গীতার উপলব্ধি 

গীতা হচ্ছে সেই ম্যানুয়াল যা মানুষকে একটা ইম্পেরফেক্ট পৃথিবীতে পারফেক্ট জীবন যাপনের পথপ্রদর্শক.....

ফিয়েটে আমার সঙ্গে প্রোডাকশন লাইনে এক সাধারণ ( ? ) শ্রমিক  ছিল শিন্ডে , খুবই সরল মনের একজন মানুষ আর সঙ্গে  ছিল তার  এক  সুগভীর আধ্যাত্বিক মন। তাঁর থেকে পাওয়া প্রত্যহ গীতা পাঠের ব্যাখ্যা আজও আমার  সবথেকে কনভিনসিং আমার কাছে। শিন্ডে উবাচঃ , হে পার্থ গীতার উপলব্ধি তখনই পাওয়া যায় যখন সেটা প্রাসঙ্গিক হয়। একই শ্লোক সহস্র বার পড়লেও অনুভবিত হয় না যতক্ষন না যেই পরিস্থিতিতে এটা বর্ণিত তার মধ্যে থেকে (  নিজের জীবন যখন আমাদের সেইরকম পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়ায় ) গ্রহীত হয়।  সেই স্পিরিট নিয়েই আমি কিভাবে গীতার কর্ম যজ্ঞ সংক্রান্ত কয়েকটা শ্লোক  আজ পর্যন্ত যেভাবে  বুঝেছি সেটা দুই লাইন লেখার চেষ্টা করছি। 

শ্রীমদ্ভগবৎ গীতা - কর্মযোগী আর  নিষ্কাম কর্মএর শিক্ষা

জীবনে চলার পথে অন্যায় অবিচার যখন আমরা দেখি , কম বেশী সবার মধ্যেই একটা উত্তেজনা তৈরী হয় ।  আমার কিছু একটা প্রতিবিধানের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি বা কখনো হয়ে উঠি হতোদ্যম হতাশ। জীবনে অনেক প্রশ্নের মত এর উত্তরও যদি  গীতায় খোঁজার চেষ্টা করি......

সেই অবস্থায় একজন স্থিতপ্রজ্ঞ যোগী রিয়েক্ট করে, এই প্রসঙ্গে বিশ্বরূপ দর্শনের আলোচনা স্মরণ করা যেতে পারে। আমরা ক্রোধ উদ্দীপনার বাইরে উঠে একটু চিন্তা করলেই যেন মানচক্ষে স্পষ্ট দেখতে পাই অধর্মের পথে যারা চলছে যেন স্বাভাবিক ভাবেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশে তাদের হানি করতে উদ্দত হই বা না হই কোন পার্থক্য হয় না তাদের পরিনীতির। যেমন বিশ্বরূপ দর্শনের সময় অর্জুন স্পষ্ট দেখতে পেল সুবিশাল কৌরব সৈন্য এক এক করে শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশের আগুনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আর অর্জুনকে বলছে তুমি অস্ত্র তোল বা নাই তোলো এদের ধ্বংস পূর্বেই নির্দিষ্ট। 

श्रीभगवानुवाच 

कालोऽस्मि लोकक्षयकृत्प्रवृद्धो

लोकान्समाहर्तुमिह प्रवृत्त: 

ऋतेऽपि त्वां न भविष्यन्ति सर्वे

येऽवस्थिता: प्रत्यनीकेषु योधा: 

এই পর্যন্ত তো সোজা কিন্তু এর পরবর্তী ব্যাখ্যাটাই গীতাতত্ত্বকে  অন্য দর্শনের থেকে আলাদা করে তোলে। তার মানে কি আমার কিছু করা বা না করাটা অর্থহীন।  তা হলে তো এই ধরনের কর্মের থেকে দূরে থাকা বা এড়িয়ে চলাই তো যোগীর বহিঃপ্রকাশ হওয়া উচিৎ। কিন্তু গীতায় ভগবানের বিশ্লেষণ হচ্ছে না। জগতের জন্য নয় আমাদের নিজের জন্যই কর্ম করা উচিৎ , আমাদের অন্তরের ভাগবতের প্রকাশই হচ্ছে কর্ম, তাতে অংশ গ্রহণই ধার্মিক  পথ। 

এই প্রসঙ্গে স্থিত প্রজ্ঞা যোগী ব্যাখ্যা বেশ প্রাসঙ্গিক , যোগীর প্রকৃতির ব্যাখ্যা চলার সময় অর্জুন প্রশ্ন করে তা হলে কি দ্রৌপদী বস্ত্রহরণে আমার ক্রোধ অনুচিৎ , কৃষ্ণের উত্তর ক্রোধ আসা তো স্বাভাবিক কিন্তু তোমার কর্মের বীজ যদি সেই ক্রোধ হয় সেটা বর্জন করা উচিৎ। তাই  এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ যদি সেই ক্রোধের কারণে হয় সেটা নিষ্কাম কর্ম হবে না। প্রকৃত যোগী তা বর্জন করবে। কিন্তু তোমার অস্ত্র ধারণ যদি জগতের কল্যানের কারণে প্রয়োজন হয় তোমার আক্রোশ তাড়িত না হয় তা থেকে পিছিয়ে আসাও অধার্মিক কাজ , কারণ তাতে না তো নিজের কোন আর্থিক বা পারমার্থিক ভাল হয় না তো সংসার জগতের ,  তাই  সেটা  প্রাকৃত যোগীর সিদ্ধান্ত হতে পারে না। 

তাই তলোয়ার হাতে নিয়ে সব কটার গলা কাটতে বেড়োনো যেমন অধার্মিক আবার গলা কাটার প্রয়োজন কর্ম হয়ে উপস্থিত হয়ে এলে তার থেকে পলায়ন ও যোগী সুলভ নয়।