আজকাল পৃথিবীর অনেক দেশ 'দেশ ' কথাটির ব্যূৎপত্তিগত অৰ্থ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
আমরা জ্ঞানীরা সবাই মিলে রাজনৈতিক বোদ্ধা দিয়ে দেশকে কতই না সুন্দর আবাস ভূমি করে গড়ে তুলেছি। যখন তখন কোপাতে থাকে। ডানে বামে জঙ্গী। বুদ্ধিজীবিদের পৰ্যন্ত কোপানোর হুমকি, হমকি কেন হবে, খুনও হয়েছেন কয়েকজন। কি শান্ত সুন্দর মানবিক উন্নতি ঘটেছে । ভোটার বিহীন নিৰ্বাচন দিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশকে এক ধৰ্মের পতাকা তলে আনতে রাতারাতি রাজনীতির গোড়াপত্তন করেছি। সম্পূৰ্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধৰ্মকে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। ধৰ্মীয় উসকানির মাধ্যমে ভোট পাওয়ার জন্য ধৰ্মের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরী করে মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। এক সময় অত্যন্ত সস্তা রাজনীতির যুগ ছিল। রাষ্ট্র চালাতে বিশেষ যোগ্যতা লাগতো না। যারা কিছুটা পরিবৰ্তন এনেছেন, তাঁরা চাইলে যে কোন ধরণের পরিবৰ্তন হবে। মানুষ এটিও জানে, প্রকৃতি বৈষম্য সহ্য করে না, সেটি মানুষের উপর নিৰ্ভর করে কম।
রাষ্ট্রধৰ্ম
ধৰ্মীয় উন্মাদনার সুরসুরি জিইয়ে রাখতে নেই। সেই সুরসুরি যদি কাজে আসত তাহলে পশ্চিম পাকিস্হানীরা নিজ ধৰ্মাবলম্বীর সঙ্গে থাকতে পারল না কেন ? এই ধৰ্মীয় প্রীতিবোধ রাজনীতিতে আপন আপন স্বাৰ্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেটি সবাই জানে। এই সুরসুরি মিশ্র সংস্কৃতির দেশের জন্য উপযোগী নয়। আর এগুলো একটি নিৰ্দিষ্ট ধাপ পৰ্যন্ত কাজ করে। যেমন মৃতপ্রায় রোগীর ডাক্তার কোন সম্প্রদায়ের তা বিবেচ্য নয়। সুযোগবাদীরা এর সুযোগ নেবে। এর ব্যবহার করে দোসর বাড়াবে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। এই পথে চলার শেষ ফলাফল খুব খারাপ। তার প্রমাণ মোল্লা ওমর। মোল্লা ওমর আফগানিস্হানকে কি এগিয়ে নিল ? সে তো ধৰ্মের জন্য দেওয়ানা দেখাতো। নিজে ধাৰ্মিক হতে হবে। রাষ্ট্রকে কি ধাৰ্মিক করব? রাষ্ট্রতো মানুষের মাধ্যমে পরিচালিত কিছু অফিস আদালত। প্রগতিশীলতার পথে চলমান মানুষগুলো এই চক্র থেকে বেরুতে না পারা যেন অজ্ঞাত আসক্তির মত। যারা ধৰ্মের নামে উগ্রমতবাদের রাজনীতি করে, ধৰ্মের ব্যবহার তাদের তুষ্টি, পুষ্টির উপাদান হয়ে তাদের শক্তিকে আরও প্রভাবিত করে। তারা ধৰ্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অপরকে নিশ্চিন্ন করতে দ্বিধা করে না। যেমন মোল্লা ওমর। অন্য ধৰ্মের সব কিছু ভেঙ্গে দিয়েছিল। প্রাচীন বৌদ্ধ মূৰ্ত্তিগুলো পাউডার করে দিয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। কিছু প্রবীন ও দক্ষ নেতা নিৰ্বাচনে মৌলবাদীদের বিজয়কে নিজেদের ধৰ্মহীনতা বলে আশংকা করে রাষ্ট্রধৰ্ম বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। এতে ধৰ্মভিত্তিক রাজনীতিকদের বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে। পরে এদেরকে তাড়াতে দেশে যুদ্ধ বাধে, দেশ তখন ছারখার হয়ে যায়। এই জন্যই বলছি চূড়ান্ত পরিণতি ভলো নয়। এই ক্ষেত্রে কথা ও আচরণে মিল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সকল সম্প্রদায়ের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তা জনসমক্ষে প্রচার করতে হবে। জনগণ এই ধারা দেখতে দেখতে একে অপরকে সন্মান করতে এবং মেনে নিতে শিখবে। কোন রাষ্ট্রীয় কাজে শুধু বিশেষ ধৰ্মের নিয়ম বা ভাষা অনুসরণ অন্য সম্প্রদায়কে হেয় করে দেয়। রাষ্ট্রের সকল কৰ্মকান্ডে সকলের অবদান রয়েছে। ধৰ্মভিত্তিক উস্কানী দাতার রাজনীতি ও ধৰ্মব্যবসাভিত্তিক রাজনীতির মধ্যে পাৰ্থক্য কি? চার মূলনীতি প্রতিষ্ঠা না করে এদের সাথে মাঝামাঝি অবস্হানে থাকলে পুরো বিপদের আশংকা রয়েছে। তাছাড়া অসাম্প্রদায়িকতার চৰ্চা ও সাম্প্রদায়িক লক্ষণ দু'টি পাশাপাশি চলতে পারে না। জনগণ নাখোশ হবে, তাই রাষ্ট্রধৰ্ম রাখতে হবে, এই যুক্তি কতটুকু সঠিক? রাষ্ট্রধৰ্মের প্রবক্তা ছিলেন হুসেইন মোঃ এরশাদ সাহেব। কই, ধৰ্মের কারণে জনগণ তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তো দ্বিধা করেনি। সুতরাং রাষ্ট্রধৰ্মের সুবাদে ক্ষমতায় থাকা যায় না। গণতন্ত্রের কাঠামোই বাংলাদেশে অনুপস্হিত। এই কাজটি এগিয়ে নেয়ার সময় নিজ দলের এবং অপরের মাধ্যমে শান্তি ও সুশাসন বিঘ্নিত হতে দেয়া যাবে না। আইন হাতে তুলে নিয়ে বদলা বিচার হতে দেয়া ঠিক হবে না। স্বচ্ছতা ও সুশাসন অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভয়াবহ অপরাধ দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
যখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা হয়েছিল, তখনও ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রধৰ্ম বাতিল করার সুযোগ ছিল। যারা সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধৰ্ম করেছিলেন, তারাও যে তখন গণভোটে ক্ষমতায় এসেছিলেন তা নয়। সুতরাং এটি পরিবৰ্তন করা ইচ্ছার ব্যাপার। যারা এই রাষ্ট্রধৰ্মের পক্ষে বলছেন, তারা ১৯৭১ এ স্বাধীনতা বিরোধী শিবিরে ছিলেন। মূল ব্যাপার হলো, এটা আমাদের কাছে মনে হয় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন। এটা বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামীল। একটি দু'টি বিষয় নয়, অনন্ত বিষয়ে বৈষম্য চলছে।
অসাম্প্রদায়িকতা উদারতাকে প্রসারিত করবে, আর সাম্প্রদায়িকতা উদারতাকে সংকুচিত করবে। যখন জনাব তোফায়েল আহম্মদ ও আমির হোসেন আমু ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলেন এবং কপালে তিলক নিলেন তখন তাঁরা হৃদয়ে উচ্চ সন্মানের স্হান পেলেন এবং আমাদেরকেও প্রেরণা যোগালেন। যোজন মাইল দূরত্ব যেন এক লহমায় ঘুচে গেল। আমরাও ইসলামী কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রেরণা পেলাম। এইভাবে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বিপরীত ধারায় আমরা সংকীৰ্ণ হতে থাকব এবং দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
চলবে