বহু আর্বতন ও বিবর্তনের মধ্যদিয়ে পঞ্চগড় জেলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। পঞ্চগড় নামকরনেও রয়েছে এক ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। পঞ্চগড় নামকরণ সমন্ধে কেহ কেহ মনে করেন যে, এ অঞ্চলটি অতি প্রাচীনকালে ‘পুন্ডুনগর রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ‘পঞ্চ’ (পাঁচ) গড়ের সমাহার ‘পঞ্চগড়’ নামটির অপভ্রাংশ ‘পঞ্চগড়’ দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের নাম যে, পঞ্চগড়ই ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। বস্ত্ততঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ‘পঞ্চ’ শব্দটি বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটি, পঞ্চনগরী পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। সুতরাং পঞ্চগৌড়ের একটি অংশ হিসেবে প্রাকৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পঞ্চগড়ের নামকরনের সম্ভাবনা থকে যায়। অর্থ্যাৎ পঞ্চগৌড় > পঞ্চগোড়>পঞ্চগড়। অবশ্য বহুল প্রচলিত মত এই যে, এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই পঞ্চগড় নামটির উৎপত্তি। গড়গুলো হচ্ছে, ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়।পঞ্চগড় একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন ও মধ্য যুগে এই ভূখন্ডের পাশেই ছিল মগধ, মিথিলা, গৌর, নেপাল, ভূটান, সিকিম ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। আধুনিককালের মত অতীত কালেও জনপদটি ছিল সীমান্ত অঞ্চল। এই ভূখন্ডটি পর্যায়ক্রমে শাসিত হয়েছে প্রাগ- জ্যোতিষ, কামরূপ, কামতা, কুচবিহার ও গৌর রাজ্যের রাজা, বাদশা, সুবাদার এবং বৈকুন্ঠপুর অঙ্গ- রাজ্যের দেশীয় রাজা ও ভূ-স্বামীদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। খ্রীস্টীয় ২য়, ৩য় শতকের মধ্যে রাজা ‘শালিবাহন’ রাজা ‘পৃথু’ এবং রাজা ‘জল্লেশ’ পঞ্চগড়ের শালবাহান ও ভিতরগড় এলাকায় রাজ্য, নগর ও সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে তুলেছিলেন। মৌর্য, গুপ্ত ও পাল (দেবপাল ধর্মপাল) রাজন্যবর্গও এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন।মধ্যযুগের শুরুতেই প্রথম মুসলিম বঙ্গবিজীয় সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন খলজি তাঁর বহু বিতর্কিত তিববত অভিযানের এক পর্যায়ে পঞ্চগড় জনপদের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সুলতান হোসেন শাহ এবং কামতার রাজা নীলধ্বজ তেঁতুলিয়া থানার দেবনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কোন কোন ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন। সুলতান জালাল উদ্দিন ফাতেশাহ, সুলতান বারবক শাহ, শেরশাহ, খুররম খাঁ (শাহজাহান), মীরজুমলা, সুবাদার ইব্রাহীম খাঁ ফতে জঙ্গ এবং অন্ত মধ্যযুগে দেবী চৌধুরাণী, ভবানী পাঠক, ফকির মজনুশাহ প্রভৃতি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পঞ্চগড় জনপদের নাম ও স্মৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত। ষোড়শ শতকে কুচবিহার রাজ্য গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড় অঞ্চল মূলত কোচ রাজন্যবর্গের দ্বারাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসিত হয়েছে।১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পঞ্চগড় থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৯৮০ সালে ১লা জানুয়ারী ঠাকুরগাঁও মহকুমার ৫টি থানা তেতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। মহকুমার সদর দপ্তর পঞ্চগড় থানায় স্থাপিত হয়। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব সৈয়দ আব্দুর রশিদ (০১-০১-১৯৮০ থেকে ৩১-১২-১৯৮২)। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। পঞ্চগড় জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব আ.স.ম. আব্দুল হালিম (০১-০২-১৯৮৪ থেকে ১৬-০৬-১৯৮৫)।
পঞ্চগড় জনপদে মানব বসতি শুরু হয়েছে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে। বাংলাদেশের এই প্রান্ত অঞ্চলে দীর্ঘকাল ব্যাপ্ত পুন্ড্র, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসকগণের সংস্পর্শে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য প্রত্ন নিদর্শন। এ সবের মধ্যেই রয়েগেছে অতীতের বহু গৌরব-গাঁথা বহু দীর্ঘশ্বাস ও প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের অগনিত স্মৃতি চিহ্ন। একটি শহরকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে উপাদান প্রয়োজন তার সবই বিদ্যমান রয়েছে পঞ্চগড় জেলায়। পঞ্চগড় জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের যে কোন জেলার চেয়ে ভাল। পঞ্চগড়ের মানুষজন অতি সহজ সরল এবং অতিথি পরায়ন। পঞ্চগড় থেকে হেমন্ত ও শীতকালে পর্যক্ষেণ করা যায় কাঞ্চনজংঘার অপরূপ দৃশ্য যা পর্যটকদের অতি সহজে আকৃষ্ট করে। পঞ্চগড়ে রয়েছে সমতল ভূমিতে চা বাগানের আনন্দ সৌন্দর্য্য। রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র রকস মিউজিয়াম। রয়েছে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ডাকবাংলো যেখান থেকে দুই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
২৬-২০ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৩৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার ভৌগলিক অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ । ১৯৪৭ সালে স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ কর্তৃক নির্দেশিত এই জেলার সীমান্ত রেখা অত্যন্ত আঁকাবাঁকা ও ভংগুর। পঞ্চগড় জেলার তিন দিকেই ভারতীয় সীমান্ত। পঞ্চগড় জেলার সাথে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য ২৮৬.৮৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুঁড়ি জেলা, উত্তর পূর্ব ও পূর্বে জলপাইগুঁড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতে পুর্নিয়া ও উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে ঠাকারগাঁও ও দিনাজপুর জেলা অবস্থিত।
ক. ভিতরগড়
খ. মহারাজার দিঘী
গ. বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির
ঘ. মির্জাপুর শাহী মসজিদ
ঙ. বার আউলিয়া মাজার
চ. গোলকধাম মন্দির
ছ. তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো
জ. বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর
ঝ. সমতল ভূমিতে চা বাগান
ঞ. রকস্ মিউজিয়াম।
ক) আয়তনঃ ১,৪০৪.৬৩ বর্গ কিঃমিঃ
খ) নির্বাচনী এলাকাঃ ২ (দুই)টি
গ) মোট ভোটার সংখ্যা (পুরুষ ও মহিলা ) : মোট ৫,৪৪,৭৪৬ জন (পুরুষ-২,৬৯,১৩৩ ও মহিলা-২,৭৫,৬১৩)
ঘ) ঊপজেলাঃ ৫
ঙ) থানাঃ ৫
চ) পৌরসভাঃ ২
ছ) ইঊনিয়নঃ ৪৩
জ) গ্রামঃ ৮২৫
ঝ) স্কুলঃ ১,৮৬৫
ঞ) কলেজঃ ২২
ট) মৌজাঃ ৪৬৩
ঠ) নদীঃ ১৬
ড) বদ্ধ জলমহাল (২০ একরের ঊর্দ্ধে ও অনুর্ধ ২০ একর): ২০ একরের ঊর্দ্ধে- ১ টি ও অনুর্ধ ২০ একর- ১১৫ টি
ঢ) উম্মুক্ত জলমহালঃ ১৬
ণ) হাট-বাজারঃ ১৩৫
ত) মোট জমিঃ ১,৪০,৫৩৪ হেক্টর
থ) মোট আবাদী জমিঃ ১,০৮,২০০ হেক্টর
দ) ইউনিয়ন ভূমি অফিসঃ ৪৩
ধ) পাকা রাস্তাঃ ৪৪৯.৪৫ কিঃমিঃ
ন) কাঁচা রাস্তাঃ ২,৬৫৭.৪৩ কিঃমিঃ
প) আশ্রায়ণ প্রকল্পঃ ৭
ফ) আদর্শ গ্রামঃ ২২
ব) খেয়াঘাট/ নৌকাঘাটঃ ৩
ভ) দর্শনীয় স্থানঃ মির্জাপুর শাহী মসজিদ (৪০০ বছরের পুরাতন), ছেপড়াঝাড় পাহাড়ভাঙ্গা মসজিদ (৪০০ বছরের পুরাতন), বার আউলিয়ার মাজার, বাংলাবান্ধা (জিরো পয়েন্ট), ভিতরগড় মহারাজার দীঘি, কাজলদীঘি, বদেশ্বরী মন্দির, দেবীগঞ্জ করতোয়া ব্রীজ ও বকস্ মিউজিয়াম (সরকারি মহিলা কলেজে)
ম) জনসংখ্যাঃ ৯,৮৭,৬৪৪ জন (২০১১ সালের আদমশুমারী ও গৃহগণনা অনুযায়ী)
য) সংসদীয় আসনঃ ২
র) ভৌগলিক অবস্থান ও আয়তনঃ ২৬-২০ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৩৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পঞ্চগড় জেলার অবস্থান। আয়তন ১৪০৪.৬৩ বর্গ কিলোমিটার।
ল) শিক্ষার হারঃ ৫১.০৮% (পুরুষ ৫৫.২০%, মহিলা ৪৮.৩০%)
শ) দূর্যোগ প্রবণ এলাকা কিনাঃ না
ষ) জনসংখ্যার ঘনত্বঃ ৭০৩ জন (প্রতি বর্গ কি.মি.)
১। তেঁতুলিয়া
২।পঞ্চগড় সদর
৩।আটোয়ারী
৪।বোদা
৫।দেবীগঞ্জ
১। বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন
২। তিরনইহাট ইউনিয়ন
৩। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন
৪। শালবাহান ইউনিয়ন
৫। ভজনপুর ইউনিয়ন
৬। বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন
৭। দেবনগর ইউনিয়ন
১। চাকলাহাট ইউনিয়ন
২। সাতমেড়া ইউনিয়ন
৩। অমরখানা ইউনিয়ন
৪। হাড়িভাষা ইউনিয়ন
৫। কামাত কাজলদিঘি ইউনিয়ন
৬। ধাক্কামারা ইউনিয়ন
৭। গড়িনাবাড়ী ইউনিয়ন
৮। মাগুড়া ইউনিয়ন
৯। পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন
১০। হাফিজাবাদ ইউনিয়ন
১। তোড়িয়া ইউনিয়ন
২। আলোয়াখোয়া ইউনিয়ন
৩। রাঁধানগর ইউনিয়ন
৪। ধামোর ইউনিয়ন
৫। মির্জাপুর ইউনিয়ন
৬। বলরামপুর ইউনিয়ন
১। বেংহারি ইউনিয়ন
২। ময়দানদিঘি ইউনিয়ন
৩। ঝলইশালশিরি ইউনিয়ন
৪। সাকোয়া ইউনিয়ন
৫। পাঁচপীর ইউনিয়ন
৬। বোদা ইউনিয়ন
৭। কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন
৮। মাড়েয়া ইউনিয়ন
৯। বড়শশী ইউনিয়ন
১০। চন্দনবাড়ী ইউনিয়ন
১। দেবীগঞ্জ ইউনিয়ন
২। সোনাহার ইউনিয়ন
৩। দন্ডপাল ইউনিয়ন
৪। শালডাংগা ইউনিয়ন
৫। টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন
৬। চিলাহাটি ইউনিয়ন
৭। সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন
৮। পামুলী ইউনিয়ন
৯। দেবীডুবা ইউনিয়ন
১০। চেংঠি হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়ন