শব্দের শ্রেণীবিভাগ প্রধানত তিনটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়: গঠনমূলক, অর্থগত এবং উৎসমূলক। গঠনমূলকভাবে, শব্দকে মৌলিক ও সাধিত—এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অর্থগতভাবে, শব্দকে যৌগিক, রূঢ়ি এবং যোগরূঢ়—এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। আর উৎসমূলকভাবে, বাংলা ভাষার শব্দকে তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশি—এই পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়।
মৌলিক শব্দ: যে শব্দকে আর বিশ্লেষণ করা যায় না। যেমন: গোলাপ, নাক, লাল।
সাধিত শব্দ: উপসর্গ, অনুসর্গ, প্রত্যয় ইত্যাদি যোগে গঠিত শব্দ। যেমন: নীলাকাশ, চলন্ত, ডুবুরি।
যৌগিক শব্দ: যে শব্দ দুটি ভিন্ন শব্দের অংশ থেকে গঠিত হয় এবং যার অর্থ তার উপাদান শব্দগুলোর অর্থকে অনুসরণ করে। যেমন: গায়ক যেমন: গায়ক (+positive+), কর্তব্য (+positive+)।
রূঢ়ি শব্দ: যে শব্দ প্রচলিত অর্থে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু সেই অর্থ তার উপাদান শব্দগুলো থেকে বোঝা যায় না। যেমন: মহাজন, গবেষণা।
যোগরূঢ় শব্দ: যে শব্দ দুটি বা তার বেশি শব্দাংশ থেকে গঠিত হয়, কিন্তু তার অর্থ সাধারণ অর্থ থেকে বিশেষ অর্থে পরিণত হয়। যেমন: পঙ্কজ (পঙ্ক+জ = যা কাদা থেকে জন্মায়, পদ্ম), জলধি (জল+ধি = জল ধারণ করে, সমুদ্র)।
তৎসম শব্দ: সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত, অপরিবর্তিত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ। যেমন: সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র।
অর্ধ-তৎসম শব্দ: তৎসম শব্দের পরিবর্তিত রূপ। যেমন: শ্রী, জুয়া।
তদ্ভব শব্দ: যে শব্দগুলো পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এসেছে। যেমন: হিত, দেহ, কুচ্ছিত।
দেশি শব্দ: বাংলাদেশের নিজস্ব ভাষা থেকে উদ্ভূত শব্দ। যেমন: কুলা, ডাব, গঞ্জ।
বিদেশি শব্দ: অন্য ভাষা থেকে আগত শব্দ। যেমন: আরবি, ফারসি, ইংরেজি, পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ ইত্যাদি।
বিশেষ্য: নাম বোঝায় (যেমন: মানুষ, ঢাকা, সততা)।
সর্বনাম: বিশেষ্যের পরিবর্তে বসে (যেমন: সে, তিনি, যা)।
বিশেষণ: বিশেষ্য বা সর্বনামের দোষ-গুণ বোঝায় (যেমন: ভালো, কালো, সুন্দর)।
ক্রিয়া: কাজ করা বোঝায় (যেমন: খায়, যায়, করে)।
ক্রিয়া বিশেষণ: ক্রিয়ার ধরন বোঝায় (যেমন: আস্তে, দ্রুত, ভালো)।
অনুসর্গ: বিভক্তির মতো কাজ করে (যেমন: দিয়ে, দ্বারা, থেকে)।
যোজক: দুটি পদ বা বাক্য যুক্ত করে (যেমন: এবং, ও, কিন্তু)।
আবেগ শব্দ: আবেগ প্রকাশ করে (যেমন: বাহ্!, ওরে!, হায়!)।