রাদোষ দেখাবো না৷ এই যে উৎকট গন্ধের মাঝে প্র্র্রস্রাব করছে লোকেরা, অনেকে সেখানকার জীবানুগুলোর নামও উচ্চারণ করতে পারবে না৷ পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এবং Station Road রিয়াজউদ্দিন বাজারে উক্ত বৰ্ণনার ছবি জীবন্ত৷ অথচ এগুলোর উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া আসা করে জ্ঞানীরা৷ এরকম হাজার জায়গার ছবি সহ উদাহরণ দেয়া যায়৷ যুগ যুগ লাগে নাকি সমস্যার সমাধান করতে? স্বাস্হ্য-সদাচার মানতে বলা হয়েছে, এখন এসবের মধ্যে ডুবে থেকে সদাচার কিভাবে আসে? Harmful odors, mold, bacteria ইত্যাদি যে কি ক্ষতি করতে পারে তা ভুক্তভোগীরাই ভালো জানেন৷ আমেরিকাতে গ্রীস্মে প্রায় তিন মাস স্কুল বন্ধ থাকে৷ এরকম লম্বা বন্ধের পর স্কুল খুলতে গিয়ে দেখতে পেল mold এর গন্ধ বেরুচ্ছে৷ হেল্থ ডিপাৰ্টমেন্ট সাৰ্টিফাই না করা পৰ্যন্ত স্কুল চালু করা সম্ভব হয়নি, ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় লেগেছে mold এর গন্ধ তাড়াতে৷ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিষয়গুলো অনেকের কাছে পছন্দ হতে পারে৷ চারিদিকে মলমূত্র, হঠাৎ তার মাঝখানে বিলাশবহুল প্রাসাদ৷ বহু কলোনীতে গন্ধের জন্য টিকা যায় না৷এইভাবে সদাচার হয় না৷আর শুধু ময়লা সরালে রোগজীবানু যাবে না৷ এই ব্যাপারে পরমপুরুষের সাবধান করা ছড়াবাণী-
সদাচারে রত নয়/পদে পদে তার ভয়।
মানুষের আচরণ যে কত উন্নত! তা বলে শেষ করা যাবে না। অফিস আদালতে পৰ্যাপ্ত সেনিটেশন, সিঙ্ক, ওয়াটার লাইন, নিস্কাষণ ব্যবস্হা ইত্যাদি না থাকায় অফিস রুমের ভিতরেই কফ-থুথু ফেলছে। এমন দৃশ্য আছে বেশ নামী-দামী কিছু অফিসে। হায়-হায়-হায়! এরা জাগলে নাকি বিশ্ব জাগবে। এদের বেতন বাড়ানো হয়েছে আশাতীত রকমে, কিন্তু অসদাচারের কারণে এরা বেনামী রোগের উৎপত্তি ঘটাচ্ছে দেশে। এটাকে বলে ........... structure. এই Structure নিৰ্মান করতে যে টাকা প্রয়োজন সেই টাকা খরচ না করে বেতন বাবদ ঢেলে দেয়া হয়েছে কিছু টাকা।
পাঠক- উন্নত দেশে ময়লা মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা কিভাবে সম্ভব হয়েছে?
সম্পাদক- এই উত্তর লিখতে আমি খুব ক্লান্তি অনুভব করছি৷ ময়লা পরিস্কারের নিয়মও যদি শিখিয়ে দিতে হয়, তাহলে তা খুব হতাশার ব্যাপার। তবে উন্নত হওয়া বিষয়টি একটু বলি৷ উন্নত হওয়ার যোগ্যতাগুলোর মধ্যে শুধু একটি যোগ্যতা হলো- খাওয়া ও পয়নিষ্কাশন (পয়ঃ) বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেয়া৷যারা তা দিয়েছে, তারা উন্নত চলনার একটি বিশেষ গুণকে আয়ত্ত করেছে বলা যায়৷অৰ্থাৎ অন্ননালী ও পয়নালী সমানে সমান।নালার পাড়ে বিল্ডিং বানানো সহজ, কিন্তু নালা ঢাকাতো সম্ভব হলো না। শহরের মাঝখানে হোসেন ভাইয়ের পাঁচতলা বিল্ডিং। বিল্ডিংয়ে ঢুকার পথে বিশাল আবৰ্জনার স্তুপ, পাশে বাবুদেরও দুই একটি বিল্ডিং আছে। গরু মরে পঁচে গেলে যেমন গন্ধ, ঠিক তেমনি গন্ধ আবৰ্জনায়। হোসেন ভাই পঞ্চ তলা বানিয়েছে। পাঁচ তলায় ছাদের উপর শুটকি শুকাচ্ছে। শুটকি বিক্রি করতে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যায়। চার ভাই সেখানে থাকে। শুটকির গন্ধ হোসেন ভাইদের নাক নষ্ট করে দিয়েছে। আশার কথা হলো এখন নাকি মোবাইল কোৰ্ট চালু হয়েছে, হয়তো আর রক্ষে হবে না।
চলবে