পরিসংখ্যানে মাপা জীবনের ক্ষয় ক্ষতি আমার খুব একটা মাথায় ঢোকেনা আর বিশ্বাসযোগ্য ও মনে হয় না। কিন্তু পরিসংখ্যান ছাড়া বড় সিস্টেম এর অ্যাকাউন্টেবিলিটি রাখা যাবে না। তাই অস্বীকার করে আজকের কোনো বড় অর্গানিজশন যেমন একটা দেশ চলবে না। আমার নিজের কাজে জগতে আমার পছন্দ অপছন্দের অপেক্ষার প্রতীক্ষা ব্যতিরিকেই প্রত্যেক পদে রিপোর্ট নিতে আর দিতে হয় , এতে কতটা সত্যি আর কতটা জল থাকে সেটা আমি করি বা অন্যরা করে , সেটা তো হাড়ে হাড়ে জানি। তাই ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, কোন পরিসংখ্যান ই জীবন বোধের ঊর্ধে নয়। অন্যের পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবাতুর হওয়া বাস্তববোধের পরিপন্থী , আবার আমি পরিসংখ্যান দিয়ে কাক চালাকি করেও বেশী দূর পৌঁছতে পারব না।
প্রথমেই টাইটেল দেগে দেবার আগে বলে নেই আমি ঠিক মোদীভক্ত নই, বিজেপি সাপোর্টার হবার ইচ্ছে ক্ষমতা দুটোই নেই । আজকের বিজেপি র সার্ফ এক্সেল নীতি বা ঘোড়া কেনা বেচা করে যে কোন ভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রচেষ্টা মন থেকে মানতে পারিনা। আবার মোদী এবং মমতার দুজনেরই পাবলিকলি ম্যায়নে ইয়ে ইয়ে কিয়ার লিস্টি বড় দৃষ্টিকটু লাগে যখন বুদ্ধদেব বাবুর মত রাজনীতিকে পাশে রেখে দেখি। আর নিজের জ্ঞান গম্বির উপরে এতটা ভরসাও নেই পাব্লিক্যালি কিছু বলতে সাহস হয় , তবুও আমার পঞ্চাশ বছরের চোখে দেখার অভিজ্ঞতা আর ব্যাক্তিগত অনুভূতি নিয়ে কয়েকটা কথা লিখছি।
আমি নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় পরিচিতি নিয়ে দেশে দেশে ঘুরছি , আজ যতটা মাথা উঁচিয়ে বুক ফুলিয়ে আমি ভারতীয় বলতে পারি আগে তা হত না। সেটা শুধুমাত্র ভারতের পরিসংখ্যানের চমকপ্রদ উন্নতি নয় , আজকের ভারত নিজের পরিচিতিতে বিশ্বের দরবারে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী, তাকে আমি প্রগতি হিসাবেই দেখি। এর কৃতিত্ব আপনার আমার সবার , স্বদেশে - প্রবাস থেকে কর্মরত প্রত্যেকটা ভারতীয় ব্যক্তির, শুধু মোদির একার নয়। আবার তার শূন্য বা নেগেটিভ কান্ট্রিবিউশন সেটাও ঠিক নয়।
মোদির ইকোনোমিস্ট প্যানেল যেটা করছে আমার মনে হয় De Soto এ এক্সট্রা লিগাল ইকোনমি মডেল এপলাই করছে যাতে জি ডি পি লিগাল ইকোনমির বাইরের প্রোডাক্টিভিটি ডাটা তে আনতে পারে। ( UPI একটা example ) সময় পেলে লিখবো এক্সট্রা লিগাল ইকোনমি র উপরে।
এবার আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি নিয়ে একটু লিখি।আমেরিকার যে কোন নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা চোখে পারার মত।, ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা নিশ্চই আছে বাকি সব সিস্টেমের মতই কিন্তু ভারতীয় ছাত্রের কদর এখনো সারা পৃথিবীতে উর্ধগামী, সেটা কর্মক্ষেত্রেই হোক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যেহেতু শিক্ষা নিয়ে কথা হচ্ছে তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথাই বলি। আমার মনে হয়, এর কারণ হচ্ছে ভারতীয় কালচার আর এই অস্থির সময়েও পরিবার তথা সমাজের টিকে থাকা মূল্যবোধ।
প্রথমে ছাত্র ছাত্রীর কথা বলি , যারা সিরিয়াসলি পড়াশুনাকে নেয় তারা নলেজে পৃথিবীর যে কোন সিস্টেমের থেকে বেরিয়ে আসা ছাত্রের সমতুল্যই। এর জন্য ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে নিজেদের প্রচেষ্টাই বেশী। এবং ভারতীয়রা শৃখলাপরায়ণ হয় ইনস্টিটিউটে উৎপাত কম করে। আরেকটা উন্নতি চোখে পারার মত, আমাদের জেনারেশএর চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী এবং নিজের অবস্থান পরিস্কার বলতে পারে। এরা বেশীরভাগই আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের। আমরা আমাদের মা বাবাকে দেখে শিখেছি পড়াশুনাকে সবকিছুর আগে রাখতে সেটা এখনো পাস অন হয়ে যায়। যদিও সেটা প্রত্যেক সিচুয়েশনে ভাল নয় কিন্তু ভারতের একটা যুব সমাজ তৈরী আছে এবং ধারাবাহিক ভাবে বেরিয়ে আসছে যারা তথাকথিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালু রেখেছে আর এনরিচ করে চলেছে।
এবার ইকোনোমিক দিকে আসি, উচ্চ শিক্ষা বিনামূল্যে পাওয়া যায় না তাতে প্রতিষ্ঠানের পি&এল চলবে না ব্যালান্স সীট যতই ভারী হোক। স্কলারশীপ যতই গ্লোরিফাই করা হোক সেটা ছাত্রের পোটেনশিয়ালের সমানুপাতিক নয় আর এর মধ্যে অনেক ভেস্টেট ইন্টারেস্ট কাজ করে, অনেক ইয়ং মাথাকে নিজের ভিড়ে নিয়ে আসার চেষ্টা থাকে।
এবার আমাদের ভারতীয় সমাজে ছেলে মেয়ে পড়াশুনা করার খরচ যতটা সম্ভব পরিবার হাসিমুখে গ্রহণ করি। এদের নিজেদের পাড়ার খরচ নিজে জোগাড় করার চাপটা অনেকটা কম। তাই তৈরী বাজেটও রয়েছে। তাই অর্থনৈতিক দিকে এখনো ভারতীয়রাই এগিয়ে আছে এর জন্য আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠান অবদান অনেক বেশী। একে রক্ষার গুরুত্ব কম নয়।
ভারতের পোষ্ট কলোনাইজেশন রাজনীতির অভিমুখ অনেকটাই ছিলো , ব্রিটিশ লেবার পার্টি ভাবধারার থেকে পাওয়া সোসালিস্ট মডেল । সেই মননে কমিউনিজিম খুবই আকর্ষণীয় বিষয় , ব্যক্তিগত রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে আবার ভোটের বাজারেও খুবই সফল হাতিয়ার। কিন্তু কমিউনিজিম এর সব থেকে দুর্বল জায়গা হচ্ছে এই ভাবধারা মানুষের এন্টারপ্রাইসিং স্পিরিটকে উৎসাহিত করতে পারে না, সৃষ্টি সুখের উল্লাসকে সম্মানের আসনে বাসাতে পারে না । আমার খুব কাছের আত্মীয় এবং আমরণ বাঙালী কাম্যুনিস্ট মানুষের , তার মুখ থেকে শোনা , জীবনের অন্তিম লগ্নের এই বিষয়ের উপলব্ধি খুবই অর্থপূর্ণ মনে হয়। কম্যুনিজম তখনই প্রাসঙ্গিক যখন কাপিটালিজম মানবতাকে নিয়ে চলতে ভুলে যায়, তখনই আবার সমাজে বিপ্লব লড়াই কথা গুলোর মানে থাকে। কিন্তু কমুনিজিম এর একটা সমাজ ব্যবস্থার অন্তিম লক্ষ্য হতে পারার শক্তি নেই , বিপরীত ভাবধারার প্রাসঙ্গিকতার অনুপস্থিতিতে এটা ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আর তার অপব্যবহারে অচিরেই একটা বিশৃখল সমাজ তৈরী করে ফেলে। লেলিন সাহেবের সার্থক ভাবে কমুনিজিম আপ্লাই করা সমাজে হাতে পাওয়া অতিরিক্ত সময়ে শিকার আর ফিলোসফি চর্চা করে কাটানোর বিলাসিতার স্বপ্ন জীবনের তারে হিল্লোল তুলতে পারে না।
আজকের সময়ে বিশ্বজুড়ে গ্রহীত রাজনীতির যে মডেল , একে স্টেটইজম বলাটাই যুক্তি যুক্ত। সেটা একটা টপ ডাউন মডেল। অসুবিধাটা সেইখানেই। এইখান থেকে সময়ের সাথে সরকার বাহাদুর থেকে সাধারণ মানুষের নিজের জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজন নিজেই দায়িত্বেই আরো বেশী রাখতে পারবে স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবর্তন আসবে।
এই আলোচনায় দেবদত্ত পট্টনায়েক এর একটা গল্প মনে পড়লো। গল্পটা আমরা সবাই জানি......সেই গনেশ আর কার্তিকএর কম্পিটিশান , কে আগে সাত বার পৃথিবী ঘুরে আস্তে পারে। কার্তিক এর ময়ূর এর পিঠে চোঁচা দৌড়কে হারিয়ে গনেশের মা-বাবা কে সাতবার ঘুরে নিয়ে জিতে যাবার গল্প। গনেশের কাছে তার মাবাবাই জগৎ , অন্যের কাছে জগৎ যাই হোকনা কেন। সেইরকম আমাদের রাজনৈতিক চর্চা জগত উদ্ধারের জন্য দিনপাত না করে এইভাবে যারা আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে, আমাদের পরিবার , প্রতিবেশী তাদের সঙ্গে যদি এদের নিয়েই যতটা সম্ভব স্বয়ংসম্পূর্ন ছোট ছোট সামাজিক ইকোসিস্টেম আর তার সমস্যা আর সমাধানে ব্যয় করি স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবর্তন আসবে।