অ্যাসিডিটি বোঝা
অ্যাসিডিটি হল একটি ছাতা শব্দ যা আপনার পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ড দ্বারা অ্যাসিডের অত্যধিক উত্পাদনের ফলে সৃষ্ট লক্ষণগুলির একটি সেট ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। মানবদেহে, পাকস্থলী সাধারণত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরণ করে, যা খাওয়া খাবারকে ভেঙে ফেলতে এবং হজমে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজন। অ্যাসিডিটি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যার মধ্যে ডিসপেপসিয়া, অম্বল, গ্যাস্ট্রিক প্রদাহ এবং সেইসাথে পেটে আলসার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
আসুন একটু বিস্তারিতভাবে এই অবস্থা তাকান.
অ্যাসিডিটির সাধারণ কারণ:
মানবদেহে, আমাদের পাকস্থলী, হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য, গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড তৈরি করে। বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে, যদিও, এই অ্যাসিডগুলি প্রাকৃতিক বাইকার্বনেট এবং প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনগুলির উত্পাদন দ্বারা নিরপেক্ষ হয়, যা পাকস্থলীর শ্লেষ্মা আস্তরণে নিঃসৃত হয়। অ্যাসিডিটির ফলে এই নিরপেক্ষ রাসায়নিকের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে পেটের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি বেশ কয়েকটি কারণের কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
মশলাদার এবং আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া
ধূমপান এবং অ্যালকোহল
পেটের অসুখ যেমন পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, পেটের টিউমার ইত্যাদি।
অ স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধের মতো ওষুধ।
অ্যাসিডিটির সাধারণ লক্ষণ:
সাধারণভাবে অম্লতার উপসর্গগুলি দেখা যায়, যা নির্দেশ করে যে আপনি এই ব্যাধিতে ভুগছেন, এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
পেটে অবিরাম জ্বালাপোড়া
রোগীর গলায় জ্বালাপোড়া
অস্থিরতা
Belching
বমি বমি ভাব
মুখে টক স্বাদ
বদহজমের কারণে অস্বস্তি বোধ করা
কোষ্ঠকাঠিন্য
অ্যাসিডিটির চিকিৎসাঃ
অম্লতা চিকিত্সা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অ্যান্টাসিড দ্বারা সাহায্য করা হয়, যেটিতে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম বা অ্যালুমিনিয়াম যৌগ থাকতে পারে। এই অ্যান্টাসিডগুলি পেটে উত্পাদিত অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে, এইভাবে এই ব্যাধির লক্ষণগুলি হ্রাস করে। কখনও কখনও, অম্লতার গুরুতর ক্ষেত্রে, আপনার চিকিত্সক হিস্টামিন ব্লকিং এজেন্টগুলির ব্যবহার নির্ধারণ করতে পারেন। খুব বিরল ক্ষেত্রে, আপনার পেটে অ্যাসিড জমা হওয়াকে আক্রমণাত্মকভাবে কমাতে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কলা, ঠাণ্ডা দুধ, পুদিনা পাতা, আদা বা লবঙ্গ খাওয়ার মতো ঘরোয়া প্রতিকারও অ্যাসিডিটির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অ্যাপোলো ক্লিনিকের অভিজ্ঞতা:
যে সমস্ত রোগীরা প্রায়শই অ্যাসিডিটিতে ভোগেন তাদের এই ব্যাধির স্থায়ী নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। অ্যাপোলো ক্লিনিকে, আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের দল বছরের পর বছর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে যাতে আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা যত দ্রুত এবং যতটা সম্ভব ব্যথাহীনভাবে সমাধান করা যায়।
আমাদের বিশেষজ্ঞরা আপনাকে সঠিক নির্ণয় এবং প্রয়োজনে নির্ধারিত ওষুধের মাধ্যমে অ্যাসিডিটির বিদ্যমান উপসর্গগুলি উপশম করতে সাহায্য করবে এবং জীবনধারা এবং খাদ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনাকে গাইড করতে সাহায্য করবে যা অ্যাসিডিটি কমাতে বা সম্পূর্ণভাবে দূর করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি ঘন ঘন অ্যাসিডিটির শিকার হন, তাহলে আজই আমাদের বিশেষজ্ঞদের একজনের সাথে যোগাযোগ করুন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ সমস্যা। এটি প্রায়ই আমাদের খাবার গ্রহণের অভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন এবং স্বাস্থ্যগত কারণের উপর নির্ভর করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য সঠিক ঔষধ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঔষধ খাওয়ার নিয়ম অনুসরণ করলে এর কার্যকারিতা বাড়ে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়।
গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। সাধারণত এই ঔষধগুলি খাবার গ্রহনের আগে বা খাবার সাথে খাওয়া হয়। তবে ঔষধের প্রকারভেদ অনুযায়ী নিয়ম ভিন্ন হতে পারে। তাই ঔষধের প্যাকেটের নির্দেশিকা অনুসরণ করা উচিত। গ্যাসের ঔষধ নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সময়ে গ্রহণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ওমিপ্রাজল সাধারণত খাবার গ্রহণের আগে খাওয়া উচিত। সকালে খালি পেটে খেলে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আগে ওমিপ্রাজল গ্রহণ করা উচিত। প্রতিদিন একই সময়ে ঔষধ খাওয়া কার্যকর ফলাফল দেয়। ওমিপ্রাজলের মধ্যে জনপ্রিয় ওষুধগুলো হচ্ছে সেকলো ২০, এবং অমিটিড ২০।
ইসোমিপ্রাজল সাধারণত খাবারের আগে বা খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে। সকালে খালি পেটে ইসোমিপ্রাজল গ্রহণ করলে এর কার্যকারিতা বেশি হয়। খাবার গ্রহণের কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঔষধ গ্রহণ করা উচিত। ইসোমিপ্রাজলের মধ্যে জনপ্রিয় ওষুধগুলো হচ্ছে সারজেল ২০, এবং ম্যাক্সপ্রো ২০।
রেবিপ্রাজল খাবারের আগে বা পরে খাওয়া যায়। সাধারণত সকালে খালি পেটে বা খাবারের আগে খাওয়া বেশি কার্যকর। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের পরও খাওয়া যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন ঔষধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। রেবিপ্রাজলের মধ্যে জনপ্রিয় ওষুধগুলো হচ্ছে ফিনিক্স ২০, এবং এসিফিক্স ২০।
প্যানটোপ্রাজল সাধারণত খালি পেটে খাওয়া উচিত। সকালে নাস্তার আগে প্যানটোপ্রাজল খাওয়া উচিত। খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঔষধ গ্রহণের অভ্যাস করা উচিত। প্যানটোপ্রাজলের মধ্যে জনপ্রিয় ওষুধগুলো হচ্ছে প্যানটোনিক্স ২০, এবং ট্রুপ্যান ২০।
ল্যানোসোপ্রাজল সাধারণত খাবারের আগে বা খালি পেটে খাওয়া উচিত। সকালে নাস্তার আগে বা খালি পেটে খেলে এটি সবচেয়ে কার্যকর। খাবারের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে খাওয়া উচিত। প্রতিদিন একই সময়ে ঔষধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ল্যানোসোপ্রাজলের মধ্যে জনপ্রিয় ওষুধগুলো হচ্ছে ল্যানসো ৩০, এবং ল্যানসোডিন ৩০।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সাধারণত খালি পেটে বা খাবার গ্রহণের আগে খাওয়া হয়। সকালে খালি পেটে অথবা রাতে খাবার গ্রহণের আগে ঔষধ খাওয়া অধিক কার্যকর হতে পারে। কিছু ঔষধ খাবার গ্রহণের আগে খাওয়া উচিত, আবার কিছু ঔষধ খাবার পর খাওয়া উচিত। তাই ঔষধের প্যাকেটের নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ সাধারণত পানি দিয়ে গিলে খাওয়া উচিত। চিবিয়ে বা ভেঙ্গে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হলে নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ঔষধ খেলে সমস্যা কমে যেতে পারে। কখনো ঔষধ খাওয়া বন্ধ করা উচিত নয়, বিশেষত যদি চিকিৎসক না বলেন।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ গ্রহণের আগে এবং পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের ডোজ এবং সময়সূচী মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন- মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ অন্য ঔষধের সঙ্গে মিশে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই অন্য কোন ঔষধ গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অম্লের (অ্যাসিড) জ্বালাপোড়াকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয়। বাজারে এ রোগের ওষুধের গ্রুপগুলো হলো ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, লানসোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল এবং অতিসাম্প্রতিক কালের ভোনোপ্রাজান। এসব ওষুধ পাকস্থলীর অম্ল প্রশমনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয় এই ওষুধের। আমরা কারণে-অকারণে যখন-তখন এই ওষুধ খাই। অথচ এতে ভয়ানক বিপদ হতে পারে।
ঝুঁকি
দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন—
নিউমোনিয়া: এ ওষুধ সেবনে পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশ বদলে যায়। এতে জীবাণুর বংশবিস্তার সহজতর হয়। বিশেষত হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এসব জীবাণু একসময় পাকস্থলী থেকে বসত গড়ে ফুসফুসে। ফলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়।
কোষ স্ফীত: এ ওষুধের কারণে গ্যাস্ট্রিন নামক একটি উৎসেচকের (জৈব অনুঘটক) পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে ওষুধ ছেড়ে দিলে হঠাৎ আবার অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিন নামক উৎসেচকের প্রভাবে একধরনের কোষ স্ফীত হয়ে যায়। কালক্রমে সেটি ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।
হাড় ক্ষয়: গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ওমিপ্রাজল ওষুধ সেবন করলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে একসময় হাড় ভেঙে যায়।
মাংসে কামড়ানো: দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে রক্তে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এর অভাবে মাংসে কামড়ানো ব্যথা, দুর্বলতা, টাটানি, খিঁচুনি, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে।
স্নায়ুবৈকল্য: দীর্ঘদিন এই ওষুধ সেবনের ফলে ভিটামিন বি-১২-এ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর অভাবে রক্তশূন্যতা, স্নায়ুবৈকল্য দেখা দেয়। বিশেষত বয়স্কদের এসব সমস্যা আরও বেশি হতে পারে। দীর্ঘদিন এই ওষুধ সেবনের সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
কিডনি রোগ: গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে অ্যাকুইট ইন্টারেস্টেসিয়াল নেফ্রাইটিস নামক কিডনির মারাত্মক ব্যাধি হতে পারে। এই ওষুধ সেবনের প্রথম থেকে শুরু করে ১৮ মাস সময়ের মধ্যে এই ব্যাধি দানা বাঁধতে পারে। এতে ক্ষুধামান্দ্য, বমি, জ্বর, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।
● চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না। চিকিৎসক হয়তো সাময়িক গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়েছিলেন, সেটা দিনের পর দিন খাবেন না।
● অ্যাসিডিটি বা গ্যাস কমানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন। যেমন অতিরিক্ত তেল–মসলা ও ধূমপান বর্জন, সময়মতো আহার, আহারের পরপরই শুয়ে না পড়া, আহারের সময় বেশি পানি পান না করা ইত্যাদি।
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা
রাফিয়া আলম
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ০০
অ্যাসিডিটির সমস্যায় গ্যাসের ওষুধ—এটা প্রায় সবাই নিজ দায়িত্বেই খেয়ে ফেলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেসব ওষুধ গ্রহণ করা যায়, এগুলোকে বলা হয় ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ। গ্যাসের ওষুধও রয়েছে এ তালিকায়। তবে চাইলেই কি এই ওষুধ যখন–তখন সেবন করা যায়? দীর্ঘদিন ধরে এ ওষুধ সেবনের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মতলেবুর রহমান নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন। বাংলাদেশে এমন বহু রোগী রয়েছেন, যাঁরা আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতায় ভুগছেন। এই রোগীদের মধ্যে আবার অনেকেরই দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ সেবন করার ইতিহাস আছে। তাঁদের আয়রনের অভাব হওয়ার কিন্তু অন্য কোনো কারণ নেই। তাঁদের এই রক্তশূন্যতার জন্য গ্যাসের ওষুধই দায়ী। শুধু রক্তশূন্যতাই নয়, দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ সেবনের কারণে হজমেও ব্যাঘাত ঘটে।
বদহজম নিরাময়ের ওষুধ খেয়ে আবার সেই ওষুধের জন্যই বদহজম হওয়া কিংবা এ ধরনের ওষুধ সেবনের ফলে রক্তশূন্যতা হওয়ার বিষয়গুলো একটু বিস্ময়কর মনে হতে পারে। বৈজ্ঞানিক কারণটাও সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন এই চিকিৎসক। পাকস্থলীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার জন্যই সেখানে কিছুটা অ্যাসিডিক, অর্থাৎ অম্লীয় পরিবেশ প্রয়োজন হয়। অম্লতা বেড়ে গেলে গ্যাসের ওষুধ সেবন করা হয়, যার কাজই হলো অম্লতা কমানো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ খেলে স্বাভাবিক অম্ল পরিবেশটাই হারিয়ে যায়। এতে পাকস্থলীর কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ খেলে পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই দুইয়ের প্রভাবে হজমের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। আর খাবার থেকে আয়রন শোষণের জন্যও অম্লীয় পরিবেশের বিকল্প নেই। তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সত্ত্বেও আপনার আয়রনের অভাব হতে পারে, যদি দীর্ঘদিন ধরে আপনি গ্যাসের ওষুধ খান।
দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাসের ওষুধ খেলে লিভার, কিডনি ও বোনম্যারোর (অস্থিমজ্জা) ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সিরাপ–জাতীয় গ্যাসের ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে সেটির মধ্যকার রাসায়নিক উপকরণের কারণে শরীরে কোনো বিষাক্ত প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
কোনো অবস্থাতেই দুই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো গ্যাসের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কিছুদিন বিরতি দিয়েও যদি প্রায়ই গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন, তাহলেও দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বরং বারবার গ্যাসের ওষুধের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। চিকিৎসক আপনার সমস্যার মূল কারণটি খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এসব ওষুধ সেবনে কিডনিবৈকল্য এবং পাকস্থলীর আলসারের ঝুঁকি থাকে। লিভারেরও ক্ষতি হয়। দীর্ঘ মেয়াদে সেবন করলে পরিপাকতন্ত্র ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, রক্তশূন্যতারও ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া লিভার, কিডনি ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির এসব ওষুধ গ্রহণ অনুচিত।