আমার সক্রিয় কর্মজীবনে আমি বরাবর ছিলাম একজন সিভিল সার্ভেণ্ট, স্থান-পরিবর্তন (ট্রান্সফার) ছিল আমার চাকুরীর অঙ্গ । তাই আমার স্মৃতিকথা ছাত্রজীবন ব্যতিরেকে মূলতঃ আমার কর্মজীবন সংক্রান্ত বিষয় ও স্থান থেকে স্থানান্তরে আমার অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরী । সেখানেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ঘটনা হারিয়ে গিয়ে থাকতে পারে, কারণ আমি কখনও দৈনন্দিন ঘটনাবলীর কোন রোজনামচা রাখিনি; এই বিষয়ে আমাকে পুরোপুরি আমার স্মরণশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়েছে । আমার এই বিবরণী কথিতরূপ হওয়ায় এটি সাধারণ ভাবে আগ্রহ জাগাবার উপযোগী নাও হতে পারে এবং সময় বিশেষে একঘেঁয়ে মনে হতে পারে । এই জন্য আমি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । শালীনতার সীমা বজায় রেখে আমি আমার জীবনের ঘটনাবলী যথার্থ ভাবে এবং সততার সঙ্গে উপস্থাপিত করার চেষ্টা করেছি । আমার পারিবারিক পশ্চাৎপট, আমার প্রেম, আমার আবেগ, আমার অনুভূতি, আমার জীবন-দর্শন, আধুনিক সমাজ সম্পর্কে আমার অভিমত – এই সমস্তই এখানে যথাযথ ভাবে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করেছি । আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি, আমার ব্যর্থতা কোথাও গোপন করার চেষ্টা করিনি বা আমার সাফল্য ও গুণাবলীকে অতিরঞ্জিত করার প্রয়াস নিই নি ।
প্রারম্ভিক
সিভিল সার্ভেণ্ট হিসাবে ৩৫ বৎসরের অধিক কাল প্রধানতঃ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে কর্মরত থেকে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছি ।
মূলতঃ অধ্য়য়নশীল ও সংঘটিত; কম্প্যুটার ও ইণ্টারনেট ব্যবহারে ও অন-লাইন ক্রিয়াকলাপে দক্ষ ।
আমি অত্যন্ত অনুসন্ধিৎসু । নতুন কিছু শিখতে আমার অসীম আগ্রহ; আমার এই শেখার আকাঙ্খা আমাকে মধ্য শৈশবে ছাপাখানার কাজ ও যৌবনে গাড়ী চালনা এবং কম্প্যুটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার শিখতে প্ররোচিত করেছিল । এই সব কিছুই আমি একক প্রচেষ্টায় শিখেছিলাম । কোন ক্ষেত্রেই আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না ।
আমি সরল জীবন, উচ্চ চিন্তা এই মতবাদে বিশ্বাসী; ছাত্রজীবনে অত্যুজ্জ্বল রেকর্ডের অধিকারী ।
জন্ম
বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্গত শ্রীহট্ট মহানগরীতে ১৯৪৩ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী, বৃহস্পতিবার । সরকারী নথিতে অন্তর্ভুক্ত জন্ম তারিখ ঐ বৎসরেরই ৫ই ফেব্রুয়ারী ।
শিক্ষা
প্রাইমারী স্তরে সামান্য কিছুদিনের জন্য শিলচর ব্যতিরেকে বিদ্যালয় শিক্ষা মূলতঃ যোরহাটে । ১৯৫৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় এম. ই. পরীক্ষায় বৃত্তিলাভ আমার জীবনের প্রথম স্কলারশিপ । ১৯৬০ সালে যোরহাটের লক্ষী ইউনিয়ন হাই স্কুল থেকে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রবেশিকা (ম্যাট্রিকুলেশন) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । অনেকে বলেন আসামে মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আমি-ই প্রথম বাঙালী ছাত্র । এই বক্তব্যের সত্যাসত্য যাচাই করার চেষ্টা করিনি । ১৯৬২ সালে শিলং এর সেন্ট এন্থোনিজ কলেজ থেকে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে আই. এস্. সি. (I. Sc.) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ । ১৯৬৪ সালে একই কলেজ থেকে অঙ্কে অনার্স সহ গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এসসি. (B. Sc.) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে (ফার্স্ট ক্লাশ) উত্তীর্ণ; ঐ সালে ঐ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কেউ ফার্স্ট ক্লাশ পায় নি । ১৯৬৭ সালে কর্মরত অবস্থায় বিজ্ঞান কলেজ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত অঙ্কে এম্. এসসি (M. Sc.) । এই পরীক্ষার ফল এতাবৎকাল অর্জিত আমার মানদণ্ডের বহু যোজন দূরে রয়ে গেছে । এই ব্যত্যয়ের অনুশোচনা আমাকে আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হবে । বিস্তারিত যথাস্থানে দ্রষ্টব্য ।
ছাত্রজীবনে একাধিকবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাঠ্য বিষয় পরিবর্তন করেছি । মেট্রিক পরীক্ষার পর কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আসামের করিমগঞ্জ কলেজ হয়ে শেষ পর্যন্ত শিলং এর সেন্ট এন্থোনিজ কলেজে স্থিতি; আই. এসসি.র (I. Sc.) পর আই. আই. টি. (Indian Institute of Technology) খড়্গপুরের ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হয়ে শেষ পর্যন্ত শিলং এর সেন্ট এন্থোনিজ কলেজে স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগে প্রবেশ ও স্থিতি । স্নাতকোত্তর পর্যায়েও প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ অঙ্ক থেকে পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত অঙ্কে পরিবর্তন । প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবর্তন হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করার পর । কোথাও কোথাও কিছুদিন ক্লাশ করার পর । মেট্রিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত আমি বরাবর জাতীয় মেধা বৃত্তি (National Merit Scholarship) পেয়ে এসেছি।
প্রাথমিক নিবাস
আগেই বলেছি আমাদের আদি বাসস্থান শ্রীহট্ট বা সিলেট মহানগরী । ভারত-বিভাজনের পূর্ববর্তী পর্যায়ে সিলেট রেফারেণ্ডামের ফলশ্রুতি হিসাবে আমাদের জন্মভূমি পূর্ববাংলায় তথা পূর্বপাকিস্থানে অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত হয় । আমরা বাস্তুচ্যুত হই । পরবর্তী পর্যায়ে প্রথমে আসামের শিলচর ও পরে যোরহাট শহরে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে অভাব-অনটনের মধ্যে প্রতিপালিত হই ।
চাকুরি ও বসতি
পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৬৭ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর উক্ত সিভিল সার্ভিসে যোগদান । অবেক্ষাধীন উপশাসক ও উপসমাহর্তা (Deputy Magistrate & Deputy Collector) হিসাবে ঐ তারিখে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর সদরে কার্যভার গ্রহণ । সক্রিয় কার্যকালে সরকারের নিয়ন্ত্রক, রাজস্ব, ও উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন বিভাগে রাজভবন ও রাইটার্স বিল্ডিং সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক পদে নিযুক্ত ছিলাম ।
১৯৯৫ সালে পদোন্নতি বলে ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবায় (Indian Administrative Service তথা IAS) যোগদান করি । এর পূর্বে ১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে দুবার বাধ্যকারী ব্যক্তিগত কারণে পদোন্নতির সরকারী নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হই । ১৯৯৫ সালে এই পরিষেবায় যোগদানের ঘটনার বিবরণ ও তথ্য এই ওয়েবসাইটের "আমার ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবায় যোগদানের ইতিহাস" নামক পৃষ্ঠায় পাওয়া যাবে । সর্ব্বোচ্চ বয়স সীমা (২৪ বৎসর) পেরিয়ে যাওয়ায় আমি আই. এ. এস্. সহ বিভিন্ন সর্ব্বভারতীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারী চাকুরীতে সরাসরি নিযুক্তির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় (Civil Services Examination conducted by Union Public Service Commission) বসার সুযোগ পাইনি । ২০০৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করি ।
চাকুরী ও নিবাস পশ্চিমবঙ্গে ।
ব্যক্তিত্ব নির্ধারক ও চরিত্রগত বৈশিষ্ঠ্যসমূহ
প্রকৃতি: পরিবারের পরিধির বাইরে আমি নম্র-স্বভাব ও স্বল্পবাক । আবাল্য আমি সর্বত্রই নম্র-স্বভাব ছিলাম, বিবাহোত্তর জীবনের কোন এক সময় থেকে ধীরে ধীরে পরিবারের পরিধিতে এর পরিবর্তন ঘটতে থাকে ।
প্রকৃতিগত ভাবে আমি অত্যন্ত রোমান্টিক ও আবেগপ্রবণ কিন্তু লাজুক । বয়ঃসন্ধিকালে কোনো একজনের জন্য গভীর ভালবাসা জন্মেছিল, কিন্তু আমি তাকে তা জানাতে পারিনি । কৈশোরের প্রারম্ভ থেকে ভালবাসার স্বপ্ন দেখেছি, যে স্বপ্ন পরিস্থিতিগত কারণে অধরা রয়ে গেছে ।
অতীতকে আমি ভালবাসি, হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আমার কল্পনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে । সেই দিনগুলোর সাথে আমার এই একাত্মতাই আমাকে আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ও জীবন-আলেখ্য তৈরীতে অনুপ্রাণিত করেছে । আমার কাছে দারিদ্র্য সত্বেও অতীত নম্র, মনোহর ও আনন্দদায়ক; স্বচ্ছলতার মধ্যেও বর্তমান কঠোর, শুষ্ক ও পীড়াদায়ক । এর অর্থ এই নয় যে আমি অতীতে বাস করি । আমি অবশ্যই বর্তমানে রয়েছি । আর তাই বর্তমানের জীবনকে উদ্দেশ্যমূলক করে তুলতে আমি ঘন ঘন স্থান থেকে স্থানান্তরে ভ্রমণে বেরোই ও সৃজনশীল কর্মে নিজেকে ব্যপৃত রাখি ।
শখ ও সংশ্লিষ্ট বিষয় (Hobby & Associated matters): পঠন-পাঠন, নতুন বিষয়ে জ্ঞানার্জন, ড্রাইভিং, কম্পিউটার চালনা ও এই নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা এবং ছবি তোলা ।
কম্প্যুটার ও ইণ্টারনেট ব্যবহারে দক্ষতা লাভের পর আমার পঠন-পাঠন মূলতঃ বৈদ্যুতিন পাঠ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে, তবে সময় ও বিষয়বস্তু নিরিখে কখনো কখনো মুদ্রিত পুস্তকও পড়ি । আমার কম্প্যুটারের বৈদ্যুতিন লাইব্রেরীতে কমপক্ষে ৫০০ বৈদ্যুতিন পুস্তক সংরক্ষিত আছে যার অধিকাংশই ইতিমধ্যে পড়া হয়ে গেছে । ২০১৬ সালে আমি কিণ্ডল পেপার হোয়াইট (Kindle Paperwhite) নামক একটি ই-বুক রীডার কিনেছি যার সাহয্যে মাসিক সামান্য অর্থের বিনিময়ে কিণ্ডেলের ইণ্টারনেট স্টোর থেকে বিভিন্ন বিষয়ের অসংখ্য বৈদ্যুতিন পুস্তক বা ই-বুক নামিয়ে পড়া যায় । এই যন্ত্রটি ওয়াই-ফাইর (Wi-Fi) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় । কম্প্যুটার বা অন্য কোন বৈদ্যুতিন প্ল্যাটফরমের প্রয়োজন হয় না । বই নামিয়ে নেওয়ার পর ওয়াই-ফাইয়ের ও প্রয়োজন হয় না । আকারে ছোট হওয়ায় (৪½"x ৬½"x০.৩৫") সহজেই স্থানান্তরে নিয়ে যাওয়া যায় । ভ্রমণকালে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার দরুণ ভ্রমণে অবসর বিনোদনের এটি একটি প্রকৃষ্ট উপায় । মে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই মাধ্যমে আমি ৩৭৫টি ই-বই পড়েছি ।
ফটোগ্রাফি আরেকটি হবি যাতে আমার গভীর আসক্তি রয়েছে । ১৯৮০ সাল থেকে আমি এর সঙ্গে যুক্ত । শুরু করেছিলাম চিরাচরিত ফিল্ম ক্যামেরা নিয়ে, পরে ডিজিটাল পয়েণ্ট এণ্ড শ্যুট ক্যামেরা ও পরিশেষে ডি. এস. এল. আর (DSLR) ক্যামেরায় উত্তরণ। বর্তমানে আমি Nikon DSLR ক্যামেরা ব্যবহার করছি । আমার অনুশীলনে তোলা কিছু উৎকৃষ্ট ছবির ফটোশো "ভিডিও" নামক পাতায় দেখা যাবে । এই ছবিগুলো ফটোগ্রাফিতে আমি কতটা এগোতে পেরেছি তার ঈঙ্গিত দেবে । নিকনের NIKON IMAGE SPACE এই ঠিকানায় নক করে আমার ৬ হাজারের বেশী আলোকচিত্রের এ্যালবামে প্রবেশ করা যেতে পারে ।
পছন্দ: পাহাড়-পর্বত, অরণ্য, ঐতিহাসিক স্থান ও সমুদ্র-সৈকতে ভ্রমণ ।
অপছন্দ: ভণ্ডামি, অসংবেদনশীলতা, চাটুকারিতা ও মিথ্যাচার ।
জীবনের মূলমন্ত্রসমূহ: ন্যায়পরায়ণতা, "সহজ-সরল জীবন, উঁচ্চমার্গীয় চিন্তাধারা", সততাই শ্রেষ্ঠ নীতি এবং যেখানে অপরিহার্য কেবল সেখানে ব্য়য় ।
শক্তি: দূরদর্শিতা, সততা ও পক্ষপাতহীনতা, এবং লক্ষ্য অর্জনে আন্তরিকতা ।
দূর্বলতা: ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে পছন্দ অপছন্দের প্রাবল্য, অনমনীয়তা, আবেগবিহ্বলতা, অস্মিতা ও সৌন্দর্যের প্রতি উন্মাদনা ।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী: শব্দটির যথার্থ অর্থে নাস্তিক নই, তবে আনুষ্ঠানিক আচার-অনুষ্ঠানেও বিশ্বাসী নই । কুসংস্কারকে ঘৃণা করি ।
আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না । পক্ষান্তরে আমি "उद्योगिणाम पुरुषसिंहम् उपैति लक्ष्मी:" এই প্রবচনে বিশ্বাসী এবং একেই আমার জীবনে গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি । আমি যেটুকু সাফাল্য অর্জন করতে পেরেছি তা আমার শ্রম ও উদ্যমের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে, যদিও ক্ষেত্র বিশেষে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে । কিন্তু আমার জীবনের কিছু ধারাবাহিক ঘটনা যথা ছাত্রজীবনে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাঠ্য বিষয় পরিবর্তন, কর্মজীবনে প্রবেশ নির্ধারক বিশেষ পরিস্থিতি যা পরবর্তী কালে বিয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছিল ইত্যাদি এমন কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিত দেয় যা আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল বলে মনে হয় । এমন কি সল্টলেকে বাসস্থানের আশা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বাসগৃহ নির্মাণে উদ্যত হওয়ার পর হঠাৎ সল্টলেকে ফ্ল্যাট লাভের অনুকূল পরিবেশ তৈরী হওয়ার পশ্চাতেও হয়ত বা এমন কোন শক্তিরই প্রভাব ছিল । ঘটনা সমূহ আমার এই জীবন কাহিনীর মধ্য দিয়ে উদ্ঘাটিত হবে ।
এরূপ এক অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি এখনও আমি আমার দৈনন্দিন জীবনে প্রায়শঃ অনুভব করি, যা আমাকে আসন্ন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকবার এরকম ঘটেছে ।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী: উদার মনোভাবাপন্ন, কোন সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা বৈরী ভাব নেই । জাতিভেদে বিশ্বাসী নই।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী: নিরপেক্ষ ।
মোহ: সঙ্গীত । আমি নিজে গাইতে পারি না, কিন্তু অবসর সময়ে ও রোমাণ্টিক, চিন্তামগ্ন বা বিষণ্ণ অবস্থায় সঙ্গীতে ডুবে থাকতে ভালবাসি । আমার বৈদ্যুতিন সঙ্গীত লাইব্রেরীতে বাংলা, ইংরাজী ও হিন্দি মিলিয়ে ৪৯৩৩টি গানের সংগ্রহ রয়েছে । এর মধ্যে ১৯৯৭টি বাংলা গান যার ৮৩৫ টি রবীন্দ্রসঙ্গীত (নৃত্যনাট্য সহ) । ২৬১৪ টি হিন্দী গানের সংগ্রহে আছে বলিউড ক্লাসিকস্, গজল ও ১৯৬০ সালের আগে থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত অবিস্মরণীয় গানগুলি । বাকীগুলো বিভিন্ন ধারার (Genre) ইংরেজী সঙ্গীত । গানের মধ্যে রবীন্দ্র সঙ্গীতই আমার সবচেয়ে প্রিয় । পরের পছন্দের গজল এবং ক্ল্যাসিকেল ভিত্তিক ও রাগপ্রধান বাংলা ও হিন্দী গান । আমি যখন বিষণ্ণ বোধ করি তখন আমার প্রিয় গানগুলো শুনি, সঙ্গীতের আবেশে আমার মনের বিষণ্ণতা কেটে যায় । গান চালিয়ে দিয়ে কম্প্যুটারে কাজ করতে আমি ভালবাসি ।
দৈনিক রুটিন: সারা বাড়ী যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আমি শয্যা ত্যাগ করি । নিজের হাতে এক কাপ চা তৈরী করে পান করি । তারপর প্রাতঃকৃত্যাদি, প্রাণায়াম, ব্যায়াম ইত্যাদি সেরে আমার সবচেয়ে পছন্দের বিকর্ম (Avocation) কম্প্যুটারের কাজ নিয়ে বসি । তখন আমি কম্প্যুটার ও ইণ্টারনেট ব্যবহার করে নানা ধরণের সৃষ্টিশীল কাজ, তথ্য সন্ধান ও অনলাইন ক্রিয়াকলাপ যথা টাকা পয়সার ডিজিটাল ট্র্যান্সফার, প্রদেয় বিল মেটানো ইত্যাদি করে থাকি । সকালের ব্রেকফাস্ট ও দুপুরের খাওয়ার সময়টুকু বাদ দিয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই কাজ চলে । দুপুরের খাওয়ার পর ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে আবার সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত কম্প্যুটারেই বিভিন্ন কাজ করি । এরপর সান্ধ্য ভ্রমণ । রাত ৮ টা ৩০ মিঃ থেকে ১১:৩০ মিঃ পর্যন্ত পড়াশুনা করি । কখনো কখনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ফোনে গল্প করি । সপ্তাহে ২-৩ বার সকালে বাজার-হাট করি ।
অতিমারি কালে ২০২০ সালের নবেম্বর মাস থেকে এই দৈনন্দিন কার্যকলাপে কিছু পরিবর্তন করেছিলাম । চা-পান ও প্রাতঃকৃত্য সম্পাদনের পর সকাল সাতটা নাগাদ গাড়ী নিয়ে বাড়ী থেকে ৩-৪ কি. মি. দূরে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনবিতান পার্কে ভ্রমণে যেতাম । সেখানে প্রাতর্ভ্রমণের সাথে সাথে ছবিতোলার অনুশীলন করতাম । ঐ পার্কে স্থানীয় ও পরিযায়ী রকমারী পাখি, প্রজাপতি ও ছোট ছোট জীবজন্তুর এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের অনেক ছবি তুলেছি । পার্কে আমি এক থেকে দেড় ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করতাম । বাড়ী ফিরে পূর্বের অনুচ্ছেদে উল্লিখিত অন্যান্য কর্মসূচী অনুসরণ করতাম । ২০২১ সালের অতিমারি প্রকট হওয়ার পর পূর্ব-অনুচ্ছেদের কর্মসূচীতে ফিরে গেছি ।
২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে আবার অব্যবহিত পূর্বের অনুচ্ছেদ অনুসারী প্রাতর্ভ্রমণ কর্ম্মসূচীর পরিবর্তন করেছি । তবে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পার্কে ক্যামেরা ব্যবহার মূল্যযুক্ত করায় এবং ক্যামেরা পিছু তিনশত টাকা প্রবেশমূল্য ধার্য করায় এক্ষণে আর পার্কে ছবি তোলার অনুশীলন করা সম্ভব হয় না । এমনিতে প্রাতর্ভ্রমণের জন্য পার্কে প্রবেশমূল্য হিসাবে প্রতিদিন ১০ টাকা গুণাগার দিতে হয় ।
আমি কাদের কাছে ঋণী? স্পষ্টতঃই আমি আমার পিতা-মাতার কাছে সবচেয়ে বেশী ঋণী। ওঁরা আমাকে এই পৃথিবীতে এনেছেন এবং আমি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার আগে পর্যন্ত সর্ব অবস্থায় আমার পাশে থেকেছেন । আমার স্কুল-কলেজের সমস্ত শিক্ষক যাঁরা কথায় বার্তায়, আচার আচরণে এবং শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে আমার মধ্যের শ্রেষ্ঠত্বকে বার করে আনতে সাহায্য করেছেন তাঁদের কাছেও আমি বিশেষ ভাবে ঋণী ।
শিলং এর সেণ্ট এন্থোনিজ কলেজ কর্তৃপক্ষ, যারা আমাকে ইণ্টারমিডিয়েট ও স্নতক স্তরে ৪ বৎসর ঐ কলেজে অধ্য়য়নকালে সম্পূর্ণ বিনা ব্যয়ে আমার আহার, বাস ও শিক্ষালাভের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তাদের কাছেও আমি অপরিসীম ঋণী । এই সুযোগ না পেলে আমার শিক্ষা হয়ত সম্পূর্ণ করা সম্ভব হত না; অন্ততঃ আমি কোনভাবেই বর্তমান অবস্থায় পৌঁছুতে সক্ষম হতাম না ।
___________________________________________________________________________________________________________________________
আমার সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে । কিন্তু আমার ব্যর্থতা বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী কেবল আমার নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ।
বয়ঃবৃদ্ধি পর্যায়ে আমার দৌহিত্রের কয়েকটি আলোকচিত্র
তৃতীয় জন্মবার্ষিকীতে শ্লোক । উপহার হিসাবে প্রাপ্ত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের প্রচেষ্টা ।
মাতামহ-মাতামহীর সাথে শ্লোক ।
সপ্তম জন্মবার্ষিকীতে শ্লোক ।
চতুর্থ জন্মবার্ষিকীতে শ্লোক ।
বেলুন নিয়ে খেলা ।
আমার বাল্যবন্ধু আশুতোষ পালের স্ত্রী মেরীর সাথে শ্লোক
ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার পথে আমার বিভিন্ন বয়সের ছবি (যতটা পাওয়া গেছে) নিয়ে আমার এই ছবিতে জীবনী ভিডিওটি তৈরী । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসা বিশেষ মুহূর্তগুলো এবং আমার জীবনের বিশেষ ঘটনা সমূহের কিছু কিছু অংশও এতে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে ।