সূচীপত্রের যে কোন বিষয়ের উপর ক্লিক করে সেই বিষয় সংক্রান্ত অংশে যাওয়া যাবে ।
সূচীপত্র
আমার মাতৃকুল
আগেই বলেছি আমরা পিতৃকুলের চেয়ে মাতৃকুলের প্রতি বেশী অনুুরক্ত ছিলাম, বিশেষতঃ যেহেতু পিতৃকুলে আকর্ষণ করার মত তেমন কেউ ছিল না । আমাদের মাতুলালয় ছিল শ্রীহট্ট শহরের (এক্ষণে মহানগরী) দাড়িয়াপাড়া নামক মহল্লায় । আমাদের দাদামশায় (মায়ের বাবা) রমেশ চন্দ্র দাসের দুই বিয়ে । তাঁর প্রথম পক্ষের এক মেয়ে সরোজনলিনী (আমার মা) ও দুই ছেলে রমা ও রাধিকা, দ্বিতীয় পক্ষের তিন ছেলে ঋষি, সুনীল. রণুও এক মেয়ে গঙ্গা । আমার মা ছিলেন সর্বজ্যেষ্ঠ ।
আমার দাদামশায়ের অনেকগুলো গরু ছিল; নিজে সেগুলোর দেখাশোনা করতেন; সম্ভবতঃ তিনি দুধ বিক্রী করতেন । গরুকে না খাইয়ে নিজে অন্নগ্রহণ করতেন না । গরুর খাবার আসতে দেরী হলে ভীষণ রেগে যেতেন ।
আমার নিজের দিদিমাকে দেখার সৌভাগ্য হয় নি । মায়ের কাছে শুনেছি মায়ের বয়স যখন খুব অল্প সেই সময় মায়ের নিজের মা মারা যান । মায়ের দুই আপন ভাই তখন নেহাৎই শিশু । আমার মা-ই ভাইদের মায়ের স্নেহ মমতা দিয়ে মানুষ করেছিলেন । আমার এই দুই মামাও মাকে খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করতেন ও ভালবাসতেন । বাল্যবয়সে মাতৃবিয়োগের পরবর্তী কালে নিজের সংসারে এসেও মা প্রথম জীবনে চার-চারটি সন্তান হারান । উদ্বাস্তু হয়ে স্বাধীন ভারতে আসার পর দারিদ্র্যজনিত অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছেন । কিন্তু কখনও তাঁকে কোন অনুযোগ করতে শুনি নি । মা ছিলেন অনেকটা সহনশীলতার প্রতিভূ ।
আমার অনেক মামা ছিলেন । তাঁদের মধ্যে বড়মামা রমাকান্ত দাস ছিলেন সর্বজ্যেষ্ঠ । এরপর ছিলেন রাধিকাকান্ত দাস যাঁকে আমরা কুটুমামা বলে ডাকতাম, ঋষিকেশ দাস বা ঋষি মামা, সুনীল দাস বা সুনীল মামা ও রণু মামা । বড়মামা ও কুটুমামা ছিলেন মায়ের সহোদর ভাই আর বাকীরা মায়ের বৈমাত্রেয় ভাই । মাসী গঙ্গাও ছিলেন মায়ের বৈমাত্রেয় বোন । গঙ্গামাসীর পতির নাম ছিল ভূপেন্দ্র নাথ রায় । দেশভাগের পর ওঁরা করিমগঞ্জে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন । আসামের ভাষাদাঙ্গার সময় যোরহাট ছেড়ে এসে বাবা শিলচরে প্রেসে চাকুরী করা কালীন শিলচর শহরের টিকরবস্তি নামক স্থানে বাড়ী ভাড়া নিয়েছিলেন । ঐ বাড়ীতে গঙ্গামাসীকে আমি একবার দেখেছিলাম । আর দাদার প্রথম বিয়ের সময় ভূপেন মেসোকে দেখেছিলাম । এ ছাড়া মাসীর পরিবার সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই । তবে এটা দেখেছি মায়ের সব ভাই বোনেরাই নিজেদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন ও পরষ্পরকে ভালবাসতেন । গঙ্গামাসী ছাড়া সকলেই ছিলেন শান্ত নম্র স্বভাবের ।
আমার দাদামশায়ের ছোট তিন ভাই ছিলেন কিরণ, ক্ষিতিশ ও কৈলাশ । কিরণেরও দুই বিয়ে । প্রথম পক্ষের একমাত্র সন্তান কুমুদ ডাকনাম ভুতু যাকে আমরা ভুতুমামা বলে ডাকতাম । দ্বিতীয় পক্ষের তিন পুত্র কান্তিভূষণ বা পুকন এবং মাখন ও শৈলেন এবং তিন বা চার কন্যা যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়জনের নাম ছিল প্রভা । এদের মধ্যে ভুতুমামার সঙ্গেই আমি ঘনিষ্ঠ ছিলাম । ছোটবেলা পুকন মামাকেও শ্রীহট্টে দু একবার দেখেছি বলে মনে করতে পারি । হয়ত শৈলেন মামা ও মাখন মামাকেও দেখে থাকব, তবে ওদের সম্পর্কে আমার স্মৃতি ধোঁয়াসাময় । কিন্তু আমি নিশ্চিত প্রভা মাসী বা ওঁর কোন সহোদরাকে আমি কখনও দেখিনি । আমার মায়ের আরেক খুড়তুতো ভাই ছিল বাদল (কৈলাসের পুত্র) যাকে আমরা বাদলমামা বলে ডাকতাম । দেশভাগ-পূর্ববর্তী কালে ওঁর নাম শুনেছি হয়ত দেখেওছি । কিন্তু ওঁর সম্পর্কেও আমার স্মৃতি সম্পূর্ণ ঝাপসা । আমার এই মামাদের মধ্যে কেউ আর আজ বেঁচে নেই । মামীমাদের মধ্যে আমার জ্ঞানমত কেবল পুকন মামীমা (সত্যভামা দাস) এখন জীবিত (জুন ২০২২) । মল্লিকা মামীমা (সুনীল মামার বিধবা স্ত্রী) অতি সম্প্রতি (ফেব্রুয়ারী ২০২২) এক বিবাহিত পুত্র ও দুই বিবাহিতা কন্যাকে রেখে পরলোক গমন করেছেন । আমি যতদূর মনে করতে পারি আমার ২০১৪ সালের আসাম ভ্রমণের সময়ই দীপুর (পুকন মামার জ্যেষ্ঠ পুত্র) গুয়াহাটির বাড়ীতে পুকন মামীমাকে (তখন বিধবা) প্রথম দেখি । মামাদের মধ্যে কুটুমামা ও ভুতুমামার সঙ্গেই আমি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলাম ।
আমার মায়ের মামাদের দিক থেকে আমাদের আরো দুজন মামা ছিলেন । তারা হলেন মায়ের বড়মামা মনীন্দ্র চন্দ্র দাসের দুই পুত্র রুণু ও ঝুনু । পার্টিশনের পর রুনু মামা ও ঝুনু মামা দুজনেই শ্রীহট্টে থেকে গিয়েছিলেন । ওঁদের সম্পর্কেও আমার স্মৃতি অস্পষ্ট । ওঁরা দুজনেই এক্ষণে মৃত । মনীন্দ্র চন্দ্র দাস যাকে আমরা বড়দাদা বলে ডাকতাম তিনি ভারত ভাগের পর পরিবারকে ফেলে রেখে এ দেশে চলে এসেছিলেন । তাকে আমি কয়েকবার কুটুমামার শিলচরের বাড়ীতে দেখেছি । শ্মশ্রু-গুম্ফ-মণ্ডিত মুখমণ্ডল, হাতে তামাকুর হুক্কা, তাঁর এই চেহারা আমার এখনও মনে পড়ে । তবে তিনি মিশুকে ছিলেন না, আমরা ওকে মোটেই পছন্দ করতাম না । মনীন্দ্র চন্দ্র দাসের একজন ছোট ভাই ছিলেন - মায়ের ছোটমামা - নাম নৃপেন্দ্র নাথ দাস । আমরা ওঁকে সাধুদাদা বলে ডাকতাম, যদিও তিনি সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী ছিলেন না । ভারত ভাগের পর উনি এদেশে চলে এসেছিলেন । প্রথম কিছুদিন শিলচরে কুটুমামার কারখানায় কাজ করেছেন । পরে আমাদের নিবাসস্থল যোরহাটে চলে আসেন । সাধুদাদা ছিলেন অকৃতদার । যোরহাটে আলাদা বাড়ী ভাড়া নিয়ে থাকতেন, মাঝে মাঝে আমাদের সাথে দেখা করতে আসতেন । তিনি তার দাদার সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র ছিলেন । তিনি ছিলেন হাসিখুশী ও মিশুকে । আমরা ওঁকে খুব পছন্দ করতাম । যোরহাটে সাধুদাদা আসবাব পত্রের দোকানে বার্ণিসের কাজ করতেন । শেষ জীবনে ওঁর হাতের আঙুলে এক কঠিন ধরণের এক্জিমা হয়েছিল, হয়ত দীর্ঘদিন বার্ণিসের কাজ করার ফলশ্রুতি । আমরা যোরহাট ছেড়ে আসার পর যোরহাটেই তিনি দেহত্যাগ করেন । জীবনের অনেক পথ পেরিয়ে এসে তিনি বিয়ে করেছিলেন এক বিধবা মহিলাকে, যিনি সাধুদাদার যোরহাট বাসের সময় ওঁর দেখাশোনা করতেন । সেই মহিলার গর্ভে তাঁর একটি পুত্র সন্তান জন্মেছিল বলে শুনেছি ।
জ্যেষ্ঠতম মামা: বড়মামা, মায়ের অনুজ সহোদর
আমাদের জ্যেষ্ঠতম মামা, যাকে আমরা বড়মামা বলে ডাকতাম, দশ সন্তানবিশিষ্ট এক বৃহৎ পরিবারের অভিভাবক ছিলেন । দেশত্যাগের পূর্বে মামাতো ভাইদের (বড়মামার পুত্র) প্রথম দু-তিন জনের সঙ্গে আমি আমার অতি শৈশবের কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম বলে মনে পড়ে । এরা ছিল রজত ডাকনাম মানিক, চন্দন ও প্রদীপ বা পদ । অন্যরা যথা ছন্দা ওরফে রেবা, শঙ্কর, রঞ্জন ওরফে শেখর, দীপক ওরফে দীপু, পঙ্কজ ওরফে বাচ্চু, নন্দন, গায়েত্রী ওরফে সীমু তখনও জন্মায় নি । পরবর্তী কালে আমি যখন কোলকাতায় কর্মরত ছিলাম সেই সময় দুই মামাতো বোন রেবা ও সীমু কোলকাতা এলে ওদের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় । শ্রীহট্টে বড়মামা ও ওর ছোটভাই রাধিকাকান্ত দাস(আমাদের কুটুমামা) একত্রে বাস করতেন । ওরা যথেষ্ট সম্বৃদ্ধশালী ছিলেন । আরামপ্রদ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাযুক্ত ওদের একটি সুন্দর বাসভবন ছিল । এখানেই আমি জীবনে প্রথম রেডিও দেখেছিলাম । পার্টিশন-পূর্ববর্তী সময়ে এবং পরবর্তী কিছুকালও শ্রীহট্টের জিন্দাবাজার নামক এলাকায় ওদের দুজনের একটি কাঠের আসবাবপত্রের দোকান ছিল । তবে বরাবর ওদের অবস্থা এক রকম ছিল না । ভারত ভাগের কিছুকাল পর বড়মামা দোকানটি বন্ধ করে শ্রীহট্টের শহরতলী এলাকায় মালিনীছড়া নামক একটি চা বাগানে পরামর্শদাতা হিসাবে যোগ দেন । বড়মামা আদতে একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন । অনেকবার জেল খেটেছেন । বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়েও গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দী ছিলেন । পূর্ববর্তী অধ্যায়ে একাধিকবার পাকিস্তান সরকারের কোপে ও মুসলমান দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়েছেন । একবার তার পরিবার ধর্মোন্মত্ত মুসলমান দাঙ্গাবাজদের কবলে পড়েছিল । তারা অতিকষ্টে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছিল । ধরা পড়লে নিশ্চিন্ন হয়ে যেত । বড়মামার সন্তান সন্ততিরা সেদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে বসবাস করেছে । সম্প্রতি (২০১৭ সাল) তারা পর্যায়ক্রমে দেশ ত্যাগ করে আমেরিকাভিমুখী হতে শুরু করেছে ।
বড়মামার জীবনের একটি স্ন্যাপশট নিম্নে সংযোজন করলাম ।
বড়মামার জীবনও নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে । ছোটবেলা থেকেই উনি ছিলেন দেশপ্রেমী । ১৩১৯ বাংলার ২৫শে অগ্রহায়ণ (ইং ১০ই ডিসেম্বর, ১৯১২, মঙ্গলবার) তিনি সিলেট শহরের বারুইপাড়াস্থ মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন । পাঁচ বৎসর বয়সে তাঁর হাতেখড়ি হয় ও সাত বছর বয়সে তিনি শ্রীহট্টের দুর্গাকুমার পাঠশালায় ভর্তি হন । দশ বছর বয়সে দুর্গাকুমার পাঠশালার শিক্ষাক্রম শেষ করে রাজা গিরীশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন । এই সময় রাজা জি সি স্কুল পুড়ে গেলে প্রেমসিন্ধু দাস, হিমাংশু ভট্টাচার্য, জলেশ্বর দাস, রমাকান্ত দাস এঁরা কয়েকজন মিলে পাবলিক একাডেমি চালু করেন । পরবর্তিতে দাড়িয়াপাড়া নিবাসী পিয়ারী মোহন চৌধুরী তার বসতবাটি একাডেমিকে দান করলে এর নাম হল পিয়ারী মোহন পাব্লিক একাডেমি । এই একাডেমি থেকে মেট্রিক দেয়ার পর ১৯৩০ সালে তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন ।
এই সময় ডি পি আই, জে আর ক্যানিংহাম, আইন অমান্য আন্দোলন থেকে ছাত্রদের দূরে রাখা সুনিশ্চিত করতে ব্রিটিশ বিরোধী সর্ব্বপ্রকার স্বদেশী আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে সর্ব্বব্যাপী যে সারক্যুলার [1] জারী করেছিলেন তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনেও বড়মামা যোগ দেন । ঐ একই বৎসর (১৯৩০) বিপ্লবী কার্যক্রমের টাকা যোগাড়ের জন্য তিনসুকিয়াতে ডাকাতি করতে গিয়ে ৫ (পাঁচ) সহযোগী সহ গ্রেপ্তার হন । তন্মধ্যে উমাশঙ্কর ও শচীন দাস রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁরা মুক্তি পেল । মামা রমাকান্ত দাস ও অন্যান্যদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয় । কালক্রমে ওদের মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু হয় । অবশেষে ১৯৩৮ সালের ১৮ই ডিসেম্বর তাঁরা মুক্তি লাভ করেন ।
মুক্তিলাভের পর প্রথমে শিলচরে কংগ্রেস নেতা অরুণ কুমার চন্দের সভাপতিত্বে এক সভায় ও পরে শ্রীহট্ট শহরে অপর একটি সভায় ওঁদেরকে বিরাট সম্বর্ধনা দেয়া হয় । জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আর্থিক দুরবস্থার জন্য বড়মামা একটি চাকরীতে যোগ দেন । ১৯৩৯ সালে তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য হন । শ্রমিক প্রতিনিধি হিসাবে নাগপুরে শ্রমিক কনফারেন্সেও অংশগ্রহণ করেন ।
অতঃপর ১৯৪৩ সালে তিনি সাধনা নাম্নী এক রমনীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন এবং ১৯৪৪ সালে প্রথম পুত্র সন্তানের জনক হন । কালক্রমে তিনি দশটি সন্তান-সন্ততির (আট পুত্র ও দুই কন্যা) জনক হন ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বড়মামা একটি কাঠের কারখানা স্থাপন করেন এবং এম সি কলেজ, করিমগঞ্জ কলেজ ও আগরতলা কলেজের পদার্থ বিদ্যার গবেষণাগার তৈরী করেন । ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে তিনি ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত নিতান্ত আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করেন । ১৯৫৪ সালের জুন মাসে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে যোগ দেন । এরপর ১৯৫৯ সালে নির্মল চৌধুরীর চা-বাগানে সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট হিসাবে যোগ দিয়ে দীর্ঘদিন উভয় বাগান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন । তাঁর দক্ষ পরিচালনায় বাগান দুটি সফল প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিগণিত হয় ।
আশির দশকে বড়মামা শ্রীহট্টের শহরতলী এলাকায় মালিনীছড়া নামক একটি চা বাগানেও কিছুকাল পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন । বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়েও তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দী ছিলেন । পূর্ববর্তী অধ্যায়ে একাধিকবার পাকিস্তান সরকারের কোপে ও মুসলমান দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়েছেন । একবার তার পরিবার ধর্মোন্মত্ত মুসলমান দাঙ্গাবাজদের কবলে পড়েছিল । তারা অতিকষ্টে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেয়েছিল । ১৯৯৭ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী সোমবার সিলেটে নিজস্ব বাসভবনে তিনি পরলোক গমন করেন ।
ভারত ভাগের বহুকাল পর আমি যখন চাকুরীস্থল কলকাতায় সুপ্রতিষ্ঠিত সেই সময় বড়মামা দু বার দেখা করতে এসেছিলেন । প্রথমবার আমি যখন কাশীপুর বরানগরে ব্যক্তিগত মালিকানার ভাড়া বাড়ীতে বাস করতাম । আমার ছোট শ্যালিকা শান্তি তখন আমাদের কাছে থাকত । ও ই বড়মামাকে কলকাতার নানা জায়গা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল । দ্বিতীয়বার এসেছিলেন ১৯৮০ সালের মধ্যভাগে । আমরা তখন সরকারী আবাসন মিণ্টোপার্ক হাউসিং স্টেটে বাস করি । মা ও তখন আমাদের কাছে । বহুদিন পর ভাই বোনের দেখা হয় । বড়মামা তখন শ্রীহট্টের মালিনীছড়া চা বাগানে পরামর্শদাতা পদে কর্মরত ।
সকল মামা, মামীমা ও মামতো ভাইদের সঙ্গে আমাদের ষম্পর্ক ছিল মধুর । আমাদের জ্যেষ্ঠতমা মামীমা সাধনা ছিলেন বড়মামার পরিবারের গৃহকর্ত্রী; শ্বশুর, দেবর ও সন্তানদের নিয়ে এক বিরাট পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর । যতদূর আমি স্মরণ করতে পারি তিনি ছিলেন মাতৃসমা নারী, কর্মঠ ও স্নেহপ্রবণ । শ্রীহট্ট ছেড়ে আসার পর ওর সাথে আমার আর দেখা হয়নি ।
নিম্নে বড়মামা ও তার পরিবারের সদস্যদের একটি গ্রুপ ছবি প্রদর্শিত হল ।
মামাতো ভাই রজত ওরফে মানিক
=========================
দীর্ঘকাল পর মানিকের সাথে স্বগৃহে বিধান নগরে, ডিসেম্বর ২০০৪
দ্বিতীয়া স্ত্রী রীতার সঙ্গে মানিক
আমার মামাতো ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম (বড়মামার জ্যেষ্ঠপুত্র) রজত ডাকনাম মানিক আমার চেয়ে কয়েক মাসের ছোট ছিল । আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুতুল্য ছিলাম । ও আমাকে বাবুলদা (আমার ডাকনাম বাবুল) বলে ডাকত । অতি শৈশবে কখনো কখনো আমরা একই থালা থেকে আহারও করেছি । পার্টিশনের পর ওর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ আমরা সিলেট ছেড়ে আসার এক দশকেরও পর । ও কুটুমামার সাথে যোরহাটে আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল । বছরটা ছিল ১৯৬০, আমার মেট্রিক পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে । ঐ সময় ও কিছুদিন আমাদের কাছে ছিল । ঐ দিনগুলি আমরা খুব আনন্দে কাটিয়েছিলাম, কয়েকটি ভাল সিনেমাও দেখেছিলাম । ও ১৯৭২ সালে মেখলিগঞ্জে আমার বিয়েতেও উপস্থিত ছিল; দাদাবাবুর সাথে শিলচর থেকে এসেছিল । ঐ সময় ও সিলেট থেকে শিলচরে কুটুমামার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল ।
ওর সঙ্গে আমার পরবর্তী সাক্ষাৎ তিন দশক পর ২০০৪ সালের ডিসম্বরে, যখন ও দ্বিতীয়া স্ত্রী রীতাকে নিয়ে কোলকাতা এসেছিল । কোলকাতায় ও হোটেলে উঠে আমায় ফোন করেছিল । আমি সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে গিয়ে ওদের দুজনকে আমাদের বিধান নগরের বাড়ীতে নিয়ে আসি । দীর্ঘকাল পর কয়েকটা দিন আমরা মহানন্দে কাটাই । ২০০৭ সালে আমার আমন্ত্রণে ও বাংলাদেশ থেকে কোলকাতা আসে আমার কনিষ্ঠা কন্যার বিয়েতে যোগ দিতে । ঐ সময় আমি জণ্ডিসে আক্রান্ত থাকায় ও ই কন্যাদান করে ।
আমার চরম দুর্ভাগ্য ২০০৮ সালের ২০ শে এপ্রিল কোলকাতার R. N. Tagore Institute of Cardiac Sciences হাসপাতালে মানিক বাইপাস সার্জারির পরবর্তী জটিলতায় হাসপাতালেই দেহত্যাগ করে । স্বদেশে এক মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের পর ও আমার উপর নির্ভর করে কোলকাতা এসেছিল চিকিৎসার জন্য । ওর মৃত্যু আমাকে এক কঠিন আঘাত দিল । আমি একজন ভাই তথা এক সত্যিকারের বন্ধুকে হারালাম । এই আঘাত কাটিয়ে উঠতে আমার বেশ কিছুদিন লেগেছিল । হয়ত সর্বশক্তিমানের এটাই ইচ্ছা ছিল যে মৃত্যুকালে আমি ওর পাশে থাকি । মানিক পেশায় উকিল ছিল, সিলেটে ওকালতি করত ।
১৯৭২ সালে আমার বিয়েতে মানিক
২০০৭ সালে আমার ছোট মেয়ে ঝিলমিলের কন্যাদানে মানিক
প্রথমা স্ত্রী সুমিতার সঙ্গে মানিক
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সিলেট ভ্রমণের সময় আমার কয়েকজন মামাতো ভাইপো, তাদের স্ত্রী, ভাইঝি, ভ্রাতৃজায়া ও নাতি-নাতনির সঙ্গে দেখা হয় যাদের অধিকাংশের সঙ্গেই এটা ছিল জীবনের প্রথম সাক্ষাৎ, হয়ত বা শেষও । ওদের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও সাবলীলতা আমাদের মুগ্ধ করেছিল ।
ঐ সময় আমার মামাতো বোন সীমুর স্বামী রজতের সঙ্গেও আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ । ওর মধ্যে আমি এক নির্ভেজাল সাদাসিধে ভালমানুষের পরিচয় পেয়েছি ।
মামাতো ভাই চন্দন
মানিকের পরের ভাই চন্দন সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে যায় । ও আগরতলায় আশ্রমে বাস করত । ২০১৯ সালে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে ওকে সিলেটে পৈতৃক বাসভবনে নিয়ে এসে রাখা হয় । আমার সিলেট ভ্রমণের সময় ও সেখানেই ছিল । দীর্ঘ কয়েক দশক পর ওর সাথে আমার দেখা হয় । আমরা যখন সিলেট ছেড়ে যাই ও তখন টড্লার, দু-এক পা করে হাঁটতে শিখছে আর আমি ৪-৫ বছরের শিশু । জীবন-সায়াহ্নে এসে আমাদের আবার দেখা হল; ওর বয়স তখন ৭২-৭৩ আর আমার ৭৬ । চন্দন পারিবারিক দেবতা গোপীনাথের মন্দিরের সন্নিকটেই আলাদা গৃহে বাস করে । গোপীনাথের পূজোআর্চাতেই ওর দিন কেটে যায় ।
ডান পাশে ওর ছবি ।
আমার মামতো বোন তথা চন্দনের সহোদরা রেবা যে পাশাপাশি থেকে চন্দনকে বড় হয়ে উঠতে দেখেছে এবং ওর সাধু হওয়ার পশ্চাদপট সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত; তার লেখা চন্দনের জীবনের কিছু কথা তারই বয়ানে বাম পার্শ্বের পেনেলে একটি ফ্রেমে* সংযোজন করেছি ।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
*মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে চন্দন সম্পর্কীয় অংশের উপরে এই ফ্রেম দেখা যাবে । এই ফ্রেমের উপর টেপ বা ক্লিক করলে লেখাটি পড়ার জন্য খুলে যাবে ।
মামাতো ভাই চন্দন
মামাতো ভাই শঙ্কর
সরণির পঞ্চম অবস্থানে শঙ্কর, বড়মামার পঞ্চম সন্তান । শঙ্কর দীর্ঘদিন সিলেটে আয়কর সংক্রান্ত মামলায় ওকালতি করেছে । ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে আমেরিকায় প্রবাসী, বর্তমানে সস্ত্রীক আমরিকার নাগরিক । মানিকের মৃত্যুকালে শঙ্কর কোলকাতায় দাদার পাশে ছিল । এরপর ওর সাথে আমার দেখা দিল্লিতে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পথে ও যখন কোলকাতা এসেছিল । আমাদের সিলেট ভ্রমণের সময় ও সস্ত্রীক বাংলাদেশে ছিল; তাই প্রায় এক দশক পর ওর এবং ওর স্ত্রী আলপনার সাথে আবার দেখা হয়েছিল । শঙ্করের একপুত্র সৈকত বা আমিত ও এক কন্যা টুম্পা । দুজনেই বিবাহিত ও দুজনেরই সন্তান রয়েছে ।
ইতিমধ্যে (সাল ২০২৪) শঙ্কর এবং ওর স্ত্রী আলপনা আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেছে । অতি সম্প্রতি (জুন ২০২৪) নিউইয়র্কে ওর বাইপাস সার্জারি হয়েছে ।
মামাতো ভাই শঙ্কর ও ভ্রাতৃবঁধু আলপনা
মামাতো ভাই প্রদীপ ওরফে পদ
বড়মামার তৃতীয় সন্তান পদ বা প্রদীপ দীর্ঘদিন গত হয়েছে । আমি ওর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না । আমরা যখন সিলেট ছেড়ে আসি তখন ওর বয়স ছিল বছর খানেক । বর্তমানে ওর বিধবা স্ত্রী হেনা দুই পুত্র ও এক পুত্রবধূ সহ শ্রীহট্টে দাড়িয়াপাড়ার বাড়ীতে বাস করে । বড়মামাদের আদি বাড়ীর বর্ধিতাংশে ওদের বাস । আমাদের শ্রীহট্ট সফরের প্রাক্কালে হেনার একটি পৌত্র লাভ হয়।
ডান পাশের ছবিতে আমাদের পেছনে দুই পুত্র সহ হেনাকে দেখা যাচ্ছে ।
পেছনের সারিতে সপুত্র হেনা
আমার মামাতো বোন ছন্দা ওরফে রেবা
বড়মামার চতুর্থ সন্তান রেবার জন্ম আমাদের সিলেট ত্যাগের পর । রেবার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ কোলকাতায়,আশির দশকের মাঝামাঝি কোন এক সময়। আমরা তখন মিণ্টো পার্ক সরকারী আবাসনে বাস করতাম । স্বামী নিশীথ ও এক কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোলকাতায় এসে রেবা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল । পরে ও ওর এক কন্যাকে গান শেখানোর জন্য কিছুদিন কোলকাতায় রেখেছিল । ওর কন্যা রীমা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে অধিকর্তা । ভারী ভাল গান করে । ওর একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড আমি সিলেটে থাকাকালীন শুনেছিলাম । গানটি আমায় অভিভূত করেছিল ।
রেবার স্বামী নিশীথ (পুরকায়স্থ) খুবই ভদ্র ও বিনয়ী । ওদের এক মেয়ের সাথে নিশীথ ও রেবা বর্তমান আমেরিকায় বাস করে । ঐ ভাগ্নীর সাথে একবার কথা হয়েছে, ভিডিও কলে ওকে দেখেওছি । নিশীথ ও রেবার সাথে আমার মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় । ওরা সবাই বেশ আনন্দেই আছে । বোন রেবাও ভাল গান করে ।
আমরা সিলেটে রেবার শ্বশুরবাড়ীতেও গিয়েছিলাম । ওর শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয়স্বজনদের খুবই ভাল লেগেছে ।
মামাতো বোন রেবা এবং ওর স্বামী নিশীথ
মামাতো ভাই দীপক ওরফে দীপু
--------------------------------------------
স্ত্রী ঝুমা, কন্যা ঝিলিক ও পুত্র দীপ্তের সঙ্গে দীপু । অনেক কাল আগের ছবি ।
২০১৩ সালে কোলকাতায় থাকাকালীন ঝুমা, ঝিলিক ও দীপ্তের ছবি, বেলুড় মঠ প্রাঙ্গনে
বড়মামার সপ্তম সন্তান দীপু বিয়ের আগে দুবার ও বিয়ের পর একবার সস্ত্রীক কোলকাতায় আমাদের কাছে বেড়াতে এসেছিল । দীপু বর্তমানে সপরিবার নিউইয়র্কের বাসিন্দা । ওর পরিবার বলতে স্ত্রী ঝুমা, পুত্র দীপ্ত ওরফে দেবরাজ ও কন্যা ঝিলিক (দীপান্বিতা) । ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ভাইজি ঝিলিক ও ভাইপো দীপ্তের সাথে আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ । ওদের মা ঐ সময় ওদেরকে নিয়ে কোলকাতায় আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল । ওদের উপস্থিতিতে সপ্তাহ খানেক সময় আমাদের সকলের বিশেষ করে আমাদের দুই মেয়ে ও নাতির খুব আনন্দে কেটেছিল । কাজে ব্যস্ত থাকায় দীপু তখন আসতে পারে নি । দীপুর ছেলে মেয়ে দুটি-ই শিক্ষাদীক্ষায় ও আচার-আচরণে যথার্থ ভাবে তৈরী হয়েছে । ওদের দুটিকে দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে ।
আমার ভাইঝি ঝিলিক আমেরিকার ট্যুরো অস্টিওপ্যাথিক কলেজ অব মেডিসিনে ডাক্তারি পড়ছিল । সম্প্রতি (মে ২০২২ সালে) নির্ধারিত সময়ে পাশ করে বেরিয়েছে । বর্তমানে রেসিডেণ্ট মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে টিচিং হাসপাতালে কর্ম্মরত । ভাইপো দীপ্তও বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ।
ইউনিভারসিটির কনভোকেশনে সস্ত্রীক সকন্যা দীপু ।
স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গনে ভ্রাতা দীপ্ত ও মাতা ঝুমার সাথে ঝিলিক
মামাতো বোন গায়েত্রী ওরফে সীমু
গায়েত্রী ওরফে সীমু বড়মামার কনিষ্ঠ সন্তান । ওর জন্মও আমাদের শ্রীহট্ট ত্যাগের পর । ও একবার শঙ্করের সাথে চিকিৎসার জন্য কোলকাতা এসেছিল । তখনই ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা । ওর একটিমাত্র ছেলে যে ডাক্তার হয়েছে । ২০১৯ সালের শেষ ভাগে সীমু ছেলের বিয়ে দিয়েছে । ওরা বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছে ।
আমাদের শ্রীহট্ট ভ্রমণের সময় সীমু ছেলের বিয়ে দিতে বাংলাদেশেই ছিল । শ্বশুরালয় মৌলভীবাজার থেকে স্বামী রজতকে (রজত দাস চৌধুরী) নিয়ে শ্রীহট্টে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল । ঐ সময়ই রজতের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা । রজতকে আমার সহজ-সরল ও মিশুকে বলেই মনে হয়েছে । অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ওদেরকেও পেয়ে আমাদের সিলেট অবস্থান অধিকতর সুখকর হয়েছিল ।
মামতো বোন সীমু এবং ওর বর রজত
বড়মামার দিকের অন্যান্য মামাতো ভায়েরা
বড়মামার অন্যান্য সন্তানেরা যারা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী ও যাদের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি তাদের উল্লেখ না করলে পারিবারিক তথ্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে । এরা তিনজন হল রঞ্জন ওরফে শেখু, পঙ্কজ ওরফে বাচ্চু এবং নন্দন । এদের মধ্যে রঞ্জনের সাথে দূরভাষে কয়েকবার কথা হয়েছে । ও ই প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করেছিল যখন আমি আসাম ভ্রমণে গুয়াহাটি অবস্থান করছিলাম । ওর সঙ্গে কথা বলে আমার ভীষণ ভাল লেগেছিল । পরে আমিও দু-একবার কথা বলেছি । ওর পরিবার সম্পর্কে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই । শ্রীহট্টে অবস্থান কালে আমি জেনেছিলাম কিছুদিন পূর্বে এক দুর্ঘটনায় ও আহত হয়েছিল । বাকী দুই মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমার কখনো যোগাযোগ হয় নি । এই তিন ভাইয়ের সকলের বিস্তৃত বিবরণ এখানে লিপিবদ্ধ করতে পারলে খুশী হতাম । কিন্তু তা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি ।
পার্টিশন পরবর্তী পর্যায়ে আমার মামারা অনেকেই স্বস্থানে থেকে গিয়েছিলেন । পরে বড়মামা ও তার পরিবার এবং রুণুমামা ও ঝুনুমামা ছাড়া বাকী প্রায় সকলেই একে একে ভারতে এসে আসামের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করেন । সপরিবারে বড়মামা শ্রীহট্টে থেকে গেলেও ওর সপ্তম পুত্র দীপু দীর্ঘদিন পূর্বে (পূর্বপাকিস্তান তখনও বাংলাদেশ হয়নি) শ্রীহট্ট ত্যাগ করে দুবাই চলে যায় । পরে ও দুবাই থেকে কুয়েৎ হয়ে নিউইয়র্কে যায় । বর্তমানে ও সপরিবারে আমেরিকার নাগরিক ও নিউইয়র্ক নিবাসী ।
কুটুমামা: মার সহোদর
কনিষ্ঠ ভ্রাতা
আমি যে দুজন মামার খুব কাছের মানুষ ছিলাম তার প্রথম জন হলেন মায়ের সহোদর কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাধিকা কান্ত দাস, যাকে আমরা কুটুমামা বলে ডাকতাম । দ্বিতীয়জন মায়ের খুড়তুতো ভাই কুমুদ রঞ্জন দাস ওরফে ভুতু যাকে আমরা ভুতুমামা বলে ডাকতাম । ভারত ভাগের পর এঁরা এদেশে বসতি স্থাপন করলে এঁদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাবার সুযোগ আমার হয়েছিল । প্রসঙ্গতঃ প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত গায়ক নির্মলেন্দু চৌধুরী কুটুমামার বাল্যবন্ধু ছিলেন ।
কুটুমামারও দুই বিয়ে । প্রথমবার ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু মামীমা বেশিদিন বাঁচেন নি । মামীমার নাম ছিল শেফালী । ওঁকে আমি দেখেছি বলে মনে পড়ে না । তবে বাল্যকালে কুটুমামার শ্রীহট্টের শয়নকক্ষে টাঙ্গিয়ে রাখা ওঁর ছবি দেখেছি । ওঁর সেই ছবি আমার মনে গেঁথে রয়েছে । পরবর্তীকালে ওঁর ছবির সেই চেহারা স্মরণ করে আমার মনে হয়েছে উনি ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী ও পরিশীলিতা রমণী । গড়পড়তা মানে সুন্দরীই বলতে হবে । মার কাছে শুনেছি উনি ছিমছাম থাকতে ভালবাসতেন । ওঁর কোন সন্তান-সন্ততি ছিল না ।
প্রথমা স্ত্রীকে হারাবার অনেকদিন পর কুটুমামা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন । দ্বিতীয়া স্ত্রী মঞ্জু মামীমা কুটুমামার চেয়ে বয়সে অনেকটাই ছোট ছিলেন । কিন্তু তিনিও সময়ের আগেই চার সন্তান রেখে দেহত্যাগ করেন । আমার ধারণা পরিবারে চরম দারিদ্র্যের দিনে দুঃখকষ্টের মূল আঘাত মঞ্জু মামীমা নিজে গ্রহণ করায় ওঁর এই অকাল মৃত্যু । তিনি দুই কন্যা শিপ্রা ও সীমা এবং দুই পুত্র রামেন্দু ওরফে বাবলা ও রূপেন্দু ওরফে বাপী এই চার সন্তান রেখে যান । পুত্র কন্যারা সকলেই এখন বিবাহিত। কন্যারা দুজনেই এখন প্রতিষ্ঠিত ।
ভারতে আসার পর আমার দিদিদের মত কুটুমামাকেও কঠোর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছিল । কুটুমামা প্রথমে শিলচরে একটি কাঠের আসবাবপত্রের দোকান খুলেছিলেন, কিন্তু বেশীদিন চালাতে পারেন নি । এরপর মর্যাদাহীন সামান্য মাইনের চাকুরীর জন্যও এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করেছেন, কিন্তু তেমন কিছু জোটাতে পারেন নি । ফল চরম দারিদ্র্য । এককালের শৌখিন স্বচ্ছল একজন মানুষের এই করুণ পরিণতি হৃদয়ে গভীর আঘাত দিয়েছে । চোখের সামনে দেখেছি ভারত বিভাজনের আরেক বলি । আমাদের তখনকার অবস্থা অবশ্য ভাল না হলেও এত খারাপ ছিল না ।
কুটুমামা (রাধিকা কান্ত দাস) ও তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী মঞ্জু
আমার ও আমার স্ত্রীর সাথে মঞ্জু মামীমা ও তাঁর তিন সন্তান শিপ্রা, বাবলা ও বাপী । শিলচর. ১৯৭২
কুটুমামার দিক থেকে আমার ভাইবোনেরা ও তাদের পরিবার
১৯৬০ সালে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় হিংসাশ্রয়ী বঙ্গালখেদা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যখন শিলচরে আশ্রয় নি তখন কুটুমামার জ্যেষ্ঠা কন্যা শিপ্রা স্কুলে পড়ে । ও ভাল ছাত্রী ছিল, পড়াশোনায় মনোযোগী ও আগ্রহী ছিল । কুটুমামার অবস্থাও তখন মোটামুটি চলনশীল ছিল, কয়েকজন অতিরিক্ত পোষ্যও ছিল । ক্রমে কুটুমামার অবস্থা খারাপ হতে থাকে ও শোচনীয় পর্যায়ে পৌছয় । শিপ্রা অনেক কষ্টে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে । বি. এসসি. পড়ার ইচ্ছা থাকলেও তা আর সম্ভবপর হল না । সংসারকে বাঁচাতে পড়া ছেড়ে চাকুরীতে ঢুকতে হল । ভাগ্যক্রমে স্থানীয় টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ওপারেটারের একটি চাকরী পেল ।
আমার এই মামাতো বোনটি-ই নিজের ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে পরিবারকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করল, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার পথ দেখাল । ছোট হলেও ওকে আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি । এখনও পর্যন্ত ও এবং ওর শিক্ষিকা ছোট বোন সীমা ওদের ছোট দুই ভায়ের সংসার প্রতিপালনে সাহায্য করে চলেছে । কোন প্রশংসাই ওদের জন্য পর্যাপ্ত নয় । প্রকৃতিগত ভাবে শিপ্রা নরম স্বভাবের ও মিষ্টভাষীনি । অন্য বোন সীমাও সহজ সরল ও দায়িত্বশীলা ।
শিপ্রার স্বামী মানিক ও সীমার স্বামী বরুণ সম্পর্কে আমি বলব ওদের স্বামী হিসাবে পাওয়া আমার বোনেদের সৌভাগ্য । দুই বোনের সব কাজে এরা নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে । দুজনেই নমনীয়, ভদ্র ও আন্তরিক ।
মামাতো বোন শিপ্রা (ডান দিক থেকে ৩য়), ওর দুপাশে দুই কন্যা মাম্পি ও পূজা, সর্ব বামে ওর স্বামী মানিক, মানিকের বামে ওর ভাইঝি লুসি ও একেবারে ডান পাশে সীমার স্বামী বরুণ ।
মামাতো বোন সীমা, ওর স্বামী বরুণ ও কন্যা স্বর্ণালী
শিপ্রা, সীমা ও ওদের ভাই বাবলা সবাই এখন সরিবারে করিমগঞ্জের বাসিন্দা । শিপ্রার দুই কন্যা মাম্পী ও পূজা । বড় মাম্পী কোলকাতায় থেকে চার্টার্ড এ্যাকাউণ্টেন্সি পড়ছিল; ইণ্টার পাশ করে ফাইনেল দিচ্ছে (২০২২ সাল) । এই বছর (২০২৪) ও চার্টার্ড পাশ করে পুরোদস্তুর চার্টার্ড একাউণ্টেণ্ট হয়েছে, মাতৃকুল ও পিতৃকুল মিলিয়ে প্রথম । ওর ছোট পূজা আসাম ইউনিভার্সিটিতে এম বি তে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে । সীমার কন্যা স্বর্ণালী স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পাশ করে করিমগঞ্জ কলেজে পড়ছে । ভাই বাবলারও একটি কন্যা, নাম রিমা, ২০১৭ সালে হায়ার সেকেণ্ডারীতে ৮৯% নম্বর পেয়ে পাশ করেছিল । পরে এ্যাকাউণ্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে করিমগঞ্জ কলেজে থেকে বি কম পাশ করে বি এড করেছে ও বর্তমানে জেলা কালেক্টর অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটার হিসাবে কর্ম্মরতা ।
আমার অপর মামাতো ভাই মাঝে কিছুদিন পথভ্রষ্ট হয়েছিল । বর্তমানে পারিবারিক আওতায় ফিরে এসেছে । সপরিবারে শিলচরে বাস করে । নৃত্যে পারদর্শিতা অর্জন করেছে । কিছুদিন পূর্বে একটানা ২৪ ঘণ্টা নৃত্য পরিবেশন করে প্রশংসা অর্জন করেছিল ।
কুটুমামার দিক থেকে আমার মামাতো ভাইবোন এবং ওদের পরিবারের ছবি এই অনুচ্ছেদের পার্শ্বে ও নিম্নে প্রদর্শিত হয়েছে ।
স্ত্রী-কন্যা সহ মামাতো ভাই বাবলা ওরফে রামেন্দু
সস্ত্রীক মামাতো ভাই বাপী ওরফে রুপেন্দু
তিন বোন: মামাতো বোন শিপ্রার কন্যাদ্বয় মাম্পি ও পূজা এবং তাদের জ্যেঠতুতো বোন লুসি
ভুতুমামা: মার খুড়তুতো ভাই
আগেই বলেছি আমি যে দুজন মামার ঘনিষ্ঠ ছিলাম তার দ্বিতীয় জন ছিলেন ভুতুমামা । ভুতুমামা (কুমুদ রঞ্জন দাস) ছিলেন দাদামশায়ের পরের ভাই কিরণের প্রথম পক্ষের সন্তান । তিনি ছিলেন সুগঠিতদেহ, ক্রীড়াবিদ ও সুদর্শন । তিনিও অনেক বিলম্বে বিয়ে করেছিলেন (সম্ভবতঃ ভালবেসে বিয়ে) । মামীমা খুব মমতাময়ী ছিলেন । উনি হোমিওপ্যাথী চিকিৎসা করতেন । মামা-মামী দুজনেই আমাকে খুব ভালবাসতেন । ওদের কোন সন্তান সন্ততি ছিল না । ভুতুমামা মৃদুভাষী ছিলেন । ভারত ভাগের পূর্বেকার সময় থেকে ভারতীয় রেলে চাকরী করতেন । কোন অজ্ঞাত কারণে চাকরী ছেড়ে দিয়েছিলেন ।
পরবর্তী কালে ভুতুমামা কিছুদিন শিলং এর একটি হোটেলে ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন । সেখানে তিনি মামীমাকে নিয়ে হোটেলেরই একটি কক্ষে বসবাস করতেন । ঐ সময় আমি শিলং এ স্নাতক স্তরে পাঠরত ছিলাম । আমার ছাত্রজীবনের অধ্যায়ে এর উল্লেখ আছে । আমার শিলং ত্যাগের পর কোন এক সময় ভুতুমামা শিলচর ফিরে আসেন । এরপর আমৃত্যু তিনি শিলচরেই ছিলেন । আমার সঙ্গে ওঁর শেষ দেখা ১৯৭২ সালে আমি যখন বিয়ের পর সস্ত্রীক শিলচর গিয়েছিলাম । ওঁরা দুজনেই আমাদের দেখে খুব খুশী হয়েছিলেন ও আমাদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্য়ায়িত করেছিলেন । ঐ মধ্যাহ্নভোজে মামীমার রান্না কই মাছের ঝালের স্বাদ এখনও আমার জিবে লেগে রয়েছে । ১৯৮০ সালের মধ্যভাগে কোন এক সময় ভুতুমামা আমাদের কোলকাতার বাসভবনে দেখা করতে এসেছিলেন । আমরা তখন আলমবাজারে ভাড়া বাড়ীতে থাকি । দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার সঙ্গে দেখা হয়নি, আমি কোলকাতার বাইরে ছিলাম । ১৯৯৫ সালে ভুতুমামার মৃত্যু হয় ।
এরপর থেকে মামীমা শিলচরের তারাপুরে ওঁর এক কামরার নিজস্ব ফ্যাটে একাই বাস করতেন । ওঁকে দেখাশোনা করত ওঁর দেবরপুত্র টাব্লু (পুকন মামার কনিষ্ঠ পুত্র) । ২০০০ সালে টাবলুকে সঙ্গে নিয়ে মামীমা আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা অনিন্দিতার (মামন) বিয়েতে এসেছিলেন । শিলচর থেকে কোলকাতা আড়াই দিনের পথ ট্রেণে আসতে নিশ্চয়ই ওঁর খুব কষ্ট হয়েছিল । কিন্তু তিনি আমাকে এতই ভালবাসতেন যে না এসে পারেন নি । কয়েক দিন আমার সাড়া না পেলে উনি নিজে থেকেই ফোন করতেন । আমি শিলচর গেলেই ওঁর সাথে দেখা করতে যেতাম । ওঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা ২০১০ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে যখন আমি দাদার শেষকৃত্যে শিলচর গিয়েছিলাম ।
মামীমা জীবনের শেষ দু-এক বছর বিভিন্ন রোগে ভুগেছেন । শেষ পর্যন্ত শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন । অবশেষে ২০১৪ সালের ২৮শে অক্টোবর প্রাতঃ ৬:৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । কোন সন্তানাদি না থাকায় দেবরপুত্র টাবলুই ওঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ।
ভুতুমামা (কুমুদ রঞ্জন দাস) ও মামীমা ঊষারাণী দাস
আমার অন্যান্য মামারা: মায়ের বৈমাত্রেয় ভাইরা
ঋষি মামা ওরফে ঋষিকেশ দাস
ঋষিমামা ছিলেন মায়ের বৈমাত্রেয় ভাই-বোনেদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ । দেশভাগের পর কুটুমামাদের সাথে শিলচর চলে আসেন । যতদিন কুটুমামার আসবাবপত্রের কারখানা চালু ছিল ওখানে কাঠের কাজ করেছেন । পরবর্তীকালে কি কাজ করতেন জানি না। তবে আমার জ্ঞানমত কুটুমামাদের সঙ্গেই থাকতেন, ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ওখানেই দেহত্যাগ করেন ।
সুনীল মামা ওরফে সুনীল দাস
আমার মার আরেক বৈমাত্রেয় ভাই সুনীল, আমাদের সুনীলমামা, পূর্বপাকিস্তান ছেড়ে আসার পর গৌহাটিতে আসাম ট্রিবিউন প্রেসে কম্পোজিটারের কাজে রত হন । ঐ কাগজের তদানীন্তন খবর অনুযায়ী কম্পোজিটারের কাজে নিযুক্ত থাকাকালে মাত্র ৪৩ বৎসর বয়সে গৌহাটিতেই তিনি দেহ ত্যাগ করেন । রেখে যান স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্র । জ্যৈষ্ঠা কন্যা আসাম ট্রিবিউন নামক ঐ দৈনিক ইংরাজী পত্রিকায় কর্মরত । ১৯৭২ সালে আমার বিয়ের পর ছুটি কাটিয়ে শিলচর থেকে ফেরার পথে গৌহাটিতে সুনীল মামার বাড়ীতে সস্ত্রীক দিন দুয়েক অবস্থান করেছিলাম । মা ও সঙ্গে ছিলেন । ওঁরা আমাদের যথেষ্ট আদর-আপ্যায়ন করেছিলেন । ওঁদের জ্যেষ্ঠা কন্যা তখন নেহাতই শিশু, বাকীদের বোধহয় জন্মও হয় নি । সম্প্রতি (২০১৭-১৮ সালের সাপেক্ষে} আমার মৃতা মায়ের ফেলে যাওয়া কাগজপত্রের মধ্যে শিশুপুত্রকোলে সুনীলমামার একটি ছবি পাওয়া গেছে । ছবিটি আমি এখানে সংযোজন করলাম ।
রণুমামা
রণুমামা ছিলেন মায়ের কনিষ্ঠতম বৈমাত্রেয় ভাই । তিনি দেশত্যাগ করেন নি । বড়মামার পরিবারের সাথে সিলেটেই থেকে যান । তিনি অংশতঃ মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন । তিনি কখন কি ভাবে মারা যান আমার জানা নেই ।
পুত্র ক্রোড়ে সুনীলমামা
রুণুমামা
আমার মাসী: মায়ের বৈমাত্রেয় ভগ্নী
আমার মায়ের বৈমাত্রেয় ভগ্নী গঙ্গা (আমাদের গঙ্গামাসী) ও তাঁর পরিবার পূর্বপাকিস্তান ছেড়ে আসামের করিমগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন । ওঁর স্বামী ভূপেন্দ্র নাথ রায় দাদার প্রথম বিয়েতে ঘটকালি করেছিলেন । ঐ মাসী একবার শিলচরে আমাদের টিকরবস্তীর বাড়িতে এসেছিলেন । স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে সেই একবারই ওঁকে আমি দেখেছিলাম । মাসী মেসো দুজনেই এখন মৃত । ওঁদের একটি কন্যাসন্তান আছে বলে শুনেছি । তবে ওর বর্তমান অবস্থান আমাদের কারো জানা নেই । সংযোজন করার মত এই পরিবারের কারো কোন ছবি আমার কাছে নেই ।
আমার মামা পুকনমামা: মায়ের খুড়তুতো ভাই ও তার পরিবার
পুকন মামার জ্যেষ্ঠ পুত্র কবীন্দ্র (ডাকনাম দীপু), ওর স্ত্রী মীনা ও কনিষ্ঠ পুত্র কিংশুক
পুকন মামার কনিষ্ঠ পুত্র প্রদীপ (ডাকনাম টাবলু)
পুকন মামা (ভাল নাম কান্তিভূষণ দাস) ছিলেন মায়ের আরেকজন খুড়তুতো ভাই যিনি ভারত ভাগের পর গৌহাটিতে বসতি স্থাপন করেন । সম্ভবতঃ তিনিও আসাম ট্রিবিউন প্রেসে কাজ করতেন । যদিও ছাত্রাবস্থায় অনেকবার গৌহাটির (অধুনা গুয়াহাটি) উপর দিয়ে যাতায়াত করেছি আমার সাথে ওঁর দেখা হয়নি । ঐ সময় গৌহাটিতে বসবাসকারী কোন আত্মীয়স্বজনের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ছিল না । পরবর্তীকালে চাকুরীজীবনে একবার আমরা যখন গৌহাটিতে স্বল্প সময়ের জন্য সুনীল মামার বাড়ীতে অবস্থান করছিলাম তখন পুকন মামা দেখা করতে এসেছিলেন । কিন্তু আমি স্ত্রীকে নিয়ে শিলং বেড়াতে চলে যাওয়ায় ওঁর সঙ্গে দেখা হয়নি । পরদিন আমার কর্মক্ষেত্রে রওয়ানা হওয়ার কথা থাকায় ওঁর বাড়ীতে গিয়ে দেখা করতেও পারিনি । পুকন মামার জ্যেষ্ঠপুত্র কবীন্দ্র (ডাকনাম দীপু) স্ত্রী মীনা ও দুই পুত্রসন্তানকে (কিংশুক ও কৌশিক) নিয়ে বর্তমানে গৌহাটিতে বসবাস করে । পুকন মামীমাও (সত্যভামা দাস) ওর সাথে থাকেন। দীপু অ্যাকাণ্টেণ্ট জেনারেল আসামের অফিসে কাজ করত । সম্প্রতি (২০১৯ সালের সাপেক্ষে) অবসর গ্রহণ করেছে । ২০১৪ সালে আসাম ভ্রমণকালে আমি যখন গুয়াহাটিতে অবস্থান করছিলাম সেই সময় একদিন দীপু আমাকে ওর বাড়ী নিয়ে গিয়েছিল । সেখানে ওর স্ত্রী মীনা, কনিষ্ঠ পুত্র কিংশুক ও পুকন মামীমা (তখন বিধবা) সত্যভামা দেবীর সাথে দেখা হয় । মীনার সাথে ওটা ছিল আমার প্রথম সাক্ষাৎ, পুকন মামীমার সাথেও সম্ভবতঃ তাই । পূর্বে কখনও পুকন মামীমাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না ।
পুকন মামার কনিষ্ঠ পুত্র প্রদীপ ডাকনাম টাবলু বর্তমানে আইজলে একটি বেসরকারী সংস্থায় কাজ করে । ২০১১ সালে ও বিয়ে করেছে । ওর স্ত্রী শিক্ষিকা।
টাবলুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ও যখন ভুুতু মামীমাকে নিয়ে মামনের বিয়েতে এখানে এসেছিল । এরপর কয়েকবার শিলচর দেখা হয়েছে ।
কান্তিভূষণ দাস ওরফে পুকনমামা
সত্যভামা দাস (পুকন মামীমা)
আমার মামাতো ভাইদের তরফের ভাইপো ভাইঝিদের কিছু ছবি
মানিকের জ্যেষ্ঠপুত্র সুমন, স্ত্রী অজন্তা ও দুই পুত্র সন্তান
মানিকের কনিষ্ঠ পুত্র সুযোক, স্ত্রী পিয়ালী ও পুত্র শ্রীহান
শঙ্করের কন্যা টুম্পা ও দৌহিত্রী
শঙ্করের পুত্র অমিত ওরফে সৈকত, স্ত্রী অহনা ও পুত্র অমৃত ।
মানিকের কন্যা মীতু, স্বামী স্বপন ও পুত্র সৌমিক
<<< হোম পেজে যেতে বাঁ দিকের বোতামে টেপ বা ক্লিক করুন ।
পাদটীকা
[1] Canninghum Circular: When the whole country was preparing for the start of the Civil Disobedience Movement in 1930, students in Assam also played a key role.
To discourage and stop students to participate in the Civil Disobedience Movement, J.R. Cunningham, the then powerful Director of Public Information of Assam, issued the Cunningham circular in 1930 imposing a blanket ban on any anti-British and pro-swadeshi activity by students.
It forced parents, guardians and students to furnish assurances of good behaviour and also asked them to sign an undertaking that they would have to quit their schools and colleges if they participated in anti-government demonstrations or movements.
The circular was aimed to forbid students from participating in political activities and so, it raised a very strong response.
Thousands of students, throughout Assam, left their educational institutions. Many Swadeshi educational institutions like Kamrup Academy of Guwahati and Sibsagar Vidyapeeth were also established at the same time to accommodate the students leaving British Govt. schools & colleges.