গ্রীন এনার্জি

আজকের দিনে প্রগতির নামে আমরা লাগাম ছাড়া এনার্জির প্রয়োজন বাড়িয়ে চলেছি আবার বলছি আমরা সমবেত পৃথিবীর মানুষ  এক যোগ হয়ে  পৃথিবীকে বাঁচাব , আর পরিবেশ ধ্বংস আর করতে দেবো না কাউকে ( কে সেই cow  ?), গ্লোবাল ওয়ার্মিং রিভার্স করবো , আর তার জন্য ধরেছি   গ্রীন এনার্জি। তারপরে একটা অত্যাধুনিক ব্যাটারী চালিত গাড়ী কিনলাম , বাড়িতে কয়েকটা  সোলার প্যানেল লাগিয়ে নিলাম , আর আত্ম তৃপ্ত হলাম , আমিতো আমার কান্ট্রিবিউশন করে দিলাম এবার অন্যরাও করুক , এটা যে কত বড় ধোঁকা একটু গভীরে গেলেই বোঝা যাবে। 

এনার্জি ম্যানেজমেন্টের তিনটে  দিক আছে : এনার্জি জেনারেশন , ডিস্ট্রিবিউশন আর স্টোরেজ।  

ডিস্ট্রিবিউশনটা মোটামুটি এফিসিয়েন্ট , হাইটেনশন কেবল আর তেলের পাইপলাইন আর ওভার সী লজিস্টিকস নিয়ে টেকনোলোজিক্যালি যতটুকু করা যায় করা গেছে তাই দিয়ে চলছে মোটামুটি  । হাই টেনশন কেবল এর নয়েস , একসিডেন্ট আর জীব জগতের হাই ভোল্টেজ থেকে  না জানা ক্ষতির সম্ভাবনা  বাদ দিলে ইলেকট্রিকাল এনার্জি ডিস্ট্রিবিউশন undisputed ভাবে সফল।   তেলের পাইপ লাইনের ভনারীবিলিটি  , অয়েল ক্যারিং শিপ এর থেকে স্পিল এর পরিবেশের ক্ষতি , পাইরেসী প্রব্লেম এই সব ম্যানেজ করেই চলছে খনিজ এনার্জি  ডিস্ট্রিবিউশন টা চলছে এক রকম । 

এই বার জেনারেশন এ আসি ,  স্কুলে থাকতে দেবশঙ্কর বাবুর কাছে শুনেছিলাম , ব্যন্ডেলের লোকজন বলে আমাদের ইলেক্ট্রিসিটি চাই না , এই থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করুন।  তোরা নিশ্চয় ওটার কাছ দিয়ে যাওয়া আসা করিস ,  ওখান থেকে ফেরার পরে ফ্যান চালানোর সময় সত্যি ভাবতে ইচ্ছে করে।  হাইডাল পাওয়ার এর পরিবেশ ক্ষতি তো সবারই জানা। সোলার , উইন্ড নিশ্চই  ভায়াবেল অপসন , কিন্তু এগুলো দেখতে যত ভালো লাগে মেইনটেইন করা কিন্তু বেশ  কাষ্টসাধ্য আর খরচ সাপেক্ষ্য। নিউক্লেয়ার পাওয়ারের ইউরেনিয়াম এনরিচ করার প্রযুক্তি ভারতের আছে , কিন্তু আপাত নিরীহ নিউক্লেয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এর পোটেনশিয়াল   রিস্ক তো আছেই , আর ভারতের মত জনবহুল দেশে এই ভীতিকে পলিটিসাইজ করে প্রজেক্ট  পন্ড করা খুব সোজা। আমার ব্যক্তিগত মতামত , সবদেশেরই নিজের মাটিতে  যা পাওয়া যায় তার উপরেই নির্ভর হওয়া উচিৎ। সম্ভবত ভারতেই  সবথেকে বেশী থোরিয়াম এর সোর্স আছে , কিন্তু থোরিয়াম কে কামার্শিয়ালি  ব্যবহার করার নিউক্লেয়ার টেকনোলজিতে খুব কাজ হয় নি।  মনমোহন সিং এর সরকার এই ব্যাপারে উৎসাহ নিয়েছিল।  ২০০৮ যে USA  ইস্যু নিয়ে মনমোহন সিং এর সরকার থেকে  যখন কমিউনিস্ট পার্টি সমর্থন তুলে নিয়েছিল  , তখন এটা লিখেছিলাম টাইমসের একটা আর্টিকেলের কমেন্টে  : 


Article: G-8 to support N-deal; PM returns

Thorium : The future fuel

on Jul 10, 2008 09:30 PM

India generates 132,110 lakh MW of power annually. Of this, 64.7 percent is generated from  thermal power, 26.2 percent is generated through hydroelectric power, 5.9 per cent is from  renewable power sources and only 3.1 per cent through nuclear power. Thorium is abundant in the Earth's crust and widespread across India, the United States and around the world.The total known world reserves of Th in the RAR category are estimated at about 1.16 million tonnes. About 31% of this (0.36 mt) is known to be available in the beach and inland places of India. This thorium was formed in a supernova over five billion years ago, and during its formation, it was infused with vast amounts of energy in the structure of its nucleus. For five billion years this material has stored its energy, and only in the last 60 years have we realized how to utilize it. This technique of "expose, isolate, expose" is essentially impossible to do in a typical solid-fueled reactor, because it would require the fuel to be almost continually reprocessed. This is why "fluid-fueled reactors" were examined as thorium burners almost from the outset of the nuclear age. The US is doing a lot of research to use Th in Nuclear Reactors and obviously has some success. My guess, this can be one of the reasons the US is so interested in a formal nuclear deal with India. It may give India a long term solution for its energy demands. I just wish people  could understand this.


কিন্তু ইন্টারনাল কামবাস্টসন ( কয়লার গাড়ি এক্সটার্নাল আর মোটর ইন্টারনাল কামবাস্টসন )  আর জেট ইঞ্জিন এর প্রগতি আর ব্যবহারের সুবিধা প্রায় সমস্ত পরিবহন এনার্জি খনিজ তেল নির্ভর করে দিয়েছে।  সম্প্রতি ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল এর টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এর একটা viable অল্টারনেট হিসাবে আসছে এটা নিঃসন্দেহে ভাল।  কিন্তু এর সবথেকে বড় প্রব্লেম হচ্ছে এনার্জি ক্যারি করে নেওয়া , এখানেই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির সাফল্য , কারণ এর এনার্জি ডেন্সিটি।  

ইলেকট্রিকাল  এনার্জি ম্যানেজমেন্ট এর একটা বড় প্রব্লেম হচ্ছে ডিমান্ড সাপ্লাই ম্যাচ করানো  , এটা ম্যাচ না হলে মুহূর্তের মধ্যে পুরো সিস্টেম বসে যাবে। আমাদের ছোটবেলার দেখা লোডশেডিং , ম্যানুয়ালি এই ডিমান্ড সাপ্লাই ম্যাচ করারই একটা প্রচেষ্টা  ছিল। ইলেকট্রিক এনার্জি ব্যবহারের  শুরু থেকেই  মানুষ অনেক কিছু চেষ্টা  করেছে এই নিয়ে।  এমনও আছে, যখন ডিমান্ড কম জল পাম্প করে উঁচুতে তুলে বেশী প্রয়োজনের সময় ইলেক্ট্রিসিটি বানানো ।  এই রকম মাস স্টোরেজ এর খুব রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে লিকুইড সোডিয়াম বা সল্ট , করে পরে আবার তাকে দিয়ে স্টিম বানিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করা ।  কিন্তু এই ব্যাপারে ভারতের গর্ব করার মত সাফল্য হচ্ছে আমাদের পাওয়ার গ্রীড।  প্রায় সমস্ত ভারতবর্ষ ই একটা সিঙ্গেল পাওয়ার গ্রীড এ কানেক্টেড।  পাওয়ার স্টেশন গুলো সবাই এই একটা গ্রিডেই  পাওয়ার দিচ্ছে , আর আমরা সবাই ওই গ্রীড থেকেই প্রয়োজন মত নিয়ে নিচ্ছি।  এতে লোড টা অনেকের মধ্যে স্প্রেড হওয়াতে স্পাইক টা ফ্ল্যাট হয়ে যায়।  কিন্তু এটা করার কিছু টেকনিকাল চ্যালেঞ্জ আছে কারণ অল্টারনেটিং কারেন্ট পসিটিভ নেগেটিভ এ  অসিলেট করে, মানে যদি তার গুলোকে পাইপ ধরি আর তার মধ্যে দিয়ে জল একবার ডান দিকে বাঁ দিকে আরেক পলকে বাঁ দিক থেকে ডানে যাচ্ছে, এটা পুরো গ্রীড এ এক সঙ্গে হতে হবে , তা না হলেই পুরো সিস্টেম ফেল  করে যাবে।  আমেরিকাতে বেশ কয়েকবার এই রকম প্রত্যক্ষ করেছি। একবার  শীতকালে  এই রকম গ্রিড ফেল করে দিন সাতেক পাঁচ ছয়টা স্টেটে পাওয়ার ছিল না , অনেক প্রাণ হানী ও হয়েছে ঠান্ডায়।  কিন্তু ভারতে কোন দিনই  এমন হয় নি । এই গ্রিড সিস্টেমে একটা বড় কান্ট্রিবিউশন আছে আমাদের  শঙ্কর সেনের । কোন কারণে একটা সেকশন আউট অফ সিঙ্ক হলেই ওটাকে ফ্রাকশন অফ মিনিট এর মধ্যে ট্রিপ করিয়ে গ্রিডটা বাঁচিয়ে দেয়। 

এত কিছু করেও কিছু ক্ষেত্রে রিচার্জেবল ব্যাটারির কোন বিকল্প নেই। হাতের কাছের উদাহরণ আমাদের ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন। ব্যাটারী বিহীন গাড়ী চালানো কেমন তা ভুক্তভোগীরাই জানে।  আরেকটা দারুন উদাহরণ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বাবার জন্য : মাইক্রোওয়েব টাওয়ার।  আরেকদিন ডিটেল লিখব এই নিয়ে।  স্যাটেলাইট আর ফাইবার অপটিক্স কেবল আসার আগে লোকালয় থেকে অনেক দূরে দূরে পাহাড়ে জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা এই টাওয়ার গুলোই ছিল দূর সংযোগের লাইফ লাইন। এদের অনেক অংশে নির্ভর করতে হয় এই রিচার্জেবল ব্যাটারির উপরে। আর এই ক্ষেত্রে লেড এসিড ব্যাটারীরই একাধিপত্য। একটু হাজার্ডস কিন্তু এনার্জি ডেনসিটি চালিয়ে নেবার মত।  গ্রামে দেখেছি লোকজন ব্যাটারী শহরে নিয়ে এসে চার্জ করিয়ে বাড়িতে টিভি দেখত তাই আজকের এই টোটো সফল হওয়া তো  ভারতে শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু যেই আরামের পরিবহন মোটর গাড়ী দেয় তা দেবার এনার্জি ডেনসিটি লেড এসিড ব্যাটারির ছিল না, ওড়ার ক্ষমতাও নয় । 

G E র একটা এনার্জি প্রজেক্ট এ E R P সফটওয়্যার লাগানোর কাজে যুক্ত হবার সৌভাগ্য হয়েছিল ২০১১-১২ নাগাদ। ওরা একটা নতুন স্টোরেজ টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছিল।  সোডিয়াম টেকনোলজি ! সোডিয়াম এর সোর্স নিয়ে তো কিছু বলতে হবে না , এনার্জি ডেনসিটিও মন্দ নয় কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে সিস্টেম টা একটু হাই টেম্পারেচার এ অপারেট করে।  তবে  প্রথমে একটু গরম করে চালিয়ে দিলে ওই চার্জ ডিসচার্জ এর সময় এর লস থেকে নিজেই গরম থাকে আর ব্যাটারিতে জল দেওয়া এই সব মাইনটেইন্স ও কম।  কিন্তু ওই সবসময়  হয় চার্জ করতে হবে নয়ত ইউস, ফেলে রাখা যাবে না আর যেহেতু এম্বিয়েন্ট টেম্পারেচার এ কাজ করে না সব ক্ষেত্রে  ব্যাবহার করা যায় না। তবে এটার একটা দারুন সময়োপযোগী এপ্লিকেশন পেয়েছিল , মোবাইল টাওয়ার। আমাদের মুঠো ফোনের সর্ব ব্যাপী কভারেজের চাহিদাতে কোম্পানিগুলোকে অনেক রিমোট জায়গাতে টাওয়ার মেনটেইন করতে হয়। সোলার প্যানেল লাগিয়ে দিনের কাজ তো পরিষ্কার দিনে চালিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু রাতে ?...এইখানে সোলার প্যানেল এই ব্যাটারী আর সাথে একটা অক্সিলিয়ারী  ছোট ডিজেল জেনারেটর দিয়ে একটা পাওয়ার সিস্টেম বানিয়ে রিমোট মোবাইল টাওয়ার চালানোর চেষ্টা হয়েছিল । আমি যখন ERP ইমপ্লিমেন্ট করছিলাম  , তখন ওরা সারা পৃথিবী জুড়ে কয়েকটা পাইলট চালাচ্ছিল তার অনেক গুলোই ইন্ডিয়াতে ছিল, বেশ কয়েকটা UP আর কিছু সাউথে। আমি খুব আশাবাদী ছিলাম এই প্রজেক্ট নিয়ে  পরে শুনেছি খুব একটা সাকসেসফুল হয় নি , মানুষের গ্রহণযোগ্যতা আর ইকোনোমিক এডভান্টেজের কারণেই ।  এই রকম আমাদের জানা অজানা অগুন্তি কাজ হয়ে চলেছে এই এনার্জির  ক্ষেত্রে। 

আমরা যারা উচ্চমাধ্যমিকে প্রবীর বাবুর বাড়িতে পড়তে যেতাম , স্যারের ছেলে হবার পরে নাম দিয়েছিলাম লিথিয়াম , স্যারের স্ত্রী ও কেমিস্ট্রির শিক্ষিকা ছিলেন। স্যারকেও বলেছিলাম কিন্তু যেটা বলতে ভুলেগেছিলাম  আমরা দুরদৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছিলাম নামটা কেমন পপুলার হবে :)

লিথিয়াম ব্যাটারীর পরিবেশ ক্ষতির দিক একটা আছে , সেটা সব খনিজের ই আছে। কিন্তু বর্তমানে যেই সব দেশে প্রধানত এক্সট্রাক্ট হয় তাদের  সোসিও ইকোনোমিক প্রবলেম একটা বড় ইস্যু। ভারতে এক্সট্র্যাক্ট করতেও নানান পলিটিক্যাল প্রবলেম আসবে বলে  আমার মনে হয়। 

তবে আমরা যদি আমাদের চাহিদায় লাগাম না আনতে পারি প্রত্যেকের বাড়িতে একটা করে সূর্য বানিয়েও এনার্জি সমস্যার সমাধান হবে না। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট তো হাতের কাছে একটা সূর্য বানানোই।   আমরা আজ সোলার নিয়ে এত মাতামাতি করি কিন্তু একটা সোলার প্যানেল বানাতে কত এনার্জি খরচ হয় তার পরে এটা কত এনার্জি দেয় তার হিসাব কোথাও দেখি না। তার পরে প্যানেল গুলো পরিস্কার করা একটা কাজ আর প্যানেল গুলো সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে তবেই সবথেকে বেশি শক্তি ট্রাপ করতে পারবে। সেই করতে গিয়ে যেই ধরনের একটা জিনিস দাঁড়ায় তাকে একটা কুদর্শন গাছ বলা যেতে পারে।  আর একটা বড় অশ্বথ গাছের দিকে তাকিয়ে দেখে যদি ভাবি কত বছর ধরে নীরবে সূর্যের কত শক্তি এ ট্রাপ করেছে আর চব্বিশ ঘন্টা অক্সিজেন দিয়েছে ( অশ্বথ গাছ কতিপয় গাছের মধ্যে একটা যা শুনেছি রাতেও অক্সিজেন ছাড়ে )  তখন হাতে ধরা জলটা এমনিই গোড়ায় দিতে ইচ্ছে হবে নীচে একটা কালো পাথর থাক বা না থাক। 

এনার্জি সমস্যার সমাধানে , এই পরিসংখ্যানে মাপা জীবনের ক্ষয় ক্ষতির প্রগতির মানদন্ডে এর কোনো উত্তর নেই।  গ্রীড ইস গুড ইকোনমির বাইরে আসাতেই এর সমাধান হতে পারে । তা নাহলে প্রকৃতিই এর উত্তর খুঁজে নেবে, তাতে মানুষের একটা পাঠ থাকবে কি না , সেটাই মানুষের আসল  ভাবার বিষয়, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় , মানুষের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে , কয়লা আর খনিজ তেল তুলিয়ে প্রকৃতিই মিলিয়নস ইয়ার ধরে আটকে থাকা কার্বনকে আবার চক্রে নিয়ে চলে এল প্রকৃতি  ....Chernobyl পাওয়ার প্ল্যান্ট আকসিডেন্টের পারে পরিত্যক্ত শহরে , যেখানে রেডিয়েশনএ  যে কোনো প্রাণী উদ্ভিদের স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় , সেখানে মানুষের অবর্তমানে জীবন কিভাবে ফ্লারিশ করেছে একটু সার্চ করে দেখিস।