ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হলো একটি ভাষার সমস্ত ধ্বনি, সেগুলোর উচ্চারণরীতি, উচ্চারণস্থান, ধ্বনি পরিবর্তন (যেমন সন্ধি, ণত্ব-ষত্ব বিধান) ইত্যাদি। এটি মানুষের কথা বলার (উৎপাদন) এবং শোনার (উপলব্ধি) উভয় দিক নিয়ে আলোচনা করে।
ধ্বনি: কোনো ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলোই ধ্বনিতত্ত্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়। বাংলা ভাষায় এগুলো প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত: স্বরধ্বনি এবং ব্যঞ্জনধ্বনি।
ধ্বনি পরিবর্তন: একটি ভাষা ব্যবহারের সময় কীভাবে ধ্বনিগুলো পরিবর্তিত হয়, তা ধ্বনিতত্ত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এর মধ্যে সন্ধি, ণত্ব ও ষত্ব বিধানের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান: ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান হল বাংলা ব্যাকরণের দুটি নিয়ম। ণত্ব বিধান অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট নিয়মে 'ন' (দন্ত্য-ন) পরিবর্তিত হয়ে 'ণ' (মূর্ধন্য-ণ) হয়, এবং ষত্ব বিধান অনুযায়ী কিছু নিয়মে 'স' (দন্ত্য-স) পরিবর্তিত হয়ে 'ষ' (মূর্ধন্য-ষ) হয়। ণত্ব বিধান মূলত তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেখানে দন্ত্য-ন ও মূর্ধন্য-ণ-এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।
সন্ধি: সন্ধি হলো পাশাপাশি থাকা দুটি বর্ণের বা ধ্বনির মিলন, যার ফলে একটি নতুন ধ্বনি তৈরি হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভাষাকে আরও শ্রুতিমধুর এবং সহজবোধ্য করে তোলা। বাংলা ব্যাকরণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এটি দুই প্রকার: স্বরসন্ধি এবং ব্যঞ্জনসন্ধি।
উচ্চারণ: ধ্বনিগুলোর সঠিক উচ্চারণরীতি এবং সেগুলো উচ্চারণের স্থান (যেমন—কোথা থেকে উচ্চারিত হয়) ধ্বনিতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শব্দ ও অক্ষর: শব্দ বা অক্ষরের গঠন এবং ধ্বনির উপস্থিতির নিয়মকানুনও ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনার বিষয়।
ধ্বনি উৎপাদন ও উপলব্ধি: মানুষ কীভাবে শব্দ তৈরি করে (উৎপাদন) এবং কীভাবে সেই শব্দগুলো অন্যদের দ্বারা বোঝা যায় (উপলব্ধি), এই দুটি দিকই ধ্বনিতত্ত্বের আওতায় আসে।