সনাতন পরম্পরা

ভারতীয় সনাতন পরম্পরা 

সব ধর্মই সমান বলার তৎপরতার সঙ্গে একটা বিচার করার দৃষ্টিভঙ্গি অন্ধ করে রাখার প্রবণতা তথাকথিত সর্বধর্ম সমন্বয় ধ্বজধারী দের মধ্যে প্রকট , সেটা ঠিক  বাঞ্ছনীয়  বা  শুভ  নয়। তার একটা কারণ অপরের ধর্মবিশ্বাসের সাথে সহমত না হতে পারাকে সেই ব্যক্তির বিপক্ষে যাওয়া বলে ভাবতে শেখার এক অগ ভীর মানসিকতা কাজ করে ।  আমার একটা ধর্মবিশ্বাস আছে  এবং তোমার ধর্মবিশ্বাস এর অনেক কিছুই আমার বিচারে ঠিক মনে হয় না কিন্তু তাও আমি তোমাকে ব্যক্তি শত্রূ তো মনে করিইনা বরং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি প্রয়োজনে দুজনে একসাথে অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করা সম্ভব, তাতে আমাদের দুজনেরই শুধু পার্থিব নয় আত্বিক উন্নতিও ( যাকে সহজ ভাষায় বললে আর্থিক এবং পারমার্থিক )  হতে পারে । এই রকম একটা অবস্থান যে সম্ভব তা আমাদের তথাকথিত সেকুলার ভাবধারার ধারণার বাইরে। আর এখানেই ভারতীয় অধ্যাত্বিকতার সর্বধর্ম সমন্নয়ের  শক্তি , সেটা শুধু এটাকে  সম্ভব বলে না তার আধারে আবহমান ধারায় , এটাই মানব জগতে একই স্থান , কাল পাত্রে দুই ধর্মমতের  স্বাভাবিক সহ অবস্থান, অন্যথা সংঘাত অবশ্যাম্ভাবী।  এবং  সমস্ত সঙ্গবদ্ধ ধর্মই হচ্ছে  কালের প্রবাহে  এক সময়িক সমষ্টিগত ভাবধারা , তা কোন বিপরীত শক্তির বিরুদ্ধের  কারণেও  হাতে পারে বা অন্য্ কোন কারণেও হতে পারে কিন্তু আবহমান প্রবাহ হতে পারে না। এবং  আধ্যাতিক চর্চার কিছু সিদ্ধান্ত এই আপাত বিরোধ সম্পন্ন ভাবনাকে এক সূত্রে বাঁধতে পারে।

যে কোন আব্রাহামিক ( সঙ্গে  ধর্ম না মানার ধৰ্ম , কাম্যুনিসিম ) রিলিজিয়নের  সমাজে ক্ষতিকারক প্রভাব এর মূল কারণ, এই ফেইথের  অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই একে নিজের  সুপ্রিম্যাসি প্রমান করতে হয়। কারণ   সেটা দেখাতে ( প্রমান করতে ) না পারলে এই ফেথ  অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়ে অচিরেই  অস্তিত্ববিহীন হয়ে যাবে।  ভারতীয় সনাতন ভাবধারার সঙ্গে এটাই তাদের প্রধান পার্থক্য আবার দ্বন্দ ও । 

ভারতীয় সংস্কৃতির আলোয় সর্বদা মানুষের  সামনে দুটো বিকল্প  থাকে একটা ধার্মিক পথ অন্যটা অধার্মিক , কিন্তু ধার্মিক পথের কোন ধ্রুব বা কোন ইউনিভার্সাল সংজ্ঞা নেই, সেটা সর্বদা স্থান কাল পাত্র স্বাপেক্ষ - আপেক্ষিক।  এক পরিস্থিতিতে  যেটা ধার্মিক পথ অন্য সিচুয়েশনে সেটাই অধার্মিক। কিন্তু যেটা মুখ্য এখানে, সেটা হচ্ছে সেই প্রাণ, যে এই মুহুর্তে , বর্তমান পরিস্থিতিতে, কোনটা ধার্মিক পথ সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার বিস্তার ।  মানুষকে উৎসাহিত করা হত শ্রেয় আর প্রেয়র মধ্যে শ্রেয়কে ধাৰ্মিক পথ হিসাবে গণ্য করতে।  যেই আত্মা যত নির্মোহ হতে থাকে  তার বিচার ততই সর্ব জন হিতায় পথে হতে থাকে। কিন্তু তার নিজের পথের সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা সম্পূর্ণ তার নিজের  হাতে। কিন্তু আব্রাহামিক রিলিজিওন এ ধার্মিক পথের বিচার স্বাধীন নয় বাইরে থেকে কেউ ঠিক করে দেওয়া।  

সনাতন ধৰ্ম সমস্ত পন্থের লক্ষ্য এক দেখতে উৎসাহ দেয় আর আব্রাহামিক  রিলিজিয়ান চেষ্টা করে একটাই মাত্র রাস্তাকে প্রচার প্রসার করার , লক্ষ্য কে খোঁজাটা এখানে  প্রাধান্য পায় না।

এখানেই ভারতীয় অধ্যাত্বিকতার উৎকর্ষতা , where highest value has been given in seeking or self realization not practicing or adopting or preaching or converting.....যেটা অন্য ধর্মের মানুষকে টেনে  নিজের ভাবনার ( ধর্ম বা পন্থা ) দল বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করে না ……..বা  আমার রাস্তা আমার জন্য ঠিক তোমার রাস্তা তোমার জন্য বলে বিতর্ক থামিয়ে দেয়  না..…...পরন্তু যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারে তুমি তোমার বিশ্বাস বা অবিশ্বাস আর প্রকৃতি নিয়ে চলে যেই লক্ষে পৌঁছবে...আমারও  পথের অন্তিম লক্ষ্য  সেই একই।  যদি তোমার পথের ও সত্যিকারের লক্ষ্য তাকে বোঝা বা জানা অন্যথায় নিজেকে জানা ই হয়..অন্য কিছু নয়……...আমাদের পথের শেষ ও অভিন্ন। "তু না জানে আস পাস হ্যাঁয় খুদা " আর "আছো অনিল আনলে চির নভ নীল এ ভাষায় ভিন্নতা আছে ভাবে নেই। সেই আধারেই বিবেকানন্দ বলতে পেরেছিলেন মানুষ সত্য থেকে সত্য তর্ তে যায় , অসত্য থেকে সত্যে নয় ।

যেই সর্ব ধৰ্ম সম্বনয় ভারতের ঐতিহ্য, যাকে নিয়ে  এত কথা বলা হয় , তার প্রবাহ যেন  রুদ্ধ  হয়, তার জন্যই ভারতের সনাতন পরম্পরা রক্ষা করার প্রয়োজন ..........