সনাতন

সনাতন ধর্ম কী ? আজ যুক্তিযুক্ত  কারণেই ভারতীয় সংস্কৃতিকে হিন্দু ধর্ম না সম্বোধন না করে সনাতন ধর্ম বলা হচ্ছে (  হিন্দু  Identity আমার  মনে হয় বিদেশ থেকে দেগে দেওয়া পরিচয়, এখন আর মেনস্ট্রিমে  অজানা নয় যে  আজ আমরা যেমন পাশ্চত্য সংস্কৃতি কে ওয়েস্টার্ন কালচার বলি সেই রকম সিন্ধু নদীর এই দিকের সংস্কৃতি কে পারসিয়ান আর তাদের থেকে শুনে রোমানরা হিন্দ বলত কারণ ওদের স উচ্চারনের ব্যবহার কম ছিল  )।  কিন্তু সনাতন ধর্ম এর সাহজবোধ্য কোন সংগা নেই। আবার যখন বলা হয় ভারত বিশ্বগুরু হবে তার অর্থ সারা পৃথিবীজুড়ে ভারত তার ধর্ম প্রচার করবে ? দিকে দিকে মানুষ তথাকথিত হিন্দু ধর্মে কনভার্ট করবে ? একদমই না , এই রকম চিন্তা ভাবনার কারণ ধর্ম সম্বন্ধে আজকের পৃথিবীতে যেই ধারণা সাধারণ মনে আসে তা একটা কাল্ট গ্ৰুপের ভাবধারা  অথবা তথাকথিত আব্রাহামিক রিলিজিয়ন এর ধর্ম প্রচারের এবং প্রসারের পদ্ধতি ।

সনাতন ধর্ম বুঝতে হলে এই ফ্রেম এর বাইরে আসতে হবে।  সনাতন কথার অর্থ যা আবহমান বা চিরাচরিত। সমস্ত কালচারের মধ্যে একটা অংশ আছে যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, সময়ের প্রবাহ কালচারের অনেক পরিবর্তন নিয়ে  আসে আবার অনেক পরিবর্তন বিগত হয় । কিন্তু যেই প্রবাহ প্রজন্মের পরে প্রজন্ম ধরে অব্যহত থাকে, সেটাই ওই কালচারকে নিজেস্ব পরিচিতি দেয়, সেটাই হচ্ছে সনাতনের কাছা কাছি।  যদি ইউরোপের অবস্থান থেকে সনাতনকে বুঝতে হয় পেগন রিলিজিয়ন ও এর অংশ , ইরানের সনাতন Zoroastrianism কে বাদ দিয়ে নয় , ইজিপ্সিয়ান সনাতন ফারাও সংস্কৃতিকে ত্যাগ করে হয় না , আমেরিকার সনাতন নেটিভ ইন্ডিয়ান কালচারকে বাদ দিয়ে নয়।

 যে কোন আব্রাহামিক ( সঙ্গে  ধর্ম না মানার ধৰ্ম , কাম্যুনিসিম ) রিলিজিয়নের  সমাজে ক্ষতিকারক প্রভাব এর মূল কারণ, এই ফেইথের  অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই একে নিজের  সুপ্রিম্যাসি প্রমান করতে হয়। কারণ   সেটা দেখাতে ( প্রমান করতে ) না পারলে এই ফেথ  অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়ে অচিরেই  অস্তিত্ববিহীন হয়ে যাবে।  ভারতীয় সনাতন ভাবধারার সঙ্গে এটাই তাদের প্রধান পার্থক্য আবার দ্বন্দ ও । 

ভারতীয় সংস্কৃতির আলোয় সর্বদা মানুষের  সামনে দুটো বিকল্প  থাকে একটা ধার্মিক পথ অন্যটা অধার্মিক , কিন্তু ধার্মিক পথের কোন ধ্রুব বা কোন ইউনিভার্সাল সংজ্ঞা নেই, সেটা সর্বদা স্থান কাল পাত্র স্বাপেক্ষ - আপেক্ষিক।  এক পরিস্থিতিতে  যেটা ধার্মিক পথ অন্য সিচুয়েশনে সেটাই অধার্মিক। কিন্তু যেটা মুখ্য এখানে, সেটা হচ্ছে সেই প্রাণ, যে এই মুহুর্তে , বর্তমান পরিস্থিতিতে, কোনটা ধার্মিক পথ সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার বিস্তার ।  মানুষকে উৎসাহিত করা হত শ্রেয় আর প্রেয়র মধ্যে শ্রেয়কে ধাৰ্মিক পথ হিসাবে গণ্য করতে।  যেই আত্মা যত নির্মোহ হতে থাকে  তার বিচার ততই সর্ব জন হিতায় পথে হতে থাকে। কিন্তু তার নিজের পথের সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা সম্পূর্ণ তার নিজের  হাতে। কিন্তু আব্রাহামিক রিলিজিওন এ ধার্মিক পথের বিচার স্বাধীন নয় বাইরে থেকে কেউ ঠিক করে দেওয়া।  

সনাতন ধৰ্ম সমস্ত পন্থের লক্ষ্য এক দেখতে উৎসাহ দেয় আর আব্রাহামিক  রিলিজিয়ান চেষ্টা করে একটাই মাত্র রাস্তাকে প্রচার প্রসার করার , লক্ষ্য কে খোঁজাটা এখানে  প্রাধান্য পায় না।

যখন সনাতন ভাবধারাকে সামনে রেখে বিচার করা হয় , তখন নতুন যুগের মূল্যবোধ বা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কালচার কোন নির্বিচারে গ্রহণ করার থেকেও প্রধান বিচার্য  হচ্ছে এটা কী আবাহমানের সঙ্গে সামনঞ্জস্য রেখে না বিরোধে, পুরনোকে নির্বিচারে ত্যাগ করতে গিয়ে কিছু সনাতন মূল্যবোধের বলি তো দিয়ে ফেললাম না ?  যখন এই বিচারের আলোয় শ্রেয় কে গ্রহণ করা হয় তাই সনাতন ধর্ম।

যেই সর্ব ধৰ্ম সম্বনয় ভারতের ঐতিহ্য, যাকে নিয়ে  এত কথা বলা হয় , তার প্রবাহ যেন  রুদ্ধ  হয়, তার জন্যই ভারতের সনাতন পরম্পরা রক্ষা করার প্রয়োজন ..........