মেদিনীপুর রেলস্টেশন
পাইরেপ-পরপর্তী নিয়োগ ও কর্মে যোগদান
আমি যখন পাইরেপ ছেড়ে আসি, আমি জানতাম না কোথায় আমার পরবর্তী নিয়োগ হয়েছে । পরে আমি জানতে পারি আমাকে হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমায় নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে ।
আরামবাগ ছিল একটি বন্যাপ্রবণ এলাকা । এর আকার বাটির মত । এমন বর্ষা কমই যায় যখন এখানে বন্যা হয় না । তাছাড়া আরামবাগে রেল যোগাযোগও ছিল না । দু দুটো কষ্টকর জায়গায় (মেখলিগঞ্জ ও নয়াগ্রাম) কাজ করার পর আমি আবার একটি সমস্যাশঙ্কুল জায়গায় যেতে প্রস্তুত ছিলাম না ।
গৃহ (সাধারণ প্রশাসন) বিভাগের উপসচিব অশোক দাসগুপ্ত মহাশয় যিনি বিষয়গুলির দেখাশোনা করতেন তার সঙ্গে দেখা করলাম । এই বিষয়টি যখন প্রস্তাবাকারে ছিল সেই সময়ও আমি একবার ওর সাথে দেখা করে আমাকে আরামবাগে নিয়োগ না করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম । সবিস্তারে আমার অসুবিধার কথা জানিয়ে ওঁকে তখন বলেছিলাম বছর খানেকের ব্যবধানে পর পর দুটি দুরূহ স্থানে কাজ করার পর আমাকে আর যেন আরামবাগে না দেয়া হয়। সেই বিষয়ে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি ওকে বর্তমান নির্দেশটি বাতিল করার অনুরোধ জানালাম । উনি আমার কথা ত শুনলেনই না, পরন্তু আমাকে ঐ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বিকাল বেলা সংগ্রহ করে নিতে বল্লেন । ওর এই অসংবেদনশীল ব্যবহারে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওর মুখের উপর আমি বলে দিই বিজ্ঞপ্তি গ্রহণ করব কি না, সেটা আমার ব্যপার । শ্রী দাশগুপ্তের কাছে যাওয়ার আগে আমি বিভাগীয় সহসচিব রমানাথ সমাদ্দারের সঙ্গে দেখা করেছিলাম । শ্রীসমাদ্দার আমায় জানিয়েছিলেন তিনি শ্রীদাশগুপ্ত মহোদয়কে বলেছিলেন আমাকে আরামবাগে পোস্টিং না দিতে, কিন্তু তিনি তা শোনেন নি ।
এরপর আমি দপ্তরের যুগ্ম সচিবের সঙ্গে দেখা করে ওঁকে আমার সমস্যার কথা জানালে উনি ঐ নিয়োগ বাতিল করে দিতে স্বীকৃত হলেন ও বিজ্ঞপ্তিটি গ্রহণ করতে নিষেধ করলেন । যুগ্ম সচিবের সাথে দেখা করে আমি সহ সচিবের সঙ্গে পুনরায় দেখা করতে গেলে তিনি আমায় জানান যুগ্মসচিব মহোদয় ইতিমধ্যেই আমার নথি চেয়ে পাঠিয়েছেন ।
কয়েকদিনের মধ্যেই আমি মেদিনীপুর সদরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি পেলাম ।
এই বিজ্ঞপ্তিটি জারী হয়েছিল ২রা এপ্রিল, ১৯৭৬ । আমি ৭ই এপ্রিল, ১৯৭৬ দায়িত্বভার গ্রহণ করি । এখানে আমার কার্যকাল ছিল ১৯৭৬ সালের ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত প্রায় চার মাস ।
এই নিয়োগ নিয়ে এখানে এত বিস্তারিত বললাম এটা বোঝাতে যে প্রশাসনের মধ্যস্তরীয় কিছু অসংবেদনশীল আধিকারিক কোন বিষয়ের যথাযথ মূল্যায়ন না করে গতানুগতিক ধারায় চলে জটিলতার সৃষ্টি করেন । আইন-কানুন মেনে মানুষকে যেটুকু সুবিধা দেয়া সম্ভব এরা সেটুকু দিতেও অপারগ । অথচ এই ধরণের অনেকে আছেন যারা নিজের বা আত্মপরিজনের প্রয়োজনে আইন ভেঙ্গে সুবিধা আদায় করতে বা করার চেষ্টা করতেও পিছপা হন না ।
মেদিনীপুরে আমার কাজের ধরণ
আমি জেলাশাসকের অধীনে সাধারণ প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত ছিলাম । কখনো কখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্তি ব্যতীত আমার অধিকাংশ নির্ধারিত কাজ ছিল ফাইল কেন্দ্রিক । এখানে উল্লেখ করার মত ঘটনা নেই ।