রাম রাবণ

রাম কেন পুরুষত্তম রাবণ নয় কেন ? 

রাবণ ছিল মহাপরাক্রমী মহা পণ্ডিত  ব্রাহ্মণ। কিন্তু সমস্ত কর্মই সে করেছিল নিজের আর যাকে সে তাঁর  নিজের ধরত তার জন্য ।  কারণ ষোল কলার জ্ঞান অর্জন করেও সে তার মোহকে জয় করতে পারে নি। তাই তার কর্মের প্রকাশ হচ্ছে অহঙ্কার , কাম আর স্বার্থর প্রকাশ।  

বিপরীতে রামের জীবনের প্রতিটি কর্মই প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর কর্তব্যবোধ থেকে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির প্রয়োজনে নয়, জীবনের বড় ক্যানভাসে যেটা ধর্মের পথ তার জন্য , কখনো  কখনো বা  অন্যের খুশীর জন্য ( যেমন সোনার হরিণ মারতে যাওয়া ) কিন্তু কখনই নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। 

ভারতীয় জীবনমূল্যে এই নিঃস্বার্থ কর্মই হচ্ছে জীবনের মূল মন্ত্র কারণ এই কর্মই  জীবনকে মহাজীবনে , ছোট আমিকে বড় আমিতে , আত্মাকে পরমাত্মায় নিয়ে যায়। তাই রামকে পুরুষত্তম ধরা হয়। 

মেঘনাদবধ কাব্যে মাইকেল রামকে ছোট করে দেখিয়েছেন বলে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন .....

" একটা বক্তব্য আছে - মহৎ চরিত্র যদি বা নূতন সৃষ্টি করিতে না পারিলেন, তবে কবি কোন মহৎ কল্পনার বশবর্তী হইয়া অন্যের সৃষ্ট মহৎ চরিত্র বিনাশ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন? কবি বলেন, ' I despise Ram and his rabble.' সেটা বড় যশের কথা নহে - তাহা হইতে এই প্ৰমাণ হয় যে, তিনি মহাকাব্য রচনার যোগ্য কবি নহেন। মহত্ব দেখিয়া তাঁহার কল্পনা উত্তেজিত হয় না। নহিলে তিনি কোন প্রাণে রামকে স্ত্রীলোকের অপেক্ষা ভীরু ও লক্ষ্মণকে চোরের অপেক্ষা হীন করিতে পারিলেন। দেবতাদিগকে কাপুরুষের অধম ও রাক্ষসদিগকে দেবতা হইতে উচ্চ করিলাম! এমনতর প্রকৃতিবহির্ভূত আচরণ অবলম্বন করিয়া কোন কাব্য কি অধিক দিন বাঁচিতে পারে? ধূমকেতু কি ধ্রুবজ্যোতি সূর্যের ন্যায় চিরদিন পৃথিবীতে কিরণ দান করিতে পারে?"