প্রথম বার আইএএসে পদোন্নতি: সর্তসাপেক্ষে প্রত্যাখান ও সরকার কর্তৃক বাতিলীকরণ
২৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসে চাকুরী করার পর ১৯৯২ সালে স্বাস্থ্য দপ্তরে কর্মরত থাকাকালীন আমার প্রথমবার আইএএসে পদোন্নতি ঘটে । আমাকে কৃষ্ণনগর সদরে নদীয়া জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক হিসাবে নিযুক্ত করা হয় । ঐ পদে যোগ দিতে হলে আমাকে কোলকাতার বাসভবন ত্যাগ করে কৃষ্ণনগরে স্থিত হতে হত । সেই সময় আমার দুটি কন্যাই স্কুলে পড়ছিল । আমার স্ত্রী কোলকাতা জীবনের সাথে পরিচিত ছিল না; এখানে উদ্ভূত দৈনন্দিন সমস্যা বা সঙ্কট মোকাবিলা করা [১] তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কোলকাতায় বা কোলকাতার কাছাকাছি আমার কোন আত্মীয়স্বজনও ছিল না যাদের উপর আমি নির্ভর করতে পারতাম । এই পরিস্থিতিতে পরিবারকে ছেড়ে কোলকাতার বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব ছিল না । তাছাড়া, আমি কোলকাতায় একটি সরকারী আবাসনে বাস করতাম, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যা আমি এক বরিষ্ঠ সহকর্মীর আনুকূল্যে সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিলাম । ঐ সময় সরকারী আবাসনের দুষ্প্রাপ্যতা হেতু একবার এই আবাসন ছেড়ে গেলে ফিরে এসে কোন সরকারী আবাস যোগাড় করা আমার সাধ্যের অতীত ছিল । আমি আমার সমস্যাগুলি জানিয়ে রাজ্য সরকারের গৃহ (কর্মী প্রশাসন) দপ্তরে আবেদন করলাম । আমি ঐ দপ্তরের সচিব মহাশয়ার (মিসেস কৃষ্ণা ঝালা) সঙ্গে দেখা করে ওঁকে অনুরোধ করলাম আমার সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ী থেকে যাতায়াত করে কাজ করা যায় কোলকাতার কাছাকাছি এমন কোন জেলায় আমাকে নিয়োগ করতে, কেননা অন্যথায় আমাকে প্রমোশন প্রত্যাখ্যান করতে হবে । আমার আবেদন গ্রাহ্য হল না । শেষ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে প্রমোশন প্রত্যাখ্যান করতে হল । সরকার সত্বর আমার প্রত্যাখ্যান-পত্র গ্রহণ করে পদোন্নতির আদেশ বাতিল করে দিলেন ।
সখেদে আমি উল্লেখ করতে চাই যে একই সিলেক্ট লিস্টভুক্ত কিছু অফিসার রাজনৈতিক সংযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের পছন্দমত নিয়োগস্থান (পোস্টিং) সংগ্রহ করেছিলেন । পরবর্তীকালে যখন ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্টের প্রথম দিকের নিযুক্ত অফিসাররা বদলী হয়ে কোলকাতায় ফিরে এলেন তখন তাদের শূন্যপদে একই সিলেক্ট লিস্ট থেকে পরের দিকের বা বাদ থাকা অফিসারদের নিয়োগের সময়ও আমার বিষয়টি বিবেচনা করা হল না, যদিও আমি সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম । আমার দাবী অগ্রাহ্য করে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস ও ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্ট (২) উভয় ক্ষেত্রেই আমার চেয়ে জুনিয়ার অফিসারদের কোলকাতার কাছাকাছি জেলায় নিয়োগ করা হয় । অবশ্য এ ব্যপারে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত তদ্বির ছাড়াও রাজনৈতিক বা ক্ষমতাশালী মহলের বাহ্যিক প্রভাব সহ অন্যান্য ফেক্টর কাজ করেছিল । এটা অবশ্যই সরাসরি বৈষম্যমূলক ও স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের (Principles of natural justice) পরিপন্থী ছিল ।
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সিভিল সার্ভিসে ২৪।২৫ বৎসর কাজ করার পর আইএএসে পদোন্নতির সুযোগ আসে যদিও আইন অনুযায়ী ৮ বছর চাকরীর পরই এই অফিসাররা পদোন্নতির যোগ্য হয়ে যান । এই অফিসাররা পদোন্নতির পালা আসতে আসতে স্কুল বা কলেজগামী সন্তান সন্ততি সহ কোলকাতায় স্থিত হয়ে যান । তাদের অধিকাংশই তখন পারিবারিক স্থিতিতে বিঘ্ন না ঘটিয়ে কোলকাতা থেকে যাতায়াত করা যায় এমন জেলায় পোস্টিং জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেন । পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই অফিসারদের নিয়োগে জেলা নির্বাচনের জন্য কোন নির্দিষ্ট নীতি না থাকায় যে যেমন পারেন বাহ্যিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের পছন্দের জেলায় পোস্টিং জোগাড় করতে সচেষ্ট হন । যাদের রাজনৈতিক বা ক্ষমতাশালী মহলে সংযোগ থাকে তারাই এই দৌড়ে জয়ী হতে পারেন ।
আমার রাজনৈতিক বা অন্য কোন কার্যকরী সংযোগ না থাকায় আমি প্রথম দুবার কোলকাতার কাছাকাছি কোন জেলায় পোস্টিং জোগাড় করতে পারি নি । আমি ন্যায়বিচারের জেহাদ জারী রেখেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যাই । আমি ক্যাটে (Central Administrative Tribunal) মামলা করি, কিন্তু আমার উকিল বিষয়টি যথাযথ উপস্থাপনায় ব্যর্থ হওয়ায় আমি হেরে যাই । যাহোক, তৃতীয় বারের প্রমোশনে, যে কোন কারণেই হোক সরকার নিজে থেকেই আমাকে কোলকাতা থেকে যাতায়াত করা যায় এমন জেলা হাওড়ায় নিয়োগ করেন । আমি আইএএসে যোগ দিই ।
পদোন্নতিজনিত নিয়োগ পুনরুজ্জীবনের অনুরোধ ও পরবর্তী ঘটনাবলী
১৯৯৩ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিয়োগ ও পোস্টিং এ আমার প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যান্য অনুরূপ কেসের ন্যায় আমার নিয়োগেরও পুনরুজ্জীবন দাবী করি । আমার সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১লা মার্চ ১৯৯৩ সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয় যে আমার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে ও সেই শর্তগুলি পূরণের অঙ্গীকার প্রদান সাপেক্ষে আমাকে ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্ট থেকেই আইএএসে নিয়োগ করা হবে । আমি অবিলম্বে অঙ্গীকারপত্র স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দি । এত দ্রুততার সঙ্গে অঙ্গীকারপত্র নেয়ার পর যখন বেশ কিছুদিন কোন অগ্রগতি দেখতে পেলাম না তখন ২৬শে এপ্রিল রাজ্যের গৃহ (কর্মী প্রশাসন) দপ্তরের সচিবের মাধ্যমে ভারত সরকারকে বিষয়টি ত্বরান্নিত করার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিলাম । এই চিঠির উত্তরে ২১শে মে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গৃহ (কর্মী প্রশাসন) দপ্তর জানালো (চিঠির প্রতিলিপি বাম দিকের প্যানেলে প্রদত্ত) যে এসসিএস-১৯৯১ (SCS-1991)সালের সিলেক্ট লিস্ট থেকে প্রমোশন দেয়ার রাজ্য সরকারের প্রস্তাব ভারত সরকার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন।
এই চিঠিতে ২নং অনুচ্ছেদ বাদে অন্যত্র সিলেক্ট লিস্টের বছর ১৯৯২ এর জায়গায় ১৯৯১ লেখা হয়েছে । যে অফিসার স্বাক্ষর করেছেন তিনিও বিষয়বস্তুতে মনোনিবেশ না করেই স্বাক্ষর করে দিয়েছেন । এ থেকেই প্রতীয়মান হয় কিরূপ উদাসীনতায় দপ্তর পরিচালিত হচ্ছিল । এই ভুলটি এতই মারাত্মক ছিল যে রাজ্যসরকারের কেন্দ্রকে পাঠানো প্রস্তাবে এই ভুল থাকলে গোড়াতেই তা প্রত্যাখ্যাত হয়ে যেত । ১৯৯১ সালের সিলেক্ট লিস্ট ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্ট তৈরীর প্রক্রিয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যায় । আমরা ছিলাম ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্টের প্রার্থী । ১৯৯১ সালের সিলেক্ট লিস্ট তখন মেয়াদ উত্তীর্ণ । আর ১৯৯১ সালের সিলেক্ট লিস্টে আমার নামই ছিল না । সুতরাং ঐ সিলেক্ট লিস্ট থেকে আমাকে নিয়োগ করার কোন প্রশ্নই ছিল না । এই মৌলিক ত্রুটির বিষয়টি আমি সবিস্তারে সংশ্লিষ্ট সচিবের নজরে এনেছিলাম । জানি না কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল কি না ।
ভারত সরকার নিয়োগ পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব নাকচ করার পরবর্তী অধ্যায়
রাজ্য সরকারের ২১শে মে তারিখের উল্লিখিত চিঠির ২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ১৯৯৩ সালের ২৯শে মার্চ থেকে পরবর্তী বৎসরের প্রার্থী নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিটির মিটিং শুরু হওয়ায় ঐ দিন থেকে ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্ট বাতিল এবং অকার্যকর হয়ে গেছে । সেই কারণে ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্ট থেকে আমার নিয়োগ পুনরুজ্জীবনের কোন সম্ভাবনা নেই ।
রাজ্য সরকারের ১লা মার্চের পত্রের নির্দেশমত আমি অঙ্গীকারপত্র ৩রা মার্চ জমা দিয়েছিলাম । এরপর ১৯৯২ সালের সিলেক্ট লিস্ট তিন সপ্তাহের অধিককাল বহাল ছিল । বর্তমান ইণ্টারনেট যুগে যে কোন প্রস্তাব মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত চলাচল করতে পারে । তবে আমার নিয়োগের প্রস্তাব তিন সপ্তাহের মধ্যে পদ্ধতিগত ভাবে পরীক্ষা করে সিলেক্ট লিস্ট অকেজো হওয়ার পূর্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল না কেন? কারা এই গাফিলতির জন্য দায়ী ? রাজ্য সরকার না কেন্দ্রীয় সরকার নাকি উভয়েই? কে এর উত্তর দেবে? যার জন্যই হোক, নিট ফল হল, শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালের বরিষ্ঠতায় (সিনিয়রিটি) আমার নিয়োগ হল না ।
পরের বার ১৯৯৩ সালে আইএসে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হওয়ার সম্মতিপত্র দেয়ার সময় পূর্বে উল্লিখিত ঘটনার আনুপূর্বিক বিবরণ দিয়ে অন্যান্য অনুরূপ কেসের সাপেক্ষে আমার প্রতি যে অন্যায় ও বৈষম্য করা হয়েছে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করেছিলাম নির্বাচিত হলে আমাকে যেন কোলকাতার সংলগ্ন কোন জেলায় নিয়োগ করা হয় । আমি আইএএসে পদোন্নতির জন্য নির্বাচিত হলাম কিন্তু আবার আমাকে দূরবর্তী জেলা বর্দ্ধমানে নিয়োগ করা হল, যেখানে কোলকাতা থেকে যাতায়াত করে কর্তব্য সম্পাদন করা সম্ভব ছিল না । আমার পূর্বের সমস্যা তখনও বিদ্যমান ছিল ও পরিবার ছেড়ে আমার পক্ষে বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না । আমার প্রতি রাজ্যসরকারের এরূপ আচরণে বিতশ্রদ্ধ হয়ে আমি পদে যোগও দিলাম না বা এই বিষয়ে কোনরূপ উচ্চবাচ্যও করলাম না । বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখলাম । আমার নিয়োগের আদেশ বেরিয়েছিল ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে । পুরো ১৯৯৪ সাল ও ১৯৯৫ সালের বেশীরভাগ অংশ আমি কাজে যোগ দিলাম না ।
ইতিমধ্যে (আমার মনে নেই ঠিক কখন) গৃহ (কর্মীবর্গ) দপ্তরের সচিব ক্ষেত্রমোহন মণ্ডল আমাকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন কেন আমি আমার প্রমোশন পোস্টে যোগ দিচ্ছি না । আমি আমার সমস্যার কথা জানালাম । উনি বল্লেন উনি আমার ব্যক্তিগত নথিপত্র দেখেছেন, আমি কাজে যোগ না দিলে আদেশ বাতিল করে দিতে পারেন । উত্তরে আমি বলেছিলাম আদেশ বাতিল করাটা তার পদলব্ধ প্রাধিকার (prerogative), কিন্তু সমস্যাগুলো আমার নিজস্ব । এরপর কি ঘটেছিল জানি না, তবে আদেশ বাতিলের কোন সরকারী নির্দেশনামা আমি পাই নি । বছর খানেক বাদে আইএএস ক্যাডারে আমাকে হাওড়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক ও অতিরিক্ত সমাহর্তা হিসাবে নিয়োগ করে ১৯৯৫ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর জারি করা একটি আদেশ পাই ।
আইএএসে যোগদান
১৯৯৫ সালের ১৬ই অক্টোবর আমি হাওড়া জেলা ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক ও জেলা সমাহর্তার মূল পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করি । এখন আমি বাসস্থান থেকে নিয়মিত যাতায়াত করে আমার কার্য সমাধা করতে পারতাম। হাওড়া-কোলকাতা যমজ শহর হওয়ায় ইহা বিশেষ ভাবে সহায়ক হয়েছিল । ১৯৯৫ সালের প্রবেশকারী হিসাবে আইএএসে আমার বরাদ্দের বৎসর (Year of allotment) নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৮৮ । ১৯৯২ সালের প্রথম পদোন্নতির আদেশ বিবেচনায় আমি আইএএসে ৪ বৎসরের বরিষ্ঠতা (seniority) হারালাম । এর ফলে ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) এবং ১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালের সিলেক্ট লিস্টে আমার অনুজ অনেক সহকর্মীর চাইতে আমি জুনিয়র হয়ে গেলাম । সরকার আমার অনতিক্রম্য সমস্যা গুলি বিবেচনা না করে যেমন ইচ্ছা তেমন বা বাইরের প্রভাবে পোস্টিং নির্ধারণের ফলে আমাকে এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হল ।
ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসারদের আইএএস প্রমোশনে জেলায় নিযুক্তির যৌক্তিকতা?
ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসাররা বাস্তব ক্ষেত্রে দু দশকের অধিককাল জেলায় কাজ করার পর আইএএসে (IAS) পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন, যদিও ৮ বছরের পরই এই পদোন্নিতর জন্য তাঁরা যোগ্যতা লাভ করেন । সুতরাং আইএএসে পদোন্নতি হওয়ার পর জেলায় অভিজ্ঞতা অর্জনের অজুহাতে এদেরকে পুনরায় জেলায় পাঠাবার নীতির কোন সারবত্তা নেই । এই অভিজ্ঞতা অর্জন তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত যারা অন্য পার্শ্বীয় সার্ভিস (lateral service) থেকে আসেন এবং যাদের জেলার সাধারণ প্রশাসন সংক্রান্ত কোন অভিজ্ঞতা থাকে না । ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসাররা পদোন্নতির পর স্বস্থানেই অথবা রাজ্য সদরের অন্য দপ্তরে উপলভ্য শূন্যপদে নিযুক্ত হতে পারেন ।
ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসারদের আইএএসে পদোন্নতির পর জেলায় পাঠাবার এই ভ্রান্ত নীতি অনেক আগেই বাতিল হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের হাতে স্বার্থান্বেষী ডব্লুবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসারদের প্রতি এই নীতি অনেকটা ক্যারট এণ্ড স্টিক পলিসির (Carrot and stick) বাহক । সার্ভিস অ্যাসোসিয়েসন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারত, কিন্তু কোন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েসন কবে মুষ্টিমেয় সদস্যের জন্য সক্রিয় হয়েছে? তাছাড়া সিভিল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েসনগুলি ত বরাবরই অর্ধসুপ্ত ।
উপসংহার
সম্ভবতঃ আইন-কানুন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমার আপোষহীন আচরণ এবং রাজনৈতিক বা ক্ষমতাকেন্দ্রিক যোগসূত্র গড়ে তোলার অনিচ্ছার জন্যই আমাকে এই মূল্য দিতে হল । বিষয়টি যে তাই তা আমার বিধান নগরে ফ্ল্যাট সংগ্রহের ইতিহাস থেকে আরো স্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হবে । দুটোর কোনটার জন্যই আমার কোন অনুশোচনা নেই । এটাই আজকের দিনের জীবনের ধর্ম, কেউ নীতি আঁকড়ে থাকতে গেলে তাকে মূল্য দিতে হবে । সবশেষে বলতে পারি অতীতে বয়সের সীমাবদ্ধতায় সরাসরি আইএএস পরীক্ষায় বসতে না পারার পরিপ্রেক্ষিতে এই কয়েক বছরের বরিষ্ঠতা হারানো আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয় । আমি নিজের সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করতে পেরেছিলাম, এতেই আমি খুশী ।
বিষয় দুটি এখানে তুলে ধরার একটিই কারণ আর তা হল সরকারে তাল মিলিয়ে না চললে সৎ অফিসারদের কি ধরণের মূল্য দিতে হয় তা সর্ব্বসমক্ষে জ্ঞাপন করা ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কোর্টে গিয়েছিলাম কিন্তু হেরে যাই । দুর্ভাগ্যবশতঃ উপযুক্ত উকিল নিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম । আমার নিজেরও গাফিলতি ছিল । উকিলবাবু আমাদের সার্ভিসের অবসারপ্রাপ্ত সদস্য হওয়ার দরুণ ওর উপর অত্যধিক নির্ভর করছিলাম । নিজে একটিও শুনানিতে উপস্থিত ছিলাম না বা অন্তর্বর্তি কালে উকিলের সাথে কেসটির অগ্রগতি বা উত্থিত প্রশ্নাবলী নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনাও করিনি । ফলে আমার বিষয়টি কতটা যথার্থ ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে তা মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি ।
উকিলবাবু কেস হেরে যাওয়ার পর অবশ্য সর্বশেষ ফিজ নিতে চাননি, আমি-ই জোর করে দিয়েছি ।
নথিপত্র
এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যে সব চিঠিপত্র আদান-প্রদান হয়েছে এবং যে সব নির্দেশনামা ও আদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জারী হয়েছে তাদের বৈদ্যুতিন অনুলিপি নীচের ফ্রেমে পাওয়া যাবে ।