পারিবারিক বৃক্ষ
আমি আগেই বলেছি আমাদের চারজন ভাই-বোন শৈশবের প্রত্যুষেই ইহলোক ত্যাগ করে । এদের মধ্যে ছিল সর্বজ্যেষ্ঠ ভগ্নী শেফালী, ওর পরবর্তী ভ্রাতা মৃণাল কান্তি, আমার জ্যেষ্ঠ জীবিত ভ্রাতা কৃষ্ণকান্তের অনুজ এক ভ্রাতা শিশির ও আমার অগ্রজা ভগ্নী নিবেদিতা ।আমার জ্ঞানোদয় হওয়ার পর আমি কেবল আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কৃষ্ণকান্ত ওরফে কান্ত এবং জ্যেষ্ঠ ভগ্নীদ্বয় চামেলী ওরফে বত ও বকুল ওরফে ক্ষতিকেই পাই । দুজন ভগ্নীই আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার চেয়ে বড় ছিল । চামেলী ছিল সর্বজ্যেষ্ঠ । আমাদের দেশত্যাগের অনেক পূর্বে এদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল । আমি ছিলাম মাতাপিতার অষ্টম তথা সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ।
আমার বাবার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন বিপত্নীক । তাঁর কোন বংশধর ছিল না । বাবার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বা তাঁর একমাত্র ভগিনীর পরিবার বা বংশধর সম্পর্কে আমার কাছে কোন তথ্য নেই ।
বাল্যকালে মৃত চার ভাইবোনকে বাদ দিয়ে আমাদের পরিবার-বূক্ষ নিম্নে প্রদত্ত হল । জায়গার অভাবে এবং যেহেতু নাম ভিন্ন ওদের ক্ষেত্রে বৃক্ষে যোগ করার মত কিছু নেই তাই ওদেরকে বৃক্ষের বাইরে রাখতে হল । বৃক্ষে ওদের আপেক্ষিক অবস্থান প্রথম অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছি । আমার বর্ধিত পরিবারের সদস্য হিসাবে আমার একমাত্র দৌহিত্রকে বৃক্ষের অন্তর্ভূক্ত করেছি । দূর্ভাগ্যবশতঃ বৃক্ষটিকে উর্দ্ধে প্রসারিত করার মত কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
আমার ভগ্নীদ্বয় ও তাদের পরিবার
আমার জ্যেষ্ঠ ভগ্নিপতি ছিলেন নরেন্দ্র নাথ রায় ও অপর জন রজনী মোহন রায় । উভয়ই শ্রীহট্টের গ্রাম্য এলাকার বর্ধিষ্ণু ভূ-স্বামী পরিবারভুক্ত ছিলেন । শ্রীহট্ট জেলার তদানীন্তন সুনামগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত ওঁদের গ্রামের নাম ছিল যথাক্রমে গোবিন্দগঞ্জ (এক্ষণে শহর) ও পোনাতীর্থ । আমরা যখন বাসভূমি ত্যাগ করলাম ওঁরা তখন বিষয়-সম্পত্তি ফেলে দিয়ে স্বস্থান ছেড়ে আসতে প্রস্তুত ছিলেন না । সীমান্তের এ পারে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানেরও প্রশ্ন ছিল । দুজনের কেউই শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ বা মানসিকতার দিক থেকে চাকরি-বাকরীর উপযুক্ত ছিলেন না । আমার ভগ্নিদ্বয় বা ভগ্নীপতিদের কেউ স্কুলের গণ্ডি পার হন নি । যা হোক, নিজেদের ঘর-গৃহস্থালীর উপর অমোঘ আকর্ষণ থাকা সত্বেও ঘন ঘন সাম্প্রদায়িক অশান্তির দরুণ ওঁরা শেষ পর্যন্ত স্বভূমি আঁকড়ে থাকতে পারেন নি ।
আমার অগ্রজা: দেশত্যাগ ও পরবর্তীকাল
পার্টিশন-পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হানাহানি চলাকালীন আমার দুই দিদির মধ্যে কনিষ্ঠা বকুল সপরিবারে স্বভূমি ত্যাগ করে ভারতে প্রবেশ করে । ওর কাছ থেকে পরে আমি জেনেছি ওদের গ্রাম পোনাতীর্থে এক গুরুতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা পেতে ওদের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল । আমার দিদি ঐ সময় কঠিন এক্লেম্পসিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল । গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য গাড়ীও পাওয়া যাচ্ছিল না । অনেক চেষ্টায় একটি গাড়ী যোগাড় করে ওরা সুতারকাণ্ডি-করিমগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে । আমার ভগ্নী-ভগ্নীপতি কিছুদিন ওখানে উদ্বাস্তু শিবিরে ছিলেন । পিতৃদেব ওখানে রোগাক্রান্ত দিদিকে দেখতে গিয়েছিলেন । আমরা সম্ভবত তখন যোরহাটে । শিবিরে থাকাকালীন রোগের প্রকোপে দিদি কয়েক দিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিল । ঐ সময় দিদি যে অলঙ্কারগুলি পরে পালিয়ে এসেছিল সেগুলি ওর শরীর থেকে চুরি হয়ে যায় ।
শিবিরে ওর জ্ঞান ফিরে এলে যথাসময়ে ওরা শিবির ত্যাগ করে । এরপর কাছাড় জেলার শিলচর শহরের নিকটবর্তী ফুলেরতল নামক স্থানে প্রাথমিক ভাবে বসবাস শুরু করে । আমার দিদির প্রথম সন্তান ওখানেই জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই সন্তান কিছুদিনের মধ্যেই গত হয় । সন্তানের মৃত্যুর পর আমার ভগ্নি-ভগ্নিপতি ফুলেরতল ছেড়ে আমাদের তদানীন্তন নিবাসস্থল যোরহাটে চলে আসেন ।
নাতি-নাতনি সহ আমার ভগ্নি বকুল ও ভগ্নিপতি রজনী
আমাদের জ্যেষ্ঠতম ভগ্নি: দেশত্যাগ ও পরবর্তী পর্যায়
আমাদের জ্যেষ্ঠা ভগ্নি চামেলী এর কিছুদিন পর সপরিবারে ভারতে পালিয়ে এসে বরাক নদীর ওপর পারে (ফুলেরতলের সাপেক্ষে) কাছাড় জেলারই দিলখুশবস্তী নামক স্থানে নিবাস স্থাপন করে । কি পরিস্থিতিতে ওরা স্বভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল তা আমার জানা নেই, তবে তা যে প্রাণের আশঙ্খা ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে না তা সহজেই অনুমেয় । দিলখুশবস্তীতে আমার ভগ্নিপতি এক টুকরো জমি কিনে নিজেদের বাসের জন্য একটি কুঁড়ে ঘর ও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে একটি ছোট মুদিখানা প্রতিষ্ঠা করেন । ছোট জায়গায় মুদিখানার যৎসামান্য আয়ে সংসার প্রতিপালন সম্ভব ছিল না । ফলে ওরা চরম দারিদ্র্যের সম্মুখীন হন । অতঃপর এই দারিদ্র্য দিদি-জামাইবাবুর জীবৎকালে ওদের নিত্যসঙ্গী হয়ে রইল ।
দেশভাগ ওদেরকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল । আমার ভগ্নিপতি আমার দিদির চেয়ে বয়সে বেশ কিছুটা বড় ছিলেন । স্বদেশে তিনি অবস্থাপন্ন ছিলেন ও আরামপ্রদ জীবন-যাপন করতেন । অচেনা জলে সাঁতার কাটার ক্ষমতা তার ছিল না । ভিটেমাটি হারিয়ে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, বিদেশের মাটিতে সফলতার সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই লড়তে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেন না । এদেশে আসার পর তিনি বেশী দিন বাঁচেন নি ।
আমার বিধবা ভগ্নি অনেক কষ্টে দুই মেয়ে ও তিন ছেলেকে বড় করল, কিন্তু ওদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা ওর পক্ষে সম্ভব হল না; ওর সেই সম্বল ছিল না । আমরা দূরে থাকার দরুণ ও নিজেদের অর্থাভাব হেতু আমাদের পক্ষেও ওকে সাহায্য করা সম্ভব হয় নি ।
ডানদিকে আমার বিধবা জ্যেষ্ঠা ভগিনীর ছবি । দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার কাছে ঐ ভগ্নিপতির কোন ছবি নেই ।
জ্যেষ্ঠ ভগিনী চামেলী রায়
দেশত্যাগের পর ভগ্নিদের দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনী
আমার দুই দিদিকেই স্বভূমি ছেড়ে ভারতে প্রবেশের পর চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছিল । দুজনেই প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় ভারতে প্রবেশ করেছিল ।
ছোট দিদি (ফুলদি): ফুলেরতলে বাসস্থান স্থাপনের পর আমার ছোট ভগ্নিপতি একটি সুগন্ধি তেল প্রস্তুতকারক সংস্থার সেলস রিপ্রেসেণ্টেটিভের চাকুরী সংগ্রহ করেন । এটা কিছুদিন ওদের জীবন ধারণের পথে সহায়ক হল । এই পথ বন্ধ হয়ে গেলে আমার ভগ্নিপতি সপরিবারে স্থান ত্যাগ করে যোরহাট চলে যান । আমরা তখন যোরহাটে অবস্থান করছিলাম । সেখানেও আমার ভগ্নিপতি যখন যেমন পাওয়া যেত সেলস রিপ্রেসেণ্টেটিভ এর কাজ করতেন । যখন ভগ্নিপতির কোন কাজ বা আয় থাকত না ওঁর পরিবার তখন চরম দারিদ্র্যের সম্মুখীন হত । আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাবা-মা তখন যতটা সম্ভব এটা ওটা দিয়ে সাহায্য করতেন । আমার ভগ্নিপতি নানা ধরণের কাজ নিয়ে চেষ্টা করেছেন । পিতৃদেবের কাছ থেকে প্রেসের কাজও অনেকটা শিখে নিয়েছিলেন । বস্তুতপক্ষে আমরা যোরহাট ছাড়ার পর কিছুদিন এক প্রেসে কাজও করেছিলেন । যাহোক, আমার ভাগ্নে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই পরিবার দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে । আমর এই দিদির পুত্রকন্যারা সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত ও স্বচ্ছল ।
ফুলদির এক পুত্র, দুই কন্যা । পুত্র-কন্যারা সকলেই এখন বিবাহিত । প্রত্যেকেরই সন্তান-সন্ততি রয়েছে । দুর্ভাগ্যবশতঃ ফুলদির একমাত্র পৌত্র ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে অল্পবয়সেই মারা যায় । পৌত্রের মৃত্যুর পর ফুলদির পুত্র তথা আমার ভাগ্নে রঞ্জুর একটি মাত্র কন্যা সন্তান রইল । ২০১৭ সালের জুলাই মাসে রঞ্জু সেই কন্যার বিয়ে দেয় । ফুলদির জ্যেষ্ট কন্যা সবিতার এক পুত্র ও এক কন্যা; দুজনেই বিবাহিত, দুজনেরই একটি করে সন্তান রয়েছে । সবিতার স্বামী পীযূষ ২০২০ সালের ২১ শে মার্চ নিজেদের বাসভূমি ডিগবয়ে দেহত্যাগ করে । ফুলদির কনিষ্ঠা কন্যা নমিতারও এক পুত্র, এক কন্যা; এরা দুজনেও বিবাহিত, দুজনেরই একটি করে পুত্র সন্তান রয়েছে । নমিতার স্বামী আশীষ বিদ্যালয় শিক্ষকের পদ থেকে অবসর নিয়ে সপরিবারে যোরহাটেই বসবাস করছে । ফুলদির পৌত্রি ও দৌহিত্র দৌহিত্রীরাও সবাই প্রতিষ্ঠিত ।
আমার ভগ্নিপতি ২০১১ সালের ২৩শে জানুয়ারী দেহত্যাগ করেন । ঐ সময় দিদি-ভগ্নিপতি আসামের মরিয়ানী শহরে পুত্র রঞ্জুর সাথে বসবাস করছিলেন । পতির মৃত্যুর পর দিদি মরিয়ানীতেই পুত্রের সঙ্গে বাস করতে থাকে । ২০১৮ সালের ৬ই জুন ৮৬ বছর বয়সে ওখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে । মৃত্যুর কারণ ছিল গুরুতর হৃদরোগ । এমনিতেও দীর্ঘদিন দিদি নানা রকম বার্দ্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিল । আমার এই ভগ্নি-ভগ্নিপতি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ছিলেন যে ওঁদের পুত্র-কন্যার মত পুত্র-কন্যা পেয়েছিলেন । শিক্ষা-দীক্ষার স্তর যাই হোক না কেন, এই পুত্র-কন্যারা পিতামাতার প্রতি নিবেদিত প্রাণ ছিল । আমার ভগ্নি-ভগ্নিপতি দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত ছিলেন কিন্তু কখনও অবহেলা, উদাসীনতা, যত্ন বা চিকিৎসার অভাব নিয়ে কোন অনুযোগ করার সুযোগ পান নি । ওঁদের পুত্রকন্যারা ওঁদের যন্ত্রণা লাঘব করতে ও যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সর্বদাই সচেষ্ট ছিল । পুত্রবধু মণিও তার বিবিধ গৃহকর্মের মধ্যেও সর্বদা হাসিমুখে ওঁদের সেবাযত্ন করেছে ।
আমার ছোট ভগ্নিপতি ওঁর পরিবারের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত ছিলেন । পরিবারের কঠোর অর্থাভাবের সময় দিদি বিভিন্ন গুরুতর অসুখে ভুগেছে । আমার ভগ্নিপতি সেই সময় ওর চিকিৎসার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেন নি । চিকিৎসা করাবার অর্থ না থাকায় বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা করাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দয়া ভিক্ষা পর্যন্ত করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যোরহাট মিশন হাসপাতালের ক্ষেত্রে (দিদির তখন মরণাপন্ন অবস্থা), সফলও হয়েছিলেন । ঐ সব সময় একমাত্র আমার ভগ্নিপতির অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্যই দিদি বেঁচে উঠতে পেরেছিল । বাবা-মায়ের প্রতি আমার ভগ্নিপতির অসীম শ্রদ্ধাভক্তি ছিল । তিনি আমাদেরকেও ভালবাসতেন ।
আমার জ্যেষ্ঠা ভগিনী (দিদিবাবু) মূল ছিন্ন হয়ে ভারতে প্রবেশের পর থেকে সারাজীবন এক চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন যাপন করেছে, অবশেষে প্রায় বিনা চিকিৎসায় ওঁকে এক শোচনীয় মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে । স্বদেশে ওঁদের এক বর্ধিষ্ণু পরিবার ছিল, দেশ-ভাগ না হলে ওঁকে এরূপ দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাটাতে হত না বা এরূপ দুঃখজনক মৃত্যুও বরণ করতে হত না । আমি আমার মার কাছে শুনেছি ভারত-ভাগের পূর্ববর্তী সময়ে ঐ দিদি-জামাইবাবু যখন আমাদের বাড়ী আসতেন তখন ওঁদের সঙ্গে নৌকো ভর্তি করে খাদ্যশস্য, শাকসব্জি ও ফলমূল নিয়ে আসতেন । এই একই লোকেরা উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসার পর দু বেলার দু মুঠো অন্ন যোগাড় করতে গলদঘর্ম হয়ে যেতেন । অনেক সময় ওদের উপবাসেও থাকতে হত । ওরা দূরে থাকায় আমাদের পক্ষে সব সময় ওদের সাহায্য করাও সম্ভব ছিল না । আমাদের নিজেদের অবস্থাও ভাল ছিল না । তবু আমাদের মধ্যে কেউ ওদের কাছে গেলে এটা ওটা নিয়ে যেত । এক সময় ওরা যখন কিছুদিন আমাদের কাছাকাছি ছিল তখন মা-বাবা যতটা সম্ভব ঘন ঘন ওদের সাহায্য করেছেন । আমাদের আত্মীয়স্বজনদের দু-একজন ছাড়া কেউই বোধহয় ওদের মত দারিদ্যের যন্ত্রণা ভোগ করেন নি । বিনা চিকিৎসায় ওঁরা মৃত্যু বরণ করেন; পুত্র-কন্যাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতেও অপারগ হন । ওঁরা দারিদ্র্যের যে যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন তা ওঁদের পুত্রকন্যাদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করে এবং তাদের দু-একজনও অকালমৃত্যু বরণ করে ।
দিদিবাবু স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে আসামের কাছাড় জেলার লক্ষীপুর নামক স্থানে স্বল্পভাড়ার এক হতদরিদ্র গৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। একদা এক বর্ধিষ্ণু পরিবারের বঁধুর কি করুণ মৃত্যু । ওঁর মৃত্যুর দিন কয়েক পূর্বে আমি ওকে দেখতে গিয়ে এক হৃদয় বিদারক অবস্থা দেখেছিলাম । সে দৃশ্য এখনও বার বার আমার মনকে নাড়া দেয় ।
দিদিবাবুর তিন পুত্র ও দুই কন্যা । সকলেই বিবাহিত, সকলেরই সন্তান-সন্ততি রয়েছে । কন্যা সুলেখাই জ্যেষ্ঠ; ওর এক কন্যা, দুই পুত্র । দিদিবাবুর তিন পুত্র নন্দলাল, নণ্টু ও নিখিলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নন্দলাল ২০১০ সালে মারা যায়, পরবর্তী নণ্টু এর অনেক পূর্বেই স্ত্রী, এক পুত্র ও তিন কন্যা রেখে গত হয় । নণ্টুর তিন কন্যাই ইতিমধ্যে পাত্রস্থ হয়েছে । কনিষ্ঠ নিখিলই এখনও জীবিত ও দ্বিতীয়া স্ত্রী ও প্রথম পক্ষের একটি পুত্র সন্তান সহ দিলখুশবস্তির পৈতৃক ভিটাতে বসবাস করছে । নিখিল মিজোরামে কেন্দ্রীয় জল কমিশনের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসাবে কর্ম্মরত থেকে অবসর গ্রহণ করেছে । দিদিবাবুর অপর কন্যার বিষয় পরবর্তী অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছি । দিদিবাবুর এই পুত্রকন্যাদের কেউই শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারে নি ।
যারা দেশভাগের শিকার হল তাদের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দেখা দিল । দেশভাগের প্রত্যক্ষ ফল স্বরূপ হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাল । অনেকে প্রাণে বাঁচলেও নিঃস্ব রিক্ত হয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে ভুলে গেল । দিদিবাবুদের মত অনেকে সারাজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধে মান-সম্ভ্রম হারিয়ে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাল । কেবল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নিজেদের অদম্য কর্মশক্তির দ্বারা বা এদেশে বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় উঠে দাঁড়াতে পারল । এটাই উদ্বাস্তুদের বরাবরের কাহিনী ।
পিতৃদেবের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা আর আমাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি না থাকলে আমরাও হয়ত ভেসে যেতাম ।
অগ্রজা এবং ওদের পরিবারের সাথে আমার সংযোগ
জ্যেষ্ঠা দিদিবাবুর চেয়ে তার অনুজা ফুলদিদের সাথে আমি বেশী ঘনিষ্ঠ ছিলাম । হয়ত ফুলদিরা কাছাকাছি থাকার দরুণ তা ঘটেছিল ।
আবার প্রথমে শিক্ষা ও পরে চাকুরীগত কারণে আমি আসাম ত্যাগ করার পর দিদিবাবুদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । আমি তখন কালেভদ্রে শিলচর গেলে ওদের সঙ্গে কখনো কখনো দেখা করতে যেতাম । আমি আগেই বলেছি দিদিবাবুর সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়েছিল সত্তরের দশকের প্রথম ভাগে । এর দীর্ঘদিন পর ২০০৭ সালে আমি যখন আসাম ভ্রমনে যাই সেই সময় আমি স্থির করেছিলাম দিদিবাবুর দিকের ভাগ্নে ভাগ্নীদের সাথে সংযোগ পুনর্স্থাপন করব । সেই অনুযায়ী আমি ভাগ্নেদের তখনকার বাসস্থান লক্ষীপুর ও দিলখুশবস্তি গিয়ে ওদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করলাম । সঙ্গে ছিল আমার স্ত্রী ও দাদা-বৌদি । কিন্তু জ্যেষ্ঠা ভাগ্নী সুলেখা ওরফে ময়নার সাথে যোগাযোগ করতে আমাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল । ষাটের দশকের প্রথম ভাগের পর সুলেখার সাথে আমার আর দেখা হয় নি । আমি যখন যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি সেই সময় সুলেখা সপরিবারে শিলচরেই বসবাস করছিল । কিন্তু শিলচরে বসবাসকারী আমার দাদা সহ কারো সাথেই ওর যোগাযোগ ছিল না । যা হোক অনেক কষ্টে ও যে ভাড়াবাড়ীতে থাকত সেই বাড়িওয়ালির ফোন নম্বর জোগাড় করে সম্পর্ক স্থাপন করতে সফল হয়েছিলাম । বর্তমানে ওরা পুনরায় গৌহাটি ফিরে গেছে । দুর্ভাগ্যবশতঃ অনেক চেষ্টা করেও ঐ সময় দিদিবাবুর দিকের অন্য ভাগ্নী মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারি নি । ময়না ও মঞ্জু দুজনেই এক সময় আমাদের বাড়ীতে ছিল, দুজনেই আমার খুব প্রিয় ছিল ।
দীর্ঘদিন পর অনেক চেষ্টায় ছোট ভাগ্নী মঞ্জুর ফোন নম্বর যোগাড় করে ২০২০ সালের ২১শে মে ওর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই । ও এখন বিধবা, তিন পুত্র ও এক কন্যার জননী । জ্যেষ্ঠপুত্র মৃত, মধ্যমপুত্র ও কন্যা বিবাহিত । ডিমাপুর রেল স্টেশনের নিকটস্থ ডি-কলোনী নামক এলাকায় কনিষ্ট পুত্রের সাথে মঞ্জু বসবাস করে । সম্প্রতি ও নিজের একটি বাড়ী করেছে বলে জানিয়েছে ।যোগাযোগের পর ওকে ওর একটি ছবি পাঠাতে বলেছিলাম যা ও পাঠিয়েছিল । কঙ্কালসার চেহারার সেই ছবি দেখে আমি আঁৎকে উঠেছিলাম । চেহারায় চরম দারিদ্র্যজনিত ভাঙনের রেখা ও দেহে অপুষ্টির লক্ষণ সুস্পষ্ট । অথচ ও ছিল ওর মায়ের সবচেয়ে সুন্দর সন্তান; গৌরবর্ণা ও সুদর্শনা । আমি বাল্যকালে ওকে যা দেখেছি আমার কল্পনাকে সুদূর প্রসারিত করেও সেই চেহারার সাথে এই ছবির কোন সাদৃশ্য খুঁজে পেলাম না । যাহোক, ওর ছবি আমি আমাদের পারিবারিক গ্যালারিতে সংরক্ষণ করলাম; যতই দুর্দশাগ্রস্ত দেখাক ও ত আমাদেরই একজন!
আমার কিন্তু ফুলদি এবং ওর পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল । ফুলদির পুত্র রঞ্জু ও দুই কন্যা নমিতা ও সবিতা বলতে গেলে আমার চোখের সামনেই জন্মেছে । ওরা জন্মাবধি আজ পর্যন্ত আমার খুব ঘনিষ্ট । আমার কন্যাদের চেয়েও ওরা আমাকে বেশী ভক্তি-শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে । আমার ভগ্নি ও ভগ্নিপতি যখন আমাদের তদানীন্তন নিবাসস্থল যোরহাট আসেন তখনও (পূর্ববর্তী স্থানে প্রথম পুত্রের মৃত্যুর পর) তাঁদের কোন সন্তানাদি জন্মায় নি । পরবর্তী কালে যোরহাট থাকাকালীন সন্তানেরা একে একে জন্মায় । আমরা যোরহাট ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ওরা ওখানেই থেকে যান । বাবার মৃত্যুর পর মা মাঝে মাঝে যোরহাট গিয়ে ওদের কাছেই থাকতেন; দীর্ঘকাল যোরহাটে বাস করার ফলে মার পরিচিত পরিজন মূলতঃ যোরহাটেই ছিল । মা ওদের সাহচর্যে থাকতে ভালবাসতেন । মাকে নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে কখনো কখনো যোরহাট যেতে হত । তাছাড়া যোরহাট আমার শৈশবের ও প্রথম যৌবনের পীঠস্থান । যোরহাট ভ্রমণ সর্বদাই আমাকে আনন্দ দেয় । সুযোগ পেলে আমি এখনও যোরহাট যাই । ফলে ফুলদিদের সাথে আমার যোগাযোগ কখনও বিচ্ছিন্ন হয়নি । বরং সময়ের সাথে সাথে তা গাঢ়তর হয়েছে ।
আমার অগ্রজ ও তার পরিবার
আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীকৃষ্ণকান্ত দাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল । আমি যেমন পূর্বে বলেছি, আমাদের দেশত্যাগের সময় ঐ পরীক্ষায় বসার জন্য ও শ্রীহট্টে মামাবাড়ীতে থেকে যায় । পরে কোন এক সময় ও ভারতে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় । ভারতে আসার পর যোরহাটের জগন্নাথ বরুয়া কলেজ থেকে ও কলাবিভাগে স্নাতক হয় । পরবর্তীকালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে স্নতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে । মাস্টার ডিগ্রী লাভের পর ও প্রথমে কিছুদিন যোরহাটের লক্ষী ইউনিয়ন হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিল । পরে শিলচর গুরুচরণ কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক পদে যোগ দেয় । চাকুরী জীবনের সম্পূর্ণটাই ও ঐ কলেজেই অতিবাহিত করে এবং বিভাগীয় প্রধানের পদে থেকে অবসর গ্রহণ করে । ১৯৭০ এর দশকে শিলচরে ও একটি নিজস্ব বাড়ী পত্তন করে ।
আমার দাদার দুই বিয়ে । প্রথম বিয়ে হয় ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে এলাহাবাদবাসীনি কন্যা ঝর্ণা দাসের সাথে । আমি ততদিন চাকুরীতে যোগ দিয়েছি, কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমায় কর্মরত । এক মামা (রাধিকা কান্ত দাস), এক মেসো (ভূপেন্দ্র নাথ রায়) ও ভগ্নিপতি রজনী মোহন রায়ের সঙ্গে আমি ঐ বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম । ১৯৭২ সালের নবেম্বর মাসে সন্তান প্রসবকালে প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যু হলে দাদা ১৯৭৪ সালের প্রথমে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে । দ্বিতীয়া স্ত্রী সাবিত্রীর দিক থেকে ওর একটি পুত্র সন্তান লাভ হয়, নাম রাজু । রাজু ওরফে কল্যাণ ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে স্ত্রী সোহেলী ও পুত্র রাহুলকে নিয়ে আমেরিকার ডেনভার শহরে অধিষ্ঠিত । জীবৎকালে দাদা সস্ত্রীক কয়েকবার পুত্র দর্শনার্থে আমেরিকা ঘুরে এসেছে । যাত্রাপথে কোলকাতায় অবস্থানকালে ওদের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে । তাছাড়া ২০০৭ সালে আমি সস্ত্রীক শিলচর গিয়ে সপ্তাহখানেক ওদের সাথে ছিলাম ।
২০১০ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী এক মেসিভ হার্ট অ্যাটাকে দাদার মৃত্যু হয় । ওঁর বিধবা স্রী অতঃপর দাদার তৈরী ঐ বাড়ীতে একাকিনী বাস করতে থাকেন । দু-একবার আমেরিকায় পুত্রের কাছ থেকে ঘুরে আসেন । ২০১৪ সালের ৩০ শে এপ্রিল উষালগ্নে আত্মীয় বন্ধুহীন অবস্থায় বৌদি দেহত্যাগ করে । দাদা-বৌদির মৃত্যুর পর ওদের বাড়ীটি কিছুদিন ভাড়াটিয়াদের হেফাজতে ছিল । সম্প্রতি (সাল ২০২২) আমেরিকা প্রবাসী পুত্র বাড়ীটি বিক্রি করেছে ।
দাদার প্রথম পক্ষের স্ত্রী ঝর্ণা দাস
দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সাবিত্রী ও পুত্র রাজু সহ দাদা
তৎকালীন রেল ব্যবস্থায় অসাধুতার একটি উদাহরণ
তৎকালীন রেল ব্যবস্থায় উৎকোচ গ্রহণ সম্পর্কীয় একটি আকর্ষণীয় ঘটনা আমি এখানে স্মরণ করছি । ঘটনাটি ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসের । আমি তখন ডেপুটি মেজিস্ট্রেট ডেপুটি কালেক্টার হিসাবে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমায় কর্মরত । আমার দাদার বিয়ে ঠিক হয়েছে এলাহাবাদে । আমাদের দু-একজন আত্মীয়স্বজন ও দাদার এক বন্ধুর দাদার সাথে যাওয়ার কথা । দাদা আমাকে হাওড়া থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত রেলের দ্বিতীয় শ্রণীর টিকিটের ব্যবস্থা করতে বলল । সেই অনুযায়ী আমি যাত্রার দিন কয়েক আগে কোলকাতা এলাম । তখনও কম্প্যুটার আসে নি । রেলের কাউণ্টার থেকে টিকিট কাটতে হত । আমি হওড়া স্টেশনের কাউন্টারে হাওড়া থেকে এলাহাবাদ যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকিটের জন্য আবদনপত্র জমা দিলাম । সহজেই নির্দিষ্ট সংখ্যক সংরক্ষিত টিকিট পেয়ে গেলাম । এবার আসল খেলা শুরু হল । কাউণ্টার করণিক ও সুপারভইজার উভয়েই টিকিটের মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ দাবী করল । আমি দিতে অস্বীকার করলাম । আমি বল্লাম ওরা ওদের কর্তব্য করেছে, আমাকে কোন আনুকল্য দেখায় নি । এরপরও যখন ওরা বিরক্তিকর ভাবে ঐ অর্থ দাবী করতে লাগল তখন আমি আমার পরিচয় প্রকাশ করে বল্লাম আমি একজন মেজিষ্ট্রেট, দুর্নীতি বিরোধী আইনে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আমি সুনিশ্চিত করব । যেই মুহূর্তে ওরা আমার পরিচয় জানতে পারল সেই মুহূর্তে ওদের ব্যবহার পাল্টে গেল । ওরা বিচলিত হয়ে পড়ল, দোষ স্বীকার করে বার বার ক্ষমা চাইতে লাগল । লোকের তখনও আইনের ভয় ছিল। আমি বিষয়টির ওখানেই ইতি টানলাম, আর অগ্রসর হই নি । রেলের টিকিট বিক্রী ব্যবস্থায় কম্প্যুটার ও ইণ্টারনেটের সংযুক্তির পর এ সব ছোটখাট দুর্নীতি হয় লোপ পেয়েছে নয়ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সংখ্যায় পরিণত হয়েছে । কিন্তু স্ক্যাম নামক বৃহদাকার দুর্নীতি যেখানে সমাজের রুইকাতলা ও সীমাহীন অর্থ জড়িত তা সমাজের প্রায় সর্বত্র ছেয়ে গেছে । দেশ দুর্নীতিগ্রস্তদের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে । এর বিলুপ্তি ঘটাবে কে ?
গ্যালারি: আমার ভাগ্নে, ভাগ্নী. ভাইপো ও তাদের পরিবার
ফুলদির জ্যেষ্ঠ কন্যা সবিতা, ওর স্বামী পীযূষ (বর্তমানে মৃত), কন্যা পম্পি ও জামাতা শান্তনু । সবিতার ডিগবয়ের বাড়ীতে
ফুলদির কনিষ্ঠা কন্যা নমিতা, ওর স্বামী আশীস, পুত্র বাবলু ও কন্যা টুম্পা
দিদিবাবুর জ্যেষ্ঠা কন্যা সুলেখা, মেয়ে রুবি,
জামাতা নীলমনি ও দৌহিত্রী
দিদিবাবুর কনিষ্ঠপুত্র নিখিল (দাঁড়ানো শেষ সারির প্রথমে) ও জ্যেষ্ঠপুত্রের পরিবার বর্গের সঙ্গে আমার স্ত্রী ও দাদা-বৌদি
স্ত্রী সোহেলি ও পুত্র রোহিত সহ ভ্রাতুস্পুত্র রাজু
দিদিবাবুর জ্যেষ্ঠ কন্যা সুলেখা (সোফায় ডান দিক থেকে ২য়) ও তার পরিবার আমার স্ত্রী ও বৌদির সাথে শিলচরে দাদা বাবুর বড়িতে । সল ২০০৭
ফুলদির পুত্র রঞ্জু ও স্ত্রী মণি
দিদিবাবুর কনিষ্ঠা কন্যা ডিমাপুরবাসীনি মঞ্জু
রঞ্জুর কন্যা মাম্পি ওরফে তৃষিতা
দাদাবাবুর সঙ্গে শেষ একত্রবাস
আমার দাদাকে আমি দাদাবাবু বলে ডাকতাম । ২০০৭ সালে দীর্ঘ ২৫ বৎসর পর আমি যখন আসাম ভ্রমণে যাই সেই সময় শিলচরও গিয়েছিলাম এবং দিন সাতেক দাদার বাড়ীতে ছিলাম । ঐটি-ই আমাদের শেষ একত্র বাস । আমি দাদার শেষকৃত্যে যোগ দিতে শেষবারের (২০২২সালের সাপেক্ষে) মত শিলচর ছিলাম ১২ই ফেব্রুয়ারী থেকে ২০শে ফেব্রুয়ারী । বাড়ীতে শেষ মুহূর্তে হঠাৎ জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় টিকিট কেটেও বৌদির শেষকৃত্যে যেতে পারি নি ।
শিলচরের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন
২০১৪ সাল থেকে বৎসরে অন্ততঃ একবার আসাম ভ্রমণ আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে । শিলচরে বর্তমানে আমাদের অতি দূর সম্পর্কিতও কেউ না থাকায় আমার ভ্রমণসূচী থেকে শিলচরের নাম বাদ পড়ে গেছে ।
যে শিলচর একদা আমাদের নিকট আত্মীয়ের দ্বারা ভরপুর ছিল আজ তা আমার কাছে পরিত্যক্ত শহর । শিলচর দুর্দিনে একাধিক বার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে । আমি শিলচরে দীর্ঘদিন বাস করিনি বটে, কিন্তু শিলচর আমার কাছে ছিল অনেকটা অবসর বিনোদনের জায়গা । শিলচরের উদ্দেশে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে এই পরিচ্ছেদ শেষ করছি ।
পুনঃ
সবশেষে জানাই পুরনো শিলচরের বর্তমান রূপ দেখতে শেষবারের মত আমি শিলচর গিয়েছিলাম ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষে ।
<<< হোম পেজে যেতে বাঁ দিকের বোতামে টেপ বা ক্লিক করুন ।