শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব হলো বাংলা ব্যাকরণের একটি শাখা যা শব্দের গঠন, প্রকার, এবং রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করে। এর প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে শব্দ কীভাবে গঠিত হয় (যেমন - ধাতু, উপসর্গ, প্রত্যয় এবং বিভক্তি যোগে), লিঙ্গ, বচন, পুরুষ, সর্বনাম, অনুসর্গ, এবং পদগঠনের নিয়ম।
শব্দতত্ত্বের প্রধান আলোচিত বিষয়গুলো হলো:
শব্দ গঠন: ধাতু, উপসর্গ, প্রত্যয় ও বিভক্তি যোগে কীভাবে নতুন শব্দ তৈরি হয়।
শব্দের শ্রেণীবিভাগ: শব্দের শ্রেণীবিভাগ প্রধানত তিনটি প্রধান দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়: গঠনমূলক, অর্থমূলক এবং উৎপত্তিমূলক।
শব্দের রূপান্তর: শব্দ কীভাবে পরিবর্তিত হয় এবং বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়।
পদ: ব্যাকরণিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, শব্দকে পদ হিসেবে আলোচনা করা হয় এবং বাক্যে এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়।
লিঙ্গ, বচন, পুরুষ, কাল: শব্দে লিঙ্গ (যেমন: পুরুষ, স্ত্রী), বচন (একবচন, বহুবচন), পুরুষ (যেমন: উত্তম, মধ্যম, প্রথম) এবং কালের(বর্তমান কাল, অতীত কাল এবং ভবিষ্যৎ কাল) প্রয়োগ ও পরিবর্তন।
কারক,সম্বন্ধ, বিভক্তি: কারক, সম্বন্ধ এবং বিভক্তির ব্যবহার এবং শব্দের সাথে এদের সম্পর্ক।
শব্দদ্বৈত: একই শব্দ বারবার ব্যবহৃত হয়ে নতুন অর্থ তৈরি করলে তাকে শব্দদ্বৈত বলে।
দ্বিরুক্ত শব্দ: দ্বিরুক্ত শব্দ' বলতে কোনো শব্দ বা পদকে দুইবার ব্যবহার করা বোঝায়, যা অর্থকে জোরদার করে বা সম্প্রসারিত করে। এটি বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া ।
শব্দগুচ্ছ: শব্দগুচ্ছ বা ফ্রেজ (phrases) নিয়ে আলোচনা, যেমন – ইডিয়ম বা বাগধারা।
রূপমূল: শব্দের ক্ষুদ্রাংশ যার নিজস্ব অর্থ আছে, যেমন - 'রূপমূলতত্ত্ব' শব্দের মূল অংশ এবং তার অর্থ।
অনুসর্গ: অনুসর্গ পদ এবং বাক্যে এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা।
উপসর্গ: উপসর্গ হলো এমন কিছু অব্যয়সূচক শব্দাংশ, যা কোনো শব্দ বা ধাতুর আগে বসে নতুন শব্দ তৈরি করে এবং সেই শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ বা সংকোচন ঘটায়।
পদাশ্রিত নির্দেশক: পদাশ্রিত নির্দেশক হলো বাংলা ব্যাকরণে কিছু অব্যয় বা প্রত্যয় যা বিশেষ্য বা বিশেষণের পরে যুক্ত হয়ে পদটিকে নির্দিষ্টতা প্রদান করে। যেমন: টা, টি, খানা, খানি, টুকু ইত্যাদি।
সমাস: সমাস হলো এমন একটি ব্যাকরণিক প্রক্রিয়া যেখানে দুই বা ততোধিক অর্থযুক্ত পদের সমন্বয়ে একটি নতুন পদ গঠিত হয়। এর মাধ্যমে বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানো যায় এবং একাধিক শব্দের একটি পদে রূপান্তর ঘটে।
ধাতু: ধাতু হলো ক্রিয়াপদের মূল অংশ বা অবিভাজ্য অংশ যা একটি শব্দের অন্তর্নিহিত মূল ভাব প্রকাশ করে। এটি ক্রিয়াপদের মূল বা প্রকৃতি, যা থেকে ক্রিয়াপদ তৈরি হয়। যেমন - 'খাওয়া' ক্রিয়াপদের ধাতু হলো 'খা'।
প্রত্যয়: প্রত্যয় হলো এমন এক ধরনের শব্দাংশ যা শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে। প্রত্যয়ের নিজস্ব কোনো অর্থ থাকে না, কিন্তু এটি নতুন শব্দ তৈরি করতে এবং শব্দের অর্থকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে।