আর্কিটেক্ট ডানকান ম্যাকলয়েড কর্তৃক পরিকল্পিত উনিশ শতকে নির্মিত মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারী রাজপ্রাসাদ
সূচীপত্রের যে কোন বিষয়ের উপর ক্লিক করে সেই বিষয় সংক্রান্ত অংশে যাওয়া যাবে ।
সূচীপত্র
নিয়োগ
আমার প্রাক্পরিচয় (antecedent) ও আনুষঙ্গিক নথিপত্র যাচাই করার পর আমাকে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসে [WBCS (Ex)] নিয়োগ করা হল এবং মুর্শিদাবাদ জেলার অবেক্ষাধীন (on probation) উপশাসক ও উপসমাহর্তা (Deputy Magistrate & Deputy Collector) পদে বহরমপুর শহরে পোস্টিং দেয়া হল ।
চাকুরীতে যোগ দিতে আমার প্রাথমিক দ্বিধা
আমার এম্. এসসি পরীক্ষা তখনও বাকি ছিল । রাজ্য সিভিল সার্ভিসকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করতে প্রাথমিকভাবে আমার কিছু দ্বিধা ছিল, বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে আমি দিনকয়েক সময় নিলাম । শিক্ষাজীবনে তখন পর্যন্ত আমি কখনো কারো কাছে দ্বিতীয় হই নি । যৌবনের চিন্তাধারায় মনে হয়েছিল কর্ম্মক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তরের সিভিল সার্ভিসে কাজ করা আমার পক্ষে কষ্টকর হবে[1] । সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস[2] আই. এ. এস. (IAS) ছিল প্রথম স্তরের সিভিল সার্ভিস । রাজ্য সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের প্রায় সম্পূর্ণ কর্ম্মজীবন সর্বভারতীয় সার্ভিসের অফিসারদের সরাসরি অধীনে কাজ করতে হত ।
কার্যে যোগদান
যাহোক, বিভিন্ন বিষয় যথা পারিশ্রমিক, কর্ম্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য তথা সেই সময়ে প্রাপ্তব্য অন্যান্য পেশার তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা, জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের সুযোগ, বয়স ইত্যাদি বিবেচনা করে আমি এই চাকরিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলাম ।[3]
১৯৬৭ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর সকালে শয্যাসামগ্রীর একটি হোল্ডল এবং পরিধেয়, বইপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি স্টীলের ট্রাঙ্ক নিয়ে লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেণে শিয়ালদহ থেকে বহরমপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । পথে কৃষ্ণনগরে ট্রেণ থামলে ওখানে পোস্টড আমার ব্যাচমেট চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে দেখা হল; ও আমার সঙ্গে দেখা করতে স্টেশনে এসেছিল । ওর সঙ্গে ট্রেণ ছাড়া অবধি কিছুক্ষণ গল্পগুজব হল । ট্রেণ ছেড়ে দিল । যথাসময়ে আমার গন্তব্যে পৌঁছুলাম । স্টেশন থেকে একটি রিক্সা নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে পৌঁছুলাম; কাগজপত্র সই করে মুর্শিদাবাদ জেলার অবেক্ষাধীন উপশাসক ও উপসমাহর্তা রূপে কাজে যোগ দিলাম; আমার কর্ম্মজীবন শুরু হল ।
জেলাশাসক ছিলেন বরদা চরণ শর্মা । দুজন অতিরিক্ত জেলাশাসক ছিলেন অনীশ মজুমদার (সাধারণ অর্থাৎ সর্বঘটে কলা) ও কে পি ঘোষ (জমি অধিগ্রহণ) । ওঁদের সকলের সাথেই সৌজন্য সাক্ষাৎ করলাম । অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও আলাপ পরিচয় হল । এঁদের মধ্যে ছিলেন মনোজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুহাস ভট্টাচার্য, আর, কে, দে, নির্মাল্য মূখার্জী, সূর্য কুমার মণ্ডল (ট্রেজারী অফিসার), পি এন নস্কর ও অন্যান্য । পরে সদর মহকুমা শাসক মৃণাল ব্রহ্মচারীর সাথেও আলাপ হয়েছিল । অবেক্ষাধীন অফিসারদের মধ্যে ছিলেন গণেশ চন্দ্র চক্রবর্তী, নিত্যগোপাল চৌধুরী, নৃপেন ভট্টাচার্য ও আরো কয়েকজন । এরা সকলেই বিভিন্ন স্তরের ডব্লুবিসিএস অফিসার ছিলেন ।
শিক্ষাক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও অর্থাৎ কর্ম্মজীবন নির্বাচনে বা কর্ম্মস্থলে যোগ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছিল একান্তভাবে আমার নিজস্ব । এ ব্যাপারে আমার পরিবারের কারো কোন ভূমিকা ছিল না ।
আমি আগেই বলেছি পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসে আমার প্রবেশ পরিকল্পনা করে ঘটেনি, দৈবক্রমে ঘটেছে । যদি আমি আমার দাদার জন্য ঐ পরীক্ষার আবেদনপত্র আনতে না যেতাম তাহলে চাকরিতে প্রবেশ করা ত দূরের কথা, এই চাকরী সম্বন্ধে কিছু জানতেই পারতাম না ।
প্রথম সারির রাজ্য সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে মোহভঙ্গ
কাজে যোগ দেয়ার পর বহরমপুরের স্থানীয় ডাকবাংলোয় আমাকে সাময়িকভাবে থাকতে দেয়া হল; আমি ভাবলাম সরকারী অতিথিশালা, এটা নিশ্চয়ই উচ্চ মানের হবে এবং এখানে বসবাসের উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকবে । অচিরেই মোহভঙ্গ হল, সভয়ে দেখলাম ডাকবাংলোটি ইঁদুর-ছারপোকার আস্তানা, এখানে ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণটুকুও নেই । প্রথম রাত্রে আমি ঘুমোতেই পারলাম না । ঘটনা প্রবাহে আমি বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়লাম, বাস্তবের রূঢ় আঘাতে রাজ্যের মুখ্য সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে আমার ধ্যানধারণা ভেঙে চূরমার হয়ে গেল । এই চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথাও একবার ভেবেছিলাম । এটা অস্বাভাবিক নয়, এরূপ নিম্নমানের স্থান যদি কোন সার্ভিসের নবাগত সদস্যকে রাত্রিযাপনের জন্য দেয়া হয় তবে তার মনে সার্ভিসটির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অকিঞ্চিৎকরতা ব্যতীত আর কি ধারণার সৃষ্টি হওয়া সম্ভব?
বসবাসের জন্য সরকারী ফ্ল্যাট বরাদ্দ
যাহোক, শেষ পর্যন্ত চাকরি ছাড়ি নি, সৌভাগ্যবশতঃ ঐ বাংলোতেও আমাকে বেশী দিন থাকতে হয়নি । অজয় সিন্হা (বর্তমানে মৃত) নামে একজন অবেক্ষাধীন আই. এ. এস্. অফিসার দীর্ঘদিনের সেট্লমেন্ট ট্রেনিং এ যাওয়ার প্রাক্কালে তাঁর দু কামরার সরকারী ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দিয়ে যান । আমি আবেদন করায় মুর্শিদাবাদের তদানীন্তন জেলাশাসক বরদা চরণ শর্মা মহাশয় ঐ ফ্ল্যাটটি আমার নামে বরাদ্দ (allot) করে দেন ।
মুর্শিদাবাদের তদানীন্তন জেলাশাসকের সহায়তা ও প্রভাব
শর্মা মহাশয়ও আসাম থেকে এসেছিলেন । যে কোন কারণেই হোক তিনি আমাকে বিশেষ পছন্দ করতেন । আমার পরবর্তী চাকরি জীবনেও যখনই ওঁর অধীনে কাজ করেছি বা কোন সমস্যা নিয়ে ওঁর কাছে হাজির হয়েছি তখনই ওর ব্যবহারে এই বিশেষতা অনুভব করেছি । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি ঘটনার উল্লেখ করতে পারি, যখন তিনি কোন এক জেলার জেলাশাসক হিসাবে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এটা জানতে যে আমার ছুটির আবেদনে কাটছাঁট করে আমার উর্ধতন অফিসার এসডিও. যে পরিমাণ ছুটি সুপারিশ করেছিলেন তা আমার জন্য যথেষ্ট কি না । আমি তখন এক দূরবর্তী মহকুমায় কর্ম্মরত কেবল একজন অবেক্ষাধীন অফিসার, সবে বছর দুয়েক চাকুরীতে নিযুক্ত হয়েছি । সাধারণতঃ জেলাশাসকরা তাঁদের কর্ম্মব্যস্ততার মধ্যে রাজ্য সিভিল সার্ভিসের অবেক্ষাধীন অফিসারদের ব্যাপারে মাথা ঘামাতেন না । সে যাক, আমি জেলাশাসকের প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তরই দিয়েছিলাম । চাইলে তখন আমি আমার ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারতাম । কিন্তু নিজের কিছু অসুবিধা সত্বেও সার্ভিসের একজন বরিষ্ঠ সদস্যের সুপারিশকে আমি খেলো করতে চাই নি ।
ভারত সরকারের সচিব স্তরের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করে পরবর্তী পর্যায়ে শ্রীশর্মা কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনেলের (কোলকাতা বেঞ্চ) সদস্য পদ সহ বিভন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । অবশেষে তিনি নিজস্থান গুয়াহাটিতে অবসর জীবন যাপন করতে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যান । আমি যে সকল সৎ ও ন্যায়পরায়ণ অফিসারের অধীনে কাজ করেছি শ্রীশর্মা তাঁদের অন্যতম । সিভিল সার্ভেন্ট হিসাবে আমার কর্ম্মজীবনে ওঁর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে । কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ওঁর সহায়তা পেয়েছি ।
বহরমপুরে আমার বসবাস ও বাবা-মার প্রতি দায়বদ্ধতা
বহরমপুরে আমাকে যে ফ্ল্যাটটি দেয়া হয়েছিল সেটি আমি গনেশ চন্দ্র চক্রবর্তী নামে এক সহকর্ম্মীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলাম । আমরা একসাথে থাকতাম । একজন বৃদ্ধা বিধবা মহিলা আমাদের রান্নাবান্না করে দিতেন; তিনি ভাল রাঁধুনী ছিলেন । সেকালে বহরমপুরে ন্যায্য দামে বিভিন্ন ধরণের টাট্কা শাকসব্জী ও মাছ পাওয়া যেত । সুতরাং পরিমিত খরচে আমরা রকমারি ভাল খাবার খেতে পারতাম ।
মূল বেতন ৩২৫ টাকার পটভূমিতে আমার সর্ব্বমোট বেতন ছিল ৪১৮.৩৫ টাকা । হাতখরচ ও বাড়ীভাড়া সহ সব খরচ মিটিয়েও আমি আমার বাবাকে প্রতি মাসে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পাঠাতে পারতাম; বাবা-মায়ের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা, বাবা-মা তখন দাদার কাছে থাকতেন । ষাটের দশকের মূল্যমানে টাকাটা যথেষ্ঠই ছিল । আইএএস. সহ সর্বভারতীয় অফিসারদের প্রবেশকালীন মূল বেতন তখন ছিল ৪০০ টাকা ।
এখানেই আমি জীবনের প্রথম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট খুলি । বাবার কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট ছিল না বা ব্যাঙ্কে রাখার মত অর্থও ছিল না । সম্ভবতঃ দাদারও চাকুরী শুরুর আগে কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট ছিল না ।
প্রশিক্ষণ
চাকরির শর্ত অনুযায়ী একজন ডব্লিউবিসিএস অফিসারকে দু বছর কাল অবেক্ষাধীন (on probation) থাকতে হত । এই সময়ের মধ্যে তাকে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ (ট্রেনিং) সম্পূর্ণ করতে হত এবং হিন্দি, আইন, অ্যাকাউন্টস ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভাগীয় পরীক্ষায়[4] উত্তীর্ণ হতে হত । সেকালে রাজ্য সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্য কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র[5] ছিল না । আমাদের ছিল কাজের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ।
এক্ষণে রাজ্য সিভিল সার্ভিস অফিসারদের জন্য একটি পুরোদস্তুর প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে । সিভিল সার্ভিস অফিসারদের অবেক্ষাধীন সময়ের একটি অংশ আভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে এখানে কাটাতে হয় । এই শ্রেণীর অফিসারদের গাড়ী চালাবার প্রশিক্ষণ দেয়ারও ব্যবস্থা হয়েছে ।
বহরমপুর কালেক্টরেটে (জেলাশাসকের অফিস) কাজে যোগ দেয়ার পরই অফিস অধ্যক্ষ জেলা শাসকের অনুমোদনক্রমে আমার প্রশিক্ষণ সূচী তৈরী করলেন । অধ্যক্ষ মহাশয় ছিলেন কড়া প্রকৃতির ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ । আমরা সদ্য কলেজ ফেরৎ সরকারী রীতিনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ অবেক্ষাধীন অফিসাররা তাঁকে রীতিমত সমীহ করে চলতাম । আমাদের দৈনন্দিন কাজের ডায়রীও ওঁর মাধ্যমেই জেলাশাসকের কাছে পেশ হত ।
জেলার সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম্ম মূলতঃ জেলাশাসকের অফিস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় । সেইজন্য জেলাশাসকের অফিসে বিভিন্ন শাখা রয়েছে । প্রশিক্ষণ সূচী অনুযায়ী কালেক্টরেটের বিভিন্ন শাখার কর্ম্মপ্রণালী শিক্ষণের জন্য আমাকে পর্যায়ক্রমে ঐ সব শাখায় একাধিক দিন যুক্ত থাকতে হয়েছিল ।
ইংলিশ সেক্সন নামক শাখায় আমার প্রথম সংযুক্তি হয় । এখানে আমি নির্বাহ-সহায়কের সাথে বসে কি ভাবে নথি তৈরী করতে হয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত চিঠিপত্র কি ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, কি ভাবে নোট লিখতে হয় ও বিচার্য বিষয়ের উপর কি ভাবে পরামর্শগত মন্তব্য লিখতে হয় শিখলাম । এক কথায়, এখানে আমি সরকারী অফিসের করেসপণ্ডেন্স বিষয়ক মূল তত্ত্ব শিখলাম ।
এতদ্ব্যাতীত এখানে কর্মরত থাকাকালীন আমি যে সকল শাখায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম তার মধ্যে ছিল জুডিশিয়াল মুন্সিখানা যেখানে বিচার ও বিচারকল্প সংক্রান্ত বিষয়াদি বিবেচিত হত, রেভিন্যু মুন্সিখানা যেখানে রাজস্ব সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বিবেচিত হত, বিনোদন শাখা যেখানে ক্রীড়া, সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা ইত্যাদি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সমূহের অনুমতি, লাইসেন্স, ট্যাক্স ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হত, অস্ত্র-শস্ত্রাদির লাইসেন্স প্রদান ও নবীকরণ জাতীয় কাজকর্ম্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মস সেক্সন ইত্যাদি ।
আগের বছরের প্রদেয় স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অবতীর্ণ
আমার শিক্ষাজীবনের কথা বলতে গিয়ে আমি আগেই বলেছি ১৯৬৫-৬৬ শিক্ষাবর্ষের অন্তে অনুষ্ঠিতব্য এম. এসসি পরীক্ষা বর্জন করেছিলাম । এক্ষণে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষাসূচী ঘোষিত হল । আমি ২৫শে মার্চ ১৯৬৮ থেকে ১৬ই এপ্রিল ১৯৬৮ পর্যন্ত ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিলাম । পরীক্ষার হলে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা নেই দেখে আমার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হল । মানসিক অস্থিরতায় (due to nervousness) জানা প্রশ্নের উত্তর লিখতেও বিলম্ব হতে লাগল, বার বার ভুল করতে লাগলাম । আমার ছাত্রজীবনে কখনও এরূপ ঘটনা ঘটেনি । মহামূল্যবান সময় পড়াশুনার বাইরে অপচয় করেছি, এই উপলব্ধি আমাকে অনুশোচনায় ভরিয়ে দিল । কোনভাবে পরীক্ষা সম্পূর্ণ করলাম । যথাসময়ে ফল প্রকাশিত হল । উত্তীর্ণ[6] হলাম বটে, কিন্তু ফল আমার তদবধি অর্জিত মানদন্ডের কাছাকাছিও এল না; আমি উচ্চ দ্বিতীয় শ্রেণী পেলাম ।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকাংশের পড়াবার পদ্ধতি ও দেরীতে ভর্তির সুযোগ আসায় মাস তিনেকের বকেয়া পড়ার বোঝা মূলতঃ এর জন্য দায়ী ছিল, তথাপি আমার নিজের গাফিলতিকেও দায়ী না করে পারি না । এই বিষয়ে বিস্তারিত আমার ছাত্রজীবনের অধ্যায়ে আলোচনা করেছি ।
আমি কখনও এই আত্ম-অবমাননা ভুলতে পারব না, এবং এই যন্ত্রণা থেকে কখনও নিষ্কৃতি পাব না । আমি কখনও ভুলতে পারব না শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে আমি পড়াশোনাকে অবহেলা করেছিলাম । স্নাতকোত্তর পঠন কালে আত্মবিস্মৃত হয়ে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পড়াশোনায় নিয়োজিত করতে ব্যর্থ হয়েছি, এই পদস্খলনের জন্য নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না ।
বহু মূল্য দিয়ে শিক্ষা পেলাম, সময়ের কাজ সময়ে না করতে পারলে ইপ্সিত লাভ করা যায় না ।
ট্রেজারী প্রশিক্ষণ
এম্. এসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমি হতাশ মনে বহরমপুরে ফিরে এলাম এবং প্রশিক্ষণ যে পর্যায়ে ছেড়ে গিয়েছিলাম সেখান থেকে পুনরায় আরম্ভ করলাম। সূর্য কুমার মণ্ডল নামে একজন বয়স্ক ভালোমানুষ ট্রেজারী আধিকারিকের তত্বাবধানে একটানা ছয় সপ্তাহের নির্ধারিত ট্রেজারী সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করলাম । ট্রেজারীতে আমি সরকারী অর্থ ব্যবহার এবং তার হিসাব-নিকাশ সংক্রান্ত বিধি ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হলাম ।
বহরমপুর ছিল নন্-ব্যাঙ্কিং ট্রেজারী যেখানে নগদে লেনদেন স্টেট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে হত । এই জন্য ব্যাঙ্ক ও ট্রেজারীকে কঠোর সমন্বয় করে কাজ করতে হত । দিনের শেষে ব্যাঙ্ককে প্রমাণক সহ সরকারী নগদ লেনদেনের তালিকা (scroll) ট্রেজারীতে পাঠাতে হত । ট্রেজারী তা নিজের হিসাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা পরীক্ষা করে জেলার মোট দৈনিক সরকারী আয়ব্যয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করত । ট্রেজারীকে জেলার একত্রিকৃত হিসাব নির্দ্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মহাগাণনিকের (Accountant General) নিকট পাঠাতে হত । অনুরূপ ভাবে স্টেট ব্যাঙ্ককে তাদের মাধ্যমে কৃত জেলার সরকারী নগদ লেনদেনের একত্রিকৃত হিসাব রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে পাঠাতে হত । রাজ্য ও রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মোট আয়ব্যয়ের হিসাবের সামঞ্জস্যসাধন মহাগাণনিক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্তরে সমাধা করা হত । জেলাশাসক আমার ট্রেজারী প্রশিক্ষণ ডায়রী পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছিলেন ।
মহকুমা প্রশিক্ষণ
ট্রেজারী প্রশিক্ষণ শেষে মহকুমা প্রশাসনে প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে বহরমপুরের সদর মহকুমা শাসকের নিকট পাঠানো হল । এখানে আমি মহকুমা শাসক ও তার অফিসের কাজকর্ম্ম সম্পর্কে জ্ঞাত হলাম । মৃনাল কান্তি ব্রহ্মচারী নামে আমাদের সার্ভিসের একজন বরিষ্ঠ (senior) সদস্য তখন বহরমপুরের মহকুমা শাসক ছিলেন । শ্রীযুক্ত ব্রহ্মচারী ছিলেন সুদর্শন যদিও বিরলকেশী । তিনি মাঝে মাঝে তাঁর বাংলোয় আমাদের মত অবেক্ষাধীন অফিসারদের চায়ে আমন্ত্রণ জানাতেন । সেখানে আমরা সান্ধ্য আড্ডায় যোগ দিতাম । মিসেস ব্রহ্মচারী ছিলেন অমায়িক ও মিশুকে । তিনি আমাদের চা জলখাবার খাওয়াতেন । শ্রীমতি ব্রহ্মচারী রবীন্দ্রসঙ্গীতেও পারদর্শিনী ছিলেন । আমি প্রথমে যে দুর্দশাগ্রস্ত ডাকবাংলোয় উঠেছিলাম মহকুমা শাসকের বাংলো ছিল তার পাশেই ।
মহকুমা প্রশিক্ষণে থাকাকালীন আমি আমার চাকুরীজীবনের একমাত্র ইন্কোয়েষ্টটি করেছিলাম । ইন্কোয়েষ্ট হল ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৪ ধারায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধরণের তদন্ত । আমি যে ইন্কোয়েষ্টটি করেছিলাম সেখানে একটি অর্ধবিকৃত মৃতদেহ ধানক্ষেতের পাশে একটি নালায় পড়েছিল । ইন্কোয়েষ্টের আবশ্যকতা অনুযায়ী দেহে আঘাতের চিহ্ন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রকৃত অবস্থা এবং মৃত্যুর আপাতদৃশ্য কারণ ইত্যাদি ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে আমার উপস্থিতিতে লিপিবদ্ধ করে পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল ।
অবেক্ষাধীন অফিসারদের বিশেষ করণীয়
কালেক্টরেটে অবেক্ষাধীন অফিসারদের (প্রবেশনার) বসার জন্য আলাদা একটি ঘর ছিল । এই অফিসারদের একটি সাধারণ দায়িত্ব ছিল জেলাশাসকের নামে যে চিঠিপত্র পাঠানো হত সেগুলোর অনুমোদিত চূঢ়ান্ত প্রতিলিপি সই করা । এই প্রকার প্রতিলিপি সম্বলিত সই করার প্যাড অফিস থেকে প্রবেশনারদের ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হত । আমরা প্রবেশনাররা যে যখন পারতাম চিঠি সই করে দিতাম; প্রয়োজনে মূল ফাইলটি যা থেকে চিঠিটি পাঠানো হচ্ছে সেটি চেয়ে পাঠানো হত । আমার মনে হয় এই প্রক্রিয়ার পশ্চাতে সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ছিল জেলার দৈনন্দিন প্রশাসনের সঙ্গে প্রবেশনারদের পরিচিত করানো এবং তাদেরকে ব্যস্ত রাখা । সই করার সময় চিঠিগুলো বা ক্ষেত্রবিশেষে মূল ফাইল পড়ে প্রবেশনাররা জানতে পারত কালেক্টরেটে বিভিন্ন বিষয়ে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয় ।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ
আমার বহরমপুরে অবস্থান কালে আমি নাগপুর সিভিল ডিফেন্স কলেজে অসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম । পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা সাতজন আধিকারিক ঐ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলাম । ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সিভিল অফিসারদের অসামরিক প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের উপর জোর দেয়া হচ্ছিল ।
অজন্তা-ইলোরা দর্শন
প্রশিক্ষণ চলাকালীন এক সপ্তাহান্তে (week-end) আমরা নিজেদের ব্যবস্থায় দুই রাত্রি এক দিনের অজন্তা ইলোরা ভ্রমণে যাই । আমরা বিকালের ট্রেনে নাগপুর থেকে জলগাঁও যাই; সেখানে রাত্রিবাস করে পরদিন অজন্তা ইলোরা দর্শন করে চাল্লিশগাঁও থেকে রাতের ট্রেন ধরে ভোরবেলা নাগপুর পৌঁছুই । সময়াভাবে আমরা অজন্তা থেকে ১০০ কি. মি. দূরে ঔরাঙ্গাবাদ যেতে পারিনি । ঔরাঙ্গাবাদে অনেক দর্শনীয় স্থান ছিল । কিন্তু আমাদের সময় ছিল না, প্রশিক্ষণে উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে যথাসময়ে ফিরে আসা জরুরী ছিল । আমার সেই সময়কার অজন্তা-ইলোরা ভ্রমণের বিবরণ
আমার মূল ইংরেজী ওয়েবসাইটের "TRAVELOGUE Part A" নামীয় পাতায় দেখা যাবে ।
পরবর্তী কালে এই তাৎক্ষণিক দর্শনকে পূর্ণতা দিতে আমি বন্ধুবর আশুতোষ পালের সঙ্গে ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে অজন্তা ইলোরা সহ ঔরাঙ্গাবাদের বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানগুলো সপ্তাহকাল ব্যাপী পরিভ্রমণ করি । ইলেকট্রনিক এলবাম সহ ঐ ভ্রমণের বিবরণও ঐ ট্রেভেলগের B অংশের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
আশু ও আমি
নাগপুরের একটি অভিজ্ঞতা
নাগপুর শহরে যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে সাইকেল খুব জনপ্রিয় ছিল । পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সাইকেল ব্যবহার করত । ভাড়ায়ও সাইকেল পাওয়া যেত । একদিন বিকালে আমরা কয়েকজন প্রশিক্ষণাধীন আধিকারিক কয়েকটি সাইকেল ভাড়া করে শহর পরিক্রমায় বেরিয়েছিলাম । প্রতিটি সাইকেলে সামনে একজন ও পিছনে একজন করে মোট দুজন আরোহী ছিল । সহসা এক পুলিশ কন্স্টেবল (Constable) আমাদের গতিরোধ করে ও ম্যাজিস্ট্রেটের (ওর ভাষায় "ন্যায়াধীশ") কাছে নিয়ে যেতে চায় । জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি নাগপুর শহরে সাইকেলে একাধিক ব্যক্তি বহন করা বেআইনি । কন্স্টেবল সাহেবকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ও নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে অনেক কষ্টে নিষ্কৃতি পেলাম।
প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ সমাপ্তিকরণ
বহরমপুরে থাকাকালীন আমি কালেক্টরেটের বিভিন্ন শাখার নির্ধারিত প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করি।
প্রশিক্ষণ: বিচার-বিভাগীয় সংযুক্তি
আমাদের প্রশিক্ষণের আর একটি অঙ্গ ছিল বিচার বিভাগীয় সংযুক্তি । এই অংশে জেলা জজের সাথে বসে তিনটি দায়রা আদালতে বিচারক্ষম (Sessions triable)মামলায় সাক্ষীদের বয়ান লিপিবদ্ধ করতে হত । অনুরূপ ভাবে ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে বসে তিনটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের বিচারসাধ্য (triable by magistrate of the first class) মামলায় সাক্ষীদের বয়ান লিপিবদ্ধ করতে হত । পরে বয়ানগুলোর বিভিন্ন অংশ ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের (Indian Evidence Act) কোন কোন ধারাবলে গ্রহনীয় তা নির্দেশ করে পুরো নথিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত আদালতে হাজিরার শংসাপত্র সহ রাজ্য সরকারের কাছে গ্রহণ করার জন্য পাঠাতে হত । বহরমপুরেই আমি দায়রা আদালতের কেস তিনটির বয়ান নেওয়া সম্পূর্ণ করেছিলাম । ম্যাজিষ্ট্রেটের বিচারযোগ্য কেসগুলোর সাক্ষীদের বয়ান পরবর্তী কর্মস্থলে নিয়েছিলাম । বহরমপুর থেকেই আমি প্রথম বিভাগীয় পরীক্ষাও দিয়েছিলাম ।
জেলার বিচার ব্যবস্থা প্রশাসন থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর সিভিল সার্ভিস অফিসারদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এই বিচার বিভাগীয় সংযুক্তির প্রয়োজন ফুরিয়েছে । জানিনা এটি এখনও ঐ শ্রেণীর অফিসারদের প্রশিক্ষণ সূচীর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কি না ।
বহরমপুরে বৃটিশ উত্তরাধিকারের নিদর্শন
বহরমপুরে বৃটিশ রাজত্বের অনেক নিদর্শন ছিল । ব্যারাক স্কোয়ার নামে একটি বর্গক্ষেত্রাকার মাঠের চারদিক ঘিরে বৃটিশ আমলে তৈরী দালান বাড়ীতে কালেক্টরেট সহ বিভিন্ন অফিস ও বরিষ্ঠ আধিকারিকদের বাসভবন ছিল । মাঠটিকে ব্যারাক স্কোয়ার বলা হত কারণ এককালে এর চারদিকের বাড়ীগুলো বৃটিশ সেনাবাহিনীর ব্যারাক হিসাবে ব্যাবহৃত হত । আমাদের সময় কোলকাতার দিক থেকে শহরে প্রবেশের মূল রাস্তার সমান্তরালে অবস্থিত মাঠটির বাহু বরাবর গথিক স্থাপত্য রীতির অনুকরণে তৈরী তিনটি সমদর্শ দালান ছিল । এর দুটিতে ছিল কালেক্টরেট অফিস আর তৃতীয়টিতে টেকস্টাইল (Textile) কলেজ । টেকস্টাইল কলেজ ও পাশের দালান বাড়ীর সম্মুখ ভাগের ফাঁকা জায়গায় অবস্থিত ছিল শহরের বাসস্ট্যাণ্ড । মাঠের বিপরীত দিকে অবস্থিত ছিল জেলাশাসকের বাংলো । এর পাশে অনুরূপ একটি বাড়ীর এক ভাগে ছিল অতিরিক্ত জেলাশাসকের বাসস্থান ও অন্য ভাগে সার্কিট হাউস । বর্গাকার মাঠের অপর দুই পাশে জেলা প্রশাসনের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বাসস্থান ছিল । অন্যান্য আধিকারিকদের জন্য কালেক্টরেটের অদূরে লালদীঘি নামক স্থানে একাধিক সরকারী আবাসন ছিল । এই আবাসনগুলির একটিতে আমি থাকতাম ।
চাকুরীজীবনের প্রথম
বিভাগীয় তদন্ত
জেলাশাসকের বাংলোর পশ্চাদভাগ দিয়ে বয়ে যেত ভাগিরথী নদী । সঙ্কটকালে ব্যাবহারের জন্য ভাগিরথীতে দুটি সরকারী মটরবোট জেলাশাসকের অধীনে রাখা ছিল । এর একটির সারেঙ্গীর বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ পাওয়া যায় । সারেঙ্গী ছিল সরকারী কর্ম্মচারী । ওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিভাগীয় তদন্তের ভার আমার উপর ন্যস্ত হল । এটি আমার কর্ম্মজীবনের প্রথম বিভাগীয় তদন্ত । যতদূর মনে পড়ে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল এবং আমি অভিযুক্তের বার্ষিক বেতনবৃদ্ধি এক বা দুই বৎসরের জন্য স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছিলাম।
বহরমপুরের সহকর্মীবৃন্দ
বহরমপুরে আমার অনেক ভালো ও সহৃদয় বরিষ্ঠ সহকর্ম্মী ছিলেন । এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মনোজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুহাস ভট্টাচার্য, নির্মাল্য মুখার্জি, রণ্জিৎ কুমার দে প্রমুখ । ১৯৫৯ সালের ডব্লিউ. বি. সি. এস অফিসার মনোজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে আমরা মনোজিৎদা বলতাম, তিনি ছিলেন রসিকতার ভাণ্ডার । তিনি গম্ভীর মুখে রসিকতা করে সবাইকে হাসাতে পারতেন । তার ঝুলিতে সর্বদা সময়োপযোগী চুটকি মজুত থাকত । তিনি সদালাপী ব্যাক্তি ছিলেন । প্রশিক্ষণকালে ডব্লু বি সি এস অফিসারদের হিন্দি পরীক্ষা পাশ করতে হত । পরীক্ষা লিখিত ও মৌখিক দু ভাবেই হত । অফিসারদের মৌখিক পরীক্ষার উত্তর নিয়ে হাস্যোৎপাদক অনেক গল্প চলিত ছিল । মনোজিৎদা মাঝে মধ্যেই ঐ রকম গল্প শুনাতেন । মনোজিৎদার শুনানো একটি গল্প এই রকম ছিল । পরীক্ষক পরিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করছেন, আপনি কি "খুলেছে দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্গময়” এই অংশের হিন্দী বলতে পারবেন? পরীক্ষার্থী, "অবশ্যই স্যার, এটা হবে দরওয়াজা খুল গয়া, জ্যোতির্ময় তুমভি আ গয়া" বলা বাহুল্য কথোকথন হিন্দিতেই হচ্ছিল ।
প্রসঙ্গক্রমে আমার হিন্দী পরীক্ষার শ্রুতলিপিতে (Dictation) একটি নীতি বাক্য ছিল, "रूपेया पैसा हात का मैल हाय़, आते याते रहते हाय़” (টাকা পয়সা হাতের ময়লা । আসে যায় থাকে) । ঐ বাক্যটি অদ্যাবধি গভীরভাবে আমার মনে প্রোথিত হয়ে রয়েছে।
বরিষ্ঠ সহকর্মীদের কথায় ফিরে এসে বলি নির্মাল্য মুখার্জি ছিলেন বয়স্ক, কিন্তু কুকথায় দক্ষ । পি এন নস্কর নমে একজন সাব-ম্যাজিস্ট্রেট চাকুরী জীবনের শেষ পর্যায়ে সিনিয়র ডেপুটি কালেক্টার পদে আসীন ছিলেন । ঐ পদের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রবেশনারদের বিষয়টি উনি দেখতেন । রণ্জিৎ কুমার দে নামে জুনিয়র সিভিল সার্ভিসের একজন বয়স্ক সদস্য ছিলেন । কালেক্টরটের কতকগুলো শাখা ওঁর দায়িত্বে ছিল । সকলের সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক ছিল, সবাই আমাকে পছন্দ করতেন ।
আমার সমসাময়িক বন্ধুস্থানীয় সহকর্মীদের মধ্যে ছিল গনেশ চন্দ্র চক্রবর্তী, যে আমার সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকত ও নৃপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । ওরা দুজনেই পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র সিভিল সার্ভিসের সদস্য ছিল । নৃপেন কথাবার্তায় ইংরাজী শব্দ ব্যবহার করে ফেলত; আমরা ঠাট্টা করে ওর নাম দিয়েছিলাম ইংলিশ ভট্টাচার্য । ও খুব মিশুকে ও হাসিখুশি ছিল । অনেকদিন পর আমি যখন হাওড়া জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ও অতিরিক্ত জেলাশাসক সেই সময়ে এক সরকারী নির্দেশনামায় একটি বিভাগীয় তদন্তে আমাকে উপস্থাপক ও নৃপেনকে তদন্তকারী আধিকারিক করা হয় । নৃপেন চাকুরীতে আমার জুনিয়র ছিল, বরিষ্ট আধিকারিক হিসাবে আমার পক্ষে ওর কাছে নথিপত্র উপস্থাপিত করা আত্মমর্যাদা হানিকর ও প্রশাসনিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ ছিল । আমি কারণ দিয়ে সরকারী নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানিয়ে দি । পরে নির্দেশনামা সংশোধন করে আমাকে বাদ দেয়া হয় ।
বহরমপুরের অফিসার্স ক্লাব
বহরমপুরে অফিসারদের জন্য একটি অত্যুৎকৃষ্ট ক্লাব ছিল । এই ক্লাবের বিন্যাস ও খেলাধুলোর ব্যবস্থাপনা দেখে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক ছিল যে এটি বৃটিশ রাজত্বের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া । এখানে সর্বপ্রকার ইনডোর খেলাধুলো যথা তাস, হাউসি, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড প্রভৃতির সুন্দর বন্দোবস্ত ছিল । বহির্বিভাগে হার্ডকোর্ট লন টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলার উপযোগী স্থায়ী কোর্ট ছিল । ব্যাডমিন্টনের ক্ষেত্রে বায়ুর প্রভাবে খেলা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই জন্য কংক্রিটের তৈরী কোর্ট চারদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল । আমি মাঝে মধ্যে টেবিল টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলতাম । শনিবার সন্ধ্যাবেলা ক্লাবে হাউসি খেলা হত । জেলাশাসক বি. সি. শর্মা ও তাঁর স্ত্রীও কখনও কখনও খেলায় অংশ নিতেন । অল্প পয়সার বাজিতে খেলা হত । জেলাশাসকের সুন্দরী স্ত্রী শ্রীমতী লক্ষ্মী শর্মা প্রায় সর্বদাই জিততেন । আমিও কয়েকবার খেলেছি, কখনও জিতেছি বলে মনে পড়ে না ।
বহরমপুরে আমার অবস্থান
১৯৬৭ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৮ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি বহরমপুরে ছিলাম । এই সময় আমি একাই ছিলাম, কিন্তু কখনো বিষণ্ণতা বা একাকীত্বের পীড়ন অনুভব করিনি । প্রায় চার বৎসর পর পরবর্তী চাকুরীস্থলে একাকিত্বের যন্ত্রণা লাঘব করতে আমাকে বিয়ে করার হটকারী সিদ্ধান্ত নিতে হয় । সেই বিষয়ে বিস্তৃত বিবরণ যথাস্থানে উল্লিখিত হয়েছে ।
বহরমপুরের ব্যঙ্গাত্মক নামকরণ
বহরমপুরে প্রচুর সংখ্যক বাঁদর ও গাধা ছিল । এখানকার তরুণেরা বিশেষ করে টেক্স্টাইল কলেজের ছাত্ররা আমেরিকার রাখাল বালকদের (cow-boys) মত পোষাক পরে ওদের আচার ব্যবহার নকল করত । এই জন্য আমরা মজা করে বহরমপুরকে বলতাম “a place of monkeys, donkeys and Yankees” ।
মুর্শিদাবাদের বৈশিষ্ঠ্য
বহরমপুর কিন্তু নবাবদের আমল থেকেই নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল । চারুকলার বিভন্ন শাখার প্রথিতযশা শিল্পীরা এই স্থানে সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের বীজ বপন করেছিলেন । স্থানীয় নাগরিকবর্গ এক চমৎকার সাংস্কৃতিক আবহাওয়াধর্ম্মী শান্ত জীবনযাত্রা নির্বাহ করতেন । প্রতিটি স্বচ্ছল পরিবারের মা-বাবা ছেলেমেয়েদের অন্ততঃ একটি চারুকলা শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পাঠাতেন । চারুকলার মধ্যে সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যাভিনয়, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি বিশেষ জনপ্রিয় ছিল । বর্তমান কালেও এর অনেকটাই বিদ্যমান । আমার বহরমপুরে অবস্থানকালে রবিবার সকালবেলা বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে মেয়েদের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছি, স্বভাবতই গানের বা নাচের স্কুলে অথবা সঙ্গীত বা নৃত্য শিক্ষকের বাড়ীতে ।
বহরমপুর কাঁসার বাসনপত্রের জন্যও বিখ্যাত, এখানকার খাগড়াই বাসন প্রসিদ্ধ । এখানকার সুরুচিপূর্ণ কার্পেট, বাঁশ ও পাটের কাজ, ক্ষুদ্রকায় চিত্রাঙ্কন (miniature painting) ইত্যাদি হস্তশিল্প হিসাবে বিখ্যাত ।
আম্র প্রদর্শনীর প্রবর্তন
মুর্শিদাবাদ উৎকৃষ্ট গুনমানের বিভিন্ন ধরণের আম যথা কহিতুর, বেগম পসন্দ, দাউদ ভোগ, দিল পসন্দ ইত্যাদির জন্যও বিখ্যাত ছিল । আমার বহরমপুর অবস্থান কালে ১৯৬৮ সালের গ্রীষ্মে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক বহরমপুর শহরে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ধরণের আমের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন । এটা ছিল এখানে এই ধরণের প্রথম প্রদর্শনী । এই প্রদর্শনীতে ঐতিহাসিক পশ্চাদপট সহ মুর্শিদাবাদে উৎপন্ন সমস্ত রকমের আম প্রদর্শিত হয়েছিল । অধিক স্বাদ ও গন্ধের জন্য এখানকার অধিকাংশ আমের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবহার বিধি প্রযোজ্য । প্রদর্শনী পরিচালনায় নিযুক্ত এই বিষয়ে অভিজ্ঞ লোকেরা দর্শকদের কাছে সেই ব্যবহার বিধি ব্যাখ্যা করতেন । প্রদর্শনীটি খুবই সফল হয়েছিল এবং প্রচুর সংখ্যক দর্শক আকর্ষণ করেছিল ।
মুর্শিদাবাদ জেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
যে শহরের নামে এই জেলার নামকরণ হয়েছে সেই মুর্শিদাবাদ শহর নবাবী আমলে ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু । এখান থেকে সারা বাংলার শাসন কার্য পরিচালিত হত । পলাশীর যুদ্ধে সিরাজৌদ্দলার পরাজয়ের পর রাজধানী কোলকাতায় স্থানান্তরিত হয় । মুর্শিদাবাদ বর্তমানে লালবাগ নামে এই জেলার একটি মহকুমা শহর । নবাবদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী মুর্শিদাবাদ তথা লালবাগ ও আশেপাশের অঞ্চল অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভাণ্ডার । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাজারদুয়ারী রাজপ্রাসাদ, খোসবাগ, জগৎশেঠের বাড়ী, কাটরা মসজিদ ও মীরজাফরের কবর ॥
পূর্বে বড়কুঠি নামে পরিচিত হাজারদুয়ারী রাজপ্রাসাটি মুর্শিদাবাদের নিজামৎ কেল্লার চৌহদ্দির মধ্যে অবস্থিত । উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহের আমলে আর্কিটেক্ট ডানকান ম্যাকলয়েডের পরিকল্পনায় ও তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত । রাজপ্রাসাদটির ১০০০টি দরজার মধ্যে ৯০০টিই নকল । প্রাসাদটিতে ১১৪টি ঘর রয়েছে । বাচ্চাওয়ালী তোপ নামে পরিচিত কামানটি মুর্শিদকুলী খাঁ নিজামত কেল্লায় নিয়ে এসেছিলেন । এটি একটি উঁচু বেদীর উপর স্থাপিত ও এর মুখটি একটি লোহার পাত দিয়ে বন্ধ করে রাখা আছে । কথিত আছে ব্যবহার কালে এই তোপটি এত জোরে আওয়াজ করত যে সন্তান সম্ভবা নারীর সন্তান প্রসব হয়ে যেত ।
প্রাসাদটি বর্তমানে নবাবী আমলের সংগ্রহের মিউজিয়াম হিসাবে সংরক্ষিত । এখানকার দরবার হলে যেখানে নবাবদের ব্যবহৃত আসবাব পত্রের সংগ্রহ রয়েছে সেখানে একটি ঝাড় লণ্ঠন আছে যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম । বৃটেনের রাণী ভিক্টোরিয়া এটি নবাবকে উপহার দিয়েছিলেন । মিউজিয়ামে ৯০º কোণে একজোড়া আয়না এমনভাবে স্থাপিত রয়েছে যে এতে কেউ নিজের চেহারা দেখতে পায়না, কিন্তু অপরে তাকে দেখতে পায় । গুপ্তঘাতক যাতে নবাবের কোন ক্ষতি না করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করা হত ।
খোসবাগে নবাব আলিবর্দি খাঁ ও সিরাজৌদ্দলার সমাধি রয়েছে ।
১৭২৩-২৪ সালে নির্মিত কাটরা মসজিদের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ সমাহিত হয়েছেন । প্রবেশ পথে সিঁড়ির নীচে তাঁর সমাধি রয়েছে । ইস্লামিক শিক্ষার একটি সুপরিচিত কেন্দ্র হওয়া ছাড়াও এই মসজিদ মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধির জন্যও বিখ্যাত ।
নবাব সিরাজৌদ্দলার সময়কালে জৈন সম্প্রদায়ভুক্ত জগৎ শেঠেরা ছিলেন মুর্শিদাবাদের ধনী ব্যবসায়ী ও তেজারতি ব্যবসাদার । এটি সর্বজনজ্ঞাত যে ওমিচাঁদ ও মীরজাফরের সঙ্গে মিলিত ভাবে জগৎশেঠ সিরাজৌদ্দলার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলেন । লালবাগে এখনও তাঁর একদার বাসভবন রয়েছে ।
নিজামৎ কিল্লা থেকে ১/২ মাইল দূরে "নিমকহারাম দেউড়ি" নামক প্রাঙ্গনের চৌহদ্দির ভিতর ৩.৫১ একর জায়গায় মীরজাফরের নির্মিত জাফরগঞ্জ গোরস্থানে মীরজাফর ও পরবর্তী নবাবদের সমাধি রয়েছে ।
মুর্শিদাবাদ থেকে ১৩ কিমি দূরে অবস্থিত বর্তমান জেলাশহর বহরমপুরের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৮৬৯ সালে নগরপালিকা হিসাবে ।
জগৎশেঠের বাড়ীর মন্দির
কাটরা মস্জিদ
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে জীবনের প্রথম মাইনের বিল
পাদটীকা
[1] বস্তুতঃ পক্ষে আমার এই আশঙ্কা পরবর্তী কালে একাধিক ক্ষেত্রে সত্য প্রমাণিত হয়েছে । নীতিগত প্রশ্নে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিরোধ দেখা দেওয়ায় ঐ সব ক্ষেত্রে হয় কর্মরত বিভাগ বা সংস্থা ছেড়ে এসেছি নয় ছেড়ে আসার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ।
[2] সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিসে প্রতিযোগীতা করার বয়সের উর্দ্ধসীমা আমি ইতিপূর্বেই পেরিয়ে এসেছিলাম ।
[3] বস্তুতঃ প্রথমবার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা বর্জনের পর এমন একটা মানসিক অবস্থায় ছিলাম যে এই সুযোগ হাতছাড়া করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঝুঁকি নেয়ার সাহস হয়নি । তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের আদর্শ বয়সও পেরিয়ে যাচ্ছিল ।
[4] এই পরীক্ষাগুলি পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রতি ছয় মাস অন্তর পরিচালনা করতেন ।
[5] ডব্লু. বি. সি. এস অফিসার ও অন্যান্যদের জন্য ১৯৮২ সালে সল্ট লেকের এফসি ব্লকে একটি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয় ।
[6] দীর্ঘদিন সুদূর মেখলিগঞ্জে কর্মরত থাকায় ও পরবর্তী পর্যায়ে নিজের দীর্ঘসূত্রীতায় এই পরীক্ষার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়ে ওঠেনি । দুর্ভাগ্যবশতঃ কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে এর মার্কশিটটিও আমি হারিয়ে ফেলেছি । যতদূর মনে করতে পারি, এই পরীক্ষায় আমার প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার ছিল ৫৫% ।