রাজনীতি

রাজনীতির ব্যাপারে আমার মতামত , আমরা এদের প্রয়োজনের থেকে বেশী মূল্য দেই। এই পলিটিকাল সিস্টেম জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন address করতে ব্যার্থ। একটু  লক্ষ্য করলে  দেখব, সরকার বাহাদুরের থেকে নাগরিক জীবনের চাহিদা পূরণের domain দিন দিন নিম্নগামী। আমাদের বড় হবার দিনগুলোতে শিক্ষা স্বাস্থ্য থেকে যোগাযোগ  চিনি কেরোসিনের মত অনেক দৈনন্দিন জীবনের logistics  সরকার দ্বারা পরিচালিত হত।  আজ ক্ষমতা ব্যবহারের দ্বায়িত্বহীতায় এক এক করে কোনো সিস্টেমই সুষ্ট ভাবে চালাতে পারেনি। আর পারবে বলেও মানে হয় না। এটা কোন দলের দোষ নয় , মনে হয় সময়ের স্বভাবিক পরিবর্তন। তো আমাদের কি করণীয় : সাধারণ মানুষের শক্তি কিন্তু একদিনের ভোট বাক্সে সীমিত নয়। আমাদের রোজকার জীবনের চর্চা আর interest ই কিন্তু মহাপুরুষ থেকে রাজা উজীর এমনকি ধনী বানায়। আজ দেশের একটা বড় শতাংশ ক্রিকেট এ ইন্টারেস্ট দেখায় বলেই শচীন তেন্ডুলকার ভগবান আর বিরাট কোহেলি র এত ক্যাশ ফ্লো। খেলাটাতে তারা অবশ্যই দক্ষ্য , খেলেও অনুপ্রেরণা নিয়েই কিন্তু সেটাই সব নয় , আসল শক্তি হচ্ছে অগণিত মানুষের তাতে ইন্টারেস্ট। এটা থেকে আমরা বঞ্চিত করতে পারি তথা কথিত অযোগ্য রাজনৈতিক নেতাদের।

আজকের সময়ে  বিশ্বজুড়ে গ্রহীত রাজনীতির যে মডেল , একে  স্টেটইজম বলাটাই যুক্তি যুক্ত।  সেটা একটা টপ ডাউন মডেল। কাউকে তো বাসাতেই হবে, অসুবিধাটা সেইখানেই। এইখান থেকে  সময়ের সাথে সরকার বাহাদুর থেকে সাধারণ মানুষের নিজের জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজন নিজেই দায়িত্বেই আরো বেশী রাখতে পারবে স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবর্তন আসবে। 

এই আলোচনায়  দেবদত্ত পট্টনায়েক এর একটা গল্প মনে পড়লো। গল্পটা আমরা সবাই জানি......সেই  গনেশ আর কার্তিকএর  কম্পিটিশান , কে আগে  সাত বার পৃথিবী ঘুরে আস্তে পারে। কার্তিক এর ময়ূর এর পিঠে চোঁচা দৌড়কে হারিয়ে গনেশের মা-বাবা কে সাতবার ঘুরে নিয়ে জিতে যাবার গল্প।  গনেশের কাছে তার মাবাবাই জগৎ , অন্যের কাছে জগৎ যাই হোকনা কেন। সেইরকম  আমাদের রাজনৈতিক চর্চা  জগত উদ্ধারের জন্য দিনপাত না করে এইভাবে যারা আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে, আমাদের পরিবার , প্রতিবেশী  তাদের সঙ্গে যদি এদের নিয়েই যতটা সম্ভব স্বয়ংসম্পূর্ন  ছোট ছোট সামাজিক ইকোসিস্টেম আর তার সমস্যা আর সমাধানে ব্যয় করি স্বাভাবিক নিয়মেই পরিবর্তন আসবে। 

 ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্ম .......

আজ ভারতীয় রাজনীতি এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে। এইখান থেকে সেটা কোন দিকে অগ্রসর হবে তা তো সময়ই বলবে। কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ আজকের মত দিকবিদিক শূন্য আগে কখনো হয় নি. স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের শিক্ষিত মানসিকতা এক সরল সেকুলার মানসিকতা অবলম্বন করেই চলেছে , তার মধ্যেই দেশের দিশা খুঁজে পেয়েছে আর নিজেরও ইন্টেলেক্চুয়াল স্যাটিসফেকশন খুঁজেছে।  সেইখান থেকেই যে কোন সংকীর্ণ আদর্শ কে আঘাত হেনেছে। এই মানসিকতার একটা অবস্থান হল , আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ঈশ্বর মানি বা নাই মানি যে যেই ঈশ্বর ই মানুক আমি সবাইকে সমান চোখেই  দেখবো। এই অবস্থান যে কোন ধর্মের শিক্ষিত মানুষকেই একটা আদর্শগত কমফোর্ট জোন দিয়েছে। আর রাজনীতির public face টা এটাই রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির ব্যবহারিক দিক কোন দিনই এইটা ছিল না , সেই সত্য টাকে অস্বীকার করেই এত দিন রাজনীতি হয়ে এসেছে ভারতে। অতি বাম ,অতি ডান এর মত এই সিউডো সেকুলারশিম ও আঁকড়ে থাকার জিনিস নয়।  আমার আশা আমার দেশ এর বাইরে গিয়েও ধ্রুবতারা হীন হবে না.......

ভারতীয় রাজনীতিতে সোশালিজম.... 

ভারতের পোষ্ট কলোনাইজেশন রাজনীতির অভিমুখ অনেকটাই ছিলো , ব্রিটিশ লেবার পার্টি ভাবধারার থেকে পাওয়া সোসালিস্ট মডেল । সেই মননে  কমিউনিজিম খুবই আকর্ষণীয় বিষয় , ব্যক্তিগত রাজনৈতিক  আদর্শ  হিসাবে আবার ভোটের বাজারেও  খুবই সফল হাতিয়ার। কিন্তু  কমিউনিজিম এর সব থেকে দুর্বল জায়গা হচ্ছে এই ভাবধারা মানুষের এন্টারপ্রাইসিং স্পিরিটকে উৎসাহিত করতে পারে  না, সৃষ্টি সুখের উল্লাসকে  সম্মানের আসনে বাসাতে পারে না । আমার খুব কাছের আত্মীয় এবং  আমরণ বাঙালী কাম্যুনিস্ট মানুষের , তার মুখ থেকে শোনা , জীবনের অন্তিম লগ্নের এই বিষয়ের উপলব্ধি খুবই অর্থপূর্ণ  মনে হয়। কম্যুনিজম তখনই প্রাসঙ্গিক যখন কাপিটালিজম মানবতাকে নিয়ে চলতে ভুলে যায়, তখনই  আবার সমাজে বিপ্লব লড়াই কথা গুলোর মানে থাকে। কিন্তু কমুনিজিম এর  একটা সমাজ ব্যবস্থার অন্তিম লক্ষ্য হতে পারার শক্তি  নেই , বিপরীত ভাবধারার প্রাসঙ্গিকতার অনুপস্থিতিতে এটা ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আর তার অপব্যবহারে  অচিরেই একটা বিশৃখল সমাজ তৈরী করে ফেলে। লেলিন সাহেবের সার্থক ভাবে কমুনিজিম আপ্লাই করা সমাজে হাতে পাওয়া অতিরিক্ত  সময়ে শিকার আর ফিলোসফি চর্চা করে কাটানোর বিলাসিতার স্বপ্ন  জীবনের তারে হিল্লোল তুলতে পারে না। 

বিশ্বে খুব কম প্রচলিত ভাবধারাই  আছে যে নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে বলতে পারে যে আমার বিশ্বাস যেমন ঠিক সব জীব জগতের সবার  বিশ্বাসও ঠিক , না বাজারের প্রচারিত  atheist বা সেকুলার মতবাদও নয় ,সব ধর্মের অসারতা প্রচার করতে করতে আমরা নিজের অজান্তে ধৰ্ম না মানার ও একটা ধৰ্ম আর তার থেকে প্রসূত আরেকটা দল বানিয়ে ফেলি।

একটা জিনিস আমি ধরে রাখার চেষ্টা করি , আদার রাপারি হয়ে জাহাজের না  খবর রাখা । আমি একান্ত বিশ্বাস করি যে বিষয় বা ঘটনার সাথে আমার নিজের যোগাযোগ নেই সেই বিষয়ে আমার বক্তব্য রাখা মানে পদে পদে ভুল প্রমাণিত হওয়া আবার সেই ভুল ঢাকতে  গাটামো দেখানো। বেদ  উপনিষদ খুব বেশী পড়ার সুযোগ  হয় নি বা ক্ষমতা ও নেই , তাই হাস্যকর ব্যাদ এ সব আছে ধরনের বলা কমেন্ট থেকে এর আধারের চর্চা মূর্খামি হবে।  আবার কিছু তথাকথিত ইন্টেলেক্চুয়াল analysis কেও শুধু অগভীর মনে হয়না নিজের হেরিটেজ কে demonize করে নিজের প্রতিভা লোককে দেখানোর প্রচেষ্টা মনে হয়।  এটা খুবই সত্যি ইন্ডিয়ান scriptures যেমন বেদ , উপনিষদ  ইত্যাদি নিয়ে ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে অনেক সিরিয়াস রিসার্চ আর স্টাডি হয় আমাদের নিজের দেশের চেয়ে। 

সর্ব ধৰ্ম সম্বনয় এর প্রচার তখনি  গ্রহণ যোগ্য যখন তার উদারতার যুক্তি সব ধর্মই সমানেই  শেষ হয়ে যায় না, এটা   মুখে বলা খুবই সোজা যে  আমার উদার মানসিকতায় সব ধর্মই সমান দেখি । বা মুখে বলছি সব ধর্মই সমান এদিকে মনে বিশ্বাস ধৰ্ম মানেই বুজরুকি , এদিকে সময় সুযোগে নিজের ধর্মের কুৎসা গাওয়া। উদারতার যুক্তি তখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে যখন আমার ধর্মের কাছে আমি ঠিক থেকেও, যে যেভাবে যা বিশ্বাস করে তাকে বেঠিক হতে হয় না , সব জীবজগৎ তার বিশ্বাস আর মতের  মধ্যে  সামঞ্জস্যতা  এবং সবাইকে  সমান দেখার রাস্তা পাই আর  আমার বিশ্বাস তাতে অন্তরায় হয় না পরন্তু  তাতে আমাদের উৎসাহিত করে Attheir worst they should Enable it And At their best they should Inspire it

সব ধর্মই সমান বলার তৎপরতার সঙ্গে একটা বিচার করার দৃষ্টিভঙ্গি অন্ধ করে রাখার প্রবণতা থেকে যায় সেটা ঠিক  বাঞ্ছনীয়  বা  শুভ  নয়। তার একটা কারণ অপরের ধর্মবিশ্বাসের সাথে সহমত না হতে পারাকে সেই ব্যক্তির বিপক্ষে যাওয়া বলে ভাবতে শেখার এক অগ ভীর মানসিকতা কাজ করে ।  আমার একটা ধর্মবিশ্বাস আছে  এবং তোমার ধর্মবিশ্বাস এর অনেক কিছুই আমার বিচারে ঠিক মনে হয় না কিন্তু তাও আমি তোমাকে ব্যক্তি শত্রূ তো মনে করিইনা বরং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি প্রয়োজনে দুজনে একসাথে অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করা সম্ভব, তাতে আমাদের দুজনেরই শুধু পার্থিব নয় আত্বিক উন্নতিও ( যাকে সহজ ভাষায় বললে আর্থিক এবং পারমার্থিক )  হতে পারে । এই রকম একটা অবস্থান যে সম্ভব তা আমাদের তথাকথিত সেকুলার ভাবধারার ধারণার বাইরে। আর এখানেই ভারতীয় অধ্যাত্বিকতার সর্বধর্ম সমন্নয়ের  শক্তি , সেটা শুধু এটাকে  সম্ভব বলে না তার আঁধারে আবহমান ধারায় , এটাই মানব জগতে একই স্থান , কাল পাত্রে দুই ধর্মমতের  স্বাভাবিক সহ অবস্থান, অন্যথা সংঘাত অবশ্যাম্ভাবী।  এবং  সমস্ত সঙ্গবদ্ধ ধর্মই হচ্ছে  কালের প্রবাহে  এক সময়িক সমষ্টিগত ভাবধারা , তা কোন বিপরীত শক্তির বিরুদ্ধের  কারণেও  হাতে পারে বা অন্য্ কোন কারণেও হতে পারে কিন্তু আবহমান প্রবাহ হতে পারে না। এবং  আধ্যাতিক চর্চার কিছু সিদ্ধান্ত এই আপাত বিরোধ সম্পন্ন ভাবনাকে এক সূত্রে বাঁধতে পারে। 

এখানেই ভারতীয় অধ্যাত্বিকতার উৎকর্ষতা , where highest value has been given in seeking or self realization not practicing or adopting or preaching or converting.....যেটা অন্য ধর্মের মানুষকে টেনে  নিজের ভাবনার ( ধর্ম বা পন্থা ) দল বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করে না ……..বা  আমার রাস্তা আমার জন্য ঠিক তোমার রাস্তা তোমার জন্য বলে বিতর্ক থামিয়ে দেয়  না..…...পরন্তু যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারে তুমি তোমার বিশ্বাস বা অবিশ্বাস আর প্রকৃতি নিয়ে চলে যেই লক্ষে পৌঁছবে...আমারও  পথের অন্তিম লক্ষ্য  সেই একই।  যদি তোমার পথের ও সত্যিকারের লক্ষ্য তাকে বোঝা বা জানা অন্যথায় নিজেকে জানা ই হয়..অন্য কিছু নয়……...আমাদের পথের শেষ ও অভিন্ন। "তু না জানে আস পাস হ্যাঁয় খুদা " আর "আছো অনিল আনলে চির নভ নীল এ ভাষায় ভিন্নতা আছে ভাবে নেই। সেই আধারেই বিবেকানন্দ বলতে পেরেছিলেন মানুষ সত্য থেকে সত্য তর্ তে যায় , অসত্য থেকে সত্যে নয় ।

আর এটা শুধু রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ তেই শেষ নয় এই ভাবধারার আলকাজ্জিত  অগুন্তি  নামের মধ্যে গুরু নানক আছেন : কোই বোলে রাম কোই খুদায়ই … সান্টা ( google এটাই করে দিলো :)  কবীর   আছেন…..আছেন সাই বাবা ….ঘরের কাছেই আছেন  লালন ফকির ……….

এই সর্ব ধৰ্ম সম্বনয় একান্ত ভারতীয় একে না জেনে বুঝে গুরুত্ব না দিয়ে  সমস্ত সর্ব  ধৰ্ম এক করার   প্রচেষ্টা হয়   অন্তস্বার  শূন্য  শিশুসুলভ অপরিণাম দর্শী  নয়তো কোন উদ্দেশ্য প্রণীত আন্দোলন যা ভারতের বিগত  ১০০ বছরে অনেক বার হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ভারতীয়তা যাকে হিন্দু ধৰ্ম বলে দেগে দেওয়া হয়েছে তাকে কি রক্ষা করার দরকার , একদমই না। এ জগৎ , যার গতি আছে , তার স্বাভাবিক নিয়মেই থেকে যাবে ..........তার জন্য কোন রাজনৈতিক দলের আশ্রয় প্রয়োজন নেই । 

মূল দ্বন্দটা  হচ্ছে , ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতি  সেকুলার নামের একটা বাঘ ছাল পড়েই এগিয়েছে, তথাকতিত সমস্ত দল মত নির্বিশেষে।  এখন বিভিন্ন  অবস্থানে শুধু রাজনীতি তে নয় , অন্য অনেক প্লাটফর্মেও  এর মূল্যায়ন হচ্ছে। যা সেই তথাকথিত সেকুলার ভাবনার সব কিছুকে গ্লোরিফাই করে না , নানান কারণে,  সেটাকেই অসহিষ্ণুতা প্রমানের অতি আগ্রহ দৃশ্যমান। 

মূল প্রশ্ন  হচ্ছে ,  যেই সর্ব ধৰ্ম সম্বনয় ভারতের ঐতিহ্য যাকে রক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে তাকে রুদ্ধ যেন না হতে হয়, তার সঠিক পথটা কী .........